
ভাষা সৈনিক এ কে এম মকছুদ আহমেদ ॥
——————————–
একুশে পদক সরকারী প্রদত্ত পদকের মধ্যে প্রথম হিসেবে গন্য করা হয়ে থাকে। ২য় হিসেবে স্বাধীনতা পদককে ধরা হয়ে থাকে। রাষ্টীয় সর্বোচ্চ সম্মানকে কে না চায়? যারা উপযুক্ত তারাই পেয়ে থাকে। এটা একটা অত্যন্ত গুরুতপূর্ণ বিষয়। এখানে একুশে পদকের বিষয়ে লিখতে বাধ্য হলাম।
একুশে পদক সোনার হরিণ? কেন লিখলাম তা দেখুন, সত্যিকার অর্থে সোনার হরিণ নামে কোন হরিণ নাই। যেহেতু নাই সেহেতু সোনার হরিণই লিখলাম। আমাকে কোন দিন একুশে পদকের জন্য বা স্বাধীনতা পদকের জন্য আবেদন করতে হবে সেটা চিন্তাও করিনি।
১৯৬৯ সনে সাংবাদিকতা শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত কয়েকশত সম্মাননা পদক এবং মেডেল পেয়েছি তাতে আমি সন্তুষ্ট। কেননা ১৫ই ২০২৪ইং আমার সাংবাকিতার ৫৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। যা পেয়েছি তার জন্য খোদার নিকট লাখ, লাখ শুকরিয়া আদায় করছি।
কিন্তু জাতীয় সর্বোচ্চ পদকের জন্য আমার নাম প্রস্তাব পাঠাবে সেটা কল্পনাও করিনি। অথচ ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আমাকে জেলা প্রশাসক/অন্যান্যদের মাধ্যমে আবেদন করতে বলেছিলেন আমি রাজী হয়নি। ২০১৬ আমি উনার মাধ্যমে আমারই পত্রিকায় হাতে খড়ি পাওয়া একজন কবি সাহিত্যিক মংছেনচীন রাখাইন এর নাম প্রস্তাব পাঠালে তাকে ২ শে পদকে ভূষিত করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে তার স্ত্রী কবি ও সাহিত্যিক শোভারানী ত্রিপুরার আবেদন পাঠানোর পর তাকে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়।
২০১৮-২০১৯ইং এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া বললেন, আপনি তো ভাষা সৈনিক এবং ভাষা আন্দোলন স্মৃতিরক্ষা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক ভাষা আন্দোলন পরিষদের উপদেষ্টা, আপনি যদি একুশে পদকের জন্য আবেদন করলে দুইটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সাহায্য করতে পারবে। আমি বললাম প্রয়োজন নেই। যেভাবে আছি এভাবেই থাকি।
২০২০ইং সালে একদিন নন্দন দেবনাথ এবং ইয়াছিন রানা সোহেল বললেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান সাহেব অফিসে দেখা করতে বলেছেন। ২/১ দিন পর তাদের দুইজনকে সাথে নিয়ে জেলা প্রশাসক এর সাথে দেখা করলাম। তখন তিনি বলেন আপনার তো সাংবাদিকর ক্যারিয়ার অত্যন্ত চমৎকার। আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কাগজ তৈরী করে জমা দিলে আমি প্রস্তাব পাঠিয়ে দেব। অফিস থেকে এক সেট ফরম দিলেন। আমি বলছিলাম এগুলো ঝামেলা তৎবির করা সমস্যা। এর পর আমার স্ত্রীকে বলার পর বললেন, এগুলো করে লাভ নেই তোমাকে দিবে না। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক সাহেব আবার বলাতে নন্দন এবং ইয়াছিনকে ফরম এবং কাগজপত্র রেডি করে আনুষ্ঠানিক ভাবে জমা দিলাম।
পরবর্তীতে দুলাল মিয়া এবং ভাষা আন্দোলন পরিষদের নেতৃবৃন্দ এবং মন্ত্রী/এমপিরা আমার জন্য সুপারিশ করেছেন। পরে শুনে ছিলাম যে তালিকায় আমার নাম ৫ নাম্বারে ছিলো। অথচ বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রেস ক্লাব এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আমাকে ২১শে পদক দেয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে আবেদন নিবেদন করেছিলেন।
২০২১ইং সালে আবার একই ভাবে আবারো আবেদনপত্র জমা দেয়া হলো। বিভিন্ন জনের সুপারিশসহ আবেদন নিবেদনসহ যথা সময়ে পাঠানো গেল। ২০২১ইং সালে নভেম্বর মাসে আমার উপর লেখা অনেকের দৃষ্টিতে সর্বশ্রেষ্ট বই ‘পাহাড়ের সংসপ্তক’ এ কে এম মকছুদ আহমেদ প্রকাশিত হলো। এই বইটি আবেদন পত্রের সাথে জমা দেয়া হলো। এ বছরেরও একই অবস্থা। আমার স্ত্রী মুখে কথায় যেন ক্ষনার বচন, পাবে না।
যাক; সর্বশেষ জানতে পারলাম আমার নাম সাংবাদিক ১ নাম্বারে আছে। কিন্তু ঘোষনার আগে দিন খবর পেলাম কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে যে আমাদের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইবুনালে মামলা রয়েছে। কাজেই ২০২১ সালেও ২১ শে পদক ভাগ্যে জুটলো না।
২০২২/২০২৩ইং সালে আবেদন ফরম জমা দেয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে অনুরোধ এবং দাবী উঠলেও আমার স্ত্রীর নিষেধের কারণে আবেদন ফরম জমা দেয়া হয়নি। তবে দুই বছরে রেকর্ড সংখ্যক সম্মাননা, সংবর্ধনা ও পদক লাভ করেছি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইলো।
২০২৪ইং সালে অর্থাৎ ২০২৫ইং সালের জন্য আবেদন ফরম জমা দেযার জন্য দাবী এবং অনুরোধ উঠলেও জমা দিইনি। পরবর্তীতে নিদিষ্ট সময়ে পর পুনরায় সময় বাড়ানো হলেও সদ্য বিাদয় নেয়া জেলা প্রশাসক মোশারাফ হোসেন খান এর পরামর্শে নন্দন এর সহযোগিতায় আবার ৩য় বারের মতো ফরম জমা দিলাম। তাও আমার স্ত্রী বলতেছিলো, দিয়ে লাভ নেই, তোমাকে দিবে না। যাক; আশায় ছিলাম হয়তো বর্তমান সকার মূল্যায়ন করবেন।
কিন্তু এবারও একই অবস্থা। যাদেরকে পদক দেয়া হচ্ছে তাদের সর্ম্পকে অনেক অভিযোগ উঠেছে। সাংবাদিকের তালিকায় রাখা হয়েছে। এটা মানতে পারা যায় না। জীবিত সময়ে সম্মান না দিয়ে মৃত্যুর পরে দিয়ে কোন লাভ নেই। যাক; শেষ পর্যন্ত ২১শে পদক ‘সোনার হরিণ’ হিসেবে থাকলো। তবে আগামীতে মফস্বল থেকে ১জন এবং রাজধানী থেকে ১জনের নাম একুশে পদকে এবং স্বাধীনতা পদকে দুইজনকে দেয়ার আবেদন রাখছি।