দুর্নীতি মামলায় কারান্তরীণ বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির চেয়ে সম্প্রতি মানহানি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে মুক্ত করতে বিএনপির নেতা ও আইনজীবীদের তোড়জোড় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে। গুঞ্জন চলছে, ব্যারিস্টার মইনুলকে মুক্ত করতে বিএনপি নেতা এবং আইনজীবীরা যতটা সোচ্চার হয়েছে, দলের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হওয়ার পর তা দেখা যায়নি। কিন্তু কেন? মইনুলকে মুক্ত করতে বিএনপির নেতা ও আইনজীবীদের মধ্যে এমন কর্মচাঞ্চল্যের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যারিস্টার মইনুল এবং ড. কামালের অভিপ্রায় ও পরিকল্পনার সাথে তাল মিলিয়ে বিএনপির নেতা ও আইনজীবীরা নেতৃত্ব পরিবর্তনের একটি নতুন খেলা খেলছে, যেখানে ড. কামালসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে তারেক রহমানকে মাইনাসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।
বিএনপিকে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি থেকে বের করে নতুন ক্ষমতার অবতরণ করতে সত্যিই যে একটি ষড়যন্ত্র চলছে তা এরইমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে জাতীয় ঐক্যের নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের সঙ্গে মজুমদার নামের এক ব্যক্তির ফাঁস হওয়া ফোনালাপের অডিও ক্লিপের মাধ্যমে।
২২ অক্টোবর রাতে মানহানি মামলায় ব্যারিস্টার মইনুল গ্রেপ্তার হওয়ার আগে থেকেই ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এই ফোনালাপ পাওয়া যায়। যেখানে মজুমদার নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে মইনুলকে বলতে শোনা যায়, ‘তারেক রহমানের নেতৃত্ব ‘ধ্বংস’ করার জন্য (বিএনপি জোটের) নেতৃত্বে আনা হয়েছে ড. কামাল হোসেনকে’। ওই ফোনালাপে তারেককে ‘ছাগল’ বলেও তাচ্ছিল্য করেন ব্যারিস্টার মইনুল।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন নয়’- এই নীতি থেকে বিএনপি ক্রমেই সরে আসতে শুরু করার পর থেকেই বিএনপিতে একটি রাজনৈতিক পালাবদলের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিলো। এর কিছুদিন পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত এলে ঐক্যে ড. কামালসহ বেশকিছু নেতার তোড়জোড় চোখে আসে। বিষয়টি প্রথম দিকে ততটা জটিল করে দেখার মতো অবস্থায় না গেলেও তা ক্রমেই জটিলতর অবস্থার দিকে গড়াচ্ছে। বিএনপি নেতা ও আইনজীবীদের মধ্যে দলীয় নেত্রীকে ফেলে ঐক্যের একজন নেতাকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে। ফলে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই প্রবণতা নেতৃত্ব পরিবর্তনেরই নামান্তর। অন্যদিকে বিএনপিকে কুক্ষিগত রাখার একমাত্র ব্যক্তি তারেক রহমানকে সরাতে ড. কামালকে যে জাতীয় ঐক্যে আনা হয়েছে তাতো ব্যারিস্টার মাইনুলের ফোনালাপের মাধ্যমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বিএনপির শীর্ষ নেতা ও আইনজীবীরা কিসের আশায় খালেদা-তারেককে মাইনাস করে বিএনপিকে অন্যের হাতে তুলে দিতে পারে?
এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রিয়াজ বলেন, বিএনপির শীর্ষ ব্যক্তিত্ব যারা আছেন, তারা ক্ষমতার বাইরে থাকার যন্ত্রণা হারে হারে টের পাচ্ছে দীর্ঘ একদশক সময় ধরে। আর বিএনপিকে মুখ তুলে দাঁড়ানোর জন্য যে নেতৃত্বের প্রয়োজন হয় তা নেই বলে ধরে নিয়েছে তারা। কেননা, প্রধান দুই নেতৃত্বের একজন জেলে, অন্যজন বিদেশে পলাতক। এদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই নেতার কারণে বিএনপিকে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাও হারাতে হয়েছে। ফলে বিএনপিকে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে পুনরায় দাঁড়াতে হলে ক্লিন ইমেজের নেতৃত্বের প্রয়োজন হবে। আর তা ড. কামাল, ব্যারিস্টার মইনুলের আছে বলেই মনে করছে বিএনপির নেতারা। ফলে দলে নিজের অবস্থান ঠিক রেখে যদি নেতৃত্বের পালাবদল হয় তবে ক্ষতি কী? হতে পারে এমন বিবেচনা থেকেই খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বের বাইরে কিছু খুঁজতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের নেতারা।