চট্টগ্রাম আঞ্চলিক টাস্কফোর্স ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা :: মাদকের অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে ঃ বিভাগীয় কমিশনার

চট্টগ্রামের নবাগত বিভাগীয় কমিশনার এ.বিএম আজাদ এনডিসি বলেছেন, ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক, চোরাচালান, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ছিনতাই, ধর্ষণ, ইভটিজিং, শ্লীলতাহানি, চুরি-ডাকাতি ও জ্বালানী তেল পাচার রোধে টাস্কফোর্সের অভিযান আরো জোরদার করা হবে। অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, বিজিবি ও অন্যান্য আইন-শৃংখলা বাহিনীকে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। অবৈধ পন্থায় যাতে কোন দেশের পণ্য দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে বা আমাদের দেশীয় পণ্য বাইরে যেতে না পারে সে দিকে নজর রাখতে হবে। মাদকের অভিশাপ থেকে সমাজকে মুক্ত করতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে। চীনের পাশাপাশি করোনা ভাইরাস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে। বাংলাদেশ এখনো করোনা আসেনি। এ ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া আগামী ২৯ মার্চ অনুষ্টিতব্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ট ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদেরকে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। গতকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ইং মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম আঞ্চলিক টাস্কফোর্স সভা, বিভাগীয় আইন-শৃংখলা কমিটির সভা,জেলা প্রশাসকগনের সাথে সমন্বয় সভা ও বিভাগীয় রাজস্ব সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিস পৃথক সভাগুলোর আয়োজন করেন। বিগত সভার সিদ্ধান্ত ও অগ্রগতি তুলে ধরেন বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (আইসিটি) মোঃ আবু রায়হান ।
তিনি বলেন, ভেজাল খাদ্য মানব দেহকে ধ্বংস করে। ভোক্তা হিসেবে এতে সকলেই সংযুক্ত। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কর্মকান্ড। দেশের সকল পর্যায়ের মানুষের ভেজাল বিরোধী অভিযানে সম্পৃক্ত হতে হবে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে ভেজাল বিরোধী অভিযানে সহযোগিতা করার জন্য জেলা প্রশাসকসহ সরকারের সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের এ সময় তিনি নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা আরো জোরদার করতে হবে। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের প্রত্যেক জেলায় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার, চোরাচালানরোধ, জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোন ঘটনাকে পুঁজি করে জেলায় কোন ধরনের আইন-শৃংখলার ঘটতে দেয়া হবেনা। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মোঃ মাহাবুবর রহমান বলেন, নগরীতে আইন শৃংখলা পরিস্থিতি ভালো। আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ হবে। স্থানীয়দের মধ্যে কোন ধরণের বে-আইনি অস্ত্র ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায়নি । সরকারের নির্দেশনায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে জঙ্গিবাদ প্রায় নির্মুল হয়ে গেছে। টাস্কফোর্সের সকল অভিযানগুলো সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ.বি.এম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত পৃথক সভাগুলোতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সিএমপি কমিশনার মোঃ মাহাবুবর রহমান, বিভাগীয় স্থানীয় সরকার পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, বিজিবি‘র জোনাল কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মামুন, কমান্ডার এম শরিফুল হক খান, চট্টগ্রাম ৮ বিজিবি পরিচালক লে. কর্ণেল মো. মুনির হাসান, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোঃ নুরুল আলম নিজামী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোঃ হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন (চট্টগ্রাম), তন্ময় দাস (নোয়াখালী), মাজেদুর রহমান (চাঁদপুর), একেএম মামুনুর রশীদ (রাঙ্গামাটি), আবুল ফজল মীর (কুমিল্লা), মোঃ কামাল হোসেন (কক্সবাজার), মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম (বান্দরবান), প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস (খাগড়াছড়ি), মো. ওয়াহিদুজ্জামান (ফেনী), হায়াত-উদ-দৌলা (ব্রাহ্মণবাড়ীয়া), কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সিইও মীর শওকত হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী, আনসার-ভিডিপি পরিচালক মোঃ সাইফুজ্জামান, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ মজিবুর রহমান পাটওয়ারী, বৃহত্তর চট্টগ্রাম পণ্য পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ আবদুল মান্নান, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ সাহাবউদ্দিন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক নুসরাত সুলতানা, চট্টগ্রাম জেলা পিপি এডভোকেট একেএম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, চোরাচালান নিরোধ ট্রাইবুন্যালের স্পেশাল পিপি এডভোকেট হরিপদ চক্রবর্তী, মহানগর পিপি এডভোকেট ফখরুদ্দিন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাধবী বড়–য়া, আন্তঃজিলা বাস মালিক সমিতির লাইন সম্পাদক মোঃ আবুল বশর প্রমূখ। পৃথক সভাগুলোতে বিভাগের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জানানো হয়, ভেজাল খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন রোধে ডিসেম্বর-২০১৯ মাসে ১৭৫ টি অভিযান পরিচালনা করে ৩২১টি মামলা রুজু করে ৩৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩ শত টাকা আদায় করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসে ১৭২ টি অভিযান পরিচালনা করে ৩২৯টি মামলা রুজু করে ৩১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। এতে ২ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
সভায় আরো জানানো হয়, মাদক চোরাচালান ও বিপণন রোধে চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলায় ডিসেম্বর-২০১৯ মাসে ১৯৯টি অভিযান পরিচালনা করে ২৬৬টি মামলা দায়ের করে এক লক্ষ ১৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া জানুয়ারি মাসে ১১৯টি অভিযান পরিচালনা করে ২৮৩টি মামলা দায়ের করে এক লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের তুলনায় জানুয়ারি মাসে মামলা সংখ্যা ১৭টি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৪৩হাজার টাকা জরিমানা বৃদ্ধি পেয়েছে।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30