
॥ নন্দন দেবনাথ ॥ লংগদু অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পূণর্বাসনে উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সরকার। অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবার ৩ কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা বাড়ী ও একটি রান্না ঘর ও একটি শৌচাগার পাচ্ছে। এই জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প হতে লংগদু উপজেলার প্রতিটি বসতগৃহ নির্মাণের ৫ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ প্রদান করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত প্রাক্কলন প্রনয়নের জন্য লংগদু উপজেলা পরিষদ নির্বাহী কর্মকর্তাদে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) আবুল কালাম শামসুদ্দিন এক চিঠিতে এই তথ্য নির্দেশ প্রদান করেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে ক্ষতিগ্রস্থ উপজাতীয় পরিবার গুলো সাধুবাদ জানালেও অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থরা ক্ষতিপুরণের টাকা প্রকল্পের মাধ্যমে বাড়ীঘর নির্মাণ করে না দিয়ে তাদের কাছে অর্থ গুলো হস্তান্তরের দাবী জানিয়েছে। অপরদিকে বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দরা প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, অগ্নিকান্ডে একজন বাঙ্গালী পরিবারের বাড়ী সম্পূর্ণ ভষ্মিভ’ত হয়েছে কিন্তু তার না তালিকায় না থাকায় এবং নিহত নয়নের পরিবরের জন্য কোন ক্ষতিপুরণের সান্তনা না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো ত্রাণ গ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ৫ লক্ষ টাকা করে দেয়ার যে পরিকল্পনা ছিলো সেই উদ্যোগে আমরা সাধুবাদ জানিয়েছি। কিন্তু তারা যেভাবে টাকা দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তাতে আমরা খুবই ক্ষুব্ধ। এই টাকা গুলোর মধ্যে দিয়ে যদি ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়ীঘর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে আমরা আরো বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
এই বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরবারের পক্ষে মনি শংকর চাকমা জানান, প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ প্রকল্পের পক্ষ থেকে যে চিঠিটা এসেছে তা আমরা পেয়েছি। চিঠিতে ৫ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে থেকে ১০ শতাংশ ভ্যাট চলে গেলেও তাকে ৪ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। তিনি বলেন, এই টাকা গুলো দিয়ে যদি টেন্ডারের মাধ্যমে বাড়ীঘর নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয় তাহলে আমরাতো ২ লক্ষ টাকাও পাবো না। তিনি বলেন, আগামী রবিবার আমরা রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে পত্র দিবো এই পত্রের মাধ্যমে আমাদের দাবী থাকবে সরকার য দিচ্ছে সেই টাকা গুলো আমাদেরকে নগদ দিয়ে দিলে আমরা নিজেরাই বাড়ীঘর নির্মাণ করে নেবো।
বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মোঃ আলমগীর জানান, সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা খুবই বৈষম্য মুলক। যুবলীগ নেতা নয়ন হত্যকান্ডের জন্যই অগ্নিসংযোগ। সরকার অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেও অগ্নিকান্ডে একজন বাঙ্গালী পরিবার শাহেদ আলীর বাড়ীঘর সম্পূর্ণ ভস্মিভ’ত হয়েছে। পুনর্বাসনে তার কোন নাম ঠিকানা নেই। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ উপজাতীয় পরিবার গুলো বিভিন্ন এনজিও ও সরকার থেকে সহযোগিতা পেলেও এই বাঙ্গালী পরিবার আজ পর্যন্ত কোন সহযোগিতা পাইনি। এছাড়া নিহত নয়নের পরিবারের জন্য কোন উদ্যোগ নো থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে প্রেরিত পত্রে বলা হয়, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলার আগুনে ভষ্মিভ’ত ২১২ টি পরিবার জন্য বাসতগৃহের প্রাক্কলন ও নক্সা প্রেরণ। (সুত্রঃ ১। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের স্মারক নং-০৩.০৭৯.০১৮.০০.০১.২০১৬-৭২৬, তারিখ-৯/৭/১৭ খ্রিঃ। ২। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের স্মারক নং-২৯.০০.০০০০.২২৩.০২০.০২.১৬-১৮৬, তারিখ-২০/৬/১৭ খ্রিঃ।
উপযুক্ত বিষয় ও সুত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, সুত্রস্থ ২ নং স্মারক পত্রের মাধ্যমে বর্ণিত ২১২ টি পরিবারের বসতগৃহ (৩ কক্ষ বিশিষ্ট ১ টি সেমিপাকা ঘর, ১ টি রান্না ঘর ও ১টি শৌচাগার) এবং ৮ টি দোকান নির্মানের জন্য অর্থ বরাদ্দের অনুরোধ করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে প্রাক্কলন প্রণয়নের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ।
০২। উল্লেখ্য আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের ২য় সংশোধিত ডিপিপি-তে পার্বত্য ৩ টি জেলায় উপজাতী জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ডিজাইনের ঘর নির্মাণের সংস্থান আছে। ডিপিপি অনুযায়ী প্রতিটি ঘরের প্রাক্কলিত মূল্য আইটি ভ্যাটসহ ৫.২৫ লক্ষ টাকা। (০৩) এমতাবস্থায় বর্ণিত চাহিদা অনুযায়ী আইটি ভ্যাট (১০%) বাদে ৪.৭২ লক্ষ টাকার বসতগৃহ এবং প্রাক্কলন ও নক্সা জরুরী ভিতিত্তে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
উপজেলা প্রকৌশলী মোসাদ্দেক মেহেদি ইমাম বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পত্র পেয়েছি। পত্রটি আমরা ইতিমধ্যে প্রাক্কলন তৈরী করার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে হস্তান্তর করেছি। আশা করছি আগামী রবিবাররের মধ্যে আমরা চিঠিটা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেরণ করতে পারবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পত্রে লেখা আছে ২১২ টি কিন্তু আমরা সরজমিনে তদন্ত করে দেখেছি ১৭৫ টি বাড়ী ও ১০ টি দোকান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৩৮ টি বসতবাড়ী এছাড়া ৩ টি পাড়া কেন্দ্র পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত আমরা পালন করছি। সরকার যখন যে সিদ্ধান্ত প্রদান করবে তখন আমরা তা পালন করতে সচেষ্ট থাকবো।
রাঙ্গামাটি জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী বলেন, আমরা চিঠিটি পাওয়ার পর লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করেছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা প্রাক্কলন তৈরী করে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে প্রেরণ করবো।
উল্লেখ্য গত ১ জুন লংগদু উপজেলা যুবলীগ নেতা নয়ন নিখোঁজ হয়। ওইদিন খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় নয়নের লাশ পাওয়া যায়। পরদিন লংগদুতে আনার পর লাশসহ মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় উশৃঙ্খল বাঙ্গালীরা লংগদু উপজেলার তিনটিলা, বাইট্টাপাড়া ও মানিকজোড় গ্রামের পাহাড়িদের বসতবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এই ঘটনায় পাহাড়ীদের প্রায় ২ শতাধিক বাড়ীঘর সম্পূর্ণ ভষ্মিভ’ত হয়।
এই ঘটনায় পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্ত একজন বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন। মামলায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এম এ হালিম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম মুরাদসহ ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরদিকে নয়ন হত্যায় জড়িত থাকার দায়ে জুনেল চাকমা (১৮) ও রনেল চাকমা (৩৩) নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দীঘিনালা নদী থেকে নয়নের ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয় খাগড়াছড়ি পুলিশ