॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সারা দেশে করোনা সনাক্তের ৫ মাস পর রাঙ্গামাটিতে বহুল প্রতিক্ষিত করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাবের উদ্বোধন করা হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের অর্থায়নে রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ ভবনে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল পিসিআর ল্যাবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবণ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (৬ আগষ্ট) দুপুরে রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে পিসিআর ল্যাব উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ,কে,এম মামনুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার মোঃ আলমগীর কবির, রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের প্রকল্প পরিচালক ডা. শহীদ তালুকদার, রাঙ্গামাটি পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান রোমান, রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অমিতাভ পরাগ তালুকদার, রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন ডাঃ বিপাশ খীসা, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বিনোদ শেখর চাকমা, রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের আরএমও শওকত আকবরসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাঙ্গামাটি পিসিআর ল্যাব উদ্বোধনের পর সচিব পবণ চৌধুরী পিসিআর ল্যাবের বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন এবং এই পিসিআর ল্যাবের মাধ্যমে যাতে রাঙ্গামাটি জনগন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারে তার জন্য সকলকে আন্তরিক ভাবে কাজ করার আহবান জানান।
আর আগে সকাল ১০টায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলার করোনার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জেলার গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে সভা করেন পবন চৌধুরী। সভা শেষে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সামনে রাঙ্গামাটি সির্ভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসার হাতে একটি ব্র্যান্ড নিউ এ্যাম্বুলেন্সের চাবি তুলে দেন পবন চৌধুরী। রাঙ্গামাটি জেলায় করোনা রোগী পরিবহনের জন্য এটি দেন সামুদা ফুডস প্রোডাক্টস লিমিটেড।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন ডাঃ বিপাশ খীসা সংবাদকর্মীদের বলেন, পিসিআর ল্যাবটি উদ্বোধন করা হলেও নমুনা পরীক্ষার কাজ শুরু করতে ৩/৪ দিন সময় লাগতে পারে। আর পর থেকে পুরোপুরি টেষ্টে চলে যাবে এই ল্যাব। ইতি মধ্যে ৩ জনকে ঢাকার আইডিসিআর থেকে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে আনা হয়েছে। প্রশিক্ষণের তারাই এই ল্যাবের কাজ করবে। ল্যাবের কাজ শুরু হয়ে গেলে রাঙ্গামাটির রোগী সনাক্ত করতে আমাদের আর কষ্ট পেতে হবে না।
তিনি আরো বলেন, রাঙ্গামাটি পিসিআর ল্যাবে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলায় নমুনা পরীক্ষা হবে কিনা এ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা পেলে এবং প্রয়োজনীয় কিট সরবরাহ করা হলে তা হলে পার্বত্য দুই জেলার রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। তিনি বলেন, দুই শিফটে কাজ করা হলে এ ল্যাবে প্রতিদিন ২শ নমুনা পরীক্ষা করা যাবে এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।
এসময় তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কোভিট (১৯) শুরু থেকে আমরা অনেকদিন কষ্ট করেছি। সুদুর চট্টগ্রামে করোনা পরিক্ষা করার জন্য আমাদের অনেক সময় লেগে যেতো। আর সময় মতো রিপোর্ট না পাওয়ায় করোনা রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়তে থাকে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে বলা হয়েছে, রাঙ্গামাটি থেকে ৩৫জনের বেশি নমুনা পাঠানো যাবে না। যে কারণে আমাদের জন্য করোনা মোকাবেলা বা নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছিলো। আর এখন রাঙ্গামাটিতে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কারণে আমাদের আর বেশী কষ্ট করতে হবে না। তিনি বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে দেয়া বরাদ্দেই সব কাজ শেষ করা গেছে এবং প্রাথমিক ভাবে ল্যাবের নাম দেয়া হয়েছে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল পিসিআর ল্যাব।
উল্লেখ্য, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিটি জেলায় জেলায় একজন সচিবকে দায়িত্ব প্রদান করেন। রাঙ্গামাটি জেলার দায়িত্বভার প্রদান করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবণ চৌধুরীকে। রাঙ্গামাটি জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনের প্রত্যেকের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে পবন চৌধুরীর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং আন্তরিকতায় রাঙ্গামাটি জেলাবাসী আলোর মুখ দেখে। সরকারী দীর্ঘ সুত্রিতার কারণে রাঙ্গামাটি জেলায় পিসিআর ল্যাব বসানো কষ্ট সাধ্য হলেও সচিব পবণ চৌধুরীর আন্তরিকতা ও বিচক্ষণতায় বসুন্ধরা গ্রুপ রাঙ্গামাটি জেলায় পিসিআর ল্যাবের জন্য ৬৯ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ প্রদান করেন। এই টাকায় সম্প্রতি রাঙ্গামাটি সিভিল সার্জন বিপাশ খীসার হাতে তুলে দিলে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ শুরু হয়।