বাজারে স্বস্তি ফেরাতে ভিন্নরূপে তৎপর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন

মশিউর রহমান নয়ন :: বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি আর চড?া মূল্যের কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস হওয়ার উপক্রম। বিভিন্ন সংস্থাার বাজার তদারকি, টিসিবি কার্যক্রম আর মূল্য নিয়ন্ত্রণে অব্যাহত মোবাইল কোর্টের অভিযান; কোনকিছুই যখন মানুষকে স্বস্তি দিতে পারছেনা, ঠিক তখনই ভিন্ন পš’ায? হাজির চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। একদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিাতিশীল রাখতে চট্টগ্রামের সবগুলো বাজারে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে যাচ্ছে। অন্যদিকে গত ২৪ অক্টোবর থেকে মহানগরের ছয়টি বাজারসহ সবগুলো উপজেলাতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে সুলভ মূল্যের বাজার- জেলা প্রশাসন সেলস সেন্টার। ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার এই কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। জেলা প্রশাসন সেলস সেন্টারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে সকল সবজি ও দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া যাচ্ছে বাজার দরের চেয়ে অনেক কম দরে। সরেজমিনে শুক্রবার মহানগরের কর্ণফুলী বাজারে অস্থাায়ীভাবে স্থাাপিত জেলা প্রশাসন সেলস সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ঝিঙ্গা ৩০ টাকা, আলু ৪৫ টাকা, পটল ৪০ টাকা, লাউ ২০ টাকা, পেয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।আর ডিম পাওয়া যাচ্ছে ১৩০ টাকা ডজন দরে। এছাড?া অন্যান্য পণ্যও বিক্রি হচ্ছে বাজার দরের চেয়ে ৫ থেকে ২০ টাকা কম দরে। ক্রেতাদের উপচে পরা ভীর। মুহূর্তেই টেবিলে সাজিয়ে রাখা পণ্যগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেলস সেন্টারে কাজ করছেন মহানগরের কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। একটি পণ্য শেষ হয়ে গেলে সেখানে আবার পণ্য সাজিয়ে রাখছেন তারা। এক কথায়, জমজমাট বেচাবিক্রি। ক্রেতাদের চোখে মুখে স্বস্তির ছাপ। কর্ণফুলী বাজারের জেলা প্রশাসন সেলস সেন্টারে বাজার করতে আসা ক্রেতাদের কয়েকজন জানায়, বর্তমান পরিস্থিাতিতে এটা জেলা প্রশাসনের একটি অভাবনীয? উদ্যোগ। এমনটা আগে কখনও চট্টগ্রামে আমরা দেখিনি। অন্য কোথাও জেলা প্রশাসন এমন উদ্যোগ নিয়েছে বলেও শুনিনি। যাইহোক, সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে। ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ যে পরিমাণ কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছিল, তাতে কিছুটা স্বস্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। আমরা আশা করব, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন যেন বাজার স্থিাতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এই কার্যক্রমটা চালু রাখে।

সেলস সেন্টারের বিষয়ে কথা হয়, কর্ণফুলী সেলস সেন্টারের ব্যবস্থাাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরাফাত সিদ্দিকীর সাথে। তিনি বলেন, প্রশাসন সবসময় জনগণের কল্যাণে কাজ করে। চলমান পরিস্থিাতিতে বাজার তদারকি, মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি আমাদের আর কোনো বিকল্প ছিল না। তাই সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম মহোদয়ের ব্যতিক্রমী চিন্তা ও দিকনির্দেশনায় সমগ্র জেলায় আমরা সুলভ মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বিক্রয?ের জন্য জেলা প্রশাসন সেলস সেন্টার পরিচালনা করছি। জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কিনে নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থাাপনায় যতœসহকারে তা আমাদের এই সেলস সেন্টারে বিক্রয?ের উদ্দেশ্যে নিয়ে আসছি। সেবার মনোভাব থাকায় আমরা লভ্যাংশের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি না। কেবলমাত্র ক্রয়মূল্য, পরিবহন ব্যয় ও ব্যবস্থাাপনার জন্য খুবই সীমিত কিছু ব্যয় সমন্বয় করে পণ্যের বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাজারের দাম থেকে অনেক কমে পণ্যগুলো সাধারণ মানুষের হাতে তুলে দেয়া যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড?া পাওয়া যাচ্ছে। আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেড?িয?ে এসে সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে সেবার মনোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করলে দ্রুতই এই পরিস্থিাতির উত্তরণ ঘটবে।

ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের বিষয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, বাজার স্থিাতিশীল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। যেকোনো মূল্যে আমরা বাজারের অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙতে বদ্ধ পরিকর।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30