পাহাড়ে জেঁকে বসেছে শীত, অসহায় মানুষদের পাশে নেই কেউ

॥ মো: নাজমুল হোসেন রনি, নানিয়ারচর ॥ পাহাড়ে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে পাহাড়ি জনপদ। চিকচিক করছে শিশির বিন্দু মুক্তাদানার মত ঘাস আর ফুলে ফলে। কুয়াশার চাদরে উঁকি দিচ্ছে প্রায় প্রতিদিনের সূর্য্য। পাহাড়ের কৃষক চাকমা আর মারমা সম্প্রদায় এখনো সেই মান্ধাতা আমলের গরু-মহিষের হালেই জমি চাষ করেন তারা কাঁধে লাঙল আর জোয়াল নিয়ে পাহাড়ের মাঠে ছুটছেন। রাস্তার ধারেই চলছে গরম গরম ভাপা পিঠা আর চিতই পিঠা খাওয়ার ধূম। তারই মাঝে কুয়াশায় লুকোচুরি খেলছে শীত। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে স্বাভাবিক ভাবেই শীত অন্য যে কোন এলাকার চেয়ে বরাবরই বেশী। রাঙ্গামাটিতে দূর্গম পাহাড়ের বেশীর ভাগ মানুষেরই দরিদ্রসীমার নীচে বসবাস। তাই এই শীতের শুরুতেই গরম কাপড়ের অভাবে থর থর করে কাঁপছে হতদরিদ্র পাহাড়ের মানুষ।
দূর্গম পাহাড়ে কেউবা শীতের গরম কাপড় ও লেপ-তোষক নেই বললেই চলে। কেউবা খর-কুটো জালিয়ে শীত নিবারণের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে শীতের আমেজের সাথে গোটা পাহাড়ে ফুটে উঠেছে আবহমান গ্রাম বাংলার চিরাচরিত ঐতিহ্য। শীতকে উপেক্ষা করে অনেকেই স্বাদ গ্রহণ করছেন আগাম খেজুর রসের। প্রতি বছরের চেয়ে এ বছরে শীত একটু বেশী মনে হচ্ছে।
এখনি সকাল-সন্ধায় বাড়ি-বাড়ি আগুনের কুন্ড জ্বালিয়ে হতদরিদ্র মানুষ শীত নিবারনের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউবা ছেড়া কাঁথা মুড়িয়ে প্রচন্ড শীতে থর থর করে কাঁপছে। এ বছর শীতের তীব্রতা বেশী হওয়ায় সবচে বেশী দুর্ভোগ পোহাচ্ছে হতদরিদ্র মানুষ।
এ দিকে দরিদ্র-অতি দরিদ্রতো বটেই মধ্যবিত্ত শ্রেনীর লোকজনকেও ভিড়তে দেখা যাচ্ছে পুরানো শীতবস্ত্রের দোকানে। ইতোমধ্যেই শীতবস্ত্রের দামও গেছে বেড়ে। পাহাড় জুড়ে শীতের তীব্রতা আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে কম্বলের। পাহাড়ি এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় গরম কাপড়ের চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে।
জেলার বনরুপা বাজারে শীতবস্ত্র জ্যাকেট, কম্বল, মোটা গেঞ্জি, কোট, সোয়েটার ইত্যদি পুরনো কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। ক’জন ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ী জানান, শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এবার ক্রেতা যেমন বেড়েছে তেমনি বিক্রিও হচ্ছে ভাল। দরিদ্ররা শীতে কাবু হলেও কিনতে পারছেনা গরম কাপড়। তাই শীতে কাবু হাজার হাজার হতদরিদ্র মানুষের এটা ভাগ্যবিড়ম্বনা ছাড়া আর কিছুইনা।
এ দিকে তীব্র শৈত্য প্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কনকনে ঠান্ডায় চরম অসহায় হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে গোটা পাহাড়ের হতদরিদ্র মানুষ। তীব্র শীতে কাজে যেতে পারছে না নি¤œবিত্ত ও দিনমজুর শ্রেনীর মানুষ। হতদরিদ্র মানুষ শীত মোকাবেলায় চরমভাবে হিমশিম খেলেও কেউ এগিয়ে আসছেনা তাদের সাহায্যে। শীতবস্ত্রের অভাবে সবচে বেশী দুর্দশা ও কাহিল হয়ে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এখানে অনেক আগেই শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। উপজেলার নানিয়ারচরের বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গরিব, দুখী ও অভাবী মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে মারাত্বক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। সরজমিনে নানিয়ারচর ও বরকলে হতদরিদ্র মানুষ গাছের পাতা, খরকুটা জ্বালিয়ে, কেউবা রান্না ঘরে চুলার পাশে বসে আগুন পোহাচ্ছেন।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31