মিরসরাইয়ে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধুকে গরম লোহার রডের ছ্যাঁকা দিয়েছে শ্বাশুড়ি ও ননদ

॥ মিরসরাই প্রতিনিধি ॥ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে যৌতুকের দাবিতে রোকসানা আক্তার (২৫) নামের এক গৃহবধুকে পৈশাচিক কায়দায় গরম লোহার রডের ছ্যাঁকা দিয়ে দুই হাত পুড়ে দিয়েছে তার পাষান্ড শাশুড়ি ও ননদ। রবিবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১১ টায় মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের চুনি মিজির টেক গ্রামের ভেলু মালের বাড়িতে এই নৃশংস ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার দ্বদ্ধ গৃহবধু রোকসানা আক্তার বর্তমানে মস্তাননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অমানুষিক নির্যাতনের এই ঘটনায় ওই গৃহবধুর ভাই মিজানুর রহমান বাদি হয়ে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) রাত নয়টায় জোরারগঞ্জ থানায় চার জনকে আসামী করে একটি মামলা (নং- ০৯/১২.১২.১৭) করেছে। তবে এই রির্পোট লিখা পর্যন্ত কোন উক্ত মামলার কোন আসামী গ্রেফতার হয়নি।
রোকসানা আক্তার উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের মাতবার হাট গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. গোলাম রহমানের কন্যা। গত ১১ মাস পূর্বে একই ইউনিয়নের চুনি মিজির টেক গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে আকবর ইসলামের (৩০) সাথে সামাজিক ভাবেই রোকসানা আক্তারের বিয়ে হয়। তার স্বামী মো. আকবর ইসলাম লাইটার জাহাজে ও শ্বশুর মো. আবুল খায়ের ট্যাংকার জাহাজে চাকুরীর সুবাদে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকেন। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্বামী ও শ্বশুরের প্রতক্ষ্য সমর্থনে রোকসানাকে তার শাশুড়ি ও ননদ বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের জন্য মারধর ও মাসসিক নির্যাতন চালায়।
সরেজমিনে মস্তাননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বেডে অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে হতভাগ্য গৃহবধু রোকসানা আক্তার। গরম লোহার রড দিয়ে জলসে দেয়া দুই হাতের ক্ষতস্থান ব্যান্ডেজ করে রাখা হয়েছে। এসময় রোকসানা আক্তার আমার সংবাদকে জানান, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তারা আমার উপর যৌতুকের দাবিতে শারীরীক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। এই ঘটনার দিন সকাল ১১ টায় আমার শাশুড়ি ফিরোজা বেগম ও ননদ নারগিস আক্তার আমাকে বাবার বাড়ি থেকে ১ লক্ষ টাকা এনে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। আমি উক্ত টাকা এনে দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে একযোগে আমার উপর হামলা চালায়। মারধরের এক পর্যায়ে আমার শাশুড়ি আমাকে জোরে চেপে ধরে রাখে এবং আমার ননদ গরম লোহার রড দিয়ে আমার হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত ১০ টি স্থানে ছ্যাঁকা দেয়। এসময় আমার আত্মচিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে আমাকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করে। এরপর রাত নয়টায় আমার ভাই ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের সাথে নিয়ে আমাকে শ্বশুর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
এ ব্যাপারে জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির আমার সংবাদকে জানান, আমি এই ঘটনা জানার পর মস্তাননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নির্যাতিত গৃহবধু রোকসানা আক্তারকে দেখে এসেছি। এই ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা হয়েছে। আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
মস্তাননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ অসীম বড়–য়া বলেন, রোকসানাকে গরম কিছু দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়ায় তার হাতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে আমরা নিয়মিত ড্রেসিং করছি। আশা করি সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
এ বিষয়ে ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল মোস্তফা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি উক্ত ঘটনা শুনার সাথে সাথে ইউপি সদস্যদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে ওই বাড়ি থেকে নির্যাতনের শিকার রোকসানা আক্তারকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়েছি। আশা করি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তদন্তপূর্বক এই বর্বরোচিত কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম একেএম মকছুদ আহমেদের স্বরণে নাগরিক শোকসভা :  পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি প্রবীন সাংবাদিককে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকে ভুষিত করার দাবী

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031