কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কলেজের’ ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে সোমবার বিকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।রাষ্ট্রপতি সোমবার থেকে তিন দিনের কিশোরগঞ্জ সফরে রয়েছেন।কলেজের ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধু শিক্ষার আলো ছড়ায় না, মানবসম্পদও তৈরি করে। নতুন প্রজন্ম ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে শুধু উচ্চশিক্ষা নয়, পড়াশুনার পাশাপাশি সৃজনশীল কাজেও আগ্রহী হতে হবে। প্রতিযোগিতার যুগে তোমাদের প্রতিযোগিতা করেই এগিয়ে যেতে হবে।”
এর আগে রাষ্ট্রপ্রধান হামিদ মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে রওনা হয়ে হেলিকপ্টারে করে ইটনা আসেন। উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে তাকে গার্ড অনার দেওয়া হয়। তারপর তিনি অলওয়েদার সড়কের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন।
কলেজের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষা ও সৃজনশীলতার বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধ, জঙ্গিবাদ প্রভৃতি বিষয়ে উপদেশ দেন।
সবাইকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ ধারণ করে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হওয়ার আহ্বান জানান। তাহলেই দারিদ্র্যমুক্ত জনগোষ্ঠী ও সোনার বাংলা তৈরি সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
শিক্ষার্থীদের উপদেশ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “তোমরা কখনও মুক্তিযুদ্ধের কথা ভুলবে না। মুক্তিযুদ্ধের কথা সব সময় মনে রাখবে।”
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। তাই সকলকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে লালন করে সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশসেবা করতে হবে।”
জঙ্গিবাদ এখন সারাবিশ্বের মানুষের জন্য একটি বড় দুশ্চিতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে অসাম্প্রদায়িক। সব সম্প্রদায়ের মানুষই এখানে মিলেমিশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে। কিন্তু বর্তমানে দেশের অনেক উচ্চশিক্ষিত যুবক ও তরুণরা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের জঙ্গিবাদের সর্বনাশা পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে।”
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অঙ্গনের বহুল আলোচিত প্রসঙ্গ নির্বাচনের বিষয়টিও রাষ্টপ্রধান তার বক্তব্যে নিয়ে আসেন।
তিনি বলেন, “নির্বাচন গণতন্ত্রের একটি অপরিহার্য অংশ। একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, জনগণেরও দায়িত্ব রয়েছে। জনগণকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করতে হবে।”
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপ্রধানের অনুষ্ঠানে ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান, ইটনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান, ইটনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসমাইল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান খলিল ও ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কলেজের’ অধ্যক্ষ মো. ইসলাম উদ্দিন।
বুধবার জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার বেশ কিছু কর্মসূচিতে অংশ নেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তারপর হেলিকপ্টারে করে তিনি ঢাকার উদ্দেশে কিশোরগঞ্জ ছেড়ে যাবেন।
বান্দরবানে ক্যান্সার, কিডনী, জন্মগত হৃদরোগ,স্ট্রোকে প্যারালাইজড
ও লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্তদের অনুদানের চেক বিতরণ
॥ রাহুল বড়–য়া ছোটন, বান্দরবান ॥ বান্দরবানে “ক্যান্সার ,কিডনী,জন্মগত হৃদরোগ,স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও লিভার সিরোসিসসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের এককালীন অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়েছে। সোমবার (১৩ মার্চ) সকাল ১০টায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পার্বত্য জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এই অনুদানের চেক বিতরন করা হয়।
পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার সভাপতিত্বে চেক বিতরণ অনুষ্টানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ পরিষদের নির্বাহী সচিব মো:ইব্রাহিম খলিল। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল আবছার, সাবেক পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংক্যচিং চৌধুরী, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চন জয় তংঞ্চঙ্গ্যা, সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক কিরণ শংকর বিশ্বাস, ডেপুটি সিভিল সার্জন অং সুই প্রু চৌধুরী, জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার মো:শামীম হোছাইন, সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা মিল্টন মহুরী, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বাদশা মিয়া মাষ্টারসহ সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা ও জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী ও তাদের আত্মীয় স্বজনেরা। এসময় অনুষ্টানে “ক্যান্সার, কিডনী, জন্মগত হৃদরোগ, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও লিভার সিরোসিসসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচজনকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে মোট দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার এককালীন অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়।
আয়োজকেরা জানান,এই পর্যন্ত সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বান্দরবান জেলায় বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত পয়ত্রিশজনকে মোট সতের লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে এবং আগামীতে এই সমাজসেবামুলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
রাঙ্গামাটিতে মাসব্যাপী তাঁত বস্ত্র ও হস্তশিল্প মেলা শুরু
পাট চাষীদের সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করা হবে—বৃষ কেতু চাকমা
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেছেন, সোনালী আঁশ পাটের ঐতিহ্য ফিরে আনতে পরিষদ হতে পাট চাষীদের সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, এক সময় পাটকে আমাদের দেশের সোনালী আঁশ বলা হতো কিন্তু সঠিক মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা পাট চাষে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে। এর ফলে দেশে পলিথিন এর ব্যবহার দিন দিন যেমন বেড়েছে তেমনী চাষীরা তামাক চাষে উৎসাহিত হচ্ছে। এই অপচনশীল পলিথিন ও তামাক চাষের ফলে প্রতিনিয়তই পরিবেশের ক্ষতি সাধন হচ্ছে। তিনি তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে পাট চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগকে উদ্দ্যেগ গ্রহনের পরামর্শ দেন। তিনি পাটজাতীয় পণ্য ব্যবহারে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
রবিবার (১২মার্চ) বিকেলে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহযোগিতায় ও রাঙ্গামাটি উদ্যেক্তা উন্নয়ন পরিষদের আয়োজনে জিমনেসিয়াম মাঠে আয়োজিত মাসব্যপী তাঁত বস্ত্র ও হস্তশিল্প মেলার উদ্ধোধনী বক্তব্যে চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
উদ্ধোধন শেষে অতিথিরা মেলায় বসানো স্টলগুলো পরিদর্শন করেন। মাসব্যাপী এ মেলায় পাটজাতীয় পণ্যসামগ্রী, টেক্সটাইল, হস্তশিল্প’সহ বিভিন্ন প্রকারের মালামাল নিয়ে মোট ৫০টি স্টল বসে।
অনুষ্ঠানে পার্বত চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য মোঃ শাহজাহান মোল্লা, বিআইডিডি’র চেয়ারম্যান সুব্রত রাহা ও আশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব চাকমা বক্তব্য দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার চট্টগ্রামে নৌ ঘাঁটি ঈশা খাঁয় ‘বানৌজা নবযাত্রা’ ও ‘বানৌজা জয়যাত্রা’ নামের সাবমেরিন দুটির কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করেন।
নবযাত্রার অধিনায়ক কমান্ডার কে এম মামুনুর রশীদ এবং জয়যাত্রার অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাজহারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে কমিশনিং ফরমান নেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে ক্রুরা সাবমেরিনে ওঠেন।
বানৌজা ‘নবযাত্রা’ এবং বানৌজা ‘জয়যাত্রা’ দৈর্ঘ্যে ৭৬ মিটার, প্রস্থে ৭ দশমিক ৬ মিটার। টর্পেডো ও মাইনে সজ্জিত সাবমেরিন দুটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭ নটিক্যাল মাইল এবং ডিসপ্লেসমেন্ট এক হাজার ৬০৯ টন।
নৌবাহিনীর এ দুটি যুদ্ধযান শত্রু জাহাজ ও সাবমেরিনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ যুদ্ধকালীন দায়িত্ব পালনে সক্ষম বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে সাবমেরিন দুটির নামফলক উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন যুগে পদার্পণের এই মুহূর্তিটি উদযাপন করা হয় বহরের বিভিন্ন জাহাজ থেকে বেলুন উড়িয়ে ও রঙিন আতশবাজি পুড়িয়ে।
এরপর জাতীয় সংগীত বাজিয়ে সাবমেরিনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে প্রতীকী জীবন সঞ্চার করা হয় ডুবোজাহাজ দুটিতে।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর ত্রিমাত্রিক সক্ষমতা অর্জনের পরিচিতিমূলক একটি প্রদর্শনী দেখেন। এরপর সাবমেরিন দুটিকে স্বাগত জানিয়ে তোপধ্বনি করা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এবং তাকে স্বাগত জানিয়ে সাবমেরিনের ক্রুরা জয়োধ্বনি দেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী সাবমেরিন ঘুরে দেখেন।
চীনের দালিয়ান প্রদেশের লিয়াওনান শিপ ইয়ার্ডে গত বছরের ১৪ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদের কাছে সাবমেরিন দুটি হস্তান্তর করেন চীনের রিয়ার অ্যাডমিরাল লিউ জি ঝু।
বাংলাদেশ ও চীনের নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকদের যৌথ তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ ও ‘সি ট্রায়াল’ শেষে গত ২২ ডিসেম্বর সাবমেরিন দুটি চট্টগ্রামে আসে।
চীনের ইবাদা ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভির জন্য উচাং শীপইর্য়াড
এক ডজন টাইপ ০৩৫ জি (মিং ক্লাস) সাবমেরিন বানানো হয়েছিল ১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে। এর মধ্যে দুটি ২০১৬ সালে কিনে নেয় বাংলাদেশ সরকার।
হস্তান্তরের আগে লিয়াওনান শিপ ইয়ার্ডে সংস্কার ও আধুনিকায়ন করে ডুবোজাহাজ দুটির সামরিক ক্ষমতা ও কার্যক্ষমতা বাড়ানো হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সাবমেরিন দুটি নতুন নাম পেল।
প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে সাবমেরিন দুটির জন্য বেইজ সাপোর্ট ফ্যাসিলিটিজের উদ্বোধন এবং ডুবোজাহাজের জন্য পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটি ‘বিএনএস শেখ হাসিনার’ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
তিনি সকালে চট্টগ্রাম নৌঘাঁটিতে পৌঁছালে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আবু আশরাফ তাকে স্বাগত জানান।
মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সেনা ও বিমান বাহিনী প্রধান, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।
বিকালে পতেঙ্গা বোট ক্লাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার অধীনে বাস্তবায়িত ১৪ কোটি লিটার ধারণ ক্ষমতার ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার’ প্রকল্পের উদ্বোধন ও সুধী সমাবেশে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
রোববার চট্টগ্রামে নৌ ঘাঁটি ঈশা খাঁয় তিনি বাংলাদেশের প্রথম দুটি সাবমেরিন ‘বানৌজা নবযাত্রা’ ও ‘বানৌজা জয়যাত্রা’র কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে জনগণের উন্নয়ন করতে চাই। তবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আমাদের যা যা প্রয়োজন, আমরা সংগ্রহ করব।
“আমরা কারও সাথে কখনো যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাই না। যদি কেউ আমাদের আক্রমণ করে, আমরা যেন তার সমুচিত জবাব দিতে পারি, সেই প্রস্তুতি আমাদের সব সময় থাকবে।… এজন্য যা যা করণীয় আমরা করে যাচ্ছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি সত্যিকারের ‘ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে’ রূপান্তরের যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলাম, সাবমেরিন অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে তা পূরণ হল।
“আমাদের সকলের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন-ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের অংশ হিসেবে দুটি সাবমেরিন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সংযোজন করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত,” বলেন তিনি।
চীনে তৈরি ০৩৫ জি টাইপ অ্যাটাক সাবমেরিক বানৌজা ‘নবযাত্রা’ও বানৌজা ‘জয়যাত্রা’ দৈর্ঘ্যে ৭৬ মিটার, প্রস্থে ৭ দশমিক ৬ মিটার। টর্পেডো ও মাইনে সজ্জিত সাবমেরিন দুটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭ নটিক্যাল মাইল এবং ডিসপ্লেসমেন্ট এক হাজার ৬০৯ টন।
নৌবাহিনীর এ দুটি যুদ্ধযান শত্রু জাহাজ ও সাবমেরিনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ যুদ্ধকালীন দায়িত্ব পালনে সক্ষম বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
বিশ্বের ‘গুটিকয় দেশ’ সাবমেরিন পরিচালনা করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেই তালিকায় আজ থেকে বাংলাদেশের নাম স্থান পেয়েছে। জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার বিষয়।”
বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাতিসংঘের জন্য আন্তর্জাতিক জলসীমায় টহল দিয়ে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘অনন্য নজির স্থাপন করছে’ বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
চীনের দালিয়ান প্রদেশের লিয়াওনান শিপইয়ার্ডে গত বছরের ১৪ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদের কাছে সাবমেরিন দুটি হস্তান্তর করেন চীনের রিয়ার অ্যাডমিরাল লিউ জি ঝু।
বাংলাদেশ ও চীনের নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকদের যৌথ তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ ও ‘সি ট্রায়াল’ শেষে গত ২২ ডিসেম্বর সাবমেরিন দুটি চট্টগ্রামে আসে।
সাবমেরিন দুটির আধুনিকায়ন, ক্রুদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহযোগিতার জন্য চীন সরকার এবং দেশটির নৌবাহিনী ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন দুটির ক্রুদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটি একটি ‘বিরল সৌভাগ্য ও সম্মানের’ বিষয়।
“সাবমেরিন পরিচালনার ঝুঁকি আছে। তেমনি অত্যন্ত গর্বেরও বটে। আপনাদের প্রশিক্ষণ ও উদ্যোগে কাজে লাগিয়ে যখন কাজ করবেন তখন এই কঠিন কাজটিও আপনাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।”
ক্রুদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা নবীন ক্রু। আপনাদের লক্ষ্য হবে সমুদ্রে সফলভাবে সাবমেরিন চালনার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে প্রকৃত অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হওয়া।”
নবগঠিত এই সাবমেরিন আর্মকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শাখা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে নীতিমালা, অবকাঠামো ও ইক্যুইপমেন্ট দরকার তা তৈরির ক্ষেত্রেও ক্রুদের অবদান রাখার তাগিদ দেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে অসীম সাহসের সাথে সাবমেরিন চালনার চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করতে হবে।”
একাত্তরে চট্টগ্রামে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সরবরাহ লাইন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া অপারেশন জ্যাকপটের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতা যুদ্ধে অপারেশন জ্যাকপট পরিচালনার কেন্দ্রে ছিলেন দেশপ্রেমী এবং অকুতোভয় একদল প্রশিক্ষিত সাবমেরিনার।”
সাবমেরিনের সকল মিশনের সাফল্য কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাঙালি জাতির ইতিহাস বীরের ইতিহাস। কাজেই আমি নিশ্চিত, আপনাদের দেশপ্রেম, মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে এই সাবমেরিন দুটির সর্বোত্তম ব্যবহার আপনারা নিশ্চিত করবেন।”
আন্তর্জাতিক আদালতের মামলার রায়ে মিয়ানমারের কাছ থেকে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা এবং ভারতের কাছ থেকে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকার ওপর কর্তৃত্ব অর্জনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সমুদ্রসীমার সম্পদ কাজে লাগিয়ে যেন আমরা আর্থসামাজিক উন্নয়ন করতে পারি। আমরা এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে নৌ-বাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছি।”
নৌবাহিনীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি চীন থেকে সংগ্রহ করা অত্যাধুনিক করভেট নৌবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণে নিজস্ব সামর্থ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। খুলনা শিপইয়ার্ডে প্রথমবারের মত এলপিসি তৈরির কাজ চলছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাইডকে ফ্রিগেট নির্মাণ প্রকল্পের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে বাংলাদেশ ‘অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণতা’ অর্জন করবে। সমুদ্রে বিভিন্ন ‘অপ্রথাগত হুমকি’ মোকাবিলার জন্য নৌবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সও গঠন করা হয়েছে।
ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের সময়ে হেলিকপ্টার ও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফ্ট নিয়ে গঠিত হয় নেভাল এভিয়েশন।এর বহরে শিগগিরই আরও মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট ও আধুনিক সমর সরঞ্জাম সম্বলিত হেলিকপ্টার যুক্ত করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
নৌবহর বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌবাহিনীর নিজস্ব বিমান ও সাবমেরিন ঘাঁটিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়নে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এর ধারাবাহিকতায় পটুয়াখালীর রাবনাবাদ এলাকায় ‘বানৌজা শেরে বাংলা’ নামে নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ নৌঘাঁটির ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও নাবিকদের আবাসন এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা নৌ-অঞ্চলে বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
সাবমেরিন সংযোজনের সঙ্গে সঙ্গে এর নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, “সাবমেরিনের জন্য পৃথক ঘাঁটি নির্মাণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সাবমেরিন দুটির অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন এবং নৌবাহিনীর রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে নামফলক উন্মোচন করেন।
মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সেনা ও বিমান বাহিনী প্রধান, সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা ও কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।
মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা যারা ভুলে যায়, এদেশ তাদের নয়: প্রধানমন্ত্রী
জাতীয় সংসদে শনিবারের অধিবেশনে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই হত্যাকাণ্ড যারা ভুলে যায়, তাদের বাংলাদেশে থাকার কোনো অধিকার নাই; তাদের না থাকাই ভালো।
“আর, যারা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে দহরম মহরম করে, তাদের পাকিস্তানে চলে যাওয়াই ভালো। এই বাংলাদেশে তারা থাকলে, এদেশের মানুষের ভাগ্য সবসময় দুর্ভাগ্যে পরিণত হবে।”
২৩ বছরের শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা।
তার পর দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ বাঙালির জীবন ও অগণিত নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে গণহত্যা বাংলাদেশে হয়েছে এটার জন্য পাকিস্তানি সামরিক শাসকেরা যতটা দায়ী, আমাদের দেশের আল বদর, আল শামস, রাজাকার যারা এই পাকিস্তানিদের দালালি করেছিল তারাও ততটা দায়ী।
“পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তো পাকিস্তন থেকে এসেছিলো। তাদের এদেশের কোনো পথঘাট চেনার কথা নয়। তাদের পথঘাট চিনিয়েছে আলবদর, রাজাকার, আল-শামসম আর জামাত-শিবির। এরাই ছিলো পাকিস্তানিদের বড় দোসর।”
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ২৭ মার্চের দুঃসহ দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা তার পিতাকে ধরে নিয়ে যাওয়া এবং মা ও ছোট দুই ভাই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “২৭ তারিখ (২৭ মার্চ কিছুক্ষণের জন্য সান্ধ্য আইন তুলে নেওয়া হয়) যখন বের হয়েছি.. রাস্তায় রাস্তায় গুলিবিদ্ধ বা ট্যাংকের চাকায় পিষ্ঠ হওয়া মানুষ। গণহত্যা কী, তাতো নিজের চোখে দেখেছি।”
বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলি করে জনগণকে হত্যা করার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
ওই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “হাসপাতালে ওষুধ নাই, চিকিৎসক নাই, নার্স নাই। চারদিকে হাত-পা কাটা মানুষ।
“গণহত্যার প্রমাণ লাগে না। সারা বিশ্বের সকল পত্রিকায় এসেছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কীভাবে গণহত্যা করেছে। আমি নিজের চোখেও সেই বিভীষিকা দেখেছি। বাংলাদেশের এমন কোনো গ্রাম নেই, যেখানে গণহত্যার চিহ্ন নেই।”
সম্প্রতি পাকিস্তানের করাচি থেকে প্রকাশিত ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ, মিথস এক্সপ্লোডেড’ নামে একটি বইয়ের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “আজকে দেখছি, আজো পাকিস্তানিদের জ্ঞান ফেরেনি। মিথ্যে গবেষণা প্রচার করছে। এখনো তারা মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।
“আমাদের দেশের কিছু দালাল রয়েছে। নিজেরই লজ্জা হয় এই লোকটাকে আমি অবসরে যাওয়ার সময় মেজর জেনারেল পদে প্রমোশন দেই। যে জেড এ খান.. সে তার বইয়ে লেখে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নাকি ভারতের ‘র’ (গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং) ষড়যন্ত্রে এসেছে।”
পাকিস্তানি নাগরিক জুনায়েদ আহমেদের লেখা ওই বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর জেনারেল জেড এ খান। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। এক-এগারোর পরবর্তী সময়ে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিতি পান।
যারা এখনো পাকিস্তানিদের পদলেহন করে, তাদের ‘কুলাঙ্গার’ আখ্যায়িত শেখ হাসিনা বলেন, “যতই লাথি খাক তারপরও তারা তাদের পদলেহন করবে। তারপরও তাদের পা চাটবে। এ ধরণের মানসিকতর রয়েছে বলেই আমাদের দেশের মানুষ কষ্ট পায়।
গত বছর ১৪২ জনের মৃত্যুর পর বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করেছিল সরকার। এবারও বিস্মৃত এলাকাজুড়ে বজ্রঝড় হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদদের তথ্য অনুযায়ী, মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে কালবৈশাখী, বজ্রপাত আর বজ্রঝড়ের মৌসুম।
এর মধ্যে মার্চে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১-২ দিন মাঝারি বা তীব্র কালবৈশাখী অথবা বজ্রঝড় এবং অন্যত্র ২-৩ দিন হালকা অথবা মাঝারি কালবৈশাখী বা বজ্রঝড় হতে পারে।
এপ্রিলে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ৩-৪ দিন মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী বা বজ্রঝড় এবং অন্যত্র ২-৩ দিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী ও বজ্রঝড় হতে পারে।
তাৎক্ষণিক পূর্বাভাস (নাউ কাস্টিং), ব্যাপক প্রচারণা আর জনসচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে এ ধরনের দুর্যোগ থেকে প্রাণহানির পরিমাণ কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বলছে, বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রচার ও জনসচেতনতায় তৎপরতার পাশাপাশি দেশজুড়ে ১০ লাখ তালগাছ লাগানোর পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে তারা।
অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সানাউল হক খান জানান, আবহাওয়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় পূর্বাভাস অধিদপ্তর সঠিকভাবে দিলেও বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের।
“বজ্রমেঘ তৈরির ৩০-৪৫ মিনিটের মধ্যে দিক ও সম্ভাব্য স্থান শণাক্ত করে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। এসময় নদীবন্দরগুলোকে দৈনিক চার বার পূর্বাভাসও দেওয়া হয়,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আবহাওয়া অফিসগুলোর মধ্যে উচ্চপ্রযুক্তির রাডার ও ডফলার রাডার রয়েছে। ২৪ ঘণ্টা আগে পূর্বাভাস দিতে বিমান বন্দরসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অধিদপ্তর ও স্থাপনার উচ্চ প্রযুক্তিকেও কাজে লাগানো হচ্ছে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ।
“আমরা এখন স্বল্প সময়ের নাও কাস্টিংও দিচ্ছি। ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসের পর আরও নিখুঁত করে নির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিত করে এসব পূর্বাভাস দেওয়া হয়।”
“কিন্তু পূর্বাভাস দিলেই তো হবে না এগুলো প্রচারে গণমাধ্যমসহ অন্যান্য অধিদপ্তরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে,” বলেন আবহওয়াবিদ সানাউল।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডব্লিউএফএম রিচার্স ফেলো ও বিলুপ্ত সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক মোহন কুমার দাস বলেন, অধিদপ্তরের যে প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো রয়েছে তা দিয়ে আরও নিখুঁতভাবে কয়েকঘণ্টার ব্যবধানে হুমকিপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করা যায়।
“উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা না বলে জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যন্ত পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। হাওর এলাকায় বজ্রপাত ও বজ্রঝড়ের প্রবণতা বেশি। এসব এলাকাকে চিহ্নিত করে জনসচেতনতায় ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে।”
গত বছর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে এক বছরে ১৪২ জনের মৃত্যুর খবর সংসদে দিয়েছিলেন। ওই বছর কেবল মে মাসের দুই দিনেই এ দুর্যোগে ৮১ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল।
বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে গড়ে দুই থেকে তিনশ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
কালবৈশাখীর মৌসুমে বজ্রঝড় বেশি হয় বলে বিলুপ্ত সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সুজিত কুমার দেবশর্মা জানান।
“যখন কিউমুলোনিম্বাস মেঘ তৈরি হয়, তখনই বজ্রঝড় হয়ে থাকে। কিউমুলোনিম্বাস মেঘ হচ্ছে খাড়াভাবে সৃষ্টি হওয়া বিশাল আকৃতির পরিচালন মেঘ; যা থেকে শুধু বিদ্যুৎ চমকানো নয়, বজ্রপাত-ভারি বর্ষণ-শিলাবৃষ্টি-দমকা-ঝড়ো হাওয়া এমনকি টর্নেডোও সৃষ্টি হতে পারে।”
বায়ুমন্ডলে বাতাসের তাপমাত্রা ভূ-ভাগের উপরিভাগের তুলনায় কম থাকে। এ অবস্থায় বেশ গরম আবহাওয়া দ্রুত উপরে উঠে গেলে আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শ পায়। তখন গরম আবহাওয়া দ্রুত ঠান্ডা হওয়ায় প্রক্রিয়ার মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়।
বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বিদ্যুৎস্পর্শের সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বজ্রঝড়ের সময় গাছ বা খুঁটির কাছাকাছি থাকা নিরাপদ নয়। ফাঁকা জায়গায় যাত্রী ছাউনি বা বড় গাছে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অত্যন্ত বেশি।
ক্ষয়ক্ষতি কমাতে তালগাছ ঃ
দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বৃহস্পতিবার বলেন, “বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রচুর পরিমাণে তালগাছ ও নারকেল গাছ রোপণ করা হলে সেগুলো বজ্রনিরোধক দন্ড হিসেবে কাজ করবে। এজন্য সরকারিভাবে সারাদেশে ১০ লাখ তালগাছের চারা রোপণ করা হচ্ছে।”
বজ্রপাত একটি নতুন দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ বলেন, “বজ্রপাত যে কোনোভাবেই ভূমিতে আসবে। সেক্ষেত্রে খোলা জায়গায় উঁচু গাছ থাকলে তাতে বাহিত হয়ে তা ভূমি স্পর্শ করবে। তালগাছ সাধারণ সবচেয়ে উঁচু হয়ে থাকে।”
এ কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় তালাগাছ লাগানো শুরু হয়েছে। তবে তালগাছ বেড়ে উঠতে বছর দশেক সময় লাগে। একসময় প্রকৃতির এ সহায়তা কাজে লাগবে ও উপকার পাবে সাধারণরা।
হাওর এলাকার জন্যেও বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানান রিয়াজ আহমেদ।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, বজ্রপাতের সময় পাকা বাড়ির নিচে আশ্রয় নিতে এবং উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে থাকতে হবে। এ সময় জানালা থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি ধাতব বস্তু এড়িয়ে চলা, টিভি-ফ্রিজ না ধরা, গাড়ির ভেতর অবস্থান না করা এবং খালি পায়ে না থাকারও পরামর্শ দেন তিনি।
॥ আমান উল্লাহ আমান, টেকনাফ ॥ কক্সবাজারের টেকনাফে কর্মব্যস্ত দিন কাটালেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহাজাহান খান। টেকনাফ নদী বন্দর ও স্থলবন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা ও জেটি পরিদর্শন করেন। বৈঠকে সীমান্ত বাণিজ্য ব্যবসায়ী বন্দর পরিচালনা সংস্থা ও পরিবহণ সেক্টরের প্রতিনিধিরা চালক, হেলপারদের বিশ্রামগার, জাহাজযট নিরসন কপ্লে একাধিক জেটি নির্মাণসহ বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে তা সমাধানে দাবী তুলে সংশ্লিষ্টরা। এসময় মন্ত্রী যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্থ করেন এবং মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত সম্প্রসারনে নৌ-বন্দর প্রতিষ্টা করা হবে বলে জানান। পরে মন্ত্রী সেন্টমার্টিন পৌছেঁ বেলা সোয়া ৩ টার দিকে বিআইডব্লিউটিএর জেটির কাজ পরিদর্শন ও সেন্টমার্টিন লাইট হাউজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। তিনি ১০ মার্চ শুক্রবার সকালে ১১ টার দিকে টেকনাফ স্থল বন্দরে পৌছেঁ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।
এর আগে সকালে তিনি কক্সবাজার টেকনাফ সড়কে পাশ্ববর্তী ঘুমধুম সীমান্তের স্থলবন্দরের জায়গা পরিদর্শন করেন। এসময় নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহাজাহান খান বলেন, অবিলম্বে ঘুমধুমে স্থল বন্দর হবে। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার। বর্তমান সরকার সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার ও পার্বত্য অঞ্চলকে ঘিরে বিশেষ পর্যটন স্পট গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে এখানে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আনা-গোনার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল হবে।এলাকায় সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে কাগজ-কলমে রয়েছে ২৩টি স্থলবন্দর আছে। চালু রয়েছে ১০টি। শুক্রবার সকাল পৌনে ১০ টার সময় বাংলাদেশ মিয়ানমার মৈত্রী সড়কের সামনে এক পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার আহবান জানান মন্ত্রী। এতে উপস্থিত ছিলেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় সচিব অশুক কুমার রায়, স্থলবন্দর কতৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলমগীর, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক কমোডর আরিফ, বিআইডাব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর মোজাম্মেল হক, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আলী হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরাজুল হক টুটুল, বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি কৈসল্য মারমা, পার্বত্য জেলা প্রশাসক দিলিপ কুমার ভৌমিক, জেলা পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক আবু জার আল জাহিদ,টেকনাফ কোস্টগার্ড ষ্টেশন কমান্ডার তাসকীন রেজা, নাইক্ষংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামাল, উখিয়া নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মাইন উদ্দিন,টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মোঃ আলী, সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর, পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, টেকনাফ স্থলবন্দরের জিএম জসিম উদ্দিন চৌধুরী,সিএন্ডএফ এজেন্ট এস্যোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক এতেশামুল হক বাহদুর, জেলা ট্রাক মালিক গ্রপের সভাপতি নাঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, সাধারণ সম্পাদক এস্তাফিজুর রহমান,কক্সবাজার সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফজলুল করিম সাইদী, সাধরন সম্পাদক মুফিজুর রহমান প্রমূখ।
রাঙ্গামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ দিনের সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের সমাপনী
॥ নিজস্ব প্রতিবেক ॥ দেশে যতদিন পর্যন্ত গণমুখী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পাবে না ততদিন শিক্ষাঙ্গনে যথাযথ বাস্তবতা সৃষ্টি হতে পারে না বলে বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা গণমূখী করার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, দেশের যুব সমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে নৈতিক শিক্ষা দানের জন্য শিক্ষকদের আরো বেশী সচেতন হতে হবে। সমাজ জীবনে মানুষে মানুষে যে দ্বন্ধ সংঘাত, জাতি, সম্প্রদায় শ্রেনী ও লিঙ্গগত বৈষম্য রয়েছে তা শিক্ষার মাধ্যমে দুর করতে হবে।
শনিবার (১১ মার্চ) রাঙ্গামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাচঁ দশক পূর্র্তিতে ২ দিনের সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নানের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, রাঙ্গামাটি রিজিয়ন কমান্ডার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফারুক, রাঙ্গামাটি সদর জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল রেদুয়ানুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ কাওসার জাহান, ফরিদা পারভিন, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ান, রাঙ্গামাটি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক অঞ্জলিকা খীসা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা আরো বলেন, ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধের কারনে পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক, সমাজ জীবনে, শিক্ষা অঙ্গনে বিপর্যয় বয়ে আনে। প্রয়াত সাংসদ মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা নেতৃত্বে আবারও নতুন করে শিক্ষা আন্দোলন শুরু করা হয়। সেই ধারবাহিকতায় আজকে পার্বত্যাঞ্চলে শিক্ষার বিস্তৃতি ঘটেছে।
আলোচনা সভা শেষে সমাজে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় সন্তু লারমা ৪৫ জন প্রাক্তন কৃতি ছাত্রীদের মাঝে সন্মাননা প্রদান করেন। বিকেলে স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দুই দিনের উৎসব আজ রাতে শেষ হবে।
উল্লেখ্য, কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর পুরাতন রাঙ্গামাটি পানিতে তলিয়ে গেলে ১৯৬৬ সালে নতুন রাঙ্গামাটিতে প্রতিষ্ঠিত হয় রাঙ্গামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৭৩ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণ করেন। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এবছর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্ণ করে। বিদ্যালয় দুইদিনের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে যোগদিতে আসা বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ ছাত্রীদের আগমনে রাঙ্গামাটিতে এক মিলন মেলায় পরিণত হয়।
আগামী নির্বাচনে কে আসবে না আসবে সেটা দেখার কোন বিষয় নয়। সংবিধানের আলোকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি গতকাল শুক্রবার রাঙ্গামাটিতে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত দু দিন ব্যাপী সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বিকালে রাঙ্গামাটি সরকারী বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে সূবর্ণ জয়ন্তীর উৎসব উদ্বোধন করে তিনি আরো বলেন, সরকার দেশ থেকে জঙ্গীবাদ নির্মুলে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। এ সরকার দেশ থেকে জঙ্গীদের মুল উৎপাটন করেছে বলেও মন্তব্য করেন। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, মহিলা সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ভাইস চেয়ারম্যান তরুন কান্তি ঘোষ, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, রাঙ্গামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরিৎ কুমার চাকমা বক্তব্য রাখেন। ডেপুটি স্পিকার আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর সরকার এ পর্যন্ত চুক্তির অনেক ধারা বাস্তবায়ন করেছে। চুক্তি বাস্তবায়ণ একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার যে চুক্তি করেছে এই সরকার অবশ্যই তা বাস্তবায়ণ করবে। বিকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে ডেপুটি স্পিকার বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে ২ দিনের বিদ্যালয়ের সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন করেন। এর আগে সকালে শহরে বের করা হয় রাঙ্গামাটি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫০ বছর পূর্র্তিতে ২ দিনের সূবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের বর্নাঢ্য র্যালী। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান র্যালীর নেতৃত্ব দেন। র্যালীতে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রীরাসহ রাঙ্গামাটির সরকারী বেসরকারী পর্যায়ের কর্মকর্তা ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।
সকালে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বের করা হয় বর্ণাঢ্য র্যালী। এতে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রীরা অংশ নেন।
এদিকে সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উৎসবকে ঘিরে প্রশাসন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করছে।
কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর পুরাতন রাঙ্গামাটি পানিতে তলিয়ে গেলে ১৯৬৬ সালে নতুন রাঙ্গামাটিতে প্রতিষ্ঠিত হয় রাঙ্গামাটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৭৩ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্যালয়টিকে জাতীয়করণ করেন। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এবছর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্ণ করে। বিদ্যালয় দুইদিনের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে যোগদিতে আসা বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ ছাত্রীদের আগমনে রাঙ্গামাটিতে এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা, সম্মাণনা প্রদানসহ নানা আয়োজন রাখা হয়েছে। শনিবার বিকেলে সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবে সমাপনী অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রামা আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।