রোহিঙ্গা সঙ্কট: মোদীর মিয়ানমার সমর্থনে বিস্মিত রিজভী

ভারত রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার ঘটনায় মিয়ানমারের দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সূ চির ভাষ্যে সমর্থন দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।

রিজভী বলেন, “বিশ্বের অন্যতম প্রধান গণতান্ত্রিক দেশ বলে দাবি করে ভারত। তারা অং সান সূ চির নীতিকে সমর্থন করলেন, মোদী সাহেব (নরেন্দ্র মোদী) সমর্থন করলেন। আমরা বিস্মিত, আমরা হতবাক হয়ে গেলাম।”

গত ২৪ অগাস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলার পর নতুন করে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হলে বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। জাতিসংঘের হিসাবে, বুধবার পর্যন্ত এই দফায় প্রায় এক লাখ ৪৬ হাজার মানুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।

গুলিবিদ্ধ হয়ে পালিয়ে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ মারছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও পুলিশ।

তবে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ানের সঙ্গে টেলিফোন আলাপে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি দাবি করেন, রাখাইন রাজ্যের সবাইকে সুরক্ষা দিচ্ছে তার সরকার।

তিনি বলছেন, ভুয়া ছবি ও খবরের মাধ্যমে বাস্তব পরিস্থিতিকে বিকৃত করে সন্ত্রাসীদের স্বার্থে প্রচার করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই পূর্ব নির্ধারিত মিয়ানমার সফরে গিয়ে সহিংসতার জন্য বিদ্রোহীদের দায়ী করে এই ইস্যুতে মিয়ানমারের পাশে থাকার কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, “এ কেমন কথা! সামান্য একটা নিরাপত্তা বাহিনীর… সেটাতে উদ্বেগ জানিয়ে অং সান সূ চির নীতিকে তিনি (মোদী) সমর্থন করলেন।”

সূ চির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মুসলমানের কোনো মানবাধিকার থাকবে না, মুসলমান তার নিজ বাড়িতে বসবাস করতে পারবে না, তাদের কোনো অধিকার থাকবে না। তারা রাখাইন রাজ্যে বাস করতে শত শত বছর ধরে আদিবাসী, তারা নিজ দেশে থাকতে পারবে না।

“ফিলিস্তিনিরা নিজ দেশে থাকতে পারবে না। ওদের মানবাধিকার নেই, ওদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই, ওদের সন্তানরা পঙ্গুত্ব বরণ করবেন; হয় চলে যাও তোমরা দেশ থেকে, না হয় হত্যার শিকার হও।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করো’ লেখা ব্যানার নিয়ে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।

এতে বাংলাদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটলেও সঙ্কট সমাধানে সরকার জোরালো কূটনীতিক তৎপরতা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী।

“আজকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছেন, তিনি চাপ সৃষ্টির জন্য অনেক দেশকে বলছেন; কিন্তু কার্য্কর কোনো উদ্যোগ নেই। কিছুই দেখা যায় না তারা কী করছেন, কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আপনার (শেখ হাসিনা) কূটনৈতিক তৎপরতা তো জোরদার না। ডাক দিয়ে বলছেন অ্যাম্বাসেডরকে, দুই-একটা কথা বলে ছেড়ে দিচ্ছেন।

“আজকে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন মুসলিম দেশ যেভাবে জাগ্রত হয়েছে, জাতিসংঘ যেভাবে প্রতিবাদ করছে, অন্যান্য দেশ যেভাবে কথা বলছে, একসাথে সোচ্চার হয়ে জোরালো একটা অবস্থান বাংলাদেশের সরকারের কাছ থেকে দেখা যাচ্ছে না। অর্থাৎ ওরা মরুক, ওরা পঁচুক, ওরা নাফ নদীর পানিতে ভেসে যাক, কারো কোনো দায়িত্ব নেই।”

রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে রিজভী বলেন, “আমরা এর কূটনৈতিক সমাধান চাই। কতদিন বছরের পর বছর তারা পালিয়ে আসছে, উদ্বাস্ত হয়ে বাংলাদেশে জীবন-যাপন করছে। আগে চার লক্ষের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে, ভারতে ৪০ হাজারের মতো। মোদী সাহেব বলছেন তাদেরকেও তাড়িয়ে দেবেন।

“রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে দায়িত্ব মিয়ানমারের না থাকতে পারে, বাংলাদেশের মানুষ তো কিছুটা হলেও সহানুভুতিশীল হচ্ছে। তাদের হৃদয়ের মধ্যে কান্না ঝরছে। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের যেরকম দায়িত্ব পালন করা দরকার ছিল, সেটা তারা পালন করেননি।”

চট্টগ্রামে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দূরবস্থা তুলে ধরে এই বিএনপি নেতা বলেন, “যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে, তারা ঈদের দিন নাফ নদীর তীরে শুয়ে আছে অনাহারে, অর্ধাহারে, খোলা আকাশের নিচে, খাদ্যহীন অবস্থায়।”

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের পরিচালনায় মানববন্ধনে গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সহসভাপতি আবুল হোসেন বক্তব্য রাখেন।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31