বৈশ্বিক মহামারীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল

॥ বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বৈশ্বিক মহামারীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সচেতন মহল। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সরকার থেকে হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশষ্য ও নগদ অর্থ বরাদ্ধ পেয়ে থাকলেও যে কোন বৈশ্বিক মহামারীদের পাহাড়ের কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো কোন নজির দেখাতে পারেনি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর বর্তমান সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রনালয় সৃষ্টির পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করে একজন প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার চেয়ারম্যান ও ২১ জন সদস্যের সৃষ্টি করে। কিন্তু সৃষ্টির পর থেকে সভা সেমিনার ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের কল্যাণ কর কোন কাজে তাদের অংশ গ্রহণ চোখে পড়েনি।
বৈশ্বিক এই মহামারীতে পাহাড়ের সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সহ বিভিন্ন বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যক্তি উদ্যোগে রাঙ্গামাটির কর্মহীন ও দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সংবাদ চোখে পড়লেও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের পক্ষ থেকে তিন পার্বত্য জেলার কোথাও কোন ত্রাণ সহায়তায় চোখে না পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাঙ্গামাটি জেলার সচেতন মহল।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটির তরুন সমাজ সেবক এক সময়ের ছাত্র নেতা জাহাঙ্গীর আলম মুন্না বলেন পাহাড়ের বৈশ্বিক মহামারীতের আঞ্চলিক পরিষদের কোন ত্রাণ সহায়তা না থাকায় খুবই দুঃখ জনক। তিনি বলেন, এই আঞ্চলিক পরিষদ একটি অগণতান্ত্রিক পরিষদ। তারা নির্বাচিত না হওয়ায় তাদের কাছে জনগনের কোন জবাব দিহিতা নেই। তিনি বলেন, বিশ্বের এই মহামারীতে পাহাড়ের সাধারণ মানুষের পাশে একজন শ্রমজীবি মানুষ দাঁড়িয়েছে কিন্তু আঞ্চলিক পরিষদের মতো একটি বড়ো প্রতিষ্ঠান যদি এই সময়েও মানুষের পাশে দাঁড়াতে তার চাইতে দুঃখ জনক আর কিছুই হতে পারে না। তিনি সরকারের কাছে দাবী জানিয়ে বলেন, পাহাড়ের মানুষের পাশে যারা দাঁড়াতে পারে না তাদেরকে কোন ধরনের বরাদ্ধ দেয়ার প্রয়োজন নেই। তাদেরকে এই বরাদ্ধ না দিয়ে জেলা প্রশাসনকে এই বরাদ্ধ দিয়ে জনগনের কল্যাণে কাজ করা হোক।
বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সংস্থার সাবেক সদস্য ও রাঙ্গামাটির প্রাক্তন শিক্ষক নিরূপা দেওয়ান বলেন, বৈশ্বিস এই মহামারীতে সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সকলেই যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ গুলো একটি সহায় হবে। তিনি বলেন, নিজেরাই ফান্ড তৈরী করে জনগনের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছি। প্রতিনিয়ত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আঞ্চলিক পরিষদ কোন বসে আছে তা আমাদের বোধ গম্য নয়। তিনি বলেন, এই মহামারীতে সরকারের সকল প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরাতো সাধারণ মানুষ তাই তাদেরকে কিছু বলতে পারি না। আপনারা সাংবাদিক আছে আপনারাতো আঞ্চলিক পরিষদের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন তারা কেন এগিয়ে আসছে না।
এই বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ বান্দরবান পার্বত্য জেলার সদস্য কাজল কান্তি দাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আঞ্চলিক পরিষদের সাথে আমাদের কোন যোগাযোগ নেই। এখানে রাঙ্গামাটিতে চেয়ারম্যান আছে তিনিই ভালো বলতে পারেন। আপনারা রাঙ্গামাটি অফিসে যোগাযোগ করেন। রাঙ্গামাটি হেড অফিসে যোগাযোগ করলেই আসল উত্তর পেয়ে যাবেন।
এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য হাজী মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, সরকার করোনা মোকাবেলায় আঞ্চলিক পরিষদকে কোন বরাদ্ধ দেয়নি। তার পরও আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিভিন্ন ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কর্মকর্তা কল্যাণ চাকমার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, করোনা নিয়ে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে কোন বরাদ্ধ দেয়া হয়নি। বরাদ্ধ যে গুলো পেয়েছে তা হচ্ছে কম্বল বিতরণের জন্য তা সঠিক সময়ে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য কিছু খাদ্যশষ্য বরাদ্ধ দেয়াহয়েছে তা সদস্যদের মাঝে বন্টন করা হয়েছে।
এদিকে রাঙ্গামাটির উপজাতীয় সমাজের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি তাদের নাম প্রকাশ না করা স্বর্তে জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কখনোই কারো দুঃর্ভোগে এগিয়ে আসে না। ২০১৭ সালে ১৩ জুন পাহাড় ধ্বসে ১২০ জন মারা গেছে, ২০১৮ সালে নানিয়ারচরে ১১ জন মারা গেছে তাদের হাতে দু টাকা দেয়ার মতো তাদের মতো কোন আন্তরিকতা দেখাতে পারেনি। তারা বলেন, পাহাড়ের মানুষের কল্যাণে কোন ভাবেই কাজে আসছে না আঞ্চলিক পরিষদ। বছরের পর বছর বরাদ্ধ পেয়ে থাকলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের কোন নজির আঞ্চলিক পরিষদ রাখতে পারেনি।
কয়েকজন বাঙ্গালী নেতা তাদের প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তুলে বলেন, পাহাড়ের শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হলেও পাহাড়ের অশান্তি সৃষ্টি বেশী হচ্ছে। তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা, ইউপিডিএফ এর নেতা প্রসীত খীসা ও আরো দুটি আঞ্চলিক সংগঠন নামে পাহাড়ে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজী ও অস্ত্রবাজী চলছে। পাহাড়ের মানুষ করোনার সাথে যুদ্ধ করছে ঠিক তখনই তারা পাহাড়ের মানুষের উপর গুলি চালাচ্ছে। দীর্ঘ বছর ধরে পাহাড়ের মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজী করে আসলেও এই অবস্থায় পাহাড়ের করোনায় কর্মহীন মানুষের কাছে এক কেজি চাল ডাল দেয়ার চেষ্টা দেয়া তো দুরে থাকা মানুষের খবর পর্যন্ত তারা নিচ্ছে না। এ অবস্থায় পাহাড়ের মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহবান জানান তারা।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31