॥ নন্দন দেবনাথ/মিল্টন বাহাদুর ॥ নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে সোমবার ২ ডিসেম্বর রাঙ্গামাটিতে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২তম বর্ষপূর্তি পালিত হয়েছে। এই উপলক্ষে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি আলাদা ভাবে র্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।
রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিষ্টিটিউট প্রাঙ্গণে পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২২বছর পূর্তি উপলক্ষে রাঙ্গামাটি কলেজ থেকে এক বর্নাঢ্য র্যালী বের করা হয়। পরে ইনিষ্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, রাঙ্গামাটি সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমার সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসক একে এম মামুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার আলমগীর কবির, আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য হাজ্বী কামাল সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি রাঙ্গামাটি জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙ্গামাটির সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, এম এন লারমা মেমোরিয়াল ট্রান্সের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা। এছাড়া সভায় জন সংহতি সমিতির অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনিষ্টিটিউট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় দীপংকর তালুকদার বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার এই পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছে এ সরকারই তার অধিকাংশই বাস্তবায়ন করেছে। সরকার ভূমি কমিশন আইন পাশ করেছে। শান্তিচুক্তি বাকি অংশগুলোও দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। তবে এর জন্যে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। তিনি বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে মুল বাধা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র ও চাঁদাবাজী। তিনি বলেন, পাহাড়ের চাঁদাবাজী করার জন্য আধিপত্য বিস্তাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হচ্ছে। এই সংঘর্ষে প্রাণ হাচ্ছে পাহাড়ের মানুষ। তিনি বলেন, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলো যতো না পাহাড়ের মানুষের জন্য রাজনীতি করে তার চেয়ে বেশী রাজনীতি করে নিজেদের আখের গোছার জন্য। নিজেদেও পকেট ভারী করার জন্য চাঁদাবাজী করে। পাহাড়ের অবৈধ অস্ত্র ও চাঁদাবাজী বন্ধ হলেই পাহাড়ের শান্তি ফিরে আসবে।
দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে বর্তমানে যে সকল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে তারা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কাজ করছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কতার সাথে সাধারণ মানুষের যাতে ক্ষতি না হয় তার জন্য কাজ করছে। দীপংকর তালুকদার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক তৎপরতার কারণে পাহাড়ের চাঁদাবাজী এখন অনেকটাই কমে গেছে বলে সাধারণ মানুষ বলছে। সাধারণ মানুষ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এই তৎপরতাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সাধারণ মানুষ এখন স্বস্থিতে আছে। তিনি বলেন, আমরা এখন থেকে অব্যবদ্ধ যদি থাকতে পারি শান্তি চুক্তি নিয়ে যারা বিভিন্ন রকম ভাবে অপ্রচার চালাচ্ছে এবং পাহাড় থেকে যদি অবৈধ অস্ত্র, চাঁদাবাজী, খুন, গুম বন্ধ করা যায় তাহলে ২২ বছরে যা হয়নি তা আগামী ৩/৪ বছরে তা বাস্তবায়ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পার্বত্য ভূমি কমিশনের বৈঠকের কথা উল্লেখ কওে দীপংকর তালুকদার বলেন, পাহাড়ের মানুষের ভূমি অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আগামী ২৩ ডিসেম্বও থেকে কাজ শুরু হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেণ। তিনি বলেন, এই কাজের সহযোগিতা আমাদের সকলকে করতে হবে। ভ’মি কমিশনকে বাধা না দিয়ে তাদের কাজে সহযোগিতা করলেই আমরা মনে করি পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কার্যক্রম আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।
অন্যদিকে রাঙ্গামাটি জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি আয়োজিত আলোচনা সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদা বলেন, সরকারের সদিচ্ছা না থাকায় গত ২২ বছরেও ওই চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতে পারেনি-যার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। পার্বত্য চুক্তির পূর্ণবাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, পাহাড়ের আঞ্চলিক দল গুলোর ভুল ক্রুটি নেই সেটা আমরা বলছি না। আমাদের ও ভুল ক্রুটি রয়েছে। এটি দেখার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। প্রধানমন্ত্রীর জনগনের দায় এড়াতে পারেন না।
তিনি সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে অনেক সংস্থা রয়েছে। তাদের একেক জনের একক মত। তাদের নানা মত রয়েছে। তাদেও মতামত গুলো যে ভাবে পারছে সরকারকে উপস্থাপন করছে। তিনি বলেন, তিনি বলেন, কারো মত নিময়ে নয় যে সাহস নিয়ে পার্বত্য চুক্তি করেছেন। পার্বত্য জনগনের কাছে আপনি অঙ্গিকার করেছেন, সেই অঙ্গিকার ও সাহস নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি চুক্তি বাস্তবায়ন করুন। আপাকে ভুল বুঝাবে, আপনাকে দ্বিধাদ্বন্ধে ফেলবে। আপনি কারো কথায় না ভুলে আপনার সাহস নিয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসুন।
এ ছাড়া বিকালে রাঙ্গামাটি চিংহ্লা মং মারী ষ্টেডিয়ামে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ ও রাঙ্গামাটি রিজিয়নের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।