কুমিল্লা বদলে ‘ময়নামতি’ হলে ভবিষ্যতে যে সমস্যা হতে পারে

যে শহরের সাথে আমার সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা জড়িয়ে আছে সেটা হল কুমিল্লা শহর, আমার প্রাণের শহর। নিউজার্সি আমার দ্বিতীয় শহর। এটা আমি আগেও বলেছি, আজ আবার বললাম। যাই হোক মূলপ্রসঙ্গে আসি। ’ময়নামতি’ বিভাগ হলে সমস্যা কোথায়?

আমরা জানি, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেনানিবাস কুমিল্লার ময়নামতিতে অবস্থিত। স্বাভাবিক ভাবেই বিভাগের নাম ‘ময়নামতি’ হলে বিভাগীয় অফিসগুলো ময়নামতিতে তৈরি হবে, অনেক কর্মসংস্থান হবে, নতুনভাবে অনেক কিছু গড়ে উঠবে নিঃসন্দেহে বলা যায়। সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর যে নিরাপত্তা বা প্রাইভেসি সেটা আর থাকে না। তখন সেটা হয়ে যাবে পাবলিক প্লেস। আর পাবলিক প্লেসে সেনাবাহিনী কখনো নিরাপদ নয়। সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা, দেশের জন্য, জনগণের জন্য, সর্বপরি রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ জায়গায় আপনি যেভাবে যাতায়াত করবেন সেটা সেনানিবাসে সম্ভব নয়।

এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গায় বিভাগীয় অফিস হলে বা অন্যান্য কর্মসংস্থান হলে জনগণ চাইবে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে, আর সেনাবাহিনী চাইবে তাদের নিরাপত্তা বজায় রাখতে। এক্ষেত্রে সাধারণ জনগণ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি হবে। অনেকে বলতে পারেন, শালবন বিহার বা কোটবাড়ি (বার্ড)- সেখানে বিভাগীয় অফিস হতে পারে। কিন্তু এই জায়গাগুলোও ময়নামতির মধ্যে। আবার অনেকে বলতে পারেন কুমিল্লা শহরের মধ্যে হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমি বলব বিষয়টা কুমিল্লাবাসী কখনই মেনে নিবে না।

অনেকে হয়তো বলতে পারেন, ময়নামতিতে এসব কিছু হবে না। আমি চ্যালেঞ্জ করেই বলছি যেইমাত্র বিভাগের নাম ‘ময়নামতি’ ঘোষণা হবে তারপর থেকে সেখানে নতুন নতুন কর্মসংস্থান গড়ে উঠবেই। আমি কুমিল্লা শহরকে ১৬ বছর আগে যে অবস্থায় দেখে এসেছি এখন তা উন্নত হয়ে তিনগুণ হয়েছে। যেটা ছিল একতলা বিল্ডিং এর একটা মার্কেট, সেটা এখন ১২ তলা বিল্ডিং। এটাই স্বাভাবিক; এবং এই স্বাভাবিক নিয়মেই আমি ময়নামতির ভবিষ্যতে কী হতে পারে তাই লিখছি। যদি কুমিল্লা নামে বিভাগ করা হয় তাহলে এই প্রভাব আর সেনানিবাসের উপর পড়বে না।

বিদেশে যেসব শ্রমিকরা থাকে তাদের কাগজেপত্রে এখন শুধু কুমিল্লা জেলা, চট্রগ্রাম বিভাগ লেখা, ভবিষ্যতে সেখানে ‘ময়নামতি বিভাগ’ হলে তাকে আবার নতুন করে আপডেট করতে হবে। বিষয়টা এত সহজ নয়। কুমিল্লা নাম হলে সেটা খুব সহজ হবে আপডেট না করলেও চলবে, কারণ কুমিল্লা তো থাকছেই। ময়নামতি হলে বিদেশিরা প্রশ্ন করবে, আগে তো শুনিনি সেটা কোথায়? কত দূরে? এখানে বিদেশিদের মাঝে অবিশ্বাসের একটা ব্যাপার চলে আসতে পারে। কারণ কুমিল্লা তার ঐতিহ্য নিয়েই বিদেশে পরিচিত। ময়নামতি না।

ভবিষ্যৎ শিশুরা কী জানবে?

কুমিল্লার একটা নিজস্ব ইতিহাস আছে। তৎকালীন পাকিস্তান পার্লামেন্টে সর্বপ্রথম কুমিল্লার ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। শিবনারায়ণ দাস ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকার ডিজাইনার। ইতিহাস ঘাটলে এরকম আরো অনেক নাম আসবে। সেদিকে না যাই, মূল প্রসঙ্গে থাকি।

এখন ‘ময়নামতি’ নাম হলে যদি প্রশ্ন থাকে শিবনায়ারণ দাস কে? (কথার কথা, সহজভাবে বোঝানোর জন্য বলছি) উত্তর হবে- ময়নামতি বিভাগের কুমিল্লা জেলার শিবনারায়ণ দাস। কিন্তু কুমিল্লা বিভাগ নাম হলে বিষয়টা সহজ হবে। উত্তর হবে- কুমিল্লার। এভাবে যদি প্রশ্ন করা হয়, কুমিল্লা বোর্ড কোথায়? উত্তর হবে- ময়নামতি বিভাগের কুমিল্লা জেলায় অন্তর্গত। কিন্তু কুমিল্লা নাম হলে উত্তর সহজ- কুমিল্লায়।

এভাবে প্রত্যেক ক্ষেত্রে একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা হবে। বাবা তার সন্তানকে বলবে, শুধু কুমিল্লা লিখে দাও। মা বলবে না ময়নামতি বিভাগের কুমিল্লা জেলায় অন্তর্গত লিখ। বাবা বলবে এটা কঠিন সহজটাই লিখুক, মা বলবে না। আর বড় ভাই বোন থাকলে তো কথাই নেই। আর শিক্ষক বলবে আমি যেটা বলি সেটাই লিখ।

কিন্তু ‘কুমিল্লা বিভাগ’ হলে এ ধরনের কোন সমস্যা সৃষ্টি হবে না। বিষয়টা সাধারণ হলে একসময় জটিল হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে শিশুরা একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়বে।

অন্যান্য দেশের কথা জানিনা, তবে আমেরিকার কথা বলতে পারি অনেকে তাদের ফ্যামিলির জন্য আবেদন করেছে, সেক্ষেত্রে যারা কুমিল্লার তারা তো কুমিল্লা কথাই লিখেছে। এখন বিভাগ হলে আবেদন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বিরাট এক ঝামেলায় পড়বে। কারণ যে অপশনগুলো দেওয়া আছে বিভাগ পর্যন্ত- চট্টগ্রাম হয়ে যাবে ময়নামতি; সেক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন অফিসার জেরা করতে পারে যে, আগের পেপারে তো ময়নামতি লেখা ছিল না। নতুন হলে সেখানকার সবকিছুই জানতে চাইবে নতুন করে। অর্থাৎ নতুন করে আবার কাগজপত্র করা, বিরাট ঝামেলা। যে একবার কাগজপত্রের ঝামেলায় পড়েছে সে জানে এটা কত বিরক্তিকর। কিন্তু ‘কুমিল্লা’ নাম হলে জেলা তো লেখা আছেই, বিভাগ হলে কুমিল্লাটাই তো থাকবে, এক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না। এমনিতেই সাত দেশের ভিসা বন্ধ করে দিছে ট্রাম্প।

সরাসরি না হলেও মনস্তাত্ত্বিক ভাবে ‘ময়নামতি’ নাম হলে কুমিল্লাবাসী এবং ময়নামতিবাসীর মধ্যে একটা দূরত্ব থাকবে। সেটা হয়ত কাগজে-পত্রে থাকবে না, কিন্তু অবলীলায় অপ্রকাশিতভাবে অন্তর্গত দ্বন্দ্ব কখনো যাবে না।

বিভাগীয় নামের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্ধ্বে উঠে নাম নির্ধারণ করা উচিত। আমার জানামতে এ পর্যন্ত যত জেলা বিভাগ হয়েছে সবগুলোর বিভাগীয় নাম পূর্বোক্ত জেলা সদরের নামেই হয়েছে। তাহলে কুমিল্লা নামে হবে না কেন? এখানে কুমিল্লা নাম হলে সমস্যা কোথায়?

কাদের সমস্যা? তাদের যুক্তিটা কী? অযৌক্তিক বিষয় মেনে নিয়ে নামকরণ করা হবে ভুল সিদ্ধান্ত। সবশেষে বলতে চাই, কুমিল্লার সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক, প্রাণের সম্পর্ক। আমার মতো হাজার হাজার মানুষ আছেন যাদের সাথে কুমিল্লার প্রাণের সম্পর্ক রয়েছে। আবেগের জায়গা বলেন, গর্বের জায়গা বলেন- কুমিল্লা অন্তরে গেঁথে আছে।

কুমিল্লার রসমালাই, কুমিল্লার খাদি বিখ্যাত। সবচেয়ে বড় কথা কুমিল্লার নিজেস্ব একটা ঐতিহ্য রয়েছে; যার দ্বারা সারা বিশ্বে কুমিল্লা পরিচিত

পার্বত্য অঞ্চলের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম একেএম মকছুদ আহমেদের স্বরণে নাগরিক শোকসভা :  পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি প্রবীন সাংবাদিককে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকে ভুষিত করার দাবী

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031