
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্স ফাইনাল বর্ষের শিক্ষার্থীরা রাঙ্গামাটি সফরে এসে বৃহস্পতিবার (২১ আগষ্ট) শহরের জেল রোডে অবস্থিত পার্বত্য অঞ্চলের সর্বপ্রথম প্রকাশিত দৈনিক গিরিদর্পণ পত্রিকার প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন। শিক্ষার্থীদের এ সফরে নেতৃত্ব দেন চবির গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহাব উদ্দীন নীপু। পরিদর্শনকালে শিক্ষার্থীরা দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক মঞ্জুরাণী গুর্খার সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক মঞ্জুরাণী গুর্খা এবং গিরিদর্পণ পরিবারের সদস্য সাংবাদিক পুলক চক্রবর্তী, নন্দন দেবনাথ, মিল্টন বাহাদুর, মনসুর আহম্মেদ, উছিংচা রাখাইন কায়েস, শিশির দাস বাবলা, লিটন শীল, মিকেল চাকমাসহ অন্যান্য সাংবাদিকরা।
মতবিনিময় সভায় সহযোগী অধ্যাপক শাহাব উদ্দীন নীপু পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মরহুম একে এম মকছুদ আহমেদকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তিন পার্বত্য এলাকার সবচেয়ে পুরাতন পত্রিকা হলো দৈনিক গিরিদর্পণ। যা মরহুম এ কে এম মকছুদ আহমেদ ছিলেন এই পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক। আর দৈনিক গিরিদর্পণ শুধু একটি সংবাদপত্র নয়, এটি পার্বত্য অঞ্চলের গণমাধ্যম ইতিহাসের অমূল্য দলিল।
তিনি বলেন, আর অনেক বছর ধরে মরহুম এ কে এম মকছুদ আহমেদকে আমি চিনি। তিনি অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ ছিলেন এবং তিন পার্বত্য এলাকার সর্ম্পকে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেছেন। তার এই পত্রিকার মাধ্যমে সেই সময় অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের খবর মানুষের মাঝে পৌছে যেত। তিনি পৃথিবী থেকে চলে গেলেও আজ তার সহধর্মীনি এই প্রতিষ্ঠানকে ধরে রেখেছেন তা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা দৈনিকটির প্রকাশনা প্রক্রিয়া সম্পর্কে গিরিদর্পণ পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অবগত হন এবং বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন।
দৈনিক গিরিদর্পণের সম্পাদক মঞ্জুরাণী গুর্খা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ৪৩ বছর ধরে নানা প্রতিকূলতার মাঝেও দৈনিক গিরিদর্পণ আজো নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। তবে সরকারি বিজ্ঞাপন ছাড়া পত্রিকা প্রকাশনা টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। তাই পাহাড়ের প্রথম প্রকাশনা দৈনিক পত্রিকা গিরিদর্পণকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারি বিজ্ঞাপনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা জরুরি।
তিনি আরো বলেন, ৪৩ বছর ধরে তার এই চলার পথে এই পত্রিকার সর্ম্পকে আমার ধারণা কিছুটা হলেও হয়েছে। তাই তার ফেলে যাওয়া এই প্রতিষ্ঠানকে আমি নিজের মতো করে আগলে রেখেছি। মরহুম এ কে এম মকছুদ আহমেদ এই পত্রিকার মাধ্যমে তার অনেক স্মৃতি রয়েছে। তাই যতদিন পারবো মরহুম এ কে এম মকছুদ আহমেদ তিলে তিলে গড়া এই প্রতিষ্ঠানকে আমি বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্স ফাইনাল বর্ষের শিক্ষার্থীরা ইয়াছিন উদ্দিন সাকিব বলেন, রাঙ্গামাটির পুরাতন পত্রিকা হিসেবে দৈনিক গিরিদর্পন পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে আনার চেষ্টা করেছেন যা প্রান্তিক মানুষের জন্য খুবই প্রয়োজন। একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন সংকট, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যে এই পত্রিকা এই অঞ্চলের গণমানুষের জন্য কাজ করে আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি সকল প্রশাসনিক, সামরিক, অর্থনৈতিক হুমকিকে উপেক্ষা করে এই পত্রিকা এগিয়ে যাবে, আমরা সেই প্রত্যাশা করি।
পরে চবির শিক্ষার্থীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য দৈনিক গিরিদর্পণ সম্পাদক মঞ্জুরাণী গুর্খাকে অভিনন্দন জানান এবং তার সঙ্গে স্মৃতিচারণমূলক ফটোসেশনে অংশ নেন।