বঙ্গবন্ধুর ৯৭তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে টুঙ্গীপাড়ায় এক শিশু সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুধু শিক্ষা নয়, ধর্মীয় শিক্ষাকেও আমরা বাধ্যতামূলক করেছি। কিন্তু ধর্মান্ধতা যেন না আসে। আমাদের ধর্ম ইসলাম অত্যন্ত পবিত্র ধর্ম, শান্তির ধর্ম। এই ধর্ম কাউকে খুন করার অধিকার দেয়নি।”
তিনি বলেন, “প্রত্যেক ধর্মেরই মর্মবাণী হল শান্তির বাণী প্রচার করা। কাজেই যে যে ধর্মই গ্রহণ করুক না কেন, সবাইকে মাথায় রাখতে হবে– যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। ধর্মে সব সময় শান্তি, ভ্রাতৃত্বের, সৌহার্দ্যের কথা বলা হয়েছে। সেটা সকলকে মেনে চলতে হবে।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শৈশব থেকেই পরোপকারী ছিলেন জানিয়ে সমাবেশে আসা শিশুদের তা অনুসরণ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আদর্শ নিয়ে বড় হতে হবে। দেশের মানুষকে ভালবাসতে হবে। একদিন তোমরা দেশের কর্ণধার হবে। আমার মত প্রধানমন্ত্রীও হতে পার। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে বড় হতে হবে।”
শিশুরা যেন বিপথে না যায় সে বিষয়ে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ নজর দিতে এবং তারা শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থাকছে কী না- সে বিষয়ে খোঁজ রাখতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ।
জাতির জনকের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও।
সকালে টুঙ্গীপাড়ায় এসে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে প্রধানমন্ত্রী সমাধি প্রাঙ্গণে বইমেলার উদ্বোধন করেন এবং ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।
সেখানেই বিকাল সাড়ে ৩টায় শিশু সমাবেশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আজকের শিশুদের বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা কিন্তু বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে পারিনি। আমরা তার সঙ্গে জেলখানায় দেখা করতে যেতাম। তিনি বাংলার মানুষের অধিকারের কথা বলতেন।”
বঙ্গবন্ধুকে বারবার কারাগারে নিক্ষেপ করেও সংগ্রামের পথ থেকে তিনি ‘দমে যাননি’ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতা শিশুদের অত্যন্ত ভালবাসতেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তিনি যে শিক্ষা দিয়েছেন, তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।… জাতির পিতা বলতেন, যদি সোনার বাংলা গড়তে চাই তাহলে সোনার ছেলেমেয়ে চাই।”
বঙ্গবন্ধুর সময়ই প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করার কথা মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তার সরকারের সময়ে প্রাথমিক স্কুল ও শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণের কথাও বলেন।
সেইসঙ্গে শিক্ষা সম্প্রসারণে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু, বিনামূল্যে বই বিতরণ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বৃত্তি-উপবৃত্তি দেওয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষা সহায়তার পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনে ক্রীড়া ও সংস্কৃতিচর্চা বাড়াতেও তার সরকার কাজ করছে।
সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটা শিশুও যেন শিক্ষার বাইরে না থাকে। একটা শিশুও পথশিশু থাকবে না, টোকাই বলে কিছু থাকবে না। একটা শিশুও রাস্তায় ঘুরবে না।”
বঙ্গবন্ধু সব মানুষকে ‘সমানভাবে ভালবাসতেন’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে আসা শিশুদের সামনে তার বাবার শৈশবের বিভিন্ন ঘটনার কথা তলে ধরেন।
“ছোটবেলা থেকেই তিনি পারোপকার করতেন। নিজের বই দিয়ে দিতেন। স্কুলের সহপাঠী, বন্ধুদের বাড়িতে নিয়ে আসতেন, খাবার খাওয়াতেন।”
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের মান্য করতে এবং পিতামাতার কথা মেনে চলতে বলেন শিশুদের। সেই সঙ্গে প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহাভূতিশীল হতে এবং সবার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে বলেন।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী উপমা বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও অংশ নেন। অন্যদের মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।