বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্ষমার বিরল ইতিহাস…

পূর্ব প্রকাশিতের পর

বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্ষমার বিরল ইতিহাস…

মোহাম্মদ সাইদুল হক*

ক্ষমা ও সহিষ্ণুতা ছিল প্রিয়নবীর (দঃ) অন্যতম মহৎ গুণ।যে গুণে কোনো ঘাটতি ছিল না।ছিল পরিপূর্ণতা।ব্যাক্তিগত কারণে বা সম্পদের জন্য রাসূল (দঃ) কখনো প্রতিশোধ নিতেন না।কিন্তু যখন বৈধ জিনিসকে অবৈধ করা হতো তখন রাসুল (দঃ) আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রতিশোধ গ্রহন করতেন।তাঁর জীবনে সবচেয়ে কঠিন বিচার ছিল ওহুদ যুদ্বের বিচার।এই যুদ্বে পৌত্তলিক কুরাইশরা রাসুল (দঃ) কে আহত করে।এরপরও তিনি তাদেরকে শুধু ক্ষমাই করে দেন নি বরং তাদের জন্য দোয়া করেছেনঃ “হে আল্লাহ, তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালনা কর,তারা অজ্ঞ।” রাসূল (দঃ) যখন তাদেরকে ক্ষমা করেছেন,তখন সাহাবীগণ তাদেরকে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্য বদ দু’য়া দিতে বলেন।তখন আল্লাহর রাসুল (দঃ) বলেন,” কারো প্রতি অভিশাপ দিতে আমাকে পাঠানো হয়নি বরং সারা জাহানের রহমত হিসেবে সত্য পথের দাওয়াত দিতে আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে।*
আল্লাহ হুকুমে আর অমানবিক কাফিরদের অত্যাচারে রাসুলে করীম (দঃ) যখন হিজরত করছিলেন, ঠিক তখনি সারকা বিন জাশাম ঘোড়ায় আরোহণ করে দ্রুতগতিতে রাসুল (দঃ) কে আক্রমণ করার অভিপ্রায়ে তাঁর নিকট উপস্হিত হয়,তিন তিনবার তার ঘোড়ার পা মাটিতে গেড়ে যায় এবং তিন তিনবার সে ভাগ্য গণনা করে ব্যর্থতার লক্ষণ পেয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে; তখন সে নিরুপায় হয়ে মহানবী (দঃ)’ র নিকট নিরাপত্তার জন্য আকুতি -মিনতি জানায়।রাসুলে আকরাম (দঃ) দ্বিধাহীনচিত্তে তাকে লিখিত আশ্বাস দেন।মক্কা বিজয়ের পর প্রিয় হাবীব (দঃ) বিনা দ্বিধায় তাকে ক্ষমা করে করেন এবং হিজরতের সময়ের সেই ঘটনার কোনো উল্লেখও করেননি।
আবু সুফিয়ান বদর,ওহুদ,খন্দক প্রভৃতি যুদ্ধে প্রিয়নবীর (দঃ) বিরুদ্ধে কুরাইশদের নেতৃত্ব দিয়ে বিরাট অভিযান চালিয়েছেন।তার হীন চক্রান্তে কত শহীদের শোণিতে মক্কা নগরী রক্তে রঞ্জিত হয়েছে,কিন্তু মক্কা বিজয়ের পর রাসুল (দঃ) শুধু তাকেই ক্ষমা করেননি,তাঁর ঘরে যারা আশ্রয় নিয়েছে তাদেরকেও নিরাপদ বলে ঘোষণা করেন।
আবু সুফিয়ানেরর স্ত্রী হিন্দা হযরত হামযা (রাঃ) ‘ র কলিজাকে কেটে টুকরা টুকরা করেছিল; সেই পিশাচীকেও রাসুলে আরবী (দঃ) ক্ষমা করেছেন।তাঁর এই মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে সে উচ্চসিতকন্ঠে বলে উঠেছে ” মুহাম্মদ (দঃ) পৃথিবীতে তোমার তাঁবু অপেক্ষা অন্য কোনো তাঁবুকে আমি অধিক ঘৃণা করিনি; কিন্তু আজ তোমার তাঁবুই আমার নিকট সর্বাপেক্ষা প্রিয়।” হযরত হাময (রাঃ)’ র হত্যাকারী ওয়াহশী তায়েফ বিজয়ের পর ভয়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেই,কিন্তু রাসুল (দঃ)’ র আশ্রয়স্থল ব্যতীত তার জন্য আর কোনো নিরাপদ স্থা নেই……. সকলের নিকট এই আশ্বাস পেয়ে রাসুলের (দঃ) শরণাপন্ন হয় এবং মানবতার মুক্তির দূত মহানবী (দঃ) তাকেও ক্ষমা করে দেন।আবু জেহেলের পুত্র আকরামা তার পিতার সাথে মিলে বছরের পর বছর ধরে মুসলমানদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে।মক্কা বিজয়ের পর সেও পালিয়ে যায়; কিন্তু তার স্ত্রী রাসুলের (দঃ) মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে এবং তার স্বামীকে ফিরিয়ে এনে প্রিয়নবীর দরবারে উপস্থিত করে।রাসুলে মুখতার (দঃ) তাকে শুধু ক্ষমাই করেন নি, সে তাঁর নিকট আসলে তাকে স্বাগতম জানিয়েছেন।

নিজ কন্যার এক প্রকার হত্যাকারী হাব্বারকেও রাসুল (দঃ) অকুণ্ঠচিত্তে ক্ষমা করেন।মক্কা বিজয়ের পর সে জগণ্য দোষে দোষী সাব্যস্ত হলে তার জন্য কঠোর শাস্তি ঘোষণা করা হয়।হাব্বারের ইরান পালিয়ে যাবার ইচ্ছা ছিল,কিন্তু কিছুক্ষণ চিন্তার পর সে ইরান না গিয়ে রাসুলের (দঃ) নিকট উপস্থিত হয়ে প্রার্থনা করে, ” আপনি আমার সম্বন্ধে যা শুনেছেন তা সত্য।আমি ইরানে পালিয়ে যাবার মনস্থ করেছিলাম,কিন্তু আপনার দয়া ও মহানুভবতার কথা শুনে আপনার নিকট ক্ষমা ভিক্ষার জন্য এসেছি।” মূহুর্তে মহানবীর (দঃ) করুণার দ্বার খুলে যায় এবং তিনি এই পরম শত্রুকেও ক্ষমা করেন।
কুরাইশ সর্দার সাফওয়ান বিন উম্মিয়া আমীর বিন ওহাবকে প্ররোচিত করে তার বিষাক্ত তরবারি দ্বারা মহানবী (দঃ) কে হত্যা করার জন্য মদিনায় পাঠায়; কিন্তু আমীর ঘটনাচক্রে গ্রেপ্তার হয়ে পড়ে।মানবতার মুক্তির দিশারী প্রিয়নবী (দঃ) এই নরপিশাচকেও ক্ষমা করেন। সাফওয়ান বিন উম্মিয়া ভয়ে হজ্জে যাবার উদ্দেশ্যে জেদ্দায় পালিয়ে যায়। আমীর বিন ওহাব রাসুলের (দঃ) নিকট এসে সাফওয়ানের জন্য নিরাপত্তার প্রার্থনা জানায়। রাসুলে আরবী (দঃ) সঙ্গে সঙ্গে তার নিরাপত্তার আশ্বাস দেন,কিন্তু প্রিয়নবীর আশ্বাসের কোনো নিদর্শন না পেলে সে তাঁর দরবারে আসতে সাহস করবে না।পুনরায় রাসুলের (দঃ) নিকট এই প্রার্থনা করায় প্রিয়নবী তৎক্ষণাৎ নিদর্শন স্বরুপ তাকে নিজের আমামা (পাগড়ী) শরীফ দান করেন।

বর্তমান সময়ে গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়,কারো সাথে সামান্য বাক- বিতন্ডা হলেই বৃহদাকার ঘটনা ঘটিয়ে পেলে।শুরু হয় মারামারি, নির্যাতন, হত্যাসহ আরো কত কি।বুকে ক্ষোভ চাপিয়ে রেখে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।সুযোগ পেলে তো আর কোনো ছাড় নেই। কিছু রাজনীতিবিদ,নেতা- নেতৃরা সেই দোষ দোষী,এমনকি সাধারণ মানুষরাও।এই চরিত্র থেকে মানবজাতি যতদিন বেরিয়ে আসতে পারবে না, ততদিন পরিবার, সমাজ,রাষ্ট্র ও বিশ্বে শান্তি আসবে না।

আসুন,আমরা মানবজাতির মুক্তির দূত মহানবী (দঃ) ক্ষমার যে দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে রেখে গেছেন তা গ্রহণ করি।সুন্দর সুশৃঙ্খল বিশ্ব গড়তে এগিয়ে আসি।আর প্রিয়নবীর ক্ষমার এ বিরল ইতিহাস কিয়ামত অবধি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

★ সুরা আম্বিয়াঃ১০৭ ( সমাপ্ত)

(সহকারি শিক্ষক)
পোয়াপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
কাউখালী, রাঙ্গামাটি পাবর্ত্য জেলা।

 

Amen Computer & Photo Center 

Mobile: 01833-061813

Kawkhali, Rangamati.

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30