আশ্রয় কেন্দ্রে ২ বেলা ভালো খাবার জুটলেও, রাঙ্গামাটির পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা পুনর্বাসনের অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে

॥ নন্দন দেবনাথ ॥ রাঙ্গামাটির পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তরা পুনর্বাসনের অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিত লোকজনের। রাঙ্গামাটির ৫ টি আশ্রয় কেন্দ্রে দুবেলা ভালো খাবার ও থাকার সুব্যবস্থা থাকলেও কবে নাগাদ তাদের বাড়ীঘরে ফিরতে পারবে তাদের নিজের ঘর কবে ঠিক হবে এই দুশ্চিন্তায় পড়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা। প্রশাসনের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোন সদ উত্তর না পাওয়ায় এবং মাথা গোচারা ঠাই হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে শত শত মানুষ।
রাঙ্গামাটির ৫টি আশ্রয় কেন্দ্রের আশ্রিত লোকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে দীর্ঘ দেড় মাসেরও বেশী সময় ধরে আছি কিন্তু কোথায় যাবো কি করবো তার কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করবে সেই সুযোগও নেই। আশ্রয় কেন্দ্রে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া হয় না। তারা বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রে দু বেলা ভালো খাবার দিচ্ছে সরকার কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে আমাদেরকে। নিজের ঘরে থাকার আর আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা অনেক পার্থক্য।
আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজন বলেন, সরকার আমাদেরকে কি করবে তার কোন সঠিক উত্তর আমাদেরকে দিচ্ছে না। যতবারই শুনি তারা আমাদেরকে বলছে পূনর্বাসন করবে। কিন্তু আমাদেরকে কোথায় পুনর্বাসিত করবে তা আমরা এখনো জানি না। তারা বলেন, আমরা আমাদের বাড়ীঘরে ফিরতে চায়। নিজের যেটুকু আছে সে টুকুতে আমরা ফিরতে চায় কিন্তু প্রশাসন আমাদেরকে যেতে দিচ্ছে না। প্রশাসন বলছে পাহাড়ের খাদে ঝুঁকি রয়ে গেছে তাই আপনারা আগের জায়গায় যেতে পারবেন না। আপনাদেরকে আমরা ভালো একটি জায়গায় পুর্নবাসিত করবো।
রাঙ্গামাটি ষ্টেডিয়ামের আশ্রয় কেন্দ্রে স্বজন হারানো হালিমা জানান, ঘর হারিয়েছি, স্বামী হারিয়েছি, সন্তান হারিয়েছি এখন আমি কোথায় যাবো। নিজেরে অন্য সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আছি। মনে অনেক কষ্ট যারা আছে তাদেরকে কোথায় নিয়ে রাখবো জানি না। আমাদের সরকার পূর্নবাসন করবে কিনা তাও আমরা জানি না।
জিমনেসিয়াম আশ্রয় কেন্দ্রের সুমন চাকমা বলেন, আমাদের বাড়ীঘর সব ভেঙ্গে গেছে। এখনে অনেক কষ্টের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে আছি। প্রতিদিন যুব উন্নয়ন এলাকায় নিজের বাড়ীতে যায় কিন্তু অনেক কষ্ট লাগে। কি করবো সরকার তো ওখানে আর ঘর তুলতে দিবে না। পুনর্বাসন করবে কোথায় করে তাও বুঝতে পারছি না। আদৌ আমাদেরকে পুনর্বাসন করবে কিনা তাও জানি না। অনেক কষ্ট ছেলে মেয়েদের লেখপড়া নষ্ট হতে বসেছে। নিরুপায় হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে আছি সরকার দুবেলা খাওয়াচ্ছে কিন্তু আমরা আমাদের নিরাপদ আশ্রয় চায়।
এই বিষয়ে রাঙ্গামাটি ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বিশ্বনাথ মজুমদার জানান, আমাদের ৬ টি আশ্রয় কেন্দ্রে এক হাজার ৪শ জনেরও বেশী লোকজন আছে। তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি দুবেলা খাবার আমরা বিতরণ করছি। আশ্রয় কেন্দ্র গুলো খুব ভালোভাবে চলছে কোন সমস্যা নেই।
রাঙ্গামাটির ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে খুবই আন্তরিক। যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত তাদের তালিকা প্রনয়ন ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি কমিটি করেছি এই কমিটি আগামীকাল থেকে ফিল্ডে কাজ করবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে একটি রিপোর্ট আমরা তৈরী করতে পারবো। তিনি বলেন, এছাড়াও ঢাকায় আন্তর্জাতি বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কক্ষে রাঙ্গামাটির পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় একটি বৈঠক হবে। এই বৈঠকের জাতীয় কমিটির সদস্য এবং বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। এই বৈঠক থেকেও আমরা অনেকটা তথ্য পাবো। তিনি বলেন ক্ষতিগ্রস্তদের পূনর্বাসনে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি হয়তো কিছু দিনের মধ্যে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হবে।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম একেএম মকছুদ আহমেদের স্বরণে নাগরিক শোকসভা :  পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি প্রবীন সাংবাদিককে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকে ভুষিত করার দাবী

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031