বিএনপি এখন মুসলিম লীগের পরিণতির দিকে এগোচ্ছে– তথ্যমন্ত্রী

তিনি বলেন, “৭০ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ বড় দল হওয়ার পরও তার মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল। কর্মীরা পক্ষ ত্যাগ করে জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের পক্ষ নিয়েছিল এবং এভাবেই মুসলিম লীগের যুগের অবসান ঘটেছিল।

“এই নির্বাচনেও বিএনপি-জামাত অশান্তির রাজনীতি, মনোনয়ন বাণিজ্যের রাজনীতি করেছে। ফলে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের উপর নিয়ন্ত্রণটা তারা রাখতে পারেনি, কর্মীদের অনাস্থার সম্মুখীন হয়েছে। বিএনপি-জামাতের কর্মীরা পক্ষ ত্যাগ করেছে এবং মহাজোটের কর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে কাজ করেছে।”

রোববার অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পথে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রায় সব আসনেই বড় ব্যবধানে হেরেছে।

আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী জাসদের সভাপতি ইনু কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে নৌকা প্রতীকে ভোট করে ২ লাখ ৮২ হাজার ৬২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত (জাপা-জাফর) প্রার্থী আহসান হাবিব লিংকন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৭৫১ ভোট।

মহাজোটের জয়ের পেছনে বিএনপি জোটের ব্যর্থতার পাশাপাশি তরুণ ভোটারদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনও বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “দুই কোটি ২৫ লাখ নতুন ভোটার সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সব কিছুকে মিলিয়ে একটা বিরাট ব্যবধানে মহাজোটের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছে। এই নির্বাচন ৭৫ পরবর্তী সাম্প্রদায়িকতার ধারক-বাহক বিএনপি-জামাতের পতনের সূচনা করে দিল।”

হেফাজতে ইসলাম

নির্বাচনের আগে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্যের অখিযোগের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “হেফাজতের আন্দোলনের পরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দাবির কাছে এক চুলও নতি স্বীকার করেনি। হেফাজতের সঙ্গে কোনো সখ্য আমাদের হয়নি, রাজনৈতিক মিত্রতাও আমাদের হয়নি, এমনকি শেখ হাসিনারও হয়নি।

“যেটা হয়েছে সেটা কওমি মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে। আমি মনে করি কওমি মাদ্রাসাকে মূল ধারায় নিয়ে আসা একটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। সময় লাগবে, কিন্তু কওমি মাদ্রাসাটা আর অন্ধকারে থাকবে না, মূল স্রোতের আলোতে থাকবে। বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার জন্য কওমি মাদ্রাসা একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।”

জামায়াত নিষিদ্ধের পক্ষে নতুন সরকার কী ভূমিকা রাখবে- ব্লগার মারুফ রসুলের এ প্রশ্নের উত্তরে ইনু বলেন, ““জামাত নিষিদ্ধের ব্যাপারটা আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে আছে বলে আমরা চট করে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দিয়ে জামাতকে নিষিদ্ধ করিনি। তবে আমরা দল জাসদ জামাতকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে। জার্মানির নাজি দলের মতো জামাতকে দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধী দল হিসাবে বিচারের মুখোমুখি করার পক্ষে।”

“ভবিষ্যতে শেখ হাসিনার সরকার যেহেতু অসাম্প্রদায়িক নীতি অবলম্বন করবে, তাতে জামাতের দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে, জামাত নিশ্চিহ্ন হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার,” বলেন তিনি।

বাংলাদেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অক্ষুন্ন রেখে লেখালেখি করলে ব্লগারদের ‘কোনো অসুবিধা হবে না’ বলেও আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “সংবিধান প্রদত্ত যে বাক স্বাধীনতা রয়েছে সেটাকে রক্ষা করেই দেশ পরিচালনা করা উচিত। সুতরাং মুক্তচিন্তার ওপরে কোনো আক্রমণ হবে না। তবে কোনো ধরনের উস্কানি এবং বিদ্বেষ সৃষ্টি কোনো গণতান্ত্রিক রীতিনীতির মধ্যে পড়ে না।”

সরকারের অগ্রাধিকারমূলক কাজ

নতুন সরকার গঠনের পর মহাজোট সরকারের অগ্রাধিকারমূলক কাজ কী হবে- এ প্রশ্নের উত্তরে জাসদ সভাপতি বলেন, “সামরিক শাসক ও সাম্প্রদায়িকতার যেটুকু জঞ্জাল পড়ে আছে সেগুলো পরিষ্কার করা। পাশাপাশি উন্নয়নটাকে আরেকধাপে উন্নীত করে দেওয়া।

এরপাশাপাশি তিনটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেগুলো হচ্ছে- বৈষম্য উচ্ছেদ, দুর্নীতি উচ্ছেদ আর সুশাসনের জন্য লড়াই করা।”

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30