
॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥ বুধবার রাতে ঢাকা শহরে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ধানমন্ডি ৩২ নম্বর। নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা দেখা যায়। বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন, আর সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে লেখেন, “আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমিমুক্ত হবে।”
এই পরিস্থিতিতে রাত ৯টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ ও ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। সন্ধ্যার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সেখানে জড়ো হতে থাকেন। রাত ৮টার দিকে তারা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং ভাংচুর চালান। বাড়ির সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালও ভাঙচুর করা হয়।
রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বাড়ির তৃতীয় তলায় আগুন জ্বলতে দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ৯টার দিকে বিক্ষোভকারীরা লাঠিসোঁটা ও শাবল দিয়ে সীমানাপ্রাচীর ভাঙতে শুরু করেন। সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে থাকে, পরে সেনাবাহিনী সেখান থেকে সরে যায়।
রাত ১০টার দিকে বিক্ষোভকারীরা বাড়ির বিভিন্ন অংশ ভাঙার চেষ্টা চালান এবং বুলডোজার এনে সম্পূর্ণ ভবনটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানান। ধানমন্ডি লেকের পাশে এই সময় জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী চলছিল।
রাত সাড়ে ১০টার পর শেখ হাসিনার ধানমন্ডি ৫-এর বাসভবন সুধা সদনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস খবর পেলেও ‘নিরাপত্তা না থাকায়’ তারা আগুন নেভাতে পারেনি।
রাত ১১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ক্রেন ও এক্সকাভেটর নিয়ে আসে এবং মধ্যরাতে ভবন ভাঙা শুরু হয়। রাত ২টার মধ্যে বাড়ির বড় অংশ ভেঙে ফেলা হয়। সারা রাত সেখানে স্বৈরাচার ও আওয়ামী লীগবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে বিক্ষোভকারীরা।
আজ সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বহু মানুষ জড়ো হন। ভারী যন্ত্র দিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ভবনটি ভাঙা হচ্ছিল। সকাল ১১টার দিকে বাড়িটির বড় অংশ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। স্মৃতি জাদুঘরের পেছনের ছয়তলা ভবনেও বিক্ষোভকারীরা ঢুকে লোহা, কাঠ, টিনসহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে যেতে দেখা যায়।
সকাল ১০টার দিকে সুধা সদনে দেখা যায়, ভবনের বিভিন্ন কক্ষে আগুন ও ভাঙচুরের চিহ্ন রয়েছে। পোড়া গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। বাড়ির সামনের সড়কে উৎসুক জনতার ভিড়, কেউ কেউ অক্ষত জিনিসপত্র সংগ্রহ করছিলেন।
ধানমন্ডি ৩২ ও সুধা সদনে গত রাতের এই বিক্ষোভ ও ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।