রাতের আঁধারে কাউখালী উপজেলা প্রশাসনের ২৭টি সেগুন গাছ কেটে নিল দুর্বৃত্তরা

॥ মোঃ জসিম উদ্দিন ॥ কাউখালী উপজেলা প্রশাসন ও থানা থেকে মাত্র আধা কিলোমিটারের কম দূরত্বে উপজেলা পরিষদের ২৭টিসেগুন গাছ রাতের আঁধারে কেটে নিল দৃর্বৃত্তরা। যার আনুমানিক মুন্য প্রায় চার’লক্ষ টাকা। গত সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাত দুটা থেকে প্রশাসন ও পুলিশের চোখের সামনে বন উজারকারীরা এমন নিধনযজ্ঞ চালায়। গভীররাতে নিধন করা গাছে চিৎকারে সাধারণ মানুষের ঘুম ভাঙ্গলেও জানেনা শুধু উপজেলা প্রশাসন এবং কাউখালী থানা পুলিশ। কাউখালীতে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমনী আক্তার জানান, বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন বিষয়টি তিনি শুনেছেন এ ব্যাপারে কারো কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, কাউখালী উপজেলা প্রশাসন ও থানা থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরত্বে উপজেলা পরিষদের জায়গায় বরাদ্ধকৃত গরু বাজারের পার্শ্বে কাকড়াছড়ি খালের পাড়ে সরকারী জায়গায় প্রায় ২৭টি মূল্যবান সেগুন গাছ কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়েছিল। কিন্তু গত কিছুদিন যাবৎ এ গাছের মালিকানা দাবী করে আসছে কলমপতি কাঠ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি জাফর উল্লাহ এবং তার শ্যালক সরওয়ার সরকার নামে আরো এক ব্যক্তি। সরওয়ার সরকার জানিয়েছেন, আমার লাগানো গাছ রাতে আঁধারে যারা কেটে নিল তাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করবো।
গত ৯ নভেম্বর কাউখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবরে জাফর উল্লাহর অসুস্থ্যতা ও তার চিকিৎসার কথা বলে গাছগুলো কাটার জন্য আবেদন করা হয়। চেয়ারম্যান বরাবরে আবেদন জমা দেন উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ফারুক। দাখিলকৃত আবেদন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইউএনও বরাবরে পাঠান এবং বিবি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানান, তবে গাছ কাটার কোন অনুমতি দেয়া হয়নি তাদের। ব্যস এতটুকুতেই শেষ। এতেই যেন অনুমতি মিলে গেলে তাদের। কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকারী সফরে দেশের বাইরে থাকার সুযোগে গত সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাত ২টা থেকে নির্বিচারে কাটা শুরু হয় মূল্যবান এসব সেগুন গাছ। এর পুরোটাই নেতৃত্ব দেন শ্রমিকলীগ কাউখালী উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ফারুক। তার সাথে যোগদেন আরো অন্তত ২০ জন। ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে নিধনযজ্ঞ। সূর্য উঠার আগেই সরিয়ে ফেলা হয় বেশীরভাগ গাছ। অবশিষ্ট গাছ সরাতে না পারায় এলোমেলোভাবে পড়ে আছে বিভিন্ন স্থানে।
গাছ কাটার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে রাতেই প্রশাসনকে জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ সব ঠিকঠাক থাকায় মাত্র ৫মিনিটের পথ হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি রাতে উপজেলা সদর এলাকায় পুলিশের টহল থাকলে যেখানে এসব গাছ কাটা হয়েছে সেদিকে পুলিশ যায়নি।
কাউখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম চৌধুরী জানান, যারা গাছ লাগিয়েছে দাবী করছে তাদের সাথে যদি পরিষদের কোন চুক্তিপত্র হয়ে থাকে তা উপাস্থপন করতে হবে তদের। এ ধরণের কিছু না করে গাছের দাবী করে রাতের আঁধারে গাছ কেটে ফেলা আইন বহির্ভূত। তাদের বিরুদ্ধে অব্যশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউখালীতে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমনি আক্তার জানান, বিষয়টি রাতে আমাকে জানো হয়নি। যার দরুন গাছগুলো রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, এ বিষয়ে কাউখালী থানায় মামলা করা হবে এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো: কবির হোসেন জানান সরকারী গাছ কাটার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। কেউ কোন অভিযোগ করেনী। রাতে উপজেলা সদর এলাকায় পুলিশ টহল থাকলেও ঐদিকে কেন যায়নি জানতে চাইলে এরিয়ে গিয়ে তিনি জানান প্রতিরাতে তো অনেক কাঠের গাড়ী যায়। তিনি আরো জানান, তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে কোন অভিযোগ পেলে আইনানূগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরকারী সেগুন গাছ নিধনের সাথে অভিযুক্ত কাউখালী উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: ফারুক গাছ বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে একজন অসুস্থ্য মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলাম। তিনি জানান, কাউখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোও হয়েছে। এরপরও যদি এ নিয়ে বিতর্ক হয় তাহলে আর কি করার আছে।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম একেএম মকছুদ আহমেদের স্বরণে নাগরিক শোকসভা :  পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি প্রবীন সাংবাদিককে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকে ভুষিত করার দাবী

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031