খাগড়াছড়ি রামগড়ে নাছিয়া চা বাগানের অপহৃত ৭৮ ত্রিপুরা শ্রমিকের মধ্যে ১৬ জনকে উদ্ধার করেছে বিজিবি

॥ মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, খাগড়াছড়ি থেকে ॥ খাগড়াছড়ির রামগড়ে এক ত্রিপুরা নারী চা শ্রমিক বাঙ্গালী ছেলেকে ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করার জের ধরে  পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত ফটিকছড়ির নাছিয়া চা বাগানের ৭৮ জন ত্রিপুরা  শ্রমিকের মধ্যে ১৬ জনকে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। গত বুধবার খাগড়াছড়ির রামগড়ের বিভিন্ন দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় দিনভর অভিযান চালিয়ে ৫টি পরিবারের ৮ জন শিশু ও ৫ জন মহিলাসহ ১৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা যায়, গত শুক্রবার বাগানের ১৯টি পরিবারের নারী ও শিশুসহ ৭৮ জনকে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। অপহৃতদের মধ্যে ১৪ পরিবারের ৬২ জনকে এখনও উদ্ধার করা যায়নি। বিজিবি সূত্র জানা গেছে, তাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে অপহৃতদের মধ্যে ১৬ জনকে উদ্ধারের খবর পেয়ে হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান আল মামুন ও রামগড় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ নুপার সৈয়দ মো. ফরহাদ বুধবার রাতে রামগড় থানায় এসে ঐ শ্রমিকদের সাথে বলে খোঁজখবর নিয়েছেন।
জানা গেছে, গত বুধবার সকালে রামগড় বিজিবি জোনের সহ-অধিনায়ক মেজর হুমাযুন কবিরের নেতৃত্বে একটি টহল দল অপহৃতদের উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। ফটিকছড়ির দাঁতমারা লাগায়ো রামগড়ের গুজা পাড়া, মরা কয়লা, গরু কাটা প্রভৃতি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সারাদিন অভিযান চালায় বিজিবি।
এ অভিযানে রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের গরু কাটাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ৫টি চা শ্রমিক পরিবারের ১৬ জনকে উদ্ধার করা হয়। এরা হচ্ছে, সত্য কুমার ত্রিপুরা(৩৫), স্ত্রী পতিবালা ত্রিপুরা(৩০), শিশু পুত্র শুভ ত্রিপুরা(৩), কন্যা জ্যোতি ত্রিপুরা(২), রদন ত্রিপুরা(৬০), স্ত্রী মায়া লক্ষ্মী ত্রিপুরা(৫৫), শান্ত ত্রিপুরা(২৫), স্ত্রী লক্ষ্মী মালা ত্রিপুরা(২০), শিশু কন্যা রিতা ত্রিপুরা(৩), শির মতি ত্রিপুরা(৩৪), শিশু সন্তান জীবনা(৯), অরুন(৭), রুবেল(৫), বিজয়(২) এবং বিনো মালা ত্রিপুরা(৩০) ও শিশু নুপুর(৩)।
গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এদের উদ্ধার রামগড় বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদরে নিয়ে আসা হয়। অভুক্ত, অর্ধভুক্ত এসব উদ্ধারকৃতদের বিজিবির পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।  এদিকে, অপহৃতদের মধ্যে ১৪ পরিবারের ৬২ জনকে বুধবার উদ্ধার করা যায়নি। বিজিবি জানায়, তাদের উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উদ্ধারকৃতরা জানিয়েছেন, উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা চা বাগান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর রামগড়ের দুর্গম এলাকায় আটকে রাখে। ঐ এলাকার কয়েকজন গ্রামবাসী তাদেরকে সামান্য খাবার খেতে দেয়। ছেলে মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা গত ৫ দিন অভুক্ত, অর্ধভুক্ত অবস্থায় কাটায়। বৃদ্ধ রদন ত্রিপুরা বলেছেন, তারা যুগ যুগ ধরে চা বাগানে কাজ করেন, চা বাগানেই থাকেন। বাগানের এক ত্রিপুরা মেয়ে শ্রমিক পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাঙালি ছেলের সাথে পালিয়ে যাওয়ায় সন্ত্রাসীরা তাদেরকে বাগান থেকে নিয়ে জঙ্গলের ভিতর আটকে রাখে। অন্যান্য অপহৃতরা কোথায় আছে তারা তা জানেন না।
রামগড় বিজিবি জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল এম জাহিদুর রশিদ বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তি বিরোধী সংগঠন ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরাই চা বাগানের ত্রিপুরা শ্রমিকদের সপরিবারে অপহরণ করে। ৫ দিন যাবৎ এদেরকে রামগড়ের দুর্গম এলাকায় আটকে রাখা হয়। অনাহারে থেকে তারা খুবই দুর্বল হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, পাতাছড়া ইউনিয়নের মেম্বার মানেন্দ্র ঐ সন্ত্রাসী গ্রুপের হয়ে কাজ করে। তিনি জনপ্রতিনিধি হয়েও অপহৃতদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ন্যুনতম সহায়তা করেনি। জোন কমান্ডার আরও জানান, অপহৃত অবশিষ্ট লোকজনদের উদ্ধার করতে বৃহষ্পতিবার পুনরায় অভিযান চালানো হবে। সিন্ধুকছড়ি সেনা জোন ও রামগড় বিজিবি যৌথভাবে এ অভিযান চালাবে।
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা সীমানা লাগোয়া ফটিকছড়ির দাঁতমারা ইউনিয়নের সোনারখীল এলাকায় নাছিয়া চা বাগানের শ্রমিক তশিরাম ত্রিপুরার কন্যা শব্দ মিলা ত্রিপুরা(২০) সোনারখীলের হাক্কিটিলা গ্রামের সুরত আলীর ছেলে আরিফের(২৫) সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার ঘটনার জের ধরে পার্বত্য এলাকার পাহাড়ি সন্ত্রাসী গ্রুপটি শুক্রবার বাগান থেকে সকল ত্রিপুরা চা শ্রমিকদের সপরিবারে তুলে নিয়ে যায়।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম একেএম মকছুদ আহমেদের স্বরণে নাগরিক শোকসভা :  পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি প্রবীন সাংবাদিককে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকে ভুষিত করার দাবী

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031