॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সংক্রমক জাতীয় ওষুধ খাইয়ে লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদাম ইউনিয়নের গাউছিয়া তৈয়্যাবিয়া তাহেরিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানায় ৯ম শ্রেণির ১ ছাত্রের দ্বারা শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে অন্য এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মাদ্রাসার বর্তমান পরিচালনা কমিটির উপর সীমাহীন দুর্নিতিসহ নি¤œমানের শিক্ষা প্রদানের অভিযোগ এনেছে এলাকাবাসী। বুধবার স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভাসান্যাদামের খাগড়াছড়ি বাজার এলাকার মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আশ্রাফ নবম শ্রেণির ছাত্র মো. মাসুম বিল্লাহ কে দিয়ে তার গণিত শিক্ষক ওবায়দুলকে ভাতের সাথে সংক্রমক ওষুধ খাওয়ালে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে সে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসার জন্য লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে সে সুস্থ অবস্থায় রিজার্ভমুখস্থ গাউছিয়া খানকায় অবস্থান করছেন। মাদ্রাসা ছাত্র মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, গত তারিখে আমাদের শিক্ষক আশ্রাফ স্যার আমাকে ওবায়দুল স্যার এর খাবারের সাথে মিট্রিল নামক ট্যাবলেট এর গুড়া মিশিয়ে দিতে বলেন। আমি তার কথা না মানলে মাদ্রাসা কমিটি এই কাজটি করতে বলেছে বলেন আশ্রাফ এমটাই ছাত্র প্রতিবেদক কে জানান। পরে আমি না বুঝে তার কথা মেনে ওবায়দুল স্যারের রাতের খাবারে ওই ওষুধ মিশিয়ে দেই।
ঘটনা সূত্রে জানাযায়, গত শুক্রবার রাতে প্রতিষ্ঠানের গণিত শিক্ষক ওবায়দুলকে ভাতের সাথে মিশিয়ে মেট্রিল নামক ঔষধটি খাওয়ানো হয়। এরপর থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন অবস্থা বেগতিক হওয়ায় গত রোববার রাতে তাকে লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। পরদিন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
একজন বিশেষজ্ঞের সাথে আলাপ করা হলে তিনি বলেন- মেট্রিল সাধারণত পাতলা পায়খানা উপশমের জন্য খাওয়া হয়। কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া কেউর ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে এই ঔষধ ব্যবহারের কথা না। মেট্রিল অতিরিক্ত সেবনের ফলে সাইডইফেক্ট হয়। সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এই ঔষধ কোন রোগীকে দেওয়া হয়না।
এবিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তার হোসেন বলেন, ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। এলাকায় এসে বিষয়টি জানতে পেরে কমিটির সদস্যরা বসে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে এই ঘটনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যথায় আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
স্থানীয়রা জানায়- আশ্রাফ আলী একজন পল্লী চিকিৎসক সে বিগত প্রায় ১৮ বছর আগে এই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন দুর্নিতির অভিযোগে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু ২০২০ সালে মাদ্রাসা পরিচালনায় নতুন কমিটি করার পর। সে আবারো শিক্ষকতা শুরু করেন, কিন্তু তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে স্থানীয়রা সন্দেহ প্রকাশ করেন। স্থানীয়রা আরো বলেন- পূর্বেও ভুলভাল চিকিৎসা ও মেয়াদউর্ত্ত্বীর্ণ ঔষধ বিক্রির কারণে জেল খেটেছেন।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- বিষয়টি আমি এলাকাবাসীর মাধ্যমে জেনেছি। জানার পর ওই ছাত্রের সাথে কথা বলে জানতে পারি আশ্রাফ আলী এই কাজটি করিয়েছে। তারপর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিকে বিষয়টি অবগত করি এবং থানায় একটি জিডি করতে বলি। এখনো কেন থানায় জিডি করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন- মাদ্রাসা কমিটি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে ইউপি সদস্য ও অভিভাবক জানান, আমার ৪সন্তানের মধ্যে ৩জন এই মাদ্রাসা থেকে পড়ালেখা করে বর্তমানে ১জন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ১জন রাঙ্গামাটিতে, ১জন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় অধ্যায়ন করেছে এবং আরেকজন বর্তমানে এই মাদ্রাসায় পড়ছে। যদি এমন ঘটনা শিক্ষার্থিদের সাথে ঘটতো তাহলে হয়তো অনেক মায়ের বুক কালি হতো। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবী জানাচ্ছি। অন্যান্য অভিভাবকরাও এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।
ভিকটিম ওবাইদুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- আমি হাসপাতাল থেকে বর্তমানে রিজার্ভমুখ খানকায় অবস্থান করছি। তার সাথে কথা বলার জন্য প্রতিবেদক খানকায় পৌঁছানোর আগেই সে ঐখান থেকে কেটে পরে। পরে বার বার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি বিভিন্ন অযুহাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এলাকাবসী জানান অভিযুক্ত আশ্রাফ আলী ঘটনার পর থেকে রাঙামাটি অবস্থান করছে। তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
স্থানীয় এলাকাবাসী আঞ্জুমান ও জেলা গাউসিয়া কমিটির মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে।
বান্দরবান প্রতিনিধি ॥ বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির সীমান্তর্বতী বিভিন্ন দুর্গম এলাকা থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন “ জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ” ৭ জন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে র ্যাব। এ সময় তদের কাছ থেকে বিপুল অস্ত্র , গোলাবারুদ ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বান্দরবানের মেঘলা এলাকায় র্যাব-১৫ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রেস ব্রিফিংকালে র ্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এই তথ্য নিশ্চিত করেন । তিনি বলেন, সম্প্রতি নতুন জঙ্গি সংগঠন “ জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার’র ” শীর্ষ নেতাদের ধরতে পাহাড়ে অভিযান শুরু হয়। সম্প্রতি জঙ্গিবাদে জড়িয়ে নতুন করে কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়া তরুণরা জামাতুল আনসারের হয়ে পাহাড়ি এলাকার আস্তানায় আশ্রয় নেয়। এসব আস্তানায় হিজরত করা তরুণদের ভারি অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
তিনি আরো জানান , উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় হিজরতের নামে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া বিভিন্ন জেলার ৫০ তরুণের তথ্য পায় র্যাব, তাদের মধ্যে ৩৮ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা হয়। বান্দরবানের সীমান্তবর্তী সীমান্তঘেঁষা দুর্গম পাহাড়ে বাড়িছাড়া কিছু তরুণ জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, নতুন এ জঙ্গি সংগঠনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট’ (কেএনএফ) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরে টানা অভিযান চালিয়ে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৭জন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করে র ্যাব। এ সময় তদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৯টি বন্ধুক, ৫০ রাউন্ড গুলি , ৬২টি কার্তুজ কেইস, ১টিওয়াকটকি, হাত বোমা ৬টি, মানচিত্র ও বিভিন্ন ধরনের পোশাক।
পার্বত্য এলাকায় সাধারণ জনগণের উন্নয়ন ব্যাহত ও শান্তি শৃংঙ্খলা ভঙ্গে যারা জড়িত থাকবে এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করবে সেই ধরণের সকল সংগঠন ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান র ্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ লোডশেডিং যাতে কমিয়ে আনা যায় তার জন্য বিদ্যুৎ সাশ্রয় হতে রাঙ্গামাটি জেলাবাসীকে আহবান জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-গ্যাসসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় অংকের ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। তাই বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে জেলাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার (১২ জুলাই) সকালে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে রাঙ্গামাটি জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় এ আহবান জানিয়েছেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
এছাড়াও সভায় জেলার আইনশৃঙ্খলা বজায়, সন্ত্রাস ও নাশকতা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, করোনা সংক্রমন রোধে মাক্স এর ব্যবহার বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব বিষয়ের উপর সবাইকে বেশীবেশী সচেতন হতে বলা হয়েছে।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এ সময় পুলিশ সুপার মীর মোদাছছের হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য হাজি মোঃ কামাল উদ্দিন, সিভিল সার্জন ডাক্তার বিপাশ খীসা, মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা মোঃ সাইফুল ইসলাম, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সভায় বক্তব্য রাখেন, আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সুনীল কান্তি দে, নুরুল আবছার, রাঙ্গামাটি সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি নন্দন দেবনাথসহ আরো অনেকে।
এসময় আইন-শৃঙ্খলা সভায় রাঙ্গামাটি জেলায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়, পর্যটনের সুন্দর্য বৃদ্ধি, করোনা সংক্রমন ঠেকাতে মাক্স ব্যবহারসহ সকল বিষয়ে উপর গুরুত্বরোপ করা হয়।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটিতে উপজাতীয় ছাত্রাবাস পরিচালনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সকালে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্টিত উপজাতীয় ছাত্রাবাস পরিচালনা কমিটির সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আশরাফ উদ্দীনের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, রাঙ্গামাটি চাকমা চীফ সার্কেল ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য মোঃ জসিম উদ্দীন প্রমুখ।
সভায় চট্টগ্রামের উপজাতীয় ছাত্রাবাসটি দ্রুত উন্নয়ন ও সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ২০১৭ সালের ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় বিধ্বস্ত হওয়া রাঙ্গামাটির সড়কগুলোর ক্ষত এখনো কাটেনি। রাঙ্গামাটি শহর ও আন্তজেলা সড়কের দেড় শতাধিক স্থানে ভাঙ্গনের শিকার হলেও পাঁচ বছরেও তা স্বাভাবিক হয়নি। বরং সড়কের নতুন নতুন জায়গায় দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। ১৪৯ কোটি টাকার সংস্কার কাজ শুরু হলেও কাজের ধীরগতির কারণে স্থানীয়দের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙ্গামাটিতে ঘটে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের ঘটনা। এ ঘটনায় ১২০ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি বিধ্বস্ত হয় জেলার সড়ক যোগাযোগ। প্রায় এক মাস বন্ধ থাকে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ। এরপর রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ এসব সড়কের ১৫৩টি ক্ষতিগ্রস্ত স্থান চিহ্নিত করে সংস্কার প্রকল্প গ্রহণ করে। এতে সরকার ১৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। ২০২০-২১ অর্থ বছরে এ প্রকল্প পাশ হলেও করোনা মাহামারি কারণে থমকে যায় বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। পরে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু হলেও কাজের রয়েছে ধীরগতি। এতে চলতি বর্ষ মৌসুমেও শঙ্কামুক্ত হচ্ছে না সড়কগুলো। আর সড়কগুলো স্থায়ী সংস্কার না হওয়ায় সড়কের পাশে বসবাসকারীরাও রয়েছেন ঝুঁকিতে।
রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল নুর সালেহীন জানান, ২০১৭ সালের পাহাড় ধ্বস রোধ কল্পে রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগ কর্তৃক একটি প্রকল্প গৃহিত হয় এবং বর্তমানে প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। কিন্তু পার্বত্য এলাকার নানা বাস্তবতার কারণে প্রকল্পের কাজের ধীরগতি হচ্ছে। তবে আমরা আশা করছি ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের সমস্ত কাজ সমাপ্ত করতে পারবো। এ ছাড়াও নতুন করে ভাঙ্গন রোধে সড়ক বিভাগ তৎপর রয়েছে এবং সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে আমরা সার্বক্ষণিক দেখভাল করছি।
এদিকে পাহাড় ধ্বস রোধ কল্পে চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ অংশের ভাঙ্গন ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
॥ মো. সোহরাওয়ার্দী সাব্বির ॥ পর্যটন শহর রাঙ্গামাটির সৌন্দর্য্য বর্ধনের পরিবেশ রক্ষায় গাছের চারা লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন রাঙ্গামাটির জেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সদস্যরা।
সোমবার (৪ জুলাই) সকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের উদ্যোগে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে রাঙ্গামাটি জেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটি সভায় এই পরামর্শ প্রদান করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ছালেহ মোঃ শোয়াইব খান এর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
এসময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অহিদুর রহমান, প্রেস ক্লাব সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল, পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন কর্মকর্তা গঙ্গা প্রসাদ চাকমা রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আপ্রু মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক মো. মনিরুজ্জামান, সাবেক রোবার স্কাউটস সম্পাদক মো. নুরুল আবসারসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
সভায় বক্তারা, পার্বত্য চট্টগ্রামে যেহারে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে তাতে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাই পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলায় ও নিজেদের চাহিদা মেটাতে সামাজিক বনায়ন সংরক্ষনের কোন বিকল্প নেই। বক্তারা পর্যটন শহর রাঙ্গামাটির সৌন্দর্য্য বর্ধনের নিজ নিজ এলাকায় পরিবেশ রক্ষায় আরো বেশী সামাজিক বনায়ন সংরক্ষন ও জনসচেনতার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সভায় আগামী ২১জুলাই রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যলয়ের সামনে থেকে একটি র্যালী বের হয়ে রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষন করে পৌরসভাতে শেষ হবে। পরে পৌর মাঠ প্রাঙ্গনে বৃক্ষ মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
॥ মোঃ আজগর আলী খান, রাজস্থলী ॥ বান্দরবান, রাঙ্গামাটি সীমান্তের মাঝামাঝি গাইন্দ্যা বাজার (ইসলামপুর ৫নং) বাজারটি ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের ভাঙ্গনের ফলে বাজারের ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করেছে স্থানীয়রা। লাগাতার কয়েদিনের বৃষ্টির কারণে প্রধান বাজারে একপাশে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ফলে একপাশের ভাঙ্গনটি বড় আকার ধারন করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই বাজারে অনেক ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী বসবাস করে আসছে। বাজারের পাশ দিয়ে প্রায় মানুষ চলাফেরা করে। ফলে এই বাজার ভাঙ্গনের বিষয়ে কারো কোন নজরদারী নেই বললেই চলে।
সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার সচেতন লোকজন ভাঙ্গন রোধসহ রাতে বড় ধরনের দূর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যুতের বাল্ব জালিয়ে রাখে রাতের বেলায়। পাশাপাশি বালুর বস্তা দিয়ে ভাঙ্গন রোধ করার চেষ্টা করছে। এদিকে, ৫নং ইসলামপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাঙ্গন রোধে বান্দরবান উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হলে এখনো কোন পদক্ষেপ নেননি। তিনি কয়েক বার সরেজমিনে এসে দেখে গেছেন। প্রকৃতপক্ষে বাজারটি মেরামতের কাজ কার হাতে ন্যাস্ত এ বিষয়ে কেউ সঠিক তথ্য দিতে পারছেনা। এদিকে দ্রুত ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা করা না হলে বাজারের ব্যবসা ও ঘরবাড়ী রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে এলাকাবাসীর আশংকা। এতে ভাঙ্গনের পাশে থাকা সকল বাড়ী ঘর হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এ ব্যাপারে বান্দরবান সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরোজ এর সাথে মুঠো ফোনে আলাপ কালে তিনি বলেন, আমি সবে মাত্র যোগদান করেছি। আমার পূর্বের নির্বাহী অফিসার মহোদয় পরিদর্শন করছেন কিনা আমি অবগত নই। তবে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এবিষয়ে বাজার চৌধুরী বাথোয়াই হেডম্যান জানান, বাজারটি বান্দরবান জেলায় হওয়াতে তাদের কোন হাত নেই। বিষয়টি বান্দরবান জেলাকে অবগত করেছেন। এছাড়া তিনি বলেন অতিদ্রুত ভাঙ্গন রোধ করার ব্যবস্থা গ্রহন না করলে জনগনের যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ এবং ঘরবাড়ী বাজার বিলীন হয়ে যেতে পারে। তাই তিনি ভাঙ্গনটি দ্রুত মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে আশা করেন।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি, অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৪ জুন) সকালে বনরূপা শহরে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে রাঙ্গামাটি পৌর চত্বর থেকে শুরু হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বনরূপা পেট্রোল পাম্প চত্বরে এই বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়।
রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হাজী মোঃ মুছা মাতব্বরের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির সহ সভাপতি রুহুল আমিন, রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, সাবেক কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মমতাজ উদ্দীন, জেলা যুবলীগের সাধারন সম্পাদক নূর মোহাম্মদ কাজল, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোঃ শাওয়াল উদ্দিন, জেলা মৎস্যজীবিলীগের সভাপতি উদয়ন বড়য়ুা, জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক প্রকাশ চাকমাসহ দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবন্দরা।
এসময় বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করাতে নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিএনপি। সরকারের সাফল্যকে মেনে নিতে না পেরে দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নানা প্রকার অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা-কর্মী বেঁচে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনার কোন ভয় নাই। প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের সকল অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। সেই সাথে যারা আমাদের নেত্রীর বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি, অশালীন, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছে তাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকিদাতাদের দ্রুত গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তা না হলে স্বাধীন দেশে আবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি যারা দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব গণতান্ত্রিক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অপশক্তিকে কঠোর হস্তে প্রতিহত করা হবে।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সারা দেশের সাংবাদিকদের জন্য একটা ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকদের ভুয়া ও অপসাংবাদিকতা থেকে নিরাপদে রাখা। সাংবাদিকতার নামে অনেকে নানা অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে এমন খবরও গোচরে আসে। তাদের সম্পর্কে জনমনে নানা প্রশ্ন। জনগণ তাদেরকে ‘সাংঘাতিক’ও বলছেন। তাই সাংঘাতিক না হয়ে সঠিক ও সত্যনিষ্ঠ তথ্য তুলে ধরে প্রকৃত সাংবাদিক হিসাবে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান তিনি। শনিবার (৪ জুন) সকালে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস কাউন্সিলের উদ্যোগে আয়োজিত প্রেস কাউন্সিল আইন ও তথ্য প্রযুক্তি আইন বিষয়ক রাঙ্গামাটিতে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের নিয়ে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জনাবে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আল মামুন মিয়ার সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সচিব মোঃ শাহালমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম, রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের প্রাক্তণ সভাপতি ও দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক আলহাজ্ব এ কে এম মকছুদ আহমেদ, রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল, সাধারন সম্পাদক আনোয়ার আল হক, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমা, সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি নন্দন দেবনাথ প্রমূখ।
বিচারপতি আরো বলেন, সাংবাদিকরা সরকারের পরিপূরক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের সম্মান করতেন। যে কারণে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় ১৯৭৪ সালে প্রেস কাউন্সিল আইন বাস্তবায়ন করেন। সে লক্ষ বাস্তবায়নের জন্য প্রেস কাউন্সিল কাজ করছে। আর সাংবাদিকরা কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আরো বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে বা গ্রেফতার করার আগে প্রেস কাউন্সিলের সাথে কথা বলতে হবে। অন্যায়ভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানী করা হলে প্রয়োজনে প্রেস কাউন্সিল আইনি সহায়তা দিবে।
তিনি বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে সাংবাদিকতার অপব্যহার হচ্ছে। তাদের অনেকে সাংঘাতিক কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের মান রক্ষা করতে হলে নিয়ন্ত্রনের প্রয়োজন আছে। সাংবাদিকতা পেশার সম্মান এখন আগের মতো নেই। প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকতার মানোন্নয়নের জন্য কাজ করছে। সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নূন্যতম গ্রাজ্যুয়েশ থাকতে হবে। তবে তা পাচঁ বছর আগে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে নয় বলে তিনি জানান।
এ সময় বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম তথ্য প্রযুক্তি আইনের কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যাবহার ও অনলাইন পোর্টালের দৌরাত্ব কমাতে তথ্য প্রযুক্তি আইনের প্রয়োজন আছে। তবে এ আইনে আসামীকে জামিন দেয়া যাবে না যে বিধান আছে তার সাথে দ্বিমত করে তিনি বলেন, এটি সংশোধন করা প্রয়োজন। একই সাথে তথ্যমন্ত্রীর দেয়া ঘোষণা “এ আইনে সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা যাবে না” তা বাস্তবায়নেরও আহবান জানান প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান।
কর্মশালায় রাঙ্গামাটিতে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ৪২ জন সাংবাদিক অংশগ্রহন করেন।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ‘শেষ বয়সে এসে এটা আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তি আমার ৫২ বছরের সাংবাদিকতার জীবনের সব দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়েছে।’ আর দেশের অন্যতম বৃহৎ এ শিল্প প্রতিষ্ঠান যেমন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তেমনি গণমাধ্যমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। যা গণমাধ্যমে অনন্যা দৃষ্টি স্থাপন করেছে।
তৃণমূল সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ঢাকায় বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাডওয়ার্ড পাওয়ার পর এই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন রাঙ্গামাটি জেলার প্রবীণ সাংবাদিক পার্বত্য চট্টগ্রাম সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক আলহাজ্ব এ কে এম মকছুদ আহমেদ।
রবিবার (৩০ মে) দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ আয়োাজিত ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’-এ খ্যাতিমান সাংবাদিক হিসেবে এ কে এম মকছুদ আহমেদ রাঙ্গামাটি জেলা থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
তিনি পেয়েছেন এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট, সম্মাননা পত্র ও উত্তরীয়। অনুষ্ঠানে ৬৪ জেলার ৬৪ জন প্রবীণ সাংবাদিক ছাড়াও ১১ জন সাংবাদিককে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
প্রবীণ এ সাংবাদিক তার অনুভূতি প্রকাশ করে আরো বলেন, ‘জীবনে অনেক প্রোগ্রামে গেছি। অনেক পুরষ্কার অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছি। কিন্তু জীবনের এই শেষ সময়ে এসে বসুন্ধরা গ্রুপ যেভাবে আমাদের মফস্বলের সাংবাদিকদের সম্মানিত করল, তা সত্যিই বিরল।’
এ কে এম মকছুদ আহমেদ বলেন, ‘জীবনের সব পাওয়া না পাওয়া এই সম্মাননার মাধ্যমে পূরণ হয়ে গেছে। আর কোনো পাওয়ার নেই এই শেষ সময়ে। তবে খুব করে চাইব যেন এই আয়োজনটা সব সময় চালু রাখা হয়।’
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’- পাওয়ার এই স্বীকৃতি পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের উৎসাহিত করবে। বিশেষ করে পাহাড়ে নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরা সাংবাদিকতায় অবদান রাখতে সচেস্ট হবে। তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিকতা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এই সম্মাননা আমাকে নতুন করে বাঁচতে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি বলেন, তাঁরা যেন এই মহৎ ধারা অব্যাহত রাখেন, তাহলে এই পেশায় সুস্থ ধারার মানুষ এগিয়ে আসবে।
অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধান অতিথি ছিলেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক এবং বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১ এর জুরিবোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান। সভায় সভাপতিত্ব করেন, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর।
চট্টগ্রাম বিভাগের গুণী সাংবাদিকরা হলেন: চট্টগ্রাম জেলা থেকে নাছির উদ্দিন চৌধুরী, কুমিল্লার আবুল হাসানাত বাবুল, ফেনীর ওছমান হারুন মাহমুদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোঃ আরজু মিয়া, রাঙ্গামাটির এ কে এম মকছুদ আহমেদ, নোয়াখালীর একেএম জুবায়ের, চাঁদপুরের গোলাম কিবরিয়া, লক্ষীপুরের হোসাইন আহমেদ হেলাল, কক্সবাজারের প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, খাগড়াছড়ির তরুণ কুমার ভট্টাচার্য ও বান্দরবানের প্রিয়দর্শী বড়ুয়া।
এ কে এম মকছুদ আহমেদের জীবনীঃ- আলহাজ্ব এ,কে,এম মকছুদ আহমেদ। পিতার মৃত মো. জামাল উল্লাহ, মাতা-জমিলা খাতুন। ১৯৪৫ সালের ১০জুলাই চট্টগ্রাম মীরসরাই উপজেলা উত্তর মগাদিয়া ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে একই ইউনিয়নের আবু তোরাব উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৬৮সালে রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করেন। এর পর ১৯৬৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামস্থ দৈনিক আজাদীর রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি হিসাবে সাংবাদিকতা জীবনের শুরু হয়। ১৯৭৩ দৈনিক জনপদ জেলা সংবাদদাতা, ১৯৭৪ দৈনিক পূর্বদেশ, বার্তা সংস্থা এনাতে, ১৯৭৪-৭৭ এবং ১৯৭৯-৮৬ বাসসে কর্মরত ছিলাম, ১৯৭৬ সন থেকে ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাকের রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা হিসাবে কর্মরত ছিলেন। দৈনিক ইত্তেফাক (১৯৭৮ইং থেকে) বর্তমানে জেলা প্রতিনিধি দৈনিক ইত্তেফাক। ১৯৮৬-৮৯ পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাক সংবাদদাতার পাশাপাশি নিউ নেশন এর জেলা সংবাদদাতা হিসাবে কাজ করেছিলেন। ১৯৯২-৯৩ দি টেলিগ্রাফ পত্রিকায়, সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ থেকে জানুয়ারী ২০০১ পর্যন্ত দি ডেইলী ইন্ডিপেনডেন্ট এর রাঙ্গামাটি জেলা সংবাদদাতা এবং ১৯৮৩-১৯৯৮ইং পর্যন্ত বিবিসির জন্য কাজ করেছিলেন। চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশ্বের নিকট পরিচিত করে তুলতে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন।
জেলা সংবাদদাতাঃ-জেলা সংবাদদাতা বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম ১৯৯৫ সাল হতে ও রাঙ্গামাটি কেন্দ্রে ২০০৭ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ বেতার রাঙ্গামাটি বার্তা বিভাগের জেলা সংবাদদাতা হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিঃ এর ২০১৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত এবং জুন ২০০৫ থেকে নিউ নেশানের ২০০৮ পর্যন্ত জেলা সংবাদদাতা হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
প্রকাশকঃ- চাক্মা-মারমা কথোপকথন (জুভাপদ) (১৯৭৭), নোয়ারাম চাক্মা প্রণীত গোজেন লামা (১৯৭৭), পরিবার পরিকল্পনা প্রাথমিক গান (১৯৭৭) অধীর কান্তি বড়ুয়া প্রণীত প্রাথমিক বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষা, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম (শ্রেণীর পাঠ্য) হাবিবুর রহমান মজুমদারের রাঙ্গামাটির ভাবনা (কবিতার বই), নন্দলাল শর্মার পার্বত্য চট্টগ্রামের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা। সৈয়দ ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদের শিক্ষা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, করমালী। এ্যাডভোকেট প্রতিম রায় পাম্পুর পার্বত্য আইন তত্ত্বেও প্রয়োগে। ত্রিপুরা ভাষার বর্ণমালা-মহেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (২০০২), আকাশে হেলান দিয়ে-নন্দলাল শর্মা (২০০৩)। পরিবেশক জেলা প্রশাসক কর্তৃক সম্পাদিত রাঙ্গামাটি বৈচিত্রের ঐকতান (২০০৫)। স্বত্বাধিকারী রাঙ্গামাটি প্রকাশনী।
সম্মাননা ও পদক ঃ- মুক্তিযুদ্ধের বিজয় রজত জয়ন্তী, রাঙ্গামাটি রোটার্যাক্ট ক্লাব ও চট্টগ্রাম ডাউন টাউন (১৯৯৫), পরিবার পরিকল্পনা প্রচার সপ্তাহ এফপিএবি (১৯৯৫), সুধীজন ও গুনীজন সংবর্ধনা খেলাঘর আসর (১৯৯৬), ফুলকঁড়ির আসর ১৯৯৯, শিল্পী নিকুঞ্জ-সাংবাদিকতায় অবদান-২০০১, ১৯৯০সনে “আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইনষ্টিটিউট এর পৃথিবীর পাঁচ হাজার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব নামক” বইতে জীবন বৃত্তান্ত স্থান পেয়েছে।
সম্পাদক প্রকাশকঃ-বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বপ্রথম ও তৎকালীন একমাত্র সংবাদপত্র সাপ্তাহিক বনভূমি (১৯৭৮ইং) দৈনিক গিরিদর্পণ (১৯৮৩ ইং) বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলার সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্র যার বয়স বর্তমানে ৩৯ বছর পূর্ণ করে ৪০ শে পা রেখেছে।