মাহের ইসলাম : এমএন লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের এক প্রতিনিধিদল বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাত করতে গেলে, তিনি তাদেরকে বাঙালি হয়ে যাওয়ার আহবান জানান এবং পাহাড়ে বাঙালি পুনর্বাসনের হুমকি দিয়েছিলেন – প্রায় সর্বজনগ্রাহ্য এমন এক ধারণার নির্ভরযোগ্য সুত্রের অনুপস্থিতি আমাকে যারপরনাই বিস্মিত করেছে। তবে এই ঘটনা সংক্রান্ত কিছু পরস্পর বিরোধী তথ্যের উপস্থিতি আমাকে যতটা না বিস্মিত করেছে তার চেয়ে বেশি দ্বিধান্বিত করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র আন্দোলনের পিছনে এই ধারণার সম্পৃক্ততার মাত্রা বিবেচনায়, এমন একটা অনির্ভরযোগ্য তথ্যের গড়মিলগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরা অপরিহার্য বলে মনে করেই এই লেখার অবতারণা। যা করতে গিয়ে প্রকাশনার গ্রহণযোগ্যতা, অহেতুক বিতর্ক এড়ানো এবং দীর্ঘ লেখায় ধৈর্যচ্যুতির সম্ভাবনা বিবেচনায় শুধুমাত্র নির্বাচিত কয়েকটি প্রকাশনার উপরেই দৃষ্টি সীমাবদ্ধ রাখতে হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয় যে, শেখ মুজিব স্বায়ত্বশাসনের দাবীকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিবেচনা করে তাদেরকে নতুন বাংলাদেশে নিজেদের আত্মীকরণ এবং বাঙালি হওয়ার উপদেশ দিয়েছিলেন। (পৃ-৪৬)।
‘জীবন আমাদের নয়’ – সিএইচটি কমিশন রচিত এই রিপোর্টের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯১ সালের মে মাসে। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতিদের প্রতি বঞ্চনা আর নিপীড়নের একপেশে এক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে এই রিপোর্টটি ইতোমধ্যেই আলোচিত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আলোচনায় ও গবেষণায় দেশের, এমনকি দেশের বাইরের একাধিক ব্যক্তি, গবেষক এবং সংস্থা এই রিপোর্টটিকে সুত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এই রিপোর্টের গুরুত্ব সম্পর্কে চিন্ময় মুৎসুদ্দী’র একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য,
“এটি আন্তর্জাতিক একটি কমিশনের রিপোর্ট। বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি নিয়ে তারা ১৯৯০/৯১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করে। …………….. এই রিপোর্টে অঙ্কে স্পর্শকাতর বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক কমিশনের এই রিপোর্টটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ বা সেটি অসত্য এমন কোনো বক্তব্য বাংলাদেশ সরকার বলেনি।” (মুৎসুদ্দী, ১৯৯২, পৃ-মুখবন্ধ)।
সিএইচটি কমিশনের উক্ত প্রতিবেদনের সুত্রে পাহাড়ি জনগণের এক প্রতিনিধি দলের সাথে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতের নাতিদীর্ঘ বিবরণ তুলে ধরেছেন বিপ্লব রহমান (২০১৫):
“১৯৭২ সালের পাহাড়ি জনগণের নেতৃবৃন্দের একটি প্রতিনিধি দল প্রথম রাষ্ট্রপতি মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন সংসদের চাকমা সদস্য মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, সঙ্গে ছিলেন উপেন্দ্রলাল চাকমাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ১২ জন পাহাড়ি। মানবেন্দ্র লারমার সঙ্গে ছিল শেখ মুজিবের বরাবরে লিখিত একটি স্মারকলিপি।
শেখ মুজিব জিজ্ঞাসা করলেন, ওতে কী লেখা আছে? স্মারকলিপিতে দাবী করা হয়েছিল, নিজস্ব আইন পরিষদ সম্বলিত পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্বশাসন, ১৯০০ সালের বিধিসমূহের সংরক্ষণ, তিন প্রধানের দপ্তরের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা, বিধিসমূহের সংশোধনের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক রক্ষাকবচ এবং অ-পাহাড়িদের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করা। মুজিব দাবিগুলো সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।
উপেন্দ্রলাল চাকমার স্মরণে আছে শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘না, আমরা সবাই বাঙালি, আমাদের দুই ধরণের সরকার ব্যবস্থা থাকতে পারে না। তোমরা তোমাদের জাতীয় পরিচয় ভুলে যাও এবং বাঙালি হয়ে যাও।’ তিনি নাকি হুমকি দিয়ে এও বলেন যে, বাঙালি মুসলমানরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেয়ে ফেলবে।
শেখ মুজিবের অফিসে মিটিং স্থায়ী হয় মাত্র ৩-৪ মিনিট। প্রতিনিধিদেরকে বসতে বলা হয়নি। শেখ মুজিব স্মারকলিপি গ্রহণ করেননি। উপেন্দ্রলাল চাকমার ভাষ্যমতে, তিনি সেটা মানবেন্দ্র লারমার দিকে ছুড়ে মেরেছিলেন।” (রহমান, ২০১৫, পৃ-১৪০-৪১)।
প্রায় একই বক্তব্য তুলে ধরেছেন সৈয়দ মুর্তজা আলী (১৯৯৬) এবং মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন (২০০৩)। তবে দু’জনেই প্রতিনিধি দলের সদস্য সংখ্যা সাতজন ছিল বলে উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে আলী (১৯৯৬) উপেন্দ্রলাল চাকমাকে প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য হিসেবে বর্ণনা করে, তার উদ্ধৃতি দিয়েছেন। (আলী, ১৯৯৬, পৃ-৩৭-৩৮; আবেদিন, ২০০৩,পৃ-৪৫)।
এই ঘটনার প্রায় একই বিবরণ পাওয়া যায় আমেনা মহসিন (১৯৯৭) রচিত ‘দি পলিটিক্স অফ ন্যাশনালিজম’ বইয়ে। তবে তিনি প্রতিনিধিদলকে বসতে না দেয়া, মিটিংয়ের স্বল্প স্থায়ীত্ব এবং স্মারকলিপি গ্রহণ না করে ছুঁড়ে মারার ব্যাপারগুলো উল্লেখ করেননি। একই সাথে লেখিকা আরো জানিয়েছেন যে, উক্ত প্রতিনিধিদলের সদস্য অনন্ত বিহারী খিসা ১৯ অক্টোবর ১৯৭৩ তারিখে লেখিকার সাথে এক সাক্ষাতকারে এই ঘটনা নিশ্চিত করেছেন। (মহসিন, ১৯৯৭, পৃ-৫৭-৫৮)।
এস মাহমুদ আলী (১৯৯৩) জানান, ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে এমএন লারমার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল শেখ মুজিবের কাছে চার দফা দাবী পেশ করলে তিনি প্রতিনিধিদলকে বাঙালি হয়ে যাওয়ার উপদেশ দেন। তবে তিনিও প্রতিনিধিদলকে বসতে না দেয়া, মিটিংয়ের স্থায়ীত্ব এবং স্মারকলিপি গ্রহণ না করে ছুঁড়ে মারার ব্যাপারগুলো উল্লেখ করেননি। অনুরূপ বক্তব্য ফুটে উঠেছে মিজানুর রহমান শেলী (১৯৯২) এবং এস পি তালুকদারের (১৯৯৪) কণ্ঠেও।
প্রদীপ্ত খীসা (১৯৯৬) জানিয়েছেন,
“ বাংলাদেশের ভাবি সংবিধানে উপজাতীয়দের ন্যায়সঙ্গত অধিকার সংরক্ষণের জন্যে এমএন লারমাসহ একটি উপজাতীয় প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টার সময় একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। ”
তিনি আরো জানিয়েছেন যে, বঙ্গবন্ধু
“উপজাতীয় নেতৃবৃন্দের দাবিদাওয়ার প্রতি সমর্থনে কুণ্ঠিত হন। উল্টো তিনি এমএন লারমাকে এ ব্যাপারে আর অগ্রসর না হবার পরামর্শ দেন ”।
এখানে লেখক চার দফা দাবীর প্রতিটি উল্লেখ করেছেন। তবে, প্রতিনিধিদলে সদস্য সংখ্যা, প্রতিনিধিদলকে বসতে না দেয়া, মিটিংয়ের স্থায়ীত্ব এবং স্মারকলিপি গ্রহণ না করে ছুঁড়ে মারার ব্যাপারগুলো উল্লেখ করেননি। (খীসা, ১৯৯৬, পৃ-৪১)।
সুবীর ভৌমিক (১৯৯৬) জানিয়েছেন যে, ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে সতের সদস্যের এক প্রতিনিধিদল ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর সরকারী বাসভবনে তার সাথে সাক্ষাৎ করে চার দফা দাবী সম্বলিত এক স্মারকলিপি পেশ করে। সতের জনের একজন উপেন্দ্রলাল চাকমা’কে উদ্ধৃত করে তিনি জানান যে, বঙ্গবন্ধু তাদেরকে স্বশাসনের কথা ভুলে গিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে এবং বাঙালি হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। প্রতিনিধি দলে মং রাজা এবং এমএন লারমার উপস্থিতির কথা জানালেও লেখক অন্য কোন সদস্যের নাম উল্লেখ করেননি। এছাড়াও, প্রতিনিধিদলকে বসতে না দেয়া, মিটিংয়ের স্থায়ীত্ব এবং স্মারকলিপি গ্রহণ না করে ছুঁড়ে মারার ব্যাপারগুলো উল্লেখ করেননি।
তারিখ উল্লেখ না করলেও ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের এক প্রতিনিধিদলের বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করে চার দফা দাবী প্রণয়ন এবং বঙ্গবন্ধু কর্তৃক তা প্রত্যাখ্যান করার ব্যাপার উল্লেখ করেছেন আরো কিছু লেখক/ গবেষক। তন্মধ্যে ইফতেখারুজ্জামান (১৯৯৮) এবং শরদিন্দু শেখর চাকমা (২০১৪) উল্লেখযোগ্য। উল্লেখ্য যে, আমেনা মহসিন (২০০৩) তার ভিন্ন আরেকটি বইয়ে সন-তারিখ উল্লেখ না করে বলেন যে, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের সময়কালে এমএন লারমার নেতৃত্বে পাহাড়িদের এক প্রতিনিধিদল শেখ মুজিবের রহমানের সাথে দেখা করে চার দফা দাবী পেশ করেন। মুজিব তাদের দাবী প্রত্যাখ্যান করে বাঙালি জাতীয়তাবাদ গ্রহণ করার উপদেশ দেন এবং বাঙালি পুনর্বাসনের হুমকি দেন। (মহসিন, ২০০৩, পৃ-২২)।
পার্বত্য চট্টগ্রামের কতটি প্রতিনিধিদল বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিল, তার কোন তালিকা হয়ত থাকতে পারে, কিন্তু আমি খুঁজে বের করতে পারিনি। তবে বিভিন্ন প্রকাশনা পর্যালোচনা করে এবং বিভিন্ন লেখকের বইয়ে প্রদত্ত ঘটনাপঞ্জী হতে দুইটি প্রতিনিধিদলের ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ অন্তত আমার নেই। এই প্রতিনিধিদল দু’টির একটির নেতৃত্বে ছিলেন চারু বিকাশ চাকমা; অন্যটির নেতৃত্বে ছিলেন মং রাজা মং প্রু সাইন। এমএন লারমা’র নেতৃত্বে কোন প্রতিনিধি দলের বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে আমি প্রমাণ পাইনি।
১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারিতে চারু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট এক প্রতিনিধিদলের উল্লেখ পাওয়া যায় জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা রচিত ‘ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে পার্বত্য স্থানীয় সরকার পরিষদ’ বইয়ে (প্রকাশকাল ১৯৯১ সন)। পরবর্তীতে আরো কিছু লেখক এই প্রতিনিধিদলের উল্লেখ করেছেন যেমন, মিজানুর রহমান শেলী (১৯৯২), আফতাব আহমাদ ( ১৯৯৩), প্রদীপ্ত খীসা (১৯৯৬), আমেনা মহসিন (১৯৯৭), গোলাম মোর্তোজা (২০০০), হাবিবুর রহমান (২০০৪), প্রমুখ। তন্মধ্যে মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম (২০০১) এই প্রতিনিধিদলের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন। এরা হলেন, মং শানু চৌধুরী, দেবদত্ত খীসা, যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, অশোক মিত্র, রুপায়ন দেওয়ানসহ আরো দুইজন।
১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মং রাজা মং প্রু সাইনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আরেকটি প্রতিনিধিদল বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিল। অন্যান্য যারা এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন, তারা হলেনঃ
উক্ত প্রতিনিধি দলের সদস্য জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা (১৯৯১) হতে জানা যায় যে, বঙ্গবন্ধু জরুরী কাজে বাইরে থাকায় প্রতিনিধিদল তার (বঙ্গবন্ধু) সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেনি। তাই, তার জনসংযোগ কর্মকর্তার কাছে নিন্মোল্লিখিত ৪ দফা দাবী সম্বলিত একটি দাবীনামা রেখে আসেঃ
১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন মং রাজার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদলের আগমন, বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাত না হওয়ার প্রেক্ষিতে চার দফা দাবীনামা রেখে যাওয়ার ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন আরো কিছু লেখক/গবেষক। তন্মধ্যে আফতাব আহমাদ (১৯৯৩), মাহফুজ পারভেজ (১৯৯৯), গোলাম মোর্তোজা (২০০০), মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম (২০০১) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
উপরোক্ত দু’টি প্রতিনিধি দল ছাড়া আর কোন উপজাতীয় প্রতিনিধি দলের বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাতের বিবরণ পাওয়া যায় না। তবে আফতাব আহমাদ ( ১৯৯৩) জানিয়েছেন যে, জাতীয় সংসদ কর্তৃক বাংলাদেশের সংবিধান অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত, ১৯৭২ সালে একাধিকবার এম এন লারমা বঙ্গবন্ধুর সাথে পাহাড়িদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা এবং দাবীদাওয়া নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এমতাবস্থায়, যখন চোখে পড়ে, কেউ কেউ দাবী করছেন যে, এমএন লারমার নেতৃত্বে এক উপজাতীয় প্রতিনিধিদল ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করে চার দফা দাবী পেশ করেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু সেই দাবী মেনে নেননি – তখন বিস্মিত না হয়ে উপায় থাকে না। বিস্ময়ের মাত্রা আরো উঁচুতে ওঠে যখন চোখে পড়ে, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ তারিখের প্রতিনিধিদলের সাতজনের মধ্যে যার নামই নেই, সেই উপেন্দ্রলাল চাকমাকে উদ্ধৃত করে সিএইচটি কমিশন তাদের প্রতিবেদনে স্মারকলিপি ছুঁড়ে মারার মত ঘটনা উল্লেখ করছে – সেই প্রতিবেদন আবার অনেক গবেষণাকর্মের সুত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ তারিখের প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন, এমন একজন হলেন জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা। তিনি যেখানে নিজে বলেছেন (১৯৯১) যে, মং রাজা মং প্রু সাইনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের এক প্রতিনিধি দলে গিয়েছিল এবং ঐ সময়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রতিনিধিদলের দেখা হয়নি; সেখানে সিএইচটি কমিশন (১৯৯১), মিজানুর রহমান শেলী (১৯৯২), এস মাহমুদ আলী (১৯৯৩), এস পি তালুকদার (১৯৯৪), প্রদীপ্ত খীসা (১৯৯৬), সুবীর ভৌমিক (১৯৯৬), সৈয়দ মুর্তজা আলী (১৯৯৬), আমেনা মহসিন (১৯৯৭), বিপ্লব রহমান (২০১৫) এবং আরো অনেক লেখক গবেষকের প্রকাশনায় এমএন লারমার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল গমন, বারো বা সতের সদস্যের প্রতিনিধিদল, অনন্ত বিহারী খীসা কিংবা উপেন্দ্রলাল চাকমাকে প্রতিনিধি দলের সদস্য বিবেচনা করা, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রতিনিধিদলের দাবী অগ্রাহ্য করা বা স্বল্প সময়ের মিটিং, কিংবা তাদেরকে বসতে না দেয়া, এমনকি এমএন লারমার দিকে স্মারকলিপি ছুঁড়ে মারার ব্যাপারগুলো কোন দৃষ্টিকোণ হতে বিবেচনা করা উচিৎ- সেটা বিবেচনার ভার পাঠকের উপর ন্যস্ত করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।
প্রথিতযশা আর স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের প্রকাশনায় তথ্য বিভ্রাটের এহেন উপস্থিতিতে সাধারণ পাঠকের দ্বিধান্বিত না হয়ে উপায় নেই। বিগত বছরগুলোতে এই তথ্য বিভ্রাটের বলি হয়েছে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ, বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রামে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল ক্ষেত্রেই দীর্ঘদিন ধরেই তথ্য বিভ্রাটের মাত্রা এমনি ব্যাপক যে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুকে কেন্দ্র করেও এমনটা ঘটেছে; যার প্রমাণ হল ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনাবলী। যাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর দেখাই হয়নি, তাদের দাবী না মেনে বসতে না দেয়ার মত অভদ্র আচরণ এমনি স্মারকলিপি ছুঁড়ে মারার মত শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজের দায়ভারে আক্রান্ত করা হয়েছে তাঁকে – দেশে, এমনকি বিদেশে।
তথ্যসুত্রঃ