খাগড়াছড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও খাজনা আদায়’র মধ্যদিয়ে মং সার্কেলের তিনব্যাপী রাজপুণ্যাহ শুরু পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত আইনটা নিজের আগে ধর রাখতে হবে—–কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি

॥ মোঃ আবু তৈয়ব, লিটন ভট্টাচার্য্য রানা, খাগড়াছড়ি ॥
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মং সার্কেলের ঐতিহ্যবাহী রাজস্ব আদায়ী উৎসব রাজ পূণ্যাহ্ উৎসব উদযাপিত হয়েছে। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে খাগড়াছড়ি শহরের জিরোমাইলস্থ মহালছড়ায় মং রাজবাড়ি প্রাঙ্গনে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘রাজপূণ্যাহ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মং সার্কেলের প্রধান রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরীর হাতে রাজস্ব ও উপহার তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। এই উৎসব আদিবাসীদেও জন্য সংস্কৃতির একটি অংশ। নিজস¦ সংস্কৃতি নাচ দিয়ে বরণ করেন রাজাকে। এদিনে মৌজা প্রধান ও হেডম্যান প্রজাদের কাজ থেকে আদায় করা ভূমি ও জুমের কর রাজার হাতে তুলে দেন। তেমনি সাধারণ প্রজারাও রাজার সান্নিধ্য লাভ করেন। এ সময় তারা রাজাকে উপটোকেন হিসাবে জুমের বিভিন্ন ফসলের, চাল ও ফলমূল দিয়ে থাকেন।
শুক্রবার থেকে এ উপলক্ষে তিন দিনব্যাপি যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত আকারে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এবার কোন প্রকারের বড় ধরণের উৎসব আয়োজন এবং মেলা এবার হচ্ছেনা। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে দিনব্যাপি পূণ্যাহ অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করা হয়।
এতে মং সার্কেল চীফ (মং রাজা) রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সংসদ সদস্য ও (প্রতিমন্ত্রী পদ-মর্যাদার) ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।
এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সিএইচটি হেডম্যান নের্টওয়ার্কের সভাপতি সাবেক পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী মারমা, পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, কাব্বারি সাবেক সদর উপজেলার ভাইচ চেয়ারম্যান রণিক ত্রিপুরা।।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি রিজিয়নের জি টু আই মেজর মো: জাহিদ হাসান, গুইমারা রিজিয়নের ল্যাফটেন্ট মোঃ মোতালেব পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের সদস্য শুভ মঙ্গল চাকমা, শতরুপা চাকমা, শাহিনা আক্তার,খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: শানে আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এপিবিএন মো: মনিরুজ্জামান সেবা, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেনিয়া চাকমা, খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রশিদসহ হেডম্যান, কার্বারী, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত আইনটা নিজের আগে ধর রাখতে হবে। অন্যের ইশারায় দিয়ে নয়, নিজেদের প্রথাগত আইন দিয়ে বিচার কায্য চালাবো। যদি ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সমুন্নত রাখা, ১৯০০ সালের শাসনবিধি (হিলট্র্যাক্ট ম্যানুয়েল) অধিকতর কার্যকর করা, হেডম্যান-কার্বারীদের সম্মানী বৃদ্ধিসহ ক্ষমতায়িত করা, হেডম্যানদের কার্যালয় নির্মাণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। ১৯৯৭ শান্তিচুক্তি হয়েছে পার্বত্যবাসীদের শান্তি জন্য। পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর যেমন উন্নয়ন হয়েছে, তেমনে পার্বত্যবাসীর সকল সম্প্রদায় মানুষের জীবন মান উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, হেডম্যানদের কার্যালয়কে সম্মান করতে হবে, রাজার কার্যালয়কে সম্মানিত করতে হবে। যখন তারা কাজ করবার সুযোগ পাবে। হেডম্যান-কার্বারীদের নিয়েই আমাদের অনেকগুলো মামলা নিষ্পত্তি করতে পারি। হেডম্যান-কার্বারীদের ভাতা বর্তমান সরকারই দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের আমলেই এই ভাতার স্বীকৃত পেয়েছে। আপনাদেরকে মূল্য দেওয়া, আপনাদের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা যায়, দ্বিতীয় দিন শনিবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বার্ষিক রাজস্ব খাজনা আদায় অনুষ্ঠানে মং রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী দিনব্যাপি ৮৮টি মৌজা প্রধান বা হেডম্যান এবং ৭০১জন পাড়া প্রধান (কার্বারী)-এর কাছ খাজনা ছাড়াও বিভিন্ন উপঢৌকন গ্রহণ করবেন। এদিন রাজবাড়িতে হেডম্যান-কার্বারীদের মধ্যাহ্ন ভোজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাজবাড়ি সূত্রে আরো জানা যায় তৃতীয় দিন (১২ ডিসেম্বর) নারী হেডম্যান ও নারী কার্বারীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংরক্ষিত মহিলা এমপি বাসন্তী চাকমা প্রধান অতিথি এবং মং রানী উখ্যেংচিং চেীধুরী সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়াও তৃতীয় দিনের আনুষ্ঠানিকতায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য শতরূপা চাকমা এবং ইউএনডিপি’র প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।
রাজপূণ্যাহ উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য হিরনজয় ত্রিপুরা জানান, প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজন পার্বত্যাঞ্চলের তিনটি সার্কেলে বিভক্ত বসতির সকল জনগণের কাছে একটি ভিন্নধর্মী আবেদন রাখে। রাজপূণ্যাহকে ঘিরে ব্যাপক উৎসব আয়োজনও হয়ে থাকে কিন্তু করোনা মাহামারীর কারণে এবার এসমস্ত কাজগুলো ছাড়া সমাধান ৩দিনব্যাপি রাজপূণ্যাহ উদযাপিত হচ্ছে।
সভায় মং রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘রাজপূণ্যাহ’ অনুষ্ঠান এবার অত্যন্ত ছোট আকারে করতে হচ্ছে। এ মহামারীর কারণে বিগত বছর উৎসব করতে পারেনি। আশা করি ভবিষ্যতে এই বিশ্ব থেকে করোনা মহামারী নির্মূল হলে বড় আকারে জাঁকঝমকপূর্ণভাবে করতে পারবো। এজন্য সবসময় জনগণ এবং সরকারসহ সকলের কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি আরো বলেন, এবারের রাজপূণ্যাহ’র প্রত্যাশা স্বরূপ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত ভূমি ব্যবস্থাপনাকে সমুন্নত রাখা, ১৯০০ সালের শাসনবিধি (হিলট্র্যাক্ট ম্যানুয়েল) অধিকতর কার্যকর করা, হেডম্যান-কার্বারীদের সম্মানী বৃদ্ধিসহ ক্ষমতায়িত করা, হেডম্যানদের কার্যালয় নির্মাণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31