॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কাপ্তাই হ্রদের গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে গতকাল থেকে রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে চাকমাদের বিজু, মারমাদের সাংগ্রাই ও ত্রিপুরাদের বৈসুক উৎসব। গতকাল ভোরে চাকমা রাজবাড়ী ঘাটে চাকমা রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় নদীতে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে এই উৎসবের সূচনা করেন। পাহাড়ী সম্প্রদায়ের শত শত নারী-পুরুষ এ সময় কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে ফুল ভাসান।
অনুষ্ঠানে বিজু উদ্্যাপন কমিটির সুকৃতি রঞ্জন চাকমা, বিজয় কেতন চাকমা, ইন্দ্র দত্ত তালুকদার সহ চাকমা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসুক উপলক্ষে গতকাল শহরের গর্জনতলী এলাকায় উৎসবের উদ্বোধন করেন সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় সদস্য দীপংকর তালুকদার। এ সময় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের নারীরা ফুল নিয়ে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে বৈসুক উৎসব রাঙিয়ে তুলেন।
অনুষ্ঠানে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, জেলা পরিষদ সদস্য ও ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা, পরিষদ সদস্য অমিত চাকমা রাজু, ত্রিপুরা কন্যাণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ঝিনুক ত্রিপুরা সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রীতি অনুযায়ী গতকাল ১২ এপ্রিল পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে তিন দিনের সার্বজনিন উৎসব শুরু হয়। আজ ১৩ এপ্রিল উদযাপিত হচ্ছে মূল বিজু। আগামীকাল ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ গোজ্যাপোজ্যে দিন ও বর্ষবরণ উৎসব।
গোজ্যাপোজ্যে দিন নানাবিধ পূজা-পার্বণ আর প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী উৎসব শেষ হবে। পার্বত্য আদিবাসীদের মতে, বিজু মানে আনন্দ, নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় আর চেতনার নতুন প্রেরণা। তাই এবার অভাব-অনটনের মধ্যেও যথারীতি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবটির যথার্থে আনন্দমুখর করে তুলতে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা ও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় পালিত হয়েছে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। বর্ষ বিদায় এবং বর্ষবরণ উপলক্ষে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে আয়োজিত এ উৎসবকে চাকমারা বিজু, মারমারা সাংগ্রাইং, ত্রিপুরারা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু এবং অহমিকারা বিহু বলে আখ্যায়িত করে।
এদিকে আগামী ১৪ এপ্রিল বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন। আগামীকাল পহেলা বৈশাখে রাঙ্গামাটিতে র্যালী ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
রাঙ্গামাটি বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ উদযাপন পরিষদ শহরে পহেলা বৈশাখের নানান অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গুলো নিজ নিজ ব্যানারে পহেলা বৈশাখ নিজেদের মত বরণ করে নেবেন।