বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া চট্টগ্রামের কৃতি সন্তানদের চিরস্মরণীয় করে রাখতে স্থাপনা নির্মাণ ও নামকরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
বুধবার একুশের প্রথম কবিতার কবি মাহবুব উল আলমের নামে চসিক পাবলিক লাইব্রেরীর নামকরণ ও ফলক উম্মোচন অনুষ্ঠানে মেয়র এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের বীর সন্তানরা সাহসী ভূমিকা রেখেছে। তাদের ভূমিকাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও নামকরণ করা হবে।
“কবি মাহবুব উল আলম চগ্রামের ভাষা আন্দোলনকে সুসংগঠিত করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তরুণ ছাত্রনেতারা যখন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে লড়ছেন, রক্ত ঝড়াচ্ছেন তখন কবি মাহবুব উল আলম ভাষা আন্দোলনের প্রথম কবিতা রচনা করেন। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, ’ক্ষুধার্ত বাতাসে শুনি এখানে নিভৃত এক নাম চট্টগ্রাম: বীর চট্টগ্রাম!’ আজ বীর চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান কবি মাহবুব উল আলমের নামে এ লাইব্রেরির নামকরণ করতে পেরে আমি গর্বিত।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট সমাজ বিজ্ঞানী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন বলেন, তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার আহ্বান আপনারা কবি মাহবুব উল আলমের প্রতিবাদী চেতনাকে ধারণ করুন। আপনাদের নেতৃত্বে গড়ে উঠুক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। যে বাংলা হবে ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত সাম্যের ঠিকানা।
সভাপতির বক্তব্যে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আধুনিক চট্টগ্রাম গড়তে চসিক কাজ করছে। বই যুক্তি শেখায়, মুক্তি দেয়। এই লাইব্রেরি পাঠকদের মাঝে আলো ছড়াবে, তাদের স্বাধীনতার চেতনা শেখাবে এই আমার কামনা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী, গোলাম মোহাম্মদ জুবায়ের, আবদুস সালাম মাসুম, পুলক খাস্তগীর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত, কবি মাহবুব উল আলমের জামাতা স্থপতি ইশতিয়াক আহমদ আলম চৌধুরী, সচিব খালেদ মাহমুদ, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, আঞ্চলিক কর্মকর্তা রেজাউল করিম, উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী টিপু প্রমুখ।
উল্লেখ্য চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান একুশের প্রথম কবিতার কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী রাউজান উপজেলার গহিরায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। বাংলাকে রাষ্টভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে চট্টগ্রামে সর্বদলীয় রাষ্টভাষা সংগ্রাম পরিষদ কমিটির আহবায়ক ছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী এবং যুগ্ন আহবায়ক ছিলেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ এবং এম এ আজিজ। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবী নিয়ে এসেছি কবিতাটি রচনা করেন। এ কবিতাটি ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রচিত প্রথম কবিতা হিসেবে স্বীকৃত।
ঢাকায় গুলিবর্ষনের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারি সমগ্র চট্টগ্রামে সাধারন ধর্মঘট পালিত হয়। লালদিঘি ময়দানে বিকাল ৩টায়
অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভার জনসমুদ্রে “কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি” কবিতাটি আবৃত্তি করেন চৌধুরী হারুনুর রশীদ। এর কয়েকদিন পরেই সেসময়কার মুসলিম লীগ সরকার কবিতাটি বাজেয়াপ্ত করে। মাহবুব উল আলম চৌধুরী আমৃত্যু নিজ শহর চট্টগ্রাম ও সমগ্র বাংলাদেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সংক্রমক জাতীয় ওষুধ খাইয়ে লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদাম ইউনিয়নের গাউছিয়া তৈয়্যাবিয়া তাহেরিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানায় ৯ম শ্রেণির ১ ছাত্রের দ্বারা শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে অন্য এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মাদ্রাসার বর্তমান পরিচালনা কমিটির উপর সীমাহীন দুর্নিতিসহ নি¤œমানের শিক্ষা প্রদানের অভিযোগ এনেছে এলাকাবাসী। বুধবার স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভাসান্যাদামের খাগড়াছড়ি বাজার এলাকার মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আশ্রাফ নবম শ্রেণির ছাত্র মো. মাসুম বিল্লাহ কে দিয়ে তার গণিত শিক্ষক ওবায়দুলকে ভাতের সাথে সংক্রমক ওষুধ খাওয়ালে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে সে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসার জন্য লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে সে সুস্থ অবস্থায় রিজার্ভমুখস্থ গাউছিয়া খানকায় অবস্থান করছেন। মাদ্রাসা ছাত্র মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, গত তারিখে আমাদের শিক্ষক আশ্রাফ স্যার আমাকে ওবায়দুল স্যার এর খাবারের সাথে মিট্রিল নামক ট্যাবলেট এর গুড়া মিশিয়ে দিতে বলেন। আমি তার কথা না মানলে মাদ্রাসা কমিটি এই কাজটি করতে বলেছে বলেন আশ্রাফ এমটাই ছাত্র প্রতিবেদক কে জানান। পরে আমি না বুঝে তার কথা মেনে ওবায়দুল স্যারের রাতের খাবারে ওই ওষুধ মিশিয়ে দেই।
ঘটনা সূত্রে জানাযায়, গত শুক্রবার রাতে প্রতিষ্ঠানের গণিত শিক্ষক ওবায়দুলকে ভাতের সাথে মিশিয়ে মেট্রিল নামক ঔষধটি খাওয়ানো হয়। এরপর থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন অবস্থা বেগতিক হওয়ায় গত রোববার রাতে তাকে লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। পরদিন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
একজন বিশেষজ্ঞের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন- মেট্রিল সাধারণত পাতলা পায়খানা উপশমের জন্য খাওয়া হয়। কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া কেউর ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে এই ঔষধ ব্যবহারের কথা না। মেট্রিল অতিরিক্ত সেবনের ফলে সাইডইফেক্ট হয়। সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ঔষধ কোন রোগীকে দেওয়া হয়না।
এবিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তার হোসেন বলেন, ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। এলাকায় এসে বিষয়টি জানতে পেরে কমিটির সদস্যরা বসে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে এই ঘটনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যথায় আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
স্থানীয়রা জানায়- আশ্রাফ আলী একজন পল্লী চিকিৎসক সে বিগত প্রায় ১৮ বছর আগে এই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন দুর্নিতির অভিযোগে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু ২০২০ সালে মাদ্রাসা পরিচালনায় নতুন কমিটি করার পর। সে আবারো শিক্ষকতা শুরু করেন, কিন্তু তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে স্থানীয়রা সন্দেহ প্রকাশ করেন। স্থানীয়রা আরো বলেন- পূর্বেও ভুলভাল চিকিৎসা ও মেয়াদউর্ত্ত্বীর্ণ ঔষধ বিক্রির কারণে জেল খেটেছেন।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- বিষয়টি আমি এলাকাবাসীর মাধ্যমে জেনেছি। জানার পর ওই ছাত্রের সাথে কথা বলে জানতে পারি আশ্রাফ আলী এই কাজটি করিয়েছে। তারপর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিকে বিষয়টি অবগত করি এবং থানায় একটি জিডি করতে বলি। এখনো কেন থানায় জিডি করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন- মাদ্রাসা কমিটি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে ইউপি সদস্য ও অভিভাবক জানান, আমার ৪সন্তানের মধ্যে ৩জন এই মাদ্রাসা থেকে পড়ালেখা করে বর্তমানে ১জন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ১জন রাঙ্গামাটিতে, ১জন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় অধ্যায়ন করেছে এবং আরেকজন বর্তমানে এই মাদ্রাসায় পড়ছে। যদি এমন ঘটনা শিক্ষার্থিদের সাথে ঘটতো তাহলে হয়তো অনেক মায়ের বুক কালি হতো। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবী জানাচ্ছি। অন্যান্য অভিভাবকরাও এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
ভিকটিম ওবাইদুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- আমি হাসপাতাল থেকে বর্তমানে রিজার্ভমুখ খানকায় অবস্থান করছি। তার সাথে কথা বলার জন্য প্রতিবেদক খানকায় পৌঁছানোর আগেই সে ঐখান থেকে কেটে পরে। পরে বার বার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি বিভিন্ন অযুহাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এলাকাবসী জানান অভিযুক্ত আশ্রাফ আলী ঘটনার পর থেকে রাঙামাটি অবস্থান করছে। তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্থানীয় এলাকাবাসী আঞ্জুমান ও জেলা গাউসিয়া কমিটির মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো :: অবিভক্ত ভারতবর্ষের অসাম্প্রদায়িক মননের মনীষী, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিকতার পথিকৃৎ, শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী’র ৭২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভা অদ্য ২৪ অক্টোবর কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানা’র উদ্যোগে মোমিন রোডস্থ এতিমখানা প্রাঙ্গণে কদম মোবারক এতিমখানার সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের প্রেসিডেন্ট (ইনচার্জ) লায়ন সৈয়দ মোরশেদ হোসেন’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার’র সঞ্চালনায় সভায় মূখ্য আলোচক ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ শামসুদ্দিন শিশির, অধ্যক্ষ ড. মোঃ সানাউল্লাহ, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদের খতীব অধ্যক্ষ আল্লামা বদিউল আলম রিজভী, কদম মোবারক মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক আবুল কাশেম, ইসলামাবাদীর দৌহিত্র ও যুব উদ্যোক্তা এ.এম.এস. ইসলামাবাদী গাজী, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদের মতোয়াল্লী মোহাম্মদ আজাদুল্লাহ খান, এতিমখানা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ, লেখক নেছার আহমেদ খান, সংগঠক বোরহান উদ্দিন গিফারী, হাফেজ মাওলানা ইকরাম হোসেন, মিনহাজুর রহমান শিহাব প্রমুখ। সভায় ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন ও সোচ্চার। চট্টগ্রামের যেসব মনীষী তাঁদের অলোকসামান্য প্রতিভার ছটায় নিখিল বঙ্গদেশকে উদ্ভাসিত করে তুলেছিলেন, যাঁরা কলকাতাকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ-বাংলা ও বার্মার স্থানে স্থানে সাময়িক কর্মস্থল স্থাপন ও পরিভ্রমণ করে জাতিকে জাগানোর প্রায় অসম্ভব সাধনায় লিপ্ত হয়েছিলেন, মাওলানা ইসলামাবাদী তাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য। সাহিত্য, সাংবাদিকতা, শিক্ষকতা, সমাজসংস্কার, ধর্মপ্রচার, রাজনীতি, আইনসভা যখন যেদিকে তিনি তাঁর প্রতিভা কর্ষণ করেছেন, মুঠো মুঠো ফসলে যেন তাঁর গোলা ভরে উঠেছে। এমনই বিচিত্র পথে বিপুল সৃজনপ্রসূ হয়েছিল তাঁর যুগন্ধর প্রতিভা। মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ছিলেন মানবতাবাদে উজ্জীবিত, অহিংস মতবাদের ধারক, সুশিক্ষার প্রসারে দক্ষ এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব, উদার চিন্তার ইসলামি চিন্তাবিদ ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার মনীষী। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের অতন্দ্র প্রহরী এবং বিপ্লবীও ছিলেন তিনি। বক্তারা বলেন, মাওলানা ইসলামাবাদী ছিলেন একজন ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ, গোঁড়ামিমুক্ত ধর্মীয় নেতা, নিরলস কর্মী, অসাধারণ পান্ডিত্যের অধিকারী, অনন্য সমাজ সংস্কারক, শিক্ষা সম্প্রসারণের অগ্রদূত এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, দাতা ও সমন্বয়কারী। নিজের ভোগ-বিলাস পরিহার করে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করে পরহিতব্রতে স্বীয় জীবন নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দিয়েছেন যা সকলের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে। প্রখ্যাত আলেম হওয়ার পাশাপাশি তিনি ছিলেন যুক্তিবাদি, বিজ্ঞানমনষ্ক ও সমাজনিবিষ্ট জনসেবক। বক্তারা আরো বলেন, স্বকীয় সাধনা, চিন্তা, ত্যাগী জীবন সংগ্রাম ও ইতিবাচক কর্মযজ্ঞের ফলশ্রুতিতে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ভারতবর্ষের ইতিহাসে অনন্য মর্যাদায় সমাসীন হয়েছেন। তিনি উপমহাদেশে অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ দর্শনের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবেন ।
উল্লেখ্য, ২৪ অক্টোবর মাওলানা ইসলামাবাদীর মৃত্যুবার্ষিকীতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভার আয়োজন করে। এছাড়া তার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পন, জেয়ারত, দোয়া মাহফিল ও তবারুক বিতরণের মাধ্যমে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পন্ন হয়।
বান্দরবান প্রতিনিধি ॥ বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির সীমান্তর্বতী বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন “ জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ” ৭ জন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে র ্যাব। এ সময় তদের কাছ থেকে বিপুল অস্ত্র , গোলাবারুদ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বান্দরবানের মেঘলা এলাকায় র্যাব-১৫ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রেস ব্রিফিংকালে র ্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এই তথ্য নিশ্চিত করেন । তিনি বলেন, সম্প্রতি নতুন জঙ্গি সংগঠন “ জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’র ” শীর্ষ নেতাদের ধরতে পাহাড়ে অভিযান শুরু হয়। সম্প্রতি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে নতুন করে কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া তরুণরা জামাতুল আনসারের হয়ে পাহাড়ি এলাকার আস্তানায় আশ্রয় নেয়। এসব আস্তানায় হিজরত করা তরুণদের ভারি অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
তিনি আরো জানান , উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় হিজরতের নামে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া বিভিন্ন জেলার ৫০ তরুণের তথ্য পায় র্যাব, তাদের মধ্যে ৩৮ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হয়। বান্দরবানের সীমান্তবর্তী সীমান্তঘেঁষা দুর্গম পাহাড়ে বাড়িছাড়া কিছু তরুণ জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, নতুন এ জঙ্গি সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে টানা অভিযান চালিয়ে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৭জন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করে র ্যাব। এ সময় তদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৯টি বন্ধুক, ৫০ রাউন্ড গুলি , ৬২টি কার্তুজ কেইস, ১টিওয়াকটকি, হাত বোমা ৬টি, মানচিত্র ও বিভিন্ন ধরনের পোশাক।
পার্বত্য এলাকায় সাধারণ জনগণের উন্নয়ন ব্যাহত ও শান্তি শৃংঙ্খলা ভঙ্গে যারা জড়িত থাকবে এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করবে সেই ধরণের সকল সংগঠন ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান র ্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো :: ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) দ্বি–বার্ষিক নির্বাচনের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন সিইউজে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেমুল হক।
সোমবার (১০ অক্টোবর) রাতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে সিইউজের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার মুলতবি সভায় তিনি ফলাফল ঘোষণা করেন।
উৎসবমুখর পরিবেশে ফুল দিয়ে বরণ করা হয় বিজয়ীদের।
বৃহষ্পতিবার (৬ অক্টোবর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাধারণ সভার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মুলতবি সভায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নিজাম উদ্দিন আহমদ, নুরুল আমিন, মোরশেদ আলম, কামাল পারভেজ। সিইউজের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, নবনির্বাচিত সভাপতি তপন চক্রবর্তী, সভাপতি প্রার্থীদের পক্ষে আসিফ সিরাজ, সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম প্রমুখ।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি শহীদুল আলম।
বক্তারা ঐতিহ্যবাহী সিইউজের গৌরব অক্ষুণ্ন রেখে সাংবাদিকদের পেশাগত মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলানিউজের ডেপুটি এডিটর তপন চক্রবর্তী। পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন দেশ রূপান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার ম. শামসুল ইসলাম।
সভাপতি পদে তপন চক্রবর্তী পেয়েছেন ১৭৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাক আহমদ পেয়েছেন ১০৫ ভোট।
সিনিয়র সহ সভাপতি ২৩৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন রুবেল খান। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রতন কান্তি দেবাশীষ পেয়েছেন ১৩২ ভোট।
সহ সভাপতি পদে ১৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন অনিন্দ্য টিটো। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শামসুল হুদা মিন্টু পেয়েছেন ১৭২ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে ম. শামসুল ইসলাম ১৯২ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সবুর শুভ পেয়েছেন ১২২ ভোট।
যুগ্ম সম্পাদক পদে ১৭৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সাইদুল ইসলাম। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আরিচ আহমেদ পেয়েছেন ১৩৬ ভোট।
অর্থ সম্পাদক পদে ১৮৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মুজাহিদুল ইসলাম। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সৌমেন ধর পেয়েছেন ১৭৭ ভোট।
সাংগঠনিক সম্পাদক ১৩১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মহরম হোসাইন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সুবল বড়ুয়া পেয়েছেন ১২৯ ভোট।
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ২২৯ ভোট পেয়ে সরওয়ার কামাল নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মিজান ইউসুফ পেয়েছেন ১২৯ ভোট।
নির্বাহী সদস্য পদে আলাউদ্দিন হোসেন দুলাল ২০৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিশু রায় চৌধুরী পেয়েছেন ১৫১ ভোট।
চট্টগ্রাম ব্যুরো :: বাড়তি দামে যন্ত্রপাতি কিনে ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা একটি মামলায় চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার (২৮ আগস্ট) সকালে মহানগর দায়রা জজ ও স্পেশাল জজ ডা. বেগম জেবুননেছার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করা হয়।
আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, একটি এমআরআই মেশিনের বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা হলেও চট্টগ্রাম জেনালের হাসপাতাল সেটি কিনে ৬ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৫ টাকায়। একইভাবে চারটি কালার ডপলার কেনা হয় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। যদিও এই মেশিনের দাম মাত্র ৯৮ লাখ টাকা। এভাবে বাজার মূল্যের চেয়ে দুই-তিনগুণ বেশি দাম দেখিয়ে মোট ৯ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৫ টাকা সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর সাতজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন দুদক সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম ১-এর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল হক।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা. মো. আব্দুর রব, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক সার্জারি) ডা. মো. মইন উদ্দিন মজুমদার, সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. বিজন কুমার নাথ, যন্ত্রপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির স্বত্বাধিকারী মো. জাহের উদ্দিন সরকার, মেসার্স আহম্মদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুন্সী ফারুক হোসেন এবং এএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আফতাব আহমেদ।
২০১৪ সালে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের জন্য যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে এ দুর্নীতি হয়েছিল বলে মামলার এজাহারে লেখা রয়েছে। ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জনের পাশাপাশি ওই সময় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ঢাকা অফিস :: কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধ ও মাদক নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পের ভেতরে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। একই সঙ্গে মাদকের প্রবেশ রোধে নাফ নদীতে মাছ ধরার ট্রলারে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
রোববার (২৮ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির ৫ম সভা মেষে সাংবাদিাদের এক প্রশ্নের জাবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, স্বরাষ্ট্রসচিব (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন আমাদের এখানে অবস্থান করার কারণে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে আমরা পড়েছি। আমরা বারবার প্রচেষ্টার পরেও তাদের দেশে যাওয়ার যে প্রক্রিয়াটা তাদের অনীহার কারণে শুরু করতে পারিনি। তারপরেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাঝে মধ্যেই আমরা রক্তপাত দেখছি, সন্ত্রাস দেখছি।
তিনি বলেন, আজ দীর্ঘ আলোচনার পরে যে সিদ্ধান্তগুলো এসেছে— ক্যাম্পে আমরা মাঝেমধ্যেই সন্ত্রাসী কার্যক্রম লক্ষ্য করেছি এবং বিনা কারণে রক্তপাতও দেখছি। মাঝে মাঝে মিয়ানমার থেকে মাদকের আনাগোনাও আমরা লক্ষ্য করছি। এটার জন্য গোয়েন্দা তৎপরতা এবং অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধের জন্য আমরা তথ্য ভিত্তিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই অভিযানে প্রয়োজনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার তো আছেই প্রয়োজনে আমাদের সেনাসদস্যরাও এতে অংশ নেবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাস্তবতার নিরিখে এবং সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে যৌথভাবে ক্যাম্পের ভেতরে এবং বাহিরে টহল ও অভিযান পরিচালনা করবে। ক্যাম্পের ভেতরে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। সেগুলো কেন হচ্ছে আমরা তা খতিয়ে দেখছি, পাশাপাশি আরও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
স্বশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক ক্যাম্পের চতুর্দিকে নিরাপত্তা বেষ্টনি স্থাপন যেটা চলছিল, সেটা প্রায় শেষের দিকে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাপে টহল রাস্তা কিছুটা বাকি আছে, শেষের দিকে। ওয়াচটাওয়ার সেখানে হবে। তারা যেন সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকে সে ব্যবস্থা আমরা করছি। ক্যাম্পের ভেতরে জন্মনিরোধের জন্য একটি এসওপি তৈরির কাজ চলছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ইসলামি ফাউন্ডেশন এ নিয়ে কাজ করছে। ঘরে ঘরে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন এবং সচেতন করছেন। মসজিদের ইমাম ও এনজিওরাও এ বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছেন।
মন্ত্রী বলেন, নাফ নদী মাদক আনা নেওয়ার রুট, সেখানে মাছ ধরার ট্রলারের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্যাম্পের ভেতরে এবং বাইরে মাদক চোরাচালান বন্ধে অভিযান যেটা ছিল তা আরও জোরদার করা হবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদকের পাশাপাশি ভারী অস্ত্রও দেখা যাচ্ছে, এ বিষয়ে উদ্যোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এ নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। ভেতরে পুলিশসহ গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন, তারা কাজ করছেন। ভারী অস্ত্রের কথা যেটা বললেন, ঠিক অতখানি নয়, মাঝে মাঝে অস্ত্র দ্বারা রক্তপাত হচ্ছে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে যারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা গোয়েন্দা নজরদারিতে আছে। তারা কীভাবে কোথা থেকে আসে বিস্তারিত নিয়ে খুব শিগগিরই তথ্য প্রকাশ করবো। তথ্য অনুযায়ী আমাদের পুলিশ ও র্যাব কাজ করছে।
রোহিঙ্গাদের মোবাইল ব্যবহার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এরা মিয়ানমারের মোবাইল ব্যবহার করে, এতে আমরা ক্রিমিনালদের শনাক্ত করতে পারছি না। আমরা যেটা চাচ্ছি তারা যেন আমাদের দেশি মোবাইল ব্যবহার করে। প্রয়োজনবোধে আমরা যেভাবে মোবাইল নিয়ন্ত্রণ করি সেভাবেই করবো।
ফেনী প্রতিনিধি : অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ফেনীর ৩২৬ অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার পাবেন বীর নিবাস। জেলার ছয়টি উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে এসব ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, বীর নিবাস নির্মাণ শুরুর আগেই যাচাই-বাছাই করে জেলায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামে এসব ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঘরের বরাদ্দ পেয়ে এবং নির্মাণ শুরু হওয়ায় ব্যাপক খুশি অসহায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার। সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারা।
জেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, অসচ্ছল-শহীদ-প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্ত্রী ও সন্তানদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ লাখ টাকা করে এক একটি পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এর অংশ হিসেবেই ফেনীর ৩২৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সরকারি এসব ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জেলার ছয় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ৫ পৌরসভায় মোট ৩২৬টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে। ঠিকাদাররা বলছেন, দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির কারণে এসব ঘর নির্মাণ করতে গিয়ে তাদের লোকজন গুনতে হবে। তবুও, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তারা ঘর নির্মাণ কাজ শেষ করবেন।
ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবদুল মোতালেব বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ অংশগ্রহণ করেছিলেন। সরকার যে ঘরগুলো দিচ্ছে তা অবশ্যই ভালো কাজ। এতে করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মাথাগোঁজার ঠাই পাবেন এবং পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন।
ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদুল উল হাসান বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। সরকার দেশের অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা ভেবে তাদের জন্য পাকা ঘর নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ঘর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভীষণ উপকৃত হচ্ছেন। এ প্রকল্প মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে সাড়া ফেলেছে।
সাপ্তাহিক চাটগাঁর শরৎকালীন সাহিত্য আসর ২৬ আগস্ট শুক্রবার বিকাল চারটায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোমিন রোডস্থ কদম মোবারক মার্কেটের বিজয়’৭১ হলে অনুষ্ঠিত আসরে সভাপতিত্ব করেন সীতাকুণ্ড তাহের-মনজুর কলেজের অধ্যক্ষ লেখক মুকতাদের আজাদ খান। আসর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সাহিত্যসেবী ভানু রঞ্জন চক্রবর্ত্তী। সাংস্কৃতিক সংগঠক সাজ্জাদ হোসেন জাফরের সঞ্চালনায় সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক চাটগাঁর সহকারী সম্পাদক রোকন উদ্দীন আহমদ। অতিথি ছিলেন মাসিক কথন সম্পাদক কবি ফারুক হাসান, দৈনিক গিরি দর্পণের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান এম.কে. মোমিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক চাটগাঁর লেখক প্রণব রঞ্জন চক্রবর্ত্তী, সাংবাদিক সমীরন পাল, সাংস্কৃতিক সংগঠক জসিমুল হক চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী রূপংকর পাল। প্রাণবন্ত ২ ঘণ্টার আসরটিতে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন, কবি যথাক্রমে আবু মুসা চৌধুরী, আশীষ সেন, গোফরান উদ্দিন টিটু, তালুকদার হালিম, বিদ্যুৎ কুমার দাশ, লিটন কুমার চৌধুরী, সঞ্চয় কুমার দাশ, সারাফ নাওয়ার, মিনু মিত্র, নান্টু বড়ুয়া। নবীন-প্রবীণ কবিদের কবিতা পাঠ ও অতিথিদের কথামালায় আসরটি উপভোগ্য হয়। এসময় অতিথি বক্তারা বলেছেন, চট্টগ্রামের লেখকদের সাহিত্য আন্তর্জাতিক মানের। এই ধারা বাঁচিয়ে রাখতে সাহিত্যকর্মে পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। সুস্থ ও সুন্দর সমাজ নির্মাণে মানবিক মানুষ প্রয়োজন। সাহিত্য চর্চায় মানবিক মানুষ তৈরী হয়। তাই সাহিত্য পাঠে সকলের প্রতি আহ্বান জানাই। প্রেস বিজ্ঞপ্তি
চট্টগ্রাম ব্যুরো :: প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চট্টগ্রাম জেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন (৩য় পর্যায়) ৫৮৭টি পরিবারকে জমিসহ ঘরের মালিকানা হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (২০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘মুজিবশতবর্ষে একজন লোকও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এর অধীনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ঘর প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১ম পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি সারাদেশে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর বরাদ্দ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
আগামী ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ৩য় পর্যায়ের (২য় ধাপ) ২৬ হাজার ২২৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর বরাদ্দ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম জেলায় ৩য় পর্যায়ে (২য় ধাপ) ৫৮৭টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ঘর প্রদান করা হয়েছে। পটিয়া উপজেলায় ১০টি, বোয়ালখালী উপজেলায় ১৫টি, চন্দনাইশ উপজেলায় ১৫টি, সাতকানিয়া উপজেলায় ২০টি, লোহাগাড়া উপজেলায় ৫১টি, বাঁশখালী উপজেলায় ১৫টি, হাটহাজারী উপজেলায় ৬০টি, ফটিকছড়ি উপজেলায় ১০০টি, আনোয়ারা উপজেলায় ১০০টি, মীরসরাই উপজেলায় ১০৯টি, রাউজান উপজেলায় ৫৪টি এবং সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৩৮টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ঘর প্রদান করা হবে।
এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলার ৪টি উপজেলা যথাক্রমে পটিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলাকে হালনাগাদ যাচাই-বাছাইকৃত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ২১ জুলাই ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হবে বলে জানান তিনি।