॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেছেন, অবৈধ অস্ত্র ঠেকিয়ে ও নেতাকর্মীদের উপর হামলা করে আওয়ামীলীগকে নিশ্চিহ্ন করতে আঞ্চলিক দলগুলো উঠে পরে লেগেছে। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারে থাকুক আর নাই থাকুক আওয়ামীলীগের আদর্শের প্রতি এখনকার সাধারণ মানুষ ভিষনভাবে আস্থা রেখেছে। তাই আওয়ামীলীগকে কখনোই নিশ্চিহ্ন করা সম্বব নয়। তিনি বলেন, আঞ্চলিক দলগুলো বুঝতে পেরেছে যতই দিন গড়াচ্ছে আওয়ামীগ ততই শক্তিশালী হচ্ছে এবং আওয়ামীগ ক্ষমতায় থাকলে তাদের এই অবৈধ অস্ত্র চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে তাই তারা নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা মনে করি যার যার রাজনীতি সে সে করবে। সাধারণ জনগনদের বোঝানোর দায়িত্ব রাজনৈতিক কর্মীদের। তারা তাদের রাজনৈতিক আদর্শের কথা বলবেন। জনগনই সিদ্ধান্ত নেবে তারা কি করবে কি করবেনা। এভাবে সহিংস সন্ত্রাসীর মাধ্যমে জনগনকে জিম্মি করা। অবৈধ অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করা আমরা কখনো সমর্থন করিনি ভবিষ্যতেও করবোনা।
বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রাসেল মারমার উপর আঞ্চলিক দলের সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে বুধবার (০৬ডিসেম্বর) সকালে বিলাইছড়ি দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সুরেশ কান্তি তংচঙ্গ্যার সভাপতিত্বে সমাবেশে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জমির হোসেন জমির, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য জয়সেন তংচঙ্গ্যা, বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অভিলাষ তংচঙ্গ্যা’সহ অন্যান্য নের্তৃবৃন্দরা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এস,এম শাহীদুল ইসলাম।
সমাবেশের আগে সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার আহত রাসেল মারমাকে দেখতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটে যান। উন্নত চিকিসার্থে তিনি রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে রাসেলকে নিয়ে আসেন।
উল্লেখ, গত মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিলাইছড়ি নলছড়া এলাকায় দুর্বৃত্তরা আওয়ামীলীগ নেতা রাসেল মারমার উপর হামলা চালালে তিনি গুরুত্বর আহত হন। পরে তাকে নেতাকর্মীরা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
সমাবেশে সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অতিতে সরকার গঠন করেছে। সরকার গঠন করেছে জাতীয় পার্টি। সরকার গঠন করেছে বিএনপি, সরকার গঠন করেছে আওয়ামীলীগ। জাতীয় পার্টি এখান থেকে দুই দুইবার নির্বাচিত হয়েছে। যে দিন থেকে জাতীয় পার্টির পতন হয়েছে তখন থেকে তাদের তেমন কার্যক্রম চোখে পরছেনা রাঙ্গামাটিতে। বিএনপি সরকারে ছিল তখন তারা রমরমা ছিল। এখন ক্ষমতায় নাই এখন তারাও দুর্বল হয়ে পরেছে। কিন্তু ব্যাতিক্রম হচ্ছে আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগ সরকারে যাওয়ার আগের থেকেই শক্তিশালী ও বেগবান ছিল। আমরা জেলা পার্টি অফিস করেছি যখন আমরা বিরোধী দলে ছিলাম।
তিনি বলেন, আগে পাহাড়ে জয় বাংলা শ্লোগান ছিলনা। এখন পাহাড়ে পাহাড়ে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগান শতস্ফুর্তভাবে দেয়। আজ পাহাড়ে পাহাড়ে বাড়ীঘর ও প্রতিষ্ঠানে যে কয়টা গৌতম বুদ্ধের, বনভন্তে, নেতাজি সুবাস বসু, রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মানবেন্দ্র লারমার ছবি থাকতো এখন এসব ছবির পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার সুযোগ্য কন্যা দেশনেত্রী শেখ হাসিনার ছবিও থাকে ঘরে ও প্রতিষ্ঠানে। এ কারনেই জনসংহতি সমিতি আওয়ামীলীগকে টার্গেট করেছে কোন ব্যাক্তিকে নয়।
তিনি আরো বলেন, তারা আওয়ামীলীগকে নিশ্চিহ্ন করতে উঠে পরে লেগেছে। কারণ আওয়ামীলীগ থাকা মানে জনগনের প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং জনগনের আস্থা বিশ্বাস আওয়ামীলীগের প্রতি তাই এই দলকে শেষ করতেই তারা উঠে পরে লেগেছে। কিন্তু তারা নিশ্চিহ্ন করতে পারছেনা। তারা মনে করেছিলো আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আগের মতো ভিতু রয়েছে। আগে যখনি তারা ধমক দিতো টেলিফোনে হুমকি দিতো আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা উপজেলা থেকে ভয়ে পালিয়ে জেলায় চলে আসতো। যার কারণে গত নির্বাচনে বিলাইছড়িতে আমরা মাত্র ১৫শত ভোট পেয়েছি। কিন্তু সময় পরিবর্তন ঘটছে। আগে নেতাকর্মীরা মার খেতো এবং মার খেয়ে বলতো মামলা দেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু এখন মামলা দেওয়ার সাহস নেতাকর্মীদের মনে সঞ্চয় হয়েছে এবং মামলাও দিচ্ছে। শুধু মামলা দেয়া নয় এই যে বিলাইছড়িতে ২০১৪ সালে নির্বাচনের পর আমরা খেয়াল করছি যখনই আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি হামলা হচ্ছে তখনই নেতাকর্মীরা জেগে উঠছে এবং প্রতিবাদ করছে। বিলাইছড়ি আওয়ামীলীগের নেতা রাসেল মারমার হামলার কারনে প্রতিবাদ করেছে নেতাকর্মীরা। নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও এখন সকলে তাদেও উপর ক্ষুব্ধ।
তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে যে আতংক ছিল তা কাটতে শুরু করেছে। এটাই আওয়ামীলীগের সবচাইতে বড় অর্জন। তারাও জেনে গেছে আওয়ামীগকে নিশ্চিহ্ন করা কোন মতেই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই মামলা করতে হবে। মামলা করার পর যদি প্রশাসন নীরব থাকে তখন আমরা দেখবো প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা সক্রিয় হয় নাই এবং নীরব ভুমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, যখন বিলাইছড়িতে আমরা পর পর সাংগঠনিক সমাবেশ বিভিন্ন অনুষ্ঠান যোগ দেওয়া শুরু করলাম তখনি বার বার বলেছিলাম এটাই শেষ নয়। এরপর যেদিনগুলো আসছে আমাদের উপর আঞ্চলিক দলগুলো আরো সক্রিয়ভাবে আক্রমন চালাবে এবং এটা তারা চলমান রাখবে নির্বাচন পর্যন্ত। এখন তারা চলমান করতে পারবে কি পারবেনা সেটা প্রশাসন নয় আামদের উপর নির্ভর করছে। আমরা কতোখানি প্রতিবাদ ও মামলা করতে পারি। যার যার রাজনীতি সে সে করবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু আইন কেউ নিজের হাতে তুলেনেক এটা আমরা চাইনা। সুতরাং আইন নিজস্ব গতিতে যদি না চলে কেউ যদি নিজেদের হাতে আইন তুলে নেয় সেক্ষেত্রে প্রশাসন যদি নীরব থাকে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নেত্রীর নের্তৃত্বে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা কখনো সহ্য করবোনা।
তিনি বলেন, আঞ্চলিক দলের নেতারা আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও ফাটল ধরানোর চেষ্টা করবে। তাই সকল ভেদাভেদ ও ভুল বোঝাবুঝি সংশোধন করে আমাদের সবাইকে একসাথে থেকে তাদের প্রতিহুত করতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ ও অন্যায় প্রতিহৃত করার সক্রিয় ভুমিকা রাখতে হবে।