॥ রাহুল বড়ুয়া ছোটন, বান্দরবান ॥ পার্বত্য জেলা বান্দরবান। নদী, পাহাড় ঝর্ণা আর প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই জেলায় গড়ে ওঠেছে অসংখ্য বিনোদনস্পট। পর্যটন জেলা হিসেবে বান্দরবানে ছুটে যাচ্ছে অসংখ্য পর্যটক আর এবার পূজারীদের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের মনোরম পরিবেশে সৌন্দর্য্য অবলোকনের জন্য পৌরসভা এলাকার লালমোহন বাহাদুর বাগান এলাকায় নির্মিত হচ্ছে গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার। আর এই বিহারের নির্মাণের কাজ শেষ হলে পূজারী’রা তাদের ধর্মীয় কর্মকান্ড সম্পাদনের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ও এর সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে পারবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।
পর্যটন নগরী বান্দরবানের সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হয় সবাই আর এবার ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি সম্পাদনের পাশাপাশি ভ্রমনের জন্য নতুন দুয়ার উন্মোচন হচ্ছে গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার তৈরির মধ্য দিয়ে। বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের লালমোহন বাহাদুর বাগান এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এর নিজস্ব জমিতে প্রায় ২একর জায়গা জুড়ে সুদক্ষ কারিগর আর স্থাপত্য শিল্পীর অপরুপ সৌন্দর্য্য নিয়ে নির্মানাধীন রয়েছে এই গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার এর কাজ। এই বিহার পুরোদমে চালু হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অর্থনৌতিক অবস্থার উন্নয়নসহ পর্যটকদের বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশাবাদ স্থানীয়দের।
লালমোহন বাহাদুর বাগান এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী মো.সিদ্দিক জানান, এই এলাকায় একটি মনোরম গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার এর কাজ চলমান রয়েছে আর এই বিহারের কাজ চলমান অবস্থায় প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক সেটি পরিদর্শনের জন্য ছুটে আসে। তিনি আরো বলেন, এই বিহারটি দেখে যে কারোর মন ভালো হয়ে যাবে আর এটি চালু হলে বান্দরবানের পর্যটনশিল্প আরো এগিয়ে যাবে আর আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য আগের চেয়ে আরো জমজমাট থাকবে।
লালমোহন বাহাদুর বাগান এলাকায় ব্যবসায়ী পরিমল দাশ বলেন, এই গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার খুবই সুন্দর। এর রং দেখলেই মন ভরে যায়। এটি চালু হলে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা এখানে পূজা করবে এবং অন্যান্য ধর্মালম্বীরা এর সৌন্দর্য্য উপভোগে ছুটে আসবে।
প্রধান সড়কের পাশে সড়ক থেকে প্রায় ৫০ফুট উচ্চতায় নির্মানাধীন এই গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার এ ইতিমধ্যে নির্মাণ হয়েছে থাইল্যান্ড ও মায়ানমারের বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারের কারুকাজ এর আদলে ১টি ৫৭ফুট উচ্চতার দন্ডায়মান বৌদ্ধ মূর্তি, ১টি সুদৃশ্য গেইট, ২টি সিংহ, ২টি ড্রাগন, ২টি হাতি, ১টি প্যাগোডা, ১টি ফোয়ারা আর ১টি আকর্ষনীয় আসন সহ বিভিন্ন স্থাপনা। বৌদ্ধ বিহারের জন্য ইতিমধ্যে মায়ানমার থেকে আনা হয়েছে ৩টি পিতলের এবং ১টি শ্বেত পাথরের আকর্ষনীয় বৌদ্ধ মুর্তি। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অভিজ্ঞ কারুশিল্পীদের সুদক্ষ হাতে প্রতিদিনই চলছে বিহারের সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ, আর এই বিহার সাধারণ জনগণের প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত হলে এর অপরুপ রুপ দেখে পূজারী ও দর্শনার্থীরা বিমোহিত হবে বলে আশাবাদ সকলের।
বিহারে কাজ করা কারুশিল্পী কিমং রাখাইন বলেন, আমি বাংলাদেশের অনেক স্থানে কাজ করেছি তবে বান্দরবানের এই গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার এর কাজ সম্পূর্ণ আলাদা। কয়েকটি ধাপে ধাপে আমরা পরিকল্পনা করে দন্ডায়মান বৌদ্ধ মূর্তি, সুদৃশ্য প্রবেশ দ্বার, বিশাল আকৃতির হাতি, ড্রাগন আর সিংহসহ মনোরম কয়েকটি স্থাপনা তৈরি করেছি যা দেখতে খুবই চমৎকার।
গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মংহ্লা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি তার জমিতে এই গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের কাজ করছেন আর সেজন্য আমরা একটি পরিচালনা কমিটি করে এই ধর্মীয় কাজে সংশ্লিষ্ট রয়েছি, এই বিহার বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের জন্য একটি তীর্থস্থান। এটি চালু হলে ৩ পার্বত্য এলাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানের পূজারীরা এখানে ছুটে আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং স্থানীয় দানবীরদের দান অনুদান আর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক সহযোগিতায় প্রায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে এই গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহারের কাজ চলমান রয়েছে, আর সমস্ত কারুকাজ শেষ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে এই বিহার পূজারী ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। এই গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার এ আগামীতেও আরো কাজ করা হবে এবং যে সমস্থ অনাথ শিশু লেখাপড়া করতে পারে না তাদের বিনামুল্যে আবাসিকভাবে বসবাসের সুবিধা নিশ্চিত করে পড়ালেখা করানো হবে। তিনি আরো বলেন, গোল্ডেন বৌদ্ধ বিহার চালু হলে এখানে অনেক পূজারীর আগমন ঘটবে এবং তাদের সার্বিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য বিহার এলাকায় বিভিন্ন স্থাপনা ও সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ চলমান রয়েছে।
॥ কাপ্তাই প্রতিনিধি ॥ কাপ্তাইয়ের ২নং রাইখালী ইউনিয়ন এর ১নং ওয়ার্ডের দূর্গম সীতাপাহাড় মারমা পাড়ায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় স্থানীয় দোকানদার থোয়াই চাই মারমা (৫৩) ও তাঁর সহধর্মিণী চিংঞো মারমা (৪০) গুরুতর আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১২ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানান, আহত দম্পতির ছেলে সুইহ্লা চিং মারমা। তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ৬ জনের একটি সন্ত্রাসী দল অস্ত্র এবং লাঠি নিয়ে এসে আমাদের দোকানে বাবা এবং মা’কে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে চলে যান। সন্ত্রাসীরা সকলে সবুজ পোশাক পরিহিত ছিল বলে জানান সুইহ্লা চিং মারমা।
পরে তাঁর পরিবারের সদস্যরা আহত দুই জনকে রাত ৯টায় চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ রাজীব শর্মা জানান, গুরুতর আহত থোয়াই চাই মারমার বুকের পাজরের হাড় ভাঙ্গছে এবং বাম হাতে ক্ষত রয়েছে। এছাড়া তাঁর সহধর্মিণী কোমরে আঘাত পেয়েছে।
রাইখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ সেলিম জানান, আমাকে ঘটনাটি তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে। তবে কারা মেরেছে সেই বিষয়ে অবগত নই।
চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, ঘটনা শুনার পর চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালে পুলিশ গিয়েছে। এই বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেন নাই। অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ওসি জানান।
॥ রাহুল বড়ুয়া ছোটন, বান্দরবান ॥ জাতীয় গণমাধ ্যম ইন্স টি টিউট এর আয়োজনে বান্দরবানে শিশু ও নারী উন্নয় ণে সচেতনতামূলক যোগা যোগ কার্যক্রম প্রকল্প (৫ম পর্যায়) আওতায় ৩দিনব ্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার ২য় দিনে ক্ষেত্র অনুশীলনের সাথে জীবনের জন্য তথ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১৩ মে ) সকা লে বান্দরবান প্রেসক্লা বের হল রুমে ২য় দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অনু ষ্ঠিত হয়। এসময় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় জাতীয় গণমাধ ্যম ইন স্ট্রি টিউট এর পরিচালক (প্রশিক্ষণ প্রকৌশল) ও সহকারি প্রকল্প পরিচালক মোঃ নজরুল ইসলাম, উপপরিচালক (প্রশাসন) মোঃ সোহেল রানা, সহকারী পরিচালক (বেতার প্রকৌ. প্রশি) মোঃ নাফিস আহম্মেদ, জাতীয় গণমাধ ্যম ইন্স টি টিউট এর উপ-পরিচালক (চলচ্চিত্র) মো.সোহেল পারভেজ, জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হান্নান, বান্দরবান প্রেসক্লা বের সভাপ তি ম নিরুল ইসলাম মনু, সাধারণ সম্পাদক মিনারুল হকসহ বান্দরবানের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় ২য় দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় শিশু ও নারীর উন্নয়ন, শিশু ও নারীর স্বাস্থ্য এবং বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন প্রশিক্ষকেরা।
৩দিন ব্যাপী এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বান্দরবানের ২৩জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করছে আর আগামী ১৪ মে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার শেষ হবে।
॥ বান্দরবান প্রতিনিধি ॥ বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বান্দরবানে পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪২৯। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে বান্দরবান জেলা প্রশাসন ও পার্বত্য জেলা পরিষদের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের প্রাঙ্গণ এ বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বাংলা নববর্ষ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রী চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। পরে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রাজার মাঠে গিয়ে সমবেত হয়। এসময় শোভাযাত্রায় ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি ও বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের নর-নারীরা নিজস্ব পোশাক ও গ্রামীন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যবাহী সামগ্রী প্রদশর্নী করে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে।
পরে রাজার মাঠে আয়োজন করা হয় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এসময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি ও বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের শিল্পীরা দেশীয় গান, ছড়া, কবিতা আবৃত্তি, জারি-সারি ও মনোরম নৃত্য প্রদর্শন করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে মাতিয়ে তোলে।
অনুষ্ঠানে বাংলা নববর্ষ এর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় মনোরম সাজে অংশ গ্রহণ, চিত্রাংকণ ও কবিতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেন, বাংলা নববর্ষ ও বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলের সম্প্রীতির বন্ধন আরো সু-দৃঢ় হবে। স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকারের সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এই পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের জন্য শান্তি চুক্তি হয়েছিল। আজ তারই হাত ধরে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতির সাথে তালে তাল মিলিয়ে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে পুরো পার্বত্য এলাকা।
এসময় পার্বত্য মন্ত্রী আরো বলেন, আমরা আজকের এই পুরাতন বছর কে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করার সাথে সাথে পাহাড়ের প্রতিটা অঞ্চলের মানুষের জন্য সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধ, ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ রুপান্তরের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করবো।
এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি, পুলিশ সুপার জেরিন আখতার, পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম কাউছার হোসেন, সিভিল সার্জন ডা. নিহার রঞ্জন নন্দী, পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য লক্ষীপদ দাশ, সদস্য মোজাম্মেল হক বাহাদুর, প্রেসক্লাবের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনু, সাধারণ সম্পাদক মিনারুল হকসহ সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
॥ রাহুল বড়ুয়া ছোটন, বান্দরবান ॥ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে বান্দরবানে পুরাতন ও জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ বেইলী সেতু ভেঙ্গে নির্মান করা হচ্ছে আধুনিকমানের পিসি গার্ডার ব্রীজ। শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে বান্দরবান-রোয়াংছড়ি সড়কের হানসামা পাড়ায় নোয়াপতং খালের উপর একটি নতুন পিসি গার্ডার ব্রীজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়।
এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ৯ কোটি ৪৫ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫০.১২ মিটার পিসি গার্ডার ব্রীজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন শেষে হানসামা পাড়ায় মাঠে এক আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো.শেখ ছাদেক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.আব্দুল কুুদ্দুছ ফরাজী, রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফোরকান এলাহী অনুপম, সড়ক ও জনপদ বিভাগের বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরীসহ এলাকাবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।
১৪ মার্চ রবিবার আনুমানিক সকাল ০৭৩০ ঘটিকায় বান্দরবান জেলার সমথংপাড়া এলাকা থেকে ভাল্লুকের থাবায় গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী একজন উপজাতী বৃদ্ধ ত্রইল মুরং (৬৬) কে মানবতার দেবদূত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাহায্যে তাৎক্ষনিক বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে প্রথমে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে আসা হয় এবং পরবর্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় । আহত ত্রইল মুরং(৬৬) র এলাকার কারবারীর কাছ থেকে জানা যায়, সমথং পাড়া জঙ্গলের পাশে ঝিড়ির কাছে ত্রইল মুরং পানি আনতে যান এবং হঠাৎ একটি হিংস্র ভাল্লুক আক্রমন করে ঐ বৃদ্ধকে। ভাল্লুকটি ত্রইল মুরংকে মারাত্মকভাবে আহত করে। পরবর্তীতে আহত ত্রইল মুরংকে বান্দরবান রিজিয়নের আওতায় নিকটস্থ বলাইপাড়া আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জিওসি মহোদয় তৎক্ষণাৎ আহত ত্রইল মুরং কে যেকোনো ভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ পেয়েই দুপুর দেড়টার দিকে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে তাকে আনা হয়। পরবর্তীতে তাকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বেও সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনী যৌথ প্রচেষ্টায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ মঙ্গলিয় মুরং (০৬) ও দাদা ইয়াংসাই (৪৮) নামে দুইজন মৃত্যুপথযাত্রী উপজাতিকে হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা সেবা ও উন্নর চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম ম্যাডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। আর্তমানবতার সেবায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই অগ্রযাত্রা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। প্রেস রিলিজ
॥ শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি ॥ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হয়েছে বাংলাদেশ আগামী ২০৪১ সালে সমৃদ্ধশালী দেশে রূপান্তর হবে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিয়েছে সরকার। আর এর সুফল পাচ্ছেন স্থানীয় জনগন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানেই এ উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
শনিবার (১৩ মার্চ) বেলা ১২টায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বরইতলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের ভিত্তি প্রস্তুর উদ্বোধন শেষে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে পার্বত্য এলাকার ৪০ হাজার পরিবারকে বিনামূল্যে সোলার বিতরণ করা হবে। নাইক্ষ্যংছড়িতে শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে শত কোটি কাজ হয়েছে। এসময় মন্ত্রী এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগনকে সরকারের পাশে থেকে সহযোগিতা করারও আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করা হবে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন কচি। উপস্থিত ছিলেন, বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কুদ্দুস ফরাজি পিপিএম, বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য কেনু ওয়ান চাক, বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু তাহের কোম্পানী, নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলমগীর হোসেন প্রমূখ। সভা সঞ্চালনা করেন, বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি তসলিম ইকবাল চৌধুরী।
এর আগে মন্ত্রী ঘুমধুম, সোনাইছড়ি ও নাইক্ষ্যংছড়িতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নাধীন প্রায় ২৭ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ভিত্তি প্রস্তুর উদ্বোধন করেন।
পরে দুপুর ২টার দিকে তুমব্রু বাজার এলাকায় আরেকটি জনসভায় উপস্থিত হন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। জনসভা শেষে বিকেল ৩টার দিকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন মন্ত্রী।
জনসভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় সরকার সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), জেলা পরিষদ, বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠন, বান্দরবান ও নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেসক্লাব সাংবাদিকবৃন্দ, উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ, কৃষক লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ঘুমধুমের বিভিন্ন স্তরের জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন।
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পার্বত্য অঞ্চলে আবারো আঞ্চলিক দল গুলোর তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের তৎপরতায় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর কোনঠাসা হয়ে পড়লেও নতুন করে বাঘাইছড়ি উপজেলায় আঞ্চলিক দলগুলোর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাঙ্গামাটির প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও বাঘাইছড়িতে গত দু মাসে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গভীর রাত পর্যন্ত গুলি বিনিময়ের প্রকট শব্দে আবারো ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকে। আর এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষেরা রয়েছে আতংকে।
বাংলাদেশ সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলোর সশস্ত্র ক্যাডারা দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী ভারতের মিজোরাম, দেমাগ্রী, ত্রিপুরা সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় লুকিয়ে ছিলো। প্রশাসনের তৎপরতা কিছুটা কমে আসায় তাদের নেটওয়ার্ক আবারো শক্তিশালী করে প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। তারই ধারাবাহিকতায় বাঘাইছড়ি উপজেলায় প্রায় প্রতিটি কোন কোন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এই ঘটনায় হতাহত হলেও কেউ তা বলতে পারছে না।
পার্বত্য রাঙ্গামাটির রাজস্থলী, বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর এখন হঠ জোন হিসাবে পরিণত হয়েছে। এই সকল উপজেলা গুলোতে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল গুলোর আধিপত্য বিস্তার করে মাঝে মাঝে নিজেদের শক্তির পরীক্ষা করে দল গুলো। এই অবস্থায় পার্বত্য অঞ্চলের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান আবারো নতুন করে শুরু করার জোর দাবী উঠছে।
রাঙ্গামাটির দায়িত্বশীল একটি সুত্র জানায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) দীর্ঘদিন ধরে তাদের রাজনৈতিক কোন কর্মকান্ড চালাচ্ছে না। এটাকী তাদের কৌশল হতে পারে না কোন মরণ কামড় দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। তারা বাঘাইছড়ির কিছু কিছু এলাকা এখন নিজেদের দখলে নেয়ার জন্য শক্তি প্রয়োগ করছে।
অন্যদিকে দায়িত্বশীল একটি সুত্র জানায় সম্প্রতি জেএসএস ও ইউপিডিএফএর মাঝে অস্ত্র বিরতীর চুক্তি শেষ হয়ে গেছে। আধিপত্য বিস্তার করতে তারা মাঝে মাঝে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। অপরদিকে চুক্তি শেষ হওয়ার পর পর জেএসএস এর নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক দল গুলোর মাঝে আবারো বৈঠকের পরিকল্পনা চলছে। যদি আঞ্চলিক দল গুলো আবারো এক হয়ে যায় তাহলে পার্বত্য অঞ্চলে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে।
এছাড়া পাহাড়ের আঞ্চলিক দল গুলোর হাতে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ দিন দিন বাড়ছে। অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানিতে পাহাড়ে খুন, গুমসহ নিজেদের মাঝে প্রতিনিয়ত শক্তি প্রদর্শণের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনে নার্ভিশ্বাস উঠেছে। প্রতিনিয়ত আঞ্চলিক রাজনেতিক দলের আধিপত্য বিস্তারের কারণে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের শান্তি যেমন বিনষ্ট হচ্ছে তেমনি শত শত মায়ের বুক খালি হচ্ছে।
পার্বত্য তিন জেলার আঞ্চলিক ৫ টি দল অবস্থান করছে। দল গুলো হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (সন্তু গ্রুপ), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ (প্রসিত গ্রুপ), পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (লারমা সংস্কার গ্রুপ), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ইউপিডিএফ (সংস্কার গ্রুপ) ও নতুন দল গঠন করে মগ লিবারেল ফ্রন্ট নামে আত্মপ্রকাশ করছে। মগ লিবারেল ফ্রন্ট বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির রাজস্থলী ও কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থান করছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
এদিকে পার্বত্য অঞ্চল ও ভারত এবং মিয়ানমারের অধিকাংশ বর্ডার এলাকা খোলা থাকায় অবৈধ নানা গোনা ও অস্ত্রের আনা গোনা বেশি পাওয়া যায়। রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল ও জুরাছড়ির বেশ কিছু এলাকা দিয়ে ভারতের অবস্থান এবং বিলাইছড়ি ও রাজস্থলীর বেশ কিছু এলাকা দিয়ে মিয়ানারের লোকজনের আনা গোনা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সম্প্রতি রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার কলেজ পাড়া এলাকায় আরাকান আর্মির আস্তানা পাওয়া গেছে। এসময় ডাঃ রেনিসো নামে একজনকে আটক করা হয় এবং তার বাসা থেকে মিয়ানমারের সন্ত্রাসী হামলার সময় মাইন বিষ্ফোরণে আহত একজনকে পাওয়া যায়। তার দুটি হাত উড়ে যায় ডাঃ রেনিন সোর বাড়িতে রেখে আহত ব্যক্তির চিকিৎসা রত অবস্থায় পাওয়া যায়।
সম্প্রতি খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বেশ কয়েকটি সভায় বলেন, পার্বত্য অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে আঞ্চলিক রাজণেতিক দলগুলো পাহাড়ের অস্থিতিশীল করে তুলেছে। অবৈধ অস্ত্রের কারণে পাহাড়ের কোন মানুষ শান্তিতে নেই। পার্বত্য পরিস্থিতিতে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাঁদাবাজী, খুন, অপহরণ, সহ আনা ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। তাদের রিরুদ্ধে পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। খুন, গুম, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ তাদের নানান অপকর্ম দিনদিন বেড়েই চলেছে। পাহাড়ে ৫ টি আঞ্চলিক সংগঠনের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর হাতে সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। মাঝে মধ্যে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর সমন্বয়ে মাঝে মধ্যে অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হলেও এদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
পার্বত্য জেলার অধিবাসীরা জানান, পার্বত্যাঞ্চলে মোতায়েনরত সেনাবাহিনীকে ছয়টি স্থায়ী সেনানিবাসে প্রত্যাবর্তন, সামাজিক উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৩ পার্বত্য জেলায় ৪১ হাজার ৮৪৭ জনকে বয়স্ক ভাতা, ২২ হাজার ৪১০ জনকে বিধবা ভাতা, ৭ হাজার ৩১১ জনকে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা এবং ৯৮১ জন প্রতিবন্ধীকে শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলে ১ হাজার ৪৬টি সমিতির মাধ্যমে ৫২ হাজার ১৭২ জন সদস্যের দারিদ্র্য বিমোচন তথা জীবনমান উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬২৩টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে।
তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আগে যেখানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ ছিল না সেখানে নির্মিত হয়েছে ১টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১টি মেডিকেল কলেজ। হাইস্কুল ও কলেজের সংখ্যা যেখানে ছিল মাত্র ১১টি সেটা এখন ৪৭৯টি। প্রায় প্রতিটি পাড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। শিক্ষার হার ২ ভাগ থেকে বেড়ে বর্তমানে ৪৪ দশমিক ৬২ ভাগে পৌঁছেছে। যেখানে বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষার হার ৫৯ দশমিক ৮২ ভাগ সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা জনগোষ্ঠীর শিক্ষার হার ৭৩ ভাগ। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের শিক্ষার হার ২৩ ভাগ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ১টি থেকে ৩টি করা হয়েছে, হাসপাতালের সংখ্যা ৩টি থেকে ২৫টিতে উন্নীত হয়েছে। যেখানে কোনো খেলার মাঠ ছিলো না সেখানে ৫টি স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে। কলকারখানা, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ১৯৩টি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে এখন ১৩৮২টিতে উন্নীত হয়েছে। ফলে সরকারের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রামে এককালের পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রভূত উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে।
॥ শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি ॥ মিনমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকেই সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে বিজিবি। সীমান্তের বিভিন্ন চৌকি গুলোতে বিজিবি সদস্য সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে দৃষ্টি রেখে বিজিবি সদস্যরা সীমান্ত চৌকি গুলোতে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বিশেষ করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, ঘুনধুম, চাক ঢালা ও কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফ সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বিজিবি কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার জানিয়েছেন, সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সীমান্তে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখছে বিজিবি।
বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজেদুর রহমান জানিয়েছেন সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী য়িানমারে সেনা অভ্যুত্থানে সেখানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ বেশ কিছু নেতাদের আটক করেছে সেনাবাহিনী। পুরো দেশটির সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
বিষেশ প্রতিবেদক :: পাহাড়ে সাংবাদিকতার পথিকৃত চারণ সাংবাদিক খ্যাত একেএম মকছুদ আহমেদের সাংবাদিকতায় ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁকে সংবর্ধনা দিচ্ছে রাঙামাটি প্রেসক্লাব। সংবর্ধনা ঘিরে বুধবার রাঙামাটি প্রেসক্লাবে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাঙামাটি প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মকছুদ আহমেদের সাথে একই অনুষ্ঠানে আরো চার গুণী ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধনা প্রদান করবে প্রেসক্লাব।
প্রস্তুতি সভায় জানানো হয়, আগামী ৫ জানুয়ারি এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের খাদ্যমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার এমপি। অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলাপ্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ উর্ধতন কর্মকর্তাগণ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্সের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাঙামাটিতে কর্মরত সকল গণমাধ্যম কর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
অনুষ্ঠানে যাদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে তাঁরা হলেন, প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ কে এম মকছুদ আহমেদ, প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ও কেডিএস গার্মেন্টস এর চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত পারিজাত কুসুম চাকমা (মরণোত্তর), প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য ও বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মরহুম সাংবাদিক ওবায়দুল হক (মরণোত্তর) ও প্রেসক্লাবের শুভাকাক্সক্ষী, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা। রাঙামাটি প্রেসক্লাবের প্রস্তুতি সভায় সংবর্ধনা আয়োজনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ সময় রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও ক্লাবে নবযোগদান করা ৭ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। প্রস্তুতি সভার শুরুতে রাঙামাটি প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে নবযোগদান করা সাত সদস্যকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় প্রেসক্লাবের সদস্যরা। পরে নতুন সদস্যরা তাদের পক্ষ থেকে প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। প্রস্তুতি সভায় সভাপতিত্ব করেন রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন রুবেল। সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার আল হক এর সঞ্চালনায় এ সময় সম্ভাব্য সংবর্ধিত অতিথি একেএম মকছুদ আহমেদসহ অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রেসক্লাবের মর্যাদার বিষয়টি মাথায় রেখে একটি সুন্দর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজনের লক্ষ্যে সকলের সহযোগীতা কমানা করেন প্রেসক্লাব সভাপতি।