॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ লংগদু উপজেলায় নয়ন হত্যাকান্ডের ঘটনায় উপজাতীদের বাড়ী ঘরে অগ্নি সংযোগের ঘটনাটি নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় গতকাল ভুল বশত একটি পুরাতন ছবি ছাপা (প্রকাশিত) হয়েছে। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য ইত্তেফাক রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ দুঃখ প্রকাশ করছি। লংগদু উপজেলা রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে দুর্গম হওয়ার কারণে অন্যজনের একটি প্রেরিত ছবি আমরা সত্য মনে করে পাঠিয়ে দিয়েছি। এই ছবিটা আমাদের প্রেরিত হওয়ায় এই ছবি প্রতিতে হওয়ায় আমি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তাই পাঠকদের সাময়িক অসুবিধার কারণে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।
॥ মোঃ মোস্তফা কামাল ॥ দেশের সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলাধার কাপ্তাই হ্রদের কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র গুলোতে টানা দ্বিতীয় বছরের মতো কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন কৃত ডিম পাওয়া গেছে। লংগদু উপজেলার ফরেস্ট গার্ড সংলগ্ন কাচালং চ্যানেলে এই কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন কৃত ডিম সংগ্রহে সফলতা পেয়েছে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাঙ্গামাটি নদী উপকেন্দ্রের মৎস্য বিজ্ঞানীরা।মৎস্য বিজ্ঞাণীদের এই সফলতা কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশ বিস্তার সহ মাছের সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচন করেছে বলে সংশ্লিস্টদের অভিমত।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউট, রাঙ্গামাটি নদী উপকেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এম, এ, বাশার জানান কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের যে রকয়েকপিট প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র ছিল তার মধ্যে চেঙ্গী এবং রাইক্ষং চ্যানেলের প্রজনন ক্ষেত্র গুলো বর্তমানে সম্পূর্ণরুপে বিনষ্ট হয়ে গেছে। অপরাপর প্রজনন ক্ষেত্র গুলোর মধ্যে কাচালঙ এবং কর্ণফুলী চ্যানেলের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র গুলো পূনরুজ্জীবিত করার সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত এইসব প্রাকৃতিক প্রজণন ক্ষেত্র গুলো হুমকির মুখে থাকায় হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন মৌসুমে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন আশানুরুপ ভাবে না হওয়ায় হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের সার্বিক উৎপাদন ক্রমশ কমে আসছে। বিকল্প উপায় হিসাবে হ্রদে বিএফডিসির উদ্যোগে হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হলেও তা প্রয়োজনের ত’লনায় কম বিধায় কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন এখনো শতকরা ২০ ভাগ পেরুতে পারছেনা। এই ক্ষেত্রে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করা গেলেই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের উৎপাদন আশানুরুপ পর্যায়ে পৌছাতে পারবে।
মৎস্য গবেসণণা ইনষ্টিটিউটের এই ।ুর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজ নের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য গবেসণা কেন্দ্রের মৎস্য বিজ্ঞাণীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা চালিয়ে আসছেন। এর মধ্যে ১৯৮৬ সালে এবং ২০০২ ও ২০০৩ সালে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক মাছের প্রজনন ক্ষেত্রে মাছের প্রজনন কৃত ডিম পাওয়া গেলেও পরবতৃী বছর গুলোতে এই প্রজনন ক্ষেত্র হতে আর ডিম পাওয়া যায়নি । পরবর্তীতে গবেষণা কেন্দ্রের মৎস্য বিজ্ঞাণীরা কাচালং ও কর্ণফুলী চ্যানেল দুটিকে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন এর উপযোগী করার কাজ শুরু করে এবং অনুকুল পরিবশে সৃষ্ঠির কাজ করে। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১১ জুন এই দুটি চ্যানেল হতে প্রাকৃতিক প্রজনন কৃত কার্প মাছের ডিম পাওয়া যায়। বিষয়টি মৎস্য জ্ঞাণীদের মাঝে নতুন আশার আলো সৃষ্ঠি করে এবং ২০১৭ সালের ২রা এবং ৩ রা মে কাচালং চ্যানেল হতে প্রচুর পরিমানে কার্প জাতীয় মাছের ডিম পাওয়া যায়। তিনি জানান মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে সকলের মধ্যে উচ্চাশার সৃষ্ঠি হবে। তিনি ভবিষ্যতে মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমটি আরো দীর্ঘায়িত করা হলে এর সুফলতা অধিক হারে পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে কাচালং চ্যানেলে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন কৃত ডিম সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেসণা ইনস্টিটিউট, রাঙ্গাামাটি নদী উপকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজী বেলাল উদ্দিন জানান এই পর্যন্ত উক্ত স্থান হতে ডিম সংগ্রহকারীদের সহযোগিতায় বিমেষ পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমানে কার্প জাতয়ি মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি হালদা নদীতে যে উপায়ে মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয় তদ্রুপ ভাবে করা হয়েছে।
তিনি জানান সংগ্রহকৃত কার্প জাতীয় মাছের ডিম সমূহ থেকে মাছের রেনু ও পোনা উৎপাদনের জন্য পরবতৃী পদক্ষেপ এবং গবেসণার কাজ করা হবে। সংগ্রহকৃত ডিম লংগদু উপজেলার মারিশ্যাচর হ্যাচারীতে রাখা হচ্ছে এবং সেখানে ডিম থেকে পোনা উৎপাদনের প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্ন করা হবে।
কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতয়ি মাছের প্রাকৃতিক প্রজণন এর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার ফলে কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতয়ি মাছের ভবিষ্যৎ উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সংশ্লিস্টদের অভিমত। মৎস্য বিজ্ঞাণীদের অভিমত কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন এর বিষয়টি এই হ্রদের জন্য নতুন সম্ভাবনার উম্মোচন করবে। কেননা প্রাকৃতিক ভাবে মা মাছেরা যে ডিম ছাড়ছে তাতে হ্রদে মাছের উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। কার্প জাতীয় মাছের পাশাপাশি অন্যান্য প্রজাতির মাছ গুলোও এবছর কাপ্তাই হ্রদে প্রজনন মৌসুমে াণ্যান্য বছরের তুলনায় অধিকহারে ডিম ছাড়ছে বলে তাদের অভিম। উল্লেখ্য রুই, কাতলা, মৃগেল, কালি বাউশ, সাদা ঘনিয়া প্রজাতির মাছ গুলো কার্প জাতীয় মাছ হিসাবে পরিচিত। সুস্বাদু এই সব মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ বিশেষ ত্রাণ কার্যক্রমের অংশ হিসাবে ঘুর্ণিঝড়র মোরার আঘাতে রাঙ্গামাটির ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
আজ সকালে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ দুস্থদের হাতে ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেন।
এ সময় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি আখতাররুজ্জামান, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের নেতা অসীম কুমার উকিল, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈসিং এমপি, সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার, রাঙ্গামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু শাহেদ চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, , উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমনী আক্তার সহ প্রশাসনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
নেতৃবৃন্দ দুর্গত মানুষের হাতে চাল, ঘর নির্মাণের জন্য ঢেউটিন সহ বিভিন্ন উপকরণ তুলে দেন।
আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বলেন, মোরায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ যতদিন দুর্গত অবস্থায় থাকবেন আওয়ামীলীগ সরকার সব সময়তাদের পাশে থাকবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা ৩ ভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করবো প্রথম ধাপে আমরা দ্রুত মানুষ যাতে তাদের জীবন বাচাতে পারে তার জন্য যতটুকু আছে ততটুক নিয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন দুর্গত মানুষের তালিকা তৈরী করে দ্রুত মন্ত্রনালয়ে পাঠানো নির্দেশনা দিয়েছে। তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেক্ষ ক্ষতিগ্রস্থকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে যদি কোন ভাবে কোন দুর্নীতি হয় তাহলে আমরা কোন ভাবেই ছাড়া দেবো না। আওয়ামীলীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী এই ত্রাণ কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করবেন কোথাও কোন দুর্নীতির খবর পেলে সাথে সাথে এর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তা করতে হবে।
॥ লংগদু প্রতিনিধি ॥ রাঙ্গামাটির লংগদুতে যুবলীগ নেতা ও মোটর বাইক চালক নুরুল ইসলাম নয়ন এর হতাকান্ডের জের ধরে লংগদুর বাইট্টা পাড়া, মানিকজোর ছড়া ও তিন টিলার ৩টি পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৪০০ জনকে আসামী করে মামলা করেছে পুলিশ।
লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম জানান, এই পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে উপজেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় শনিবার দুপুর ২টার পর থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে এলাকা শান্ত রয়েছে। তবে লংগদুর বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে এবং উপজেলায় পুলিশী টহল জোরদার করা হবে।
লংগদু উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আইন শৃঙ্খলা সভায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান এ সিদ্ধান্ত দেন। এছাড়া স্থাণীয় উপজেলা প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করার পর পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা দেয় হবে বলে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক আশ্বাস দেন ।
আইন শৃঙ্খলা সভায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, লংগদু জোন কামান্ডার লেঃ কর্ণেল আব্দুল আলিম, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার ও অন্যান জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে লংগদু উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ ৩ টি এলাকার লোকজন আজো বাড়ী ঘরে ফিরে আসেনি। অনেকে স্থানীয় বৌদ্ধ বিহার ও আত্মীয় স্বজনের বাসা বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য লোকজন ফিরে আসতে শুরু করবে বলে আশ্রয়নেয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাক্তিদেরকে দূর্যোগকালীন সময়ে স্থাণীয় সেনা প্রশাসন খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে।
উল্লখ্য লংগদুতে যুবলীগ নেতা ও মোটর বাইক চালক নুরুল ইসলাম নয়ন এর হতাকান্ড ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্দ লোকজন লংগদুর বাইট্ট্যা পাড়া, তিনটিলার ও মানিকজোরছড়ার তিনটি গ্রামে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় শতাধিক ঘড়বাড়ী ভষ্মিভ’ত হয়।
॥ খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা ॥ খাগড়াছড়িতে মোটর সাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়নের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ (পিবিসিপি)। শুক্রবার বেলা ১১টায় খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্ত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে আদালত সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন পিবিসিপি’র কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল মজিদ। আগামীকাল শনিবার বেলা ১০টায় খাগড়াছড়ির প্রত্যেকটি উপজেলা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আগামী ৪৮ঘন্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুশিঁয়ারী দেয়া হয় মানববন্ধন থেকে।
উল্লেখ্য, গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক আব্দুল মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান জানান, দুপুর ১২টার দিকে রাস্তার পাশে একটি লাশ পড়ে আছে খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। ২৪/২৫ বছর বয়সের যুবকের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কোথাও হত্যার পর লাশটি রাস্তার পাশে ফেলে যেতে পারে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
॥ মো. আবুল বশর নয়ন, নাইক্ষ্যংছড়ি ॥ ঘুর্নিঝড় মোরা’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন আওয়ামীলীগের প্রতিনিধি দল। শুক্রবার (২ জুন) সকালে প্রতিনিধি দলটি জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, তুমব্রু ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর এবং চাকঢালা এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে তাৎক্ষণিক ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। সকাল ১০টায় ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে ক্ষতিগ্রস্থ ‘পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এ সময় ‘‘প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আখতারুজ্জামান ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ‘অসিম কুমার উকিল, বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক, ‘পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, বান্দরবান জেলা আওয়ামলীগ সাধারণ সম্পাদক ইসলাম বেবী, পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুর, লক্ষী পদ দাশ, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস,এম সরওয়ার কামাল, থানা অফিসার ইনচার্জ এএইচএম তৌহিদ কবিরসহ আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা এবং প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ত্রাণ বিতরণকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বান্দরবানবাসী বার বার কৃতজ্ঞতা জানিয়েও শেষ করা যাবেনা। কারণ শেখ হাসিনার সু নেতৃত্বের কারণে এ পর্যন্ত জেলায় যত উন্নয়ন হয়েছে সবই তাঁরই অবদান। আগামীতে শিক্ষা, যোগাযোগ সহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন করা হবে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনার কাছে সত্যিকারের দেশপ্রেম আছে বলেই আজ আমরা তারই আস্থায় রয়েছি। অতীতের ঘূর্ণিঝড় বন্যায় শেখ হাসিনা মানুষের খবর রেখেছেন। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তিনি শক্তিশালী কমিটি মাঠ পর্যায়ে পাঠিয়েছেন। এ কমিটির পরামর্শক্রমে আগামীতে দূর্গত মানুষের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন- সরকারের একার পক্ষে সব কিছু সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন মানুষের কল্যানের কথা বিবেচনা করে দূর্গত মানুষের সেবায় এগিয়ে আসতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যআয়ের দেশে রূপান্তরের স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের পথে। আজ বাংলাদেশের মানুষকে সবাই চেনে জানে। বিদ্যুতে আমাদের ঘাটতি ছিল, সাড়ে তিন হাজার থেকে বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আজ দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিদেশে খাদ্য রপ্তানী হচ্ছে, রির্জাভ বেড়েছে, আর এ বিদ্যুতের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান বলেন, আগাম প্রস্তুতি এবং আল্লাহর রহমতের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হতে কিছুটা রক্ষা পেয়েছি। তারপরও কিছু এলাকায় গাছপালা পড়ে ঘর বাড়ি, স্কুল-মাদরাসা ভেঙ্গেছে। পোল্টি শিল্প, পানের বরজ ও কৃষকের ক্ষতি হয়েছে। এ খবর নেওয়ার জন্যই প্রধানমন্ত্রী আমাদের পাঠিয়েছেন। দূর্যোগ মোকাবেলার জন্য তাৎক্ষণিক ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসার ব্যবস্থা, ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপনসহ তিন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পর্যাক্রয়ে ক্ষতিগ্রস্থ সকলকে সহযোগিতা করা হবে।
আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল বলেছেন- ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের আর্তনাদের কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী আমাদের মাঠ পর্যায়ে পাঠিয়েছেন। সরকার দূর্গত মানুষের পাশে আছে এবং তাদের যথাযথ সেবা এবং সাহায্য সহযোগিতা করে যাবে।
এদিকে জেলা প্রশাসন সুত্রে জানাযায়, ঘর্নিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ মেঃ টন চাল ও ৯০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদম উপজেলায় ৩০ মেঃটন চাল বিতরণ করা হয়।
প্রতিনিধি দলটি শনিবার রাঙ্গামাটি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন বলে জানা গেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরীর পরিচালনায় নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বান্দরবান জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ইসলাম বেবী, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য ক্যউচিং চাক।
॥ লংগদু প্রতিনিধি ॥ রাঙ্গামাটির লংগদুতে যুবলীগ নেতা ও মোটর বাইক চালক নুরুল ইসলাম নয়ন এর হতাকান্ডের ঘটনায় বিক্ষুব্দ লোকজন লংগদু সদর। মানিকজোরছড়া। তিনটিলাসহ বেশ কিছু গ্রামে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। আগুনে পাহাড়ি গ্রামে প্রায় শতাধিক ঘড়বাড়ী ভষ্মিভ’ত হয়েছে। আগুনে গুনবালা চাকমা নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যু ও দুই জন পাহাড়ি নিখোঁজ হয়েছে বলে দাবী করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির লংগদু শাখার সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা। তবে লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত তাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি বলে জানান।
সকালে বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় স্থানীয় পাহাড়ি বাঙ্গালীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে লংগদুতে ১৪৪ জারী করেছে। এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি সেনা বাহিনী ও বিজিবি টহল জোরদার করা হয়েছে। আজ সকালে নিহত নয়নের লাশ নিয়ে জানাযার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে বিক্ষুব্ধ লোকজন এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় পুলিশ ৪ জনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় আহত হযেছে অন্তত ১০ জন। তাদের মধ্যে ৪ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুপুরে লংগদু উপজেলা পরিষদে রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রকাশ কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ আইন শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় লংগদু জোনের জোন কমান্ডার আব্দুল আলিম চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিউল সরোয়ার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন সহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরূপন করে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা দেয়ার আশ্বাস প্রদান করা হয় এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঘটনা যতক্ষণ স্বাভাবিক না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বলবৎ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে নিহত নয়নের লাশ জানাজার পর বিকালে বাট্ট্যা পাড়া এলাকায় দাফন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গতকাল ১ জুন যুবলীগ নেতা ও বাইক চালক নুরুল ইসলাম নয়ন কে ২ জন পাহাড়ি যুবক খাগড়াছড়ি দীঘিনালা যাওয়ার জন্য সকালে ভাড়া করে নিয়ে যায়। ঐ দিন বিকালে বাইক চালকের লাশ ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় খাগড়াছড়ি দিঘীনালা সড়কে পাশ্বর্বতী জঙ্গলে পাওয়া যায়। স্থানীয় বাঙ্গালীদের ঁঅভিযোগ যে দুই জন যাত্রী ভাড়া করেছিল তারাই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করছে।
ঘুর্ণিঝড় “মোরা’র কারণে বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ আরো ২৪ জেলেকে উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী জাহাজ ধলেশ্বরী এবং অপরাজেয়। কক্সবাজারের এলিফ্যান্ট পয়েন্ট এবং কুতুবদিয়ার কাছ থেকে তাদেরকে জীবিত অব¯’ায় উদ্ধার করা হয়। সমুদ্রে ভাসমান অবস্থা থেকে নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত জেলেদের সবাইকে সুস্থ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পতেঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়।
এছাড়া ঝড়ের কারণে বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ জেলেদের উদ্ধারে নৌবাহিনীর ১৮টি জাহাজ, হেলিকপ্টার ও টহল বিমান কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন্স, টেকনাফ, চট্টগ্রাম ও খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলসহ গভীর সমুদ্রে তল্লাশী কার্যক্রম চালিয়ে যাচেছ। ৫টি গ্র“পে বিভক্ত হয়ে নৌবাহিনীর জাহাজসমূহ বাংলাদেশের পুরো সমুদ্রসীমায় একযোগে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। একই সাথে নৌবাহিনী কুতুবদিয়া ও সেন্টমার্টিনে দূর্গতদের ত্রাণ সহায়তা ও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচেছ।
দূর্গত এলাকায় পরি¯ি’তির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত নৌবাহিনীর এই উদ্ধার অভিযান, ত্রাণ বিতরণ ও জরুরী চিকিৎসা সেবা অব্যাহত থাকবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
শুক্রবার বাজেট পরবর্তী পর্যালোচনায় বেসরকারি এ গবেষণা সংস্থার সন্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “বাজেট বাস্তবায়নের জন্য একটি বাস্তবায়ন কর্মপরিকল্পনা খুব দ্রুততার সাথে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের কাছ থেকে আসতে হবে।”
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা।
ফলে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে এক লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনা করেছেন মুহিত।
শুক্রবার ঢাকার একটি হোটেলে সিপিডির বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে দেবপ্রিয় বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে যেসব পদ্ধতির কথা বাজেটে এসেছে, তাতে উত্পাদন ব্যয় ও ভোক্তা ব্যয় বাড়বে। সেই সঙ্গে আগামী বছর মূল্যস্ফীতিও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাতে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়বে।
জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছর আগে বড় আকারের এই বাজেটের খরচ মেটাতে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা জনগণের কাছ থেকে কর ও শুল্ক হিসেবে আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এর মধ্যে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা আসবে মূল্য সংযোজন কর থেকে।
মুহিতের এই পরিকল্পনার সমালোচনা করে দেবপ্রিয় বলেন, “দ্রুত অর্থ আসে- এরকম ক্ষেত্রে বেছে বেছে কর বাড়ানো হয়েছে।”
আর চলতি বছর ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে দুই লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের পলক্ষ্যমাত্রাই যেখানে পূরণ হয়নি, সেখানে ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা রাজস্ব হিসেবে কীভাবে আদায় করা সম্ভব তাও ‘বোধগম্য হয়নি’ সিপিডির কাছে।
বাজেটে যে কাঠামোতে মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করার পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে, তাতে আমদানি খাতের চেয়ে অভ্যন্তরীণ বাজারমুখী উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর অনেক বেশি চাপ পড়বে বলেও দেবপ্রিয় মনে করছেন।
অন্য বছরের মত এবারও বাজেট প্রস্তাবে তিনভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এগুলো হল- রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ, বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলে বিনিয়োগ এবং স্বেচ্ছায় ঘোষণা দিয়ে নির্দিষ্ট জরিমানার মাধ্যমে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করা।
বছরের পর বছর এভাবে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকলে সৎ করদাতারা কেন উৎসাহিত হবেন- সেই প্রশ্ন রাখেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সরকারকে এ বিষয়ে একটি স্থায়ী সমাধান খোঁজার পরামর্শ দেন তিনি।
বাজেট প্রস্তাবে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হলেও তা অর্জন হবে কি না সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন সিপিডি ফেলো।
তিনি বলেন, “এই বাজেটে যে ধরনের রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে; সে সম্ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো সঙ্গতিপূর্ণ মনে করছি না।”
সিপিডি মনে করছে, প্রবৃদ্ধির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে হলে বেসরকারি বিনিয়োগের গতি আরও বাড়াতে হবে।
অর্থমন্ত্রী এক লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা বাজেট ঘাটতি মেটাতে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা বিদেশি উৎস থেকে পাবেন বলে আশা করেছেন। কিন্তু তার এই পরিকল্পনারও কোনো যৌক্তিক ভিত্তি দেখছেন না দেবপ্রিয়।
তিনি বলেন, ঘাটতির ভারসাম্য মেলানোর জন্যই হয়ত অর্থমন্ত্রী বিদেশি এ অর্থায়নের কথা বলেছেন।
“বাংলাদেশেরে ইতিহাসে একটি অর্থবছরে সর্বোচ্চ বিদেশি অর্থায়ন ব্যবহার করার পরিমাণ হল ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। সেখানে ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ব্যবহার করা হবে- কোনো শিশুও এটাকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করবে না।”
দেবপ্রিয় বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা নয়, যেতে হবে সামাজিক সুরক্ষায় এবং এ খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে।
তিনি মনে করছেন, শিক্ষায় বরাদ্দ কিছু বাড়লেও স্বাস্থ্যখাত বঞ্চিত দশায় আছে। প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ আগের মত থাকলেও কৃষিতে কমে গেছে।
বাজেট প্রস্তাবের কয়েকটি জায়গায় পরিসংখ্যাগত বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন দেবপ্রিয়। বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা না রাখা এবং ব্যাংক খাতে পুনঃঅর্থায়নের জন্য বাজেটে দুই হাজার কোটি টাকা রাখার সমালোচনা করেন তিনি।
অগ্রাধিকার ও বড় প্রকল্পগুলোর অর্থ খরচ করতে না পারায় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে বাজেটের ২২ শতাংশ বরাদ্দ খরচ করা যায়নি। এবারও ২০ শতাংশ বরাদ্দ ওইসব প্রকল্পেই রাখা হয়েছে।
শুধুমাত্র প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা দিয়ে বাংলাদেশে একটি বাজেট দক্ষভাবে বাস্তবায়ন করা কঠিন মন্তব্য করে দেবপ্রিয় বলেন, এই বাজেটও প্রশাসন দিয়ে ‘সফলভাবে বাস্তবায়ন’ করা সম্ভব হবে তিনি মনে করেন না।
লংগদু উপজেলা যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যার ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ করছে ওই এলাকায়। বৃহস্পতিবার দুই পাহাড়ি মোটরসাইকেল আরোহী নয়নকে ভাড়ায় নিয়ে যাওয়ার পর তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
একই সঙ্গে যুবলীগ নেতাকে হত্যার পর ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পাহাড়িরা শুক্রবার সকালে নিজেরা নিজেদের ২০ থেকে ২৫টি বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাঙালিরা।
এ ঘটনায় আজ শুক্রবার উপজেলা পরিষদ মাঠে এক বিক্ষোভ মিছিল থেকে হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে লংগদু উপজেলা যুবলীগ।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পাহাড়িরা বলছে, বাঙালিরা তাদের শত শত বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লংগদু সদরের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
জানা যায়, নিহত মোটরসাইকেল চালক নুরুল ইসলাম উপজেলা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বৃহস্পতিবার ভোরে লংগদু বাইট্টা পাড়া থেকে দুই উপজাতীয়কে ভাড়া নিয়ে খাগড়াছড়ি যান তিনি। পরে দুপুর ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নয়নকে হত্যার পর তার মোটরসাইকেলটিও ছিনতাই করা হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি লংগদুতে নিয়ে আসার পর শুক্রবার যুবলীগ বাইট্টা পাড়া থেকে লংগদু সদর পর্যন্ত মিছিল করে। মিছিল শেষে লংগদু উপজেলা পরিষদ মাঠে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাঙালিরা নয়নের দাফন-কাফন নিয়ে যখন ব্যস্ত ছিল তখন পাহাড়িরা নিজেরা নিজেদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে বাঙালিদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আজ লংগদু উপজেলা পরিষদ মাঠে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে খুনিদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনার দাবিতে আল্টিমেটাম দেন যুবলীগ লংগদু শাখার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি আইনের প্রতি আস্থা রেখে সকলকে শান্ত থাকারও আহ্বান জানান।
সমাবেশে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের সদস্য ও লংগদু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জানে আলম, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিক, উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মো. নাসির উদ্দিন, সম-অধিকারের নেতা মো. আফসার আলী ও আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
শফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল দুইজন পাহাড়ি নুরুল ইসলামের মোটরসাইকেল ভাড়া করেন। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। পাহাড়িরা নুরুল ইসলামকে হত্যা করেছেন বলে দাবি তার (শফিকুল)।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার সভাপতি মনি শংকর চাকমা বলেন, পাহাড়িদের দায়ী করে আজ শুক্রবার সকালে বাঙালিরা তিন টিলা ও মানিকজোর ছড়া গ্রামে পাহাড়িদের দুই শতাধিক বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছেন। তারা জনসংহতি সমিতির কার্যালয়ও পুড়িয়ে দিয়েছেন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা লংগদুর ইউএনও মো. তাজুল ইসলাম বলেন, লংগদুতে পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে সমস্যা হওয়ার কারণে সদরের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।