ভাস্কর্য ঘিরে যেন ‘অরাজকতা’ না হয়: আইনমন্ত্রী

মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবক কিন্তু রাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি। এখানে যখন ভাস্কর্য বসানো হয়, তখন সেটা আমাদের জানানো হয়নি; সরানো হবে কিনা, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত প্রধান বিচারপতিই নেবেন।

“যখন এই ভাস্কর্যের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে কিছু বিপরীত যুক্তি আসছে, তখন আমাদেরকে দেখতে হবে, সুপ্রিম কোর্ট অত্যন্ত পবিত্র স্থান। এখানে যেন কোনো অরাজক পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সেটা সকলের বিবেচনা করা উচিত।”

তাহলে রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’র আদলে তৈরি ওই ভাস্কর্য সুপ্রিম কোর্টের পবিত্রতাকে কলুষিত করেছে কিনা- সে প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, “আমি বলেছি, এটা কিছু প্রশ্নের উদ্রেক করেছে, সেটা ধরে আপনারা বুঝে নেন আমি কী বলতে চাইছি।”

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে ওই ভাস্কর্য স্থাপনের পর থেকে হেফাজত ইসলাম ও ওলামা লীগসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন তার বিরোধিতায় নামে।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে যে সমাবেশ করেছিল হেফাজত, ভাস্কর্য সরানোর দাবিতে সরকারকে ফের একই ধরনের সমাবেশের হুমকি দেয় তারা।

এরপর ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী নেতৃত্বাধীন এক দল ওলামার সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে শেখ হাসিনা ভাস্কর্যটি সরাতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর সেটা নিয়ে নানা সমালোচনার চলছে।

এ প্রেক্ষাপটের মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ন্যাশনাল ‘ইন্টারন্যাশনাল লেবার স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড লেবার লেজিসলেশন ফর জাজেস অ্যান্ড জুডিসিয়াল অফিসার্স’ শীর্ষক ট্রেইনিং কোর্সের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এই অনুষ্ঠান শেষে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে আমৃত্য কারাদণ্ড বিবেচনা করে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিষয়ে মন্ত্রীর মন্তব্য জানতে চান সাংবাদিকরা।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “পূর্ণাঙ্গ রায় যেটা বেরিয়েছে সেটা যদি আমি না পড়ে একটা কথা বলি, তাহলে সেটা অন্য রকম হয়ে যাবে। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপিটা যদি আজকে পাই, সেটা পড়ে কয়েকদিনের মধ্যে সে বিষয়ে কথা বলব।”

কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শ্রম আদালতের সংখ্যা কম হওয়ায় এবং বিচারে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শ্রমিকরা সুবিধা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু।

তিনি বলেন, “দেখা যায়, ৫০ হাজার বা ১ লাখ টাকার জন্য শ্রমিকরা আদালতে যায়। কিন্তু বিচারে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। আবার আপিল হয়। আপিলের পরেও যদি পক্ষে রায় আসে, তারপরও মালিকপক্ষ আবার হাই কোর্টে গিয়ে বিরুদ্ধে রিট করে। তখন শ্রমিকরা আর বিচার এগিয়ে নিতে পারেন না।”

সেক্ষেত্রে প্রশাসনিক আপিল ব্যবস্থার শ্রম আপিল আদালতে পুরো বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যায় কি-না সে প্রস্তাব আইনমন্ত্রীর কাছে রাখেন তিনি।

বিচারপ্রাপ্তির পথ সহজ করার জন্য মতিঝিলে একই ভবনে থাকা তিনটি শ্রম আদালতের দুটিকে নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গীতে সরানোর দাবি জানান শ্রম প্রতিমন্ত্রী।

প্রয়োজনে শ্রম মন্ত্রণালয় সেজন্য আলাদা ভবন করে দিতে রাজি আছে বলে তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “নাগরিকের বিচারপ্রাপ্তির যে ধারা সেটাতে হাই কোর্টে রিট করার সুযোগ দিতে হবে মালিকপক্ষকে। তবে শ্রম আদালতেও অর্থ ঋণ আদালতের মতো পাওনার অর্ধেক আগেই পরিশোধ করার বিধান রাখা যায় কিনা, সে বিষয় দেখা যেতে পারে।”

শ্রম মন্ত্রণালয় জায়গা করে দিলে দুটি আদালত ‘অবশ্যই’ নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গীতে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।

এছাড়া শ্রম প্রতিমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী সিলেট ও রংপুর জেলায়ও শ্রম আদালত করার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা হবে বলে মন্তব্য করে আনিসুল হক।

বিচার প্রশাসন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি মুসা খালেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আইনসচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল ব্লেকেন, আইএলওর দেশীয় পরিচালক শ্রিনিবাসন বি রেড্ডি বক্তব্য দেন।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031