৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শিশুর জরুরি সহায়তা প্রয়োজন : ইউনিসেফ

॥ গিরিদর্পণ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মৌসুম এবং মিয়ানমারে চলমান সহিংসতা ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার হুমকিতে থাকা ৭ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শিশুকে সহায়তা করতে জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাম্প্রতিক ঢল শুরুর ছয় মাসপূর্তিতে শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইউনিসেফ বলেছে, আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মৌসুমে সৃষ্ট বন্যায় জরাজীর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো প্লাবিত হতে পারে। আর তেমনটা হলে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যাবে। এতে ক্লিনিক, শিশু-শিক্ষাকেন্দ্র ও শিশুদের জন্য চালু করা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানাদি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক ১ লাখ ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রয়ে গেছে, যারা সহিংসতার ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতির কারণেই তাদের অনেক আত্মীয় ও প্রতিবেশী সেখান থেকে পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশে আনুমানিক প্রায় ৫ লাখ ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু রয়েছে, যারা গত বছর ও তার আগে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা-¯্রােতের সঙ্গে চলে আসে।
জাতিসংঘের শিশু ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের জরুরি কর্মসূচির পরিচালক ম্যানুয়েল ফন্টেইন বলেন, ‘প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু মূলত আটকা পড়েছে! হয় তারা সহিংসতার কারণে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে অথবা মিয়ানমারের ভেতরেই বাসস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে অথবা দেশে ফিরতে না পারায় বাংলাদেশের জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে আটকা পড়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এটা এমন এক সংকট, যার কোনো ত্বরিত সমাধান নেই এবং মূল কারণ নিরসনে সমন্বিত প্রচেষ্টা না নেয়া হলে এর সমাধানে বেশ কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিজেদের ঘর-বাড়ি ও সমাজ থেকে বিতাড়িত হওয়া রোহিঙ্গারা এখন ভাসমান সম্প্রদায়ের মানুষ। স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়ে নতুন করে হুমকির মুখোমুখি হওয়া এই মানুষগুলো তাদের মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ, খুবই সীমিত আকারের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগ এবং মানবিক সহায়তার ওপর তাদের ক্রমাগত নির্ভরশীল হয়ে পড়ার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করে রাখাইনে সহিসংতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করা হলে তা শরণার্থীদের জন্য মিয়ানমারে তাদের আগের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা, নাগরিকত্ব, ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর সুযোগসহ একটি সুন্দর ভবিষ্যতের সুযোগ না পাওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা বাড়ি ফিরে যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ম্যানুয়েল ফন্টেইন।
২০১৭ সালের আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যের অনেক অংশে প্রবেশাধিকার না থাকায় ইউনিসেফ ও অন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
ইউনিসেফ বলছে, অবিলম্বে এবং নির্বিঘেœ এই সব শিশুর কাছে পৌঁছার সুযোগ দেয়া অপরিহার্য। একইসঙ্গে আন্তঃসাম্প্রদায়িক উদ্বেগ চিহ্নিত করতে এবং সামাজিক সহাবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরতে দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টাও অপরিহার্য।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সরকারের নেতৃত্বে ও নজরদারিতে সহায়তা প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিপর্যয় এড়ানো গেছে, যেখানে স্থানীয় অধিবাসীরা ৭৯ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। ইউনিসেফ পানির কূপ খনন, কয়েক হাজার ল্যাট্রিন স্থাপন এবং শিশুদের কলেরা, হাম ও অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করতে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনায় সহায়তা প্রদানে ব্যাপক আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অংশ হয়েছে।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930