॥ এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ ॥ দেশের করোনা সনাক্ত ও নমুনা পরীক্ষার ধীর গতির কারণে দেশের করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন রোগীর নমুনা নেয়ার হওয়ার ৭ থেকে ৮ দিন পর রিপোর্ট পজেটিভ আসার পর স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন নড়ে চড়ে বসে। রোগী সনাক্ত হওযার পর ঘটা করে এলাকা লক ডাউন ও রোগীদের আবারো নমুনা পরীক্ষা করানোর চেষ্টা চলে। এই অবস্থায় পজেটিভ এই রোগী দীর্ঘ এই ৭ থেকে ৮ দিন কোথায় কোথায় গেছে কোথায় চিকিৎসা সেবা নিয়েছে, কার কার সাথে কথা বলেছে তার কোন সদ উত্তর কেউ দিতে পারছে না। এই অবস্থায় পুরো রাঙ্গামাটিবাসীর মাঝে আতংক বিরাজ করছে। রাঙ্গামাটি সহ তিন পার্বত্য জেলায় করোনা রোগী সনাক্ত করতে পিসিআর মেশিন ও উন্নত মানের কিট আনার দাবী উঠেছে।
রাঙ্গামাটি সচেতন মহল মনে করেন দেশের অর্থনীতিতে স্বাস্থ্য বিভাগ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করলেও সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষায় প্রতিটি জেলায় জেলায় পিসিআর মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে জনগনের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত ও দ্রুত করোনা রোগীদের সনাক্ত করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানানো হয়েছে।
রাঙ্গামাটির কয়েকজন সচেতন মহল তাদের বক্তব্যে বলেন, একটি করোনা সনাক্ত করতে যদি ৭ দিন লাগে তাহলে তাদের এই ৭ দিন কোথায় রাখা হবে সেই বিষয় নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগকে ভাবতে হবে। যাদের নমুনা পরীক্ষা করা হবে তাদেরকে ৭ দিন পর্যন্ত আইসোলেশন অথবা প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টইন এবং হোম কোয়ারেন্টইনে রেখে তাদের নজরদারীতে রাখতে হবে। তারা যাতে কোথাও বের হতে না পারো যাতে অ কোন নতুন রোগী আক্রান্তের কারণ না হয় সেই দিকে ভাবতে হবে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে।
রাঙ্গামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের হাতে হস্তান্তরিত বিভাগ। তাই রাঙ্গামাটির সর্বস্তরের জনগন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে তিন পার্বত্য জেলা হাসপাতাল গুলোতে পিসিআর মেশিন স্থাপনের জন্য দাবী জানান। পার্বত্য অঞ্চলের জন্য বরাদ্ধ কৃত অর্থ থেকে তিন পার্বত্য জেলায় পিসিআর মেশিন ও উন্নত মানের কীট সংগ্রহ সহ অভিজ্ঞ স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগ দেয়ার আহবান জানান।
রাঙ্গামাটি জেলার বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের মন্তব্যে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ পুরোপুরি চেষ্টা করলেও দীর্ঘসুত্রিতার কারণে মানুুষের মাঝে আতংক ছড়াচ্ছে। রাঙ্গামাটি হাসপাতালে পিসিআর মেশিন না থাকায় সনাক্ত করা যাচ্ছে করোনা রোগী। রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে পিসিআর মেশিন স্থাপনের ও দাবী জানান।
অন্য দিকে রাঙ্গামাটি জেলা শহরে যে রোগী গুলো সনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে শিশুটি রাঙ্গামাটি হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলো। সে কতো জনকে ছড়িয়ে দিয়েছে তার কোন সঠিক তথ্য স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে আছে কিনা জানা যায়ণি।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহূর্তে পিসিআর মেশিন রয়েছে পাঁচটি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট অব মেরিন সাযে ন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগে অন্তত পাঁচটি সচল পিসিআর মেশিন রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) চট্টগ্রাম শাখা, চট্টগ্রাম মেরিন ফিশারিজ অ্যাকাডেমিসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আরও ১০টির বেশি পিসিআর মেশিন রয়েছে। আছে পিসিআর মেশিনে ভাইরাস পরীক্ষায় প্রশিক্ষিত জনবলও।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব পিসিআর মেশিন ও প্রশিক্ষিত জনবল ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বিভাগের করোনার নমুনা পরীক্ষা সম্ভব।
নিজেদের অনুসন্ধানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন মেশিন ও অভিজ্ঞ জনবল থাকার কথা জানার পর থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু জাতির এই দুঃসময়ে নিজ থেকে করোনা পরীক্ষায় এগিয়ে আসা তো দূরের কথা, তাদের হাবভাবে অনেকটা পালিয়ে থাকার মতো।
সম্প্রতি এক বক্তব্যে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) প্রফেসর জুনায়েদ সিদ্দিকী জানান, শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বিসিএসআইআর গবেষণাগার, চট্টগ্রাম বা মেরিন ফিশারিজ নয়, চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও করোনা পরীক্ষায় প্রয়োজনীয় পিসিআর মেশিন ও প্রশিক্ষিত টেকনেশিয়ান রয়েছে। যারা চাইলেই সুরক্ষিত ল্যাবে করোনাভাইরাস নমুনা পরীক্ষা সম্ভব।