॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পার্বত্য অঞ্চলে আবারো আঞ্চলিক দল গুলোর তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের তৎপরতায় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর কোনঠাসা হয়ে পড়লেও নতুন করে বাঘাইছড়ি উপজেলায় আঞ্চলিক দলগুলোর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাঙ্গামাটির প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও বাঘাইছড়িতে গত দু মাসে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গভীর রাত পর্যন্ত গুলি বিনিময়ের প্রকট শব্দে আবারো ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকে। আর এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষেরা রয়েছে আতংকে।
বাংলাদেশ সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলোর সশস্ত্র ক্যাডারা দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী ভারতের মিজোরাম, দেমাগ্রী, ত্রিপুরা সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় লুকিয়ে ছিলো। প্রশাসনের তৎপরতা কিছুটা কমে আসায় তাদের নেটওয়ার্ক আবারো শক্তিশালী করে প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। তারই ধারাবাহিকতায় বাঘাইছড়ি উপজেলায় প্রায় প্রতিটি কোন কোন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এই ঘটনায় হতাহত হলেও কেউ তা বলতে পারছে না।
পার্বত্য রাঙ্গামাটির রাজস্থলী, বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর এখন হঠ জোন হিসাবে পরিণত হয়েছে। এই সকল উপজেলা গুলোতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলোর আধিপত্য বিস্তার করে মাঝে মাঝে নিজেদের শক্তির পরীক্ষা করে দল গুলো। এই অবস্থায় পার্বত্য অঞ্চলের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান আবারো নতুন করে শুরু করার জোর দাবী উঠছে।
রাঙ্গামাটির দায়িত্বশীল একটি সুত্র জানায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) দীর্ঘদিন ধরে তাদের রাজনৈতিক কোন কর্মকান্ড চালাচ্ছে না। এটাকী তাদের কৌশল হতে পারে না কোন মরণ কামড় দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। তারা বাঘাইছড়ির কিছু কিছু এলাকা এখন নিজেদের দখলে নেয়ার জন্য শক্তি প্রয়োগ করছে।
অন্যদিকে দায়িত্বশীল একটি সুত্র জানায় সম্প্রতি জেএসএস ও ইউপিডিএফএর মাঝে অস্ত্র বিরতীর চুক্তি শেষ হয়ে গেছে। আধিপত্য বিস্তার করতে তারা মাঝে মাঝে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। অপরদিকে চুক্তি শেষ হওয়ার পর পর জেএসএস এর নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক দল গুলোর মাঝে আবারো বৈঠকের পরিকল্পনা চলছে। যদি আঞ্চলিক দল গুলো আবারো এক হয়ে যায় তাহলে পার্বত্য অঞ্চলে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।
এছাড়া পাহাড়ের আঞ্চলিক দল গুলোর হাতে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ দিন দিন বাড়ছে। অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে পাহাড়ে খুন, গুমসহ নিজেদের মাঝে প্রতিনিয়ত শক্তি প্রদর্শণের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনে নার্ভিশ্বাস উঠেছে। প্রতিনিয়ত আঞ্চলিক রাজনেতিক দলের আধিপত্য বিস্তারের কারণে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের শান্তি যেমন বিনষ্ট হচ্ছে তেমনি শত শত মায়ের বুক খালি হচ্ছে।
পার্বত্য তিন জেলার আঞ্চলিক ৫ টি দল অবস্থান করছে। দল গুলো হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (সন্তু গ্রুপ), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ), পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (লারমা সংস্কার গ্রুপ), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ (সংস্কার গ্রুপ) ও নতুন দল গঠন করে মগ লিবারেল ফ্রন্ট নামে আত্মপ্রকাশ করছে। মগ লিবারেল ফ্রন্ট বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির রাজস্থলী ও কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থান করছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
এদিকে পার্বত্য অঞ্চল ও ভারত এবং মিয়ানমারের অধিকাংশ বর্ডার এলাকা খোলা থাকায় অবৈধ নানা গোনা ও অস্ত্রের আনা গোনা বেশি পাওয়া যায়। রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল ও জুরাছড়ির বেশ কিছু এলাকা দিয়ে ভারতের অবস্থান এবং বিলাইছড়ি ও রাজস্থলীর বেশ কিছু এলাকা দিয়ে মিয়ানারের লোকজনের আনা গোনা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সম্প্রতি রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার কলেজ পাড়া এলাকায় আরাকান আর্মির আস্তানা পাওয়া গেছে। এসময় ডাঃ রেনিসো নামে একজনকে আটক করা হয় এবং তার বাসা থেকে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী হামলার সময় মাইন বিষ্ফোরণে আহত একজনকে পাওয়া যায়। তার দুটি হাত উড়ে যায় ডাঃ রেনিন সোর বাড়িতে রেখে আহত ব্যক্তির চিকিৎসা রত অবস্থায় পাওয়া যায়।
সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বেশ কয়েকটি সভায় বলেন, পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে আঞ্চলিক রাজণেতিক দলগুলো পাহাড়ের অস্থিতিশীল করে তুলেছে। অবৈধ অস্ত্রের কারণে পাহাড়ের কোন মানুষ শান্তিতে নেই। পার্বত্য পরিস্থিতিতে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাঁদাবাজী, খুন, অপহরণ, সহ আনা ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। তাদের রিরুদ্ধে পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। খুন, গুম, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ তাদের নানান অপকর্ম দিনদিন বেড়েই চলেছে। পাহাড়ে ৫ টি আঞ্চলিক সংগঠনের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর হাতে সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। মাঝে মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর সমন্বয়ে মাঝে মধ্যে অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হলেও এদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
পার্বত্য জেলার অধিবাসীরা জানান, পার্বত্যাঞ্চলে মোতায়েনরত সেনাবাহিনীকে ছয়টি স্থায়ী সেনানিবাসে প্রত্যাবর্তন, সামাজিক উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৩ পার্বত্য জেলায় ৪১ হাজার ৮৪৭ জনকে বয়স্ক ভাতা, ২২ হাজার ৪১০ জনকে বিধবা ভাতা, ৭ হাজার ৩১১ জনকে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা এবং ৯৮১ জন প্রতিবন্ধীকে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলে ১ হাজার ৪৬টি সমিতির মাধ্যমে ৫২ হাজার ১৭২ জন সদস্যের দারিদ্র্য বিমোচন তথা জীবনমান উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬২৩টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।
তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আগে যেখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ ছিল না সেখানে নির্মিত হয়েছে ১টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১টি মেডিকেল কলেজ। হাইস্কুল ও কলেজের সংখ্যা যেখানে ছিল মাত্র ১১টি সেটা এখন ৪৭৯টি। প্রায় প্রতিটি পাড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। শিক্ষার হার ২ ভাগ থেকে বেড়ে বর্তমানে ৪৪ দশমিক ৬২ ভাগে পৌঁছেছে। যেখানে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষার হার ৫৯ দশমিক ৮২ ভাগ সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার হার ৭৩ ভাগ। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের শিক্ষার হার ২৩ ভাগ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১টি থেকে ৩টি করা হয়েছে, হাসপাতালের সংখ্যা ৩টি থেকে ২৫টিতে উন্নীত হয়েছে। যেখানে কোনো খেলার মাঠ ছিলো না সেখানে ৫টি স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে। কলকারখানা, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ১৯৩টি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১৩৮২টিতে উন্নীত হয়েছে। ফলে সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রামে এককালের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রভূত উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে।
॥ রামগড় ও মাটিরাঙ্গা সংবাদদাতা ॥ খাগড়াছড়ির রামগড় ও মাটিরাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফ’র বাধায় বন্ধ থাকা ফেনী নদীর তীর সংরক্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক স্থাপন এবং সীমান্তের ওপারে ১৫০ গজের মধ্যে ভারতের কাঁটা তাঁরের বেড়া নির্মাণের কাজ উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া না করতে সন্মত হয়েছে বিজিবি বিএসএফ। রবিবার (৩১ জানুয়ারি) রামগড় সীমান্তে দুদেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনীর সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সেতুতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গুইমারার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জিএইচএম সেলিম হাসানের নেতৃত্বে বিজিবি প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন রামগড়ের ৪৩ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল মোঃ আনোয়ারুল মাযাহার, মাটিরাঙ্গার পলাশপুরের ৪০ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল মোঃ রফিকুল ইসলাম এবং বিএসএফের প্রতিনিধিত্ব করেন উদয়পুরের ডিআইজি মোঃ জামিল আহমেদ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে বিজিবির পক্ষ থেকে মাটিরাঙ্গা ও রামগড় সীমান্তে ফেনী নদীর তীর সংরক্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্লক স্থাপনের কাজ বিএসএফ বাধা দিয়ে বন্ধ করে দেয়ার বিষয় উত্থাপন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বিএসএফের তরফে বলা হয়, দুদেশের যৌথ নদী কমিশনের (জে আর সি) দেয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় সীমা শেষ হওয়ায় তারা কাজে বাধা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এখন জে আর সি পুনরায় প্রকল্পের সময় সীমা বাড়ালে তারা কোন আপত্তি বা বাধা দেবে না।
অন্যদিকে, বিএসএফ রামগড় ও মাটিরাঙ্গা সীমান্তের ওপারে একাধিক স্থানে দেড়শ গজের ভিতরে কাঁটা তাঁরের বেড়া নির্মাণের কাজ করতে বাংলাদেশের অনুমতি চাইলে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, বেড়া তৈরির নকশার (ডিজাইন) ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি দেয়া সম্ভব নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দু’পক্ষই উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া সীমান্তে কেউ কাউকে ব্লক স্থাপন ও কাঁটা তাঁরের বেড়া তৈরির কাজ করতে না দেয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে থাকেন। এ অবস্থায় উভয় পক্ষ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত নিজ নিজ সীমান্তে কাজ বন্ধ রাখতে সম্মত হয়।
বৈঠক শেষে রামগড়ের ৪৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক (অধিনায়ক) লে.কর্নেল মোঃ আনোয়ারুল মাযাহার জানান, আমরা যেমন তাদেরকে দেড় গজের মধ্যে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছাড়া বেড়া নির্মাণের কাজ করতে রাজী হয়নি তেমনি ওরাও জেআরসির অনুমতির আগে ফেনী নদীতে আমাদের ব্লক স্থাপনের কাজ না করতে বলেছে। তিনি বলেন, দুপক্ষই এখন উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করবে।
বিষেশ প্রতিবেদক :: পাহাড়ে সাংবাদিকতার পথিকৃত চারণ সাংবাদিক খ্যাত একেএম মকছুদ আহমেদের সাংবাদিকতায় ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁকে সংবর্ধনা দিচ্ছে রাঙামাটি প্রেসক্লাব। সংবর্ধনা ঘিরে বুধবার রাঙামাটি প্রেসক্লাবে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাঙামাটি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মকছুদ আহমেদের সাথে একই অনুষ্ঠানে আরো চার গুণী ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধনা প্রদান করবে প্রেসক্লাব।
প্রস্তুতি সভায় জানানো হয়, আগামী ৫ জানুয়ারি এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের খাদ্যমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপি। অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলাপ্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ উর্ধতন কর্মকর্তাগণ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাঙামাটিতে কর্মরত সকল গণমাধ্যম কর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
অনুষ্ঠানে যাদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে তাঁরা হলেন, প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ কে এম মকছুদ আহমেদ, প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ও কেডিএস গার্মেন্টস এর চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত পারিজাত কুসুম চাকমা (মরণোত্তর), প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ও বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মরহুম সাংবাদিক ওবায়দুল হক (মরণোত্তর) ও প্রেসক্লাবের শুভাকাক্সক্ষী, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা। রাঙামাটি প্রেসক্লাবের প্রস্তুতি সভায় সংবর্ধনা আয়োজনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ সময় রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও ক্লাবে নবযোগদান করা ৭ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। প্রস্তুতি সভার শুরুতে রাঙামাটি প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে নবযোগদান করা সাত সদস্যকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় প্রেসক্লাবের সদস্যরা। পরে নতুন সদস্যরা তাদের পক্ষ থেকে প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। প্রস্তুতি সভায় সভাপতিত্ব করেন রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল। সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক এর সঞ্চালনায় এ সময় সম্ভাব্য সংবর্ধিত অতিথি একেএম মকছুদ আহমেদসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রেসক্লাবের মর্যাদার বিষয়টি মাথায় রেখে একটি সুন্দর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজনের লক্ষ্যে সকলের সহযোগীতা কমানা করেন প্রেসক্লাব সভাপতি।
॥ মোহাম্মদ আবু তৈয়ব, খাগড়াছড়ি ॥ ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ মুজিববষের্র এমন অঙ্গীকার পূরণে ‘স্বপ্নের ঠিকানা’ পেয়েছে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ৩৫ টি পরিবার।
গতকাল শনিবার সাকালে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা হলরুমে মুজিববর্ষ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ির চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।
সমগ্র বাংলাদেশে একযোগে ভার্চুয়াল মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর খাগড়াছড়ি সদরে ৯৬ টি ঘরের মধ্যে প্রথম দফায় ৩৫ টি উপকারভোগী পরিবাররে মাঝে ঘরগুলো বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়, ভূমি মন্ত্রনালয়, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্পে অসহায় পরিবারগুলো মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলেছে পাঁকা ঘরে। প্রতিটি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত করে ঐ জমির ওপর তৈরি করা প্রতিটি ঘর। প্রতিটি ঘরে রয়েছে দু’টি কক্ষ, একটি রান্নাঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দাসহ অন্যান্য সুবিধা রয়েছে ।
এসময় প্রধান অতিথি বলেন- সরকারে এই যুগান্তকারি প্রদক্ষেপের জন্য সাধারণ ভূমিহীন মানুষ এগিয়ে যাবে সমান তালে এ পত্যাশা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রীর নিকট কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মো.আবদুল আজিজ, অেতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব সাইস মোমেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী, পৌর মেয়র মো. রফিকুল আলম, উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শানে আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা মতিনসহ উপকারভোগী পরিবার।
॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥ খাগড়াছড়িতে শীত বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে শীতজনিত রোগ। প্রতিদিন ভিড় বাড়ছে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। চলতি এক মাসের খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৭ থেকে ৮জন শিশু মারা গেছে বলে জানা গেছে।
ঠান্ডার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি পাহাড়ী গ্রামাঞ্চলে। এতে বিপাকে পড়ছে দুর্গম এলাকার সাধারণ মানুষেরা। ঠান্ডার প্রভাবের কারণে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশীর ভাগ শিশুরা। শ্বাসকষ্ট, জ্বর, ঠান্ডা ছাড়াও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায়। ঠান্ডায় আক্রান্ত শিশুদের বেশিরভাগের বয়স ৬ থেকে ১৮ মাস। মারা যাওয়া শিশুদের বয়স এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বলে জানান স্থানীয়রা।
এদিকে, বাড়তি রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ঠান্ডায় আক্রান্ত রোগের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছে ২১ শিশু।
অভিভাবকরা জানান, ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা ও জ্বর-সর্দি হচ্ছে। বেশির ভাগই ৪-৫ দিন পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। চিকিৎসা দেওয়ার পরও বাচ্চাদের সুস্থ হতে অনেক সময় গেলে যাচ্ছে।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, শীতের কারণে নবজাতক ও শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশী। তবে অনেক শিশু সিভিয়ার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আশংকাজনক ভাবে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ঠান্ডা জনিত কারণে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে কোনো শয্যা খালি নেই। প্রতিদিন নতুন করে ১০ থেকে ১২ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া বহির্বিভাগে অনেকে সেবা নিচ্ছে।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের নার্সিং অফিসার মেমোরি চাকমা বলেন, ঠান্ডাজণিত কারণে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। অনেক অভিভাবক সচেতন না। অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাচ্চাদের হাসপাতালে নিয়ে আসে না। দেরি করে আনার কারণে অনেক বাচ্চাকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। আর শিশু ওয়ার্ডে জনবল সংকট থাকায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় বলেও জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রাজেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, শীতে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এ সময় বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি সুষম খাবার দিতে হবে। মা করোনা আক্রান্ত হলেও মুখে মাস্ক পরে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুদের বাড়তি যত্ন নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরো জানান, গত এক মাসে ৭ থেকে ৮ শিশু নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। একজন চিকিৎসককে পুরো ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
॥ রামগড় সংবাদদাতা ॥ বহুল প্রতিক্ষিত রামগড়-সাবরুম স্থল বন্দর স্থাপনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফেনী নদীর ওপর খাগড়াছড়ির রামগড় ও ত্রিপুরার সাবরুম অংশে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গত কয়েক মাস রাত-দিন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা শ্রম দিয়েছেন এর পেছনে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন দু-দেশের জনগন।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস ভারতীয় হাইকমিশনারকে উদ্ধৃত করে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী’র যৌথভাবে সেতু উদ্বোধনের কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে উভয় দেশের হাই অফিসিয়েলস’রা বেশ কয়েকবার ঘুরে গেছেন স্থলবন্দর এলাকা। চলতি মাসের ৬ জানুয়ারী একটি জাইকা (জাপানি উন্নয়ন সংস্থা) প্রতিনিধি দল আসেন। তাঁরা মৈত্রী সেতুসহ সড়কে নির্মিয়মাণ সেতু-কালভার্ট পরিদর্শন করেন। ৩০, ডিসেম্বর ২০২০ আসেন ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার মো. জাবেদ হোসেন। তিনি ওই সময় সাংবাদিকদের বলেছেন, ফেব্রুয়ারী মাস নাগাদ সেতু উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে রামগড় স্থলবন্দরকে ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষগুলোর মনে অর্থনৈতিক মুক্তির প্রত্যাশা জাগছে স্বাভাবিক ভাবেই। সমাজের খেঁটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আশা রামগড় স্থল বন্দরকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সর্বত্র কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে, বৈদেশিক বানিজ্যে এগিয়ে যাবে দেশ, সফল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে যুক্ত হবে সমৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় পাহাড়ের মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। বড় কিংবা ছোট কোন ধরনেরই মিল ফ্যাক্টরি কল কারখানা না থাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ অত্যন্ত কায়ক্লেশে বেকার জীবন যাপন করছেন। তাই এলাকাবাসীর প্রত্যাশা এই মৈত্রি সেতু ভারতের ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়, বানিজ্য পর্যটন এর প্রসার এবং মানুষে মানুষে সম্পর্কোন্নয়নে গোটা অঞ্চলের উপকার হবে। যে কারণে নতুন আশায় উজ্জীবিত এ সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ বিনিয়োগকারী-ব্যবসায়ীরা। বিশ্লেষকদের মতে, বিপুল সংখ্যক মানব সম্পদ কাজে লাগবে অযুত সম্ভাবনার এই কর্মযজ্ঞে। ওই সময় চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বানিজ্যে সবার সামনেই খুলে যাবে নতুন এক স্বর্ণালী সময়, যেন বহুবছরের প্রত্যাশিত চাওয়া। বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ আয়োজিত বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড এক্সপোর্ট ফেয়ার (বিআইটিএফ) উদ্বোধন কালে গত বছরের ২৭, অক্টোবর রোববার এ প্রসঙ্গে বলেন “চট্টগ্রাম বন্দরকে পূর্ব ভারতের কমপক্ষে পাঁচ কোটি মানুষ ব্যবহার করলে প্রচুর রাজস্ব আয় হবে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বানিজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়বে। উত্তর-পূর্ব ভারতের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য কলকাতা বন্দরে যেতে ১২শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের দুরত্ব অনেক কম। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ‘নেইবারহুড ফাষ্ট’ ও ‘অ্যাক্ট ইষ্ট পলিসি’র প্রভার বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বীজ নিহিত আছে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সহযোগিতার ওপরই। ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসাবে পরিচিত এই অঞ্চলের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ১ সেপ্টেম্বর ’২০ ত্রিপুরার মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব স্থলবন্দর এলাকা পরিদর্শন করে কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দিয়েছিলেন।
ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ ১৬ জুন’২০ রামগড়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, “চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মনিপুর মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুনাচল এই সাত রাজ্যের (সেভেন সিস্টার্স) সঙ্গে ব্যবসা বানিজ্য সম্প্রসারণ করতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার বহু আগেই রামগড়-সাবরুম স্থল বন্দর স্থাপনে উদ্যোগী হয়”। আর এ বন্দর চালু হলে দুদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে নতুন দিগন্ত উম্মোচন হবে। অর্থনৈতিক ভাবে এ অঞ্চল হবে সমৃদ্ধ।”
যদিও রাজনৈতিক ও নানা আমলা তান্ত্রিক জটিলতায় এ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন থমকে ছিল। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমান সরকারের আন্তরিক উদ্যোগে চলতি বছরেই বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে বহুকাঙ্খিত রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দরের দৃশ্যমান সম্পূর্ণ অবকাঠামো। এ জন্য ভারত সরকার ফেনী নদীর ওপর চার লেন বিশিষ্ট আর্ন্তজাতিক মানের একটি সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ করেছে। রামগড় পৌরসভার মহামুনি ও সাবরুমের আনন্দপাড়া এলাকায় এর অবস্থান। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১১০ কোটি রুপী। বাংলাদেশ ও ভারত সরকার ইতিমধ্যে স্থলবন্দর কে ঘিরে বন্দর টার্মিনাল, গুদামঘর সহ অন্যান্য অবকাঠামো নিমার্ণে ভূমি অধিগ্রহণ কাজও চুড়ান্ত করেছে।
খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সুদর্শন দত্ত ও অধ্যাপক দিলীপ চৌধুরী মনে করেন, অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে রামগড়-সাবরুম স্থল বন্দর অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে অবশ্যই তা একটি ইতিবাচক খবর। একটা সময় ধরেই নেওয়া হয়েছিল এটা বোধহয় আর হচ্ছে না। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আগ্রহ এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতায় সফলতার দিকে এগুচ্ছে রামগড় -সাবরুম স্থল বন্দরের অগ্রযাত্রা। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম স্থাপিত এই বন্দরের বিশাল কর্মযজ্ঞ এ সব দরিদ্র মানুষের মুক্তির নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে বলে তাঁরা মনে করেন। এ বন্দর দুদেশের মানুষের জন্যই হবে আর্শীবাদ স্বরূপ। এই বিশ্বায়নের যুগে কোন দেশ কিংবা একই দেশের সব অঞ্চল কোন বিশেষ পণ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ না-ও হতে পারে। প্রাকৃতিক ও বৈষয়িক সুবিধা, উৎপাদনে বিশেষজ্ঞতা ও শ্রম বিভাগের কারণে উৎপাদিত পণ্য পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে আদানÑপ্রদানের বিষয়টি স্বাভাবিক নিয়মেই হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো বহু আগেই বলেছেন, “পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার, সেথা হতে সবে আনে উপহার দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে-”
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রামগড় সফরকালে (জানুয়ারী ’১৮) সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, “রামগড় স্থল বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ সড়ক (রামগড়-বারৈয়ারহাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার) উন্নয়নের কাজ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকা কর্তৃক বাস্তবায়ন করবে। এ জন্য খরচ হবে ৩ হাজার কোটি টাকা এবং সড়কটি চার লেনে উন্নিত করা হবে।” পাশাপাশি চট্টগ্রামের নাজিরহাট থেকে রামগড় স্থলবন্দর পর্যন্ত রেল লাইন সম্প্রসারণের মহাপরিকল্পনার বিষয়টি সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছেন। অন্যদিকে ত্রিপুরার আগরতলা থেকে সাবরুম পর্যন্ত রেল লাইনের কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া সাবরুম-উদয়পুর-আগরতলা সড়কগুলো এ মহকুমার সঙ্গে অন্য মহকুমা ও জেলার সড়ক উন্নয়নের কাজ শেষ হয়েছে। সড়ক পথে রামগড়-চট্টগ্রাম বন্দরের দুরত্ব ৭২ কিলোমিটার এবং সাবরুম-আগরতলা ১৩৩ কিলোমিটার।
রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী ও রামগড় বাজারের ব্যবসায়ী তাপস বিশ্বাসের ভাষ্যমতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপনে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই সচেষ্ট ছিল। এটা সম্ভব হওয়ায় ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো (সেভেন সিস্টার্স) চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসা-বানিজ্যে গতি আনতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন দুদেশেরই ব্যবসায়ীরা। খাগড়াছড়িসহ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই রামগড় স্থল বন্দরের অগ্রগতি বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছেন, সরেজমিন পরিদর্শনও করেছেন অনেকে। রামগড় স্থল বন্দর চালু হলে ব্যবসা-বানিজ্যসহ সব ক্ষেত্রেই অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে, পুরো এলাকার চেহারাটাই পাল্টে যাবে বলে মনে করেন তাঁরা।
বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, রামগড় স্থলবন্দর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ২৩ তম। এ জন্য রামগড়ের মহামুনিতে ১০ একর জমি অধিগ্রহনের কাজ চূড়ান্ত হয়েছে। প্রয়োজনে পরে আরও নেওয়া হবে। ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪ দশমিক আট মিটার প্রস্থ সংযোগ সেতুটির নির্মাণ ভারত সরকার করবে। তবে মূল সেতুটির দৈর্ঘ্য হবে ১৫০ মিটার।
উল্লেখ্য, ৬ জুন ’১৫ ঢাকা সফরের সময় ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেনী নদীর ওপর রামগড়- সাবরুম মৈত্রী সেতু -১ এর ভিত্তি প্রস্তুর উম্মোচন করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার হিসাবে পরিচিত ১৯২০ সালের সাবেক মহকুমা শহর খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় স্থলবন্দর স্থাপনের প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ দেড় যুগের পর নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময় নতুন ভাবে আলোচনায় আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে রামগড়ে স্থলবন্দর স্থাপনের ঘোষণা দেয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ১৯৯৬ সালের ২৮ জুলাই স্থলপথ ও অভ্যন্তরীণ জলপথে ভারত ও মায়ানমার থেকে আমদানি-রপ্তানি বা খাদ্য ছাড়করণের উদ্দেশে দেশে ১৭৬টি শুল্ক ষ্টেশনের তালিকা ঘোষণা করে।
ওই তালিকায় ৪৮ নম্বর ক্রমিকে ছিল রামগড় স্থল শুল্কষ্টেশন। শুল্ক ও বর্ণিত পদ্বতি শর্তাবলী পালন করে পণ্যের গুনাগুন, পরিমাপ, মূল্য ও শুল্ক শ্রেণী বিন্যাস সম্পর্কিত প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে আমদানি করা যাবে।
প্রসঙ্গত, সরকার ঘোষিত ১৭৬টি স্থল বন্দরের বেশকিছু ইতিমধ্যে চালু হয়ে গেছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় রামগড় স্থলবন্দর স্থাপনের কাজ দীর্ঘদিন ফাইল চাপা থাকলেও ২০১০ সালে স্থলবন্দর স্থাপনের কাজে পুনরায় গতি আসে।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরী বলেন, রামগড়েই চালু হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন ধীরগতিতে কাজ চললেও স¤প্রতি ভারত-বাংলাদেশ উভয় পক্ষ ত্বরিত গতিতে স্থলবন্দর বাস্তবায়নের কাজ শুরু করায় ব্যবসায়ীসহ সকল মহল আশার আলো দেখছেন। সব মিলিয়ে রামগড় স্থল বন্দর পূর্নাঙ্গ ভাবে চালু হলে বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি বিপুল জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে যে, বিশাল ভূমিকা রাখবে নিশ্চিত ভাবেই তা বলা যায়। আর যোগাযোগের ক্ষেত্রে সূচিত হবে এক নতুন দিগন্তের। আঞ্চলিক গন্ডি ছাপিয়ে এ যেন বিশ্বব্যাপি সেতুবন্ধনের এক পূর্বাভাস।
॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো: রফিকুল আলমের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যদিয়ে খাগড়াছড়িতে পৌরসভায় ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
শরিবার (১৬ জানুয়ারী) সকালে ভোটের শুরুতে সকাল সাড়ে ৮টায় খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজে কেন্দ্র আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী তার ভোট দেন। এছাড়াও ৮টা ১০ মিনিটে স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল আলম খাগড়াছড়ি শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও বিএনপির প্রার্থী ইব্রাহীম খলিল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভোট দেন।
দুপুর সোয়া ২টার দিকে টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রফিকুল আলম উপস্থিত হলে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী রফিকুল আলম অভিযোগ করে বলেন, ভোটের আগের রাত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর লোকজন পৌর এলাকার বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে।
অপর দিকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী এ অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করতে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা চেষ্টা করেছেন।
অন্যদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো: ইব্রাহিম খলিল বলেন, ভোটাররা আতংকের মধ্যে ভোট দিয়েছে।
খাগড়াছড়ি পৌরসভায় সকাল ৮টায় উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ১৮ ভোট কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হয়। ভোট কেন্দ্রে মানুষের ঢল নামে। তবে পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি।
পৌরসভায় সবক’টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে ভোটারবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা হয়। র্যাব ও বিজিবি’র স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিলো। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেই একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়। সে সাথে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয় পুরো শহর। এবার প্রথম ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হওয়ায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে।
এই নির্বাচনে সকালে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে ভোটার সংখ্যাও। প্রথম বারের মত ইভিএমএ এর সাথে পরিচিত হওয়া নিয়েও শেষ নেই ভোটারদের আগ্রহ ও কৌতুহলের। ফলে এই পৌর নির্বাচন উৎসবের মধ্যে আরেক নতুন উৎসবে পরিণত হয়েছে। তবে ইভিএম নিয়ে নানা আশঙ্কাও রয়েছে ভোটারদের মধ্যে। তবে কিছু কিছু কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটে দিতে ভুগান্তির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছে ভোটাররা।
খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪০ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটার সংখ্যা ৩৭ হাজার ৮৭ জন। নারী ভোটার ১৬ হাজার ৭ শ ৩৬ জন এবং পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ৩ শ ৫১ জন।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সংঘাত নয়, হানাহানি নয়, রক্তপাত নয় মৈত্রী ভাবনিযে আগামী প্রজন্মকে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর ঊশৈংসিং এমপি। তিনি শান্তি সম্প্রতি ঐক্য থাকলে কোন সমস্যা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল শান্তি ও সম্প্রতির জায়গা বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসব আরো একবার প্রমান করেছে। পার্বত্য অঞ্চলের অ্যাডভেঞ্চার যুক্ত টুরিজমকে বিকশিত করতে বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসব ভুমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শুক্রবার (১৫ জানুয়ারী) বিকেলে রাঙ্গামাটি চিংলা মং মারি ষ্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১১ থেকে ১৫ জানুয়ারি পাঁচদিন ব্যাপী বঙ্গবন্ধু অ্যাডভেঞ্চার উৎসবের পুরষ্কার বিতরনী ও সমাপনী অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব একথা বলেন।
এর আগে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি । পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিলো।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনে সভাপতি নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তথ্য কমিশনের সচিব সুদপ্ত চাকমা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংশুই প্রু চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল আলম নিজামী, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ,কে,এম মামুনুর রশিদ, রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার মীর মোদ্দাছ্ছের হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাডভেঞ্চার ফেস্টিভলে পর্বতারোহণ, নৌবিহার, কায়াকিং, হাইকিং ও ট্রেইল রান, টিম বিল্ডিং, ট্রেজার হান্ট, ট্রেকিং, ক্যানিওনিং, ট্রি ট্রেইল, রোপ কোর্সসহ বিভিন্ন ইভেন্ট অংশগ্রহণ করা প্রতিযোগিতায় তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় হতে ৫০ জন ও সমতল থেকে ৫০জন সর্বমোট ১০০জন যাদের বয়ন ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী অ্যাডভেঞ্চারার মাঝে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের কুতুকছড়িতে সড়কে দুর্ঘটনায় ভেঙ্গে যাওয়া বেইলী ব্রিজ পুনঃ নির্মাণে কারণে ১৪দিন যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকবে। বুধবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগ থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
সড়ক বিভাগ থেকে জানানো হয়, ট্রাকটি বেইলী ব্রীজের সক্ষমতা না মেনে মালামাল বেশি বহন করার কারণে বেইলী ব্রীজটি ভার নিতে না পারায় ভেঙ্গে যায়। যে কারণে ট্রাক মালিকের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) রাতে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করা হয়েছে। ডায়েরী নং-৬৩৯, তারিখ ১২.০১.২০২১। বুধবার বিকেলে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে ট্রাক মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফীন বলেন, আমাদের উপ-বিভাগীয় এক প্রকৌশলী বাদী হয়ে মঙ্গলবার কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছে এবং বুধবার বিকেলে মামলা দায়ের করা হবে।
আরো এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বেইলী ব্রীজটি মেরামত করতে আমাদের ১৪দিনের মতো সময় লাগতে পারে। তবে এই সময়ের আগে ব্রীটটি ঠিক করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো আমরা।
উল্লেখ্য, গত ১২ জানুয়ারী চট্টগ্রামের মাঝির ঘাট থেকে পাথর বোঝাই করে খাগড়াছড়ি যাওয়ার পথে সকাল ৭টার দিকে রাঙ্গামাটির কুতুকছড়ি বেইলী ব্রীজের উপর উঠলে ওভারলোড ট্রাকটির চাপে ব্রীজ ভেঙ্গে ট্রাকটি পানীতে ডুবে যায়। এসময় ট্রাকের ভেতরে থাকা তিনজনই শ্বাসবন্ধ হয়ে ভেতরেই মারা যান। নিহত তিন জন হলো ট্রাক ড্রাইভার আরাফাত হোসেন, হেলফার জহিরুল ইসলাম, ও মোঃ বাচ্চু।
॥ গিরিদর্পণ ডেস্ক ॥ নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেছেন, ‘কোনো প্রকল্পের মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না।’
বুধবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় প্রকল্প প্রণয়নের সময় দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় যেতে হবে। একই জায়গার একাধিক সংস্থা যেন প্রকল্প না নেয় তা নিশ্চিত করতে সমন্বয় করতে হবে। বাস্তবায়িত প্রকল্প থেকে জনগণ যেন দীর্ঘমেয়াদী উপকার পায় সেটা বিবেচনা করে প্রকল্প নিতে হবে।
পার্বত্য মন্ত্রী আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রকল্প প্রণয়নের সময় কৃষিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে পার্বত্য এলাকার চাষযোগ্য কোনো কৃষিজমি অনাবাদী না থাকে। পার্বত্য এলাকার কৃষকদের উন্নত জাতের ফল ও উচ্চমূল্যের বিভিন্ন মশলা উৎপাদনের আগ্রহ রয়েছে, কিন্তু তাদের সেই সামর্থ্য নাই। এসব কৃষকদের কথা বিবেচনা করে পার্বত্য চট্টগ্রামের মিশ্র ফল চাষ ও উচ্চমূল্যের মশলা চাষের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের কথা মনে করিয়ে মন্ত্রী বলেন, কোনো প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে না। প্রকল্পের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে হবে। ভালো কাজের জন্য পুরস্কার দেয়া হবে, তেমনি কাজ খারাপ করলে তিরস্কার ও শাস্তি দেয়া হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা পরিষদকে সমন্বয় করে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সফিকুল আহম্মদের সভাপতিত্বে সভায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুপ্রু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুপ্রু চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ দফতর ও সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।