বর্ষা মৌসুমেও কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকায় কাপ্তাইয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে

॥ কাজী মোশাররফ হোসেন, কাপ্তাই ॥ এখন বর্ষার মৌসুম চলছে। এই সময়ে কাপ্তাই হ্রদে পানিতে ভরপুর থাকার কথা। হ্রদে শুধু পানিতে ভরপুর থাকাই নয়, পানির চাপ কমাতে এখন কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি ছাড়া হয়। অতীতে বহুবার এমনটি হয়েছিল। কিন্তু এখন হ্রদে থেকে পানি ছাড়াতো দুরের কথা কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে পানি আশঙ্কাজনক হারে কম রয়েছে। সাধারণত এই সময় কাপ্তাই হ্রদে কখনো পানির উচ্চতা এতটা কম থাকেনা বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সুত্র জানায়, রুলকার্ভ (পানির পরিমান) অনুযায়ী এখন (২০ আগষ্ট) কাপ্তাই লেকে পানি থাকার কথা ৯৫.০৮ ফুট মীন সী লেভেল (এমএসএল) পানি। কিন্তু হ্রদে পানি রয়েছে ৯৩.৫৪ ফুট এম এস এল পানি। পানি কম থাকায় কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবগুলো জেনারেটর চালানো সম্ভব হচ্ছেনা। এখন বর্ষা মৌসুমও শেষ হয়ে আসছে। আগামীতে আর ভারী এবং লাগাতার বৃষ্টি হবার সম্ভাবনাও নেই। যার ফলে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর আরো কমবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। হ্রদে পানি কর্ম থাকায় কাপ্তাইয়ে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকার কথা স্বীকার করেছেন, কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহের। তিনি বলেন, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট ৫টি জেনারেটর রয়েছে। এই ৫টি জেনারেটর থেকে সর্বোচ্চ ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। রুলকার্ভ অনুযায়ী লেকে পানি থাকলে সবগুলো জেনারেটর একযোগে চালু করা সম্ভব হতো। কিন্তু কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকায় ৫ নম্বর জেনারেটরটি বর্তমানে বন্ধ রেখে অন্য ৪টি জেনারেটর উৎপাদনে রাখা হয়েছে। আর সচল ৪টি জেনারেটর থেকেও বর্তমানে ১২৩ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা সম্ভব হচ্ছেনা। অবশ্য উৎপাদিত ১২৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের পুরোটাই জাতীয় গ্রীডে সঞ্চালন করা হচ্ছে।
অতীতে ভরা বর্ষা মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমান এত কম ছিলনা বলে সুত্রে জানা গেছে। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমান এত কম কেন জানতে চাইলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি সুত্র জানায়, কাপ্তাই লেক সম্পুর্ণ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। বৃষ্টি হলে কাপ্তাই হ্রদ পানিতে ভরে যাবে। এটাই নিয়ম। সাধারণত বর্ষার সময় কাপ্তাই হ্রদে পানির ঘাটতি দেখা যায়না। কিন্তু এবছর রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল অনেক কম। বৃষ্টি না হওয়ায় হ্রদে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়নি। তবে অতীতে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসেও পার্বত্য এলাকায় ভারী বৃষ্টি হবার রেকর্ড রয়েছে। টানা এক সপ্তাহ মুষলধারে বৃষ্টি হলে কাপ্তাই হ্রদে পানিতে ভরে যাবে। তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে বলেও সুত্র আশা প্রকাশ করছে। আর কাঙ্খিত মাত্রায় বৃষ্টি না হলে পানির অভাবে একম সময় কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাবে।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031