॥ মোহাম্মদ আবু তৈয়ব ॥ খাগড়াছড়িতে আধিপত্য বিস্তারের জেরে পিতা ও পুত্রকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা ও দুই নারী আহত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জেলা আওয়ামলীগের একটি অংশ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে করেছে। সমাবেশ থেকে ঘটনা জন্য জেলা অপর গ্র“পকে দায়ী করে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে।
দুপুরে জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে হাসপাতাল গেইটে সমাবেশে বক্তব্য রাখেছেন, জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলম ও জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হৃদয় মারমা।
চিরঞ্জয় ত্রিপুরার মেজো ছেলে নীহার ত্রিপুরা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা পরিবারের সকল সদস্য এক সাথে বসে ভাত খাচ্ছিলেন। এ সময় খাগড়াছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য কালিবন্ধু ত্রিপুরার নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী চিরঞ্জয় ত্রিপুরার বাসায় গুলি ও বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তিনি পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। হামলায় ঘটনাস্থলেই মারা যান তার পিতা চিরঞ্জয় ত্রিপুরা। আহত অবস্থায় পরিবারের অপর তিন সদস্যকে হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কর্ণ জ্যোতি ত্রিপুরাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রতিবেশী কেউচিং মারমা জানিয়েছেন, গত ৭ মে কালিবন্ধু ত্রিপুরা নেতৃত্বে চিরঞ্জয় ত্রিপুরা আরো এক দফা হামলা হয়। তিনি ১০ মে পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ঘটনায় থানায় মামলার দায়ের করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে কালিবন্ধু ত্রিপুরাসহ ১৪ জনকে আসামী করে মামলা করে চিরঞ্জয় ত্রিপুরা। মামলা করার মাত্র ৮ ঘন্টার ব্যবধানে কালিবন্ধু ত্রিপুরা ও তার সহযোগিদের হামলায় প্রাণ গেল চিরঞ্জয় ত্রিপুরা ও তার ছেলে কর্ণ জ্যোতি ত্রিপুরার। শুধু তাই নয়, হামলার সময় সন্ত্রাসীরা নারীদের উপরও পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে।
তবে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক আব্দুল হান্নান মামলা না নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে এখনো থানায় মামলা হয়নি। পুলিশ অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে গত শুক্রবার দুপুরে চিরঞ্জয় ত্রিপুরা ও ছেলে কর্ণ জ্যোতি ত্রিপুরার লাশ ময়না তদন্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় স্বজনদের কান্নায় হাসপাতাল এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
একটি সূত্র জানা গেছে, চিরঞ্জয় ত্রিপুরা ও কালি বন্ধু ত্রিপুরা দু’জনে নিকটাত্মীয়। এ দুই পরিবারের বিরোধ দীর্ঘ দিনের।
স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষেত্র মোহন ত্রিপুরা জানান, ইতিপূর্বেও দুই পরিবারের মধ্যে কয়েক দফা হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে বসে মীমাংসা করা হয়।
অপর একটি সূত্র জানায়, বছর খানিক আগে কালি বন্ধু ত্রিপুরা ও তার ছেলেকে নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্র আটক করে। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর জেল থেকে ছাড়া পায়। অতিসম্প্রতি কালি বন্ধু ত্রিপুরা অপর ছেলে যতীন ত্রিপুরা পাঁচ রাউন্ড গুলি ভর্তি একটি বিদেশী পিস্তলসহ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়। সে এখনো জেলে রয়েছে।
এদিকে, খাগড়াছড়ির দূর্গম থলিপাড়ায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় চিরঞ্জিত ত্রিপুরা (৫৫) ও তার পুত্র কর্ণ ত্রিপুরা (৩০) নিহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছে চিরঞ্জিত এর স্ত্রী ভবেলক্ষী ত্রিপুরা (৪৫)ও পুত্রবধূ বিজলী ত্রিপুরা (২৮)। নিখোঁজ রয়েছে কর্ণ ত্রিপুরা সাত বছরের শিশুপুত যুবরাজ ত্রিপুরা(পরে অবশ্য তাকে পাওয়া যায়)। এ সময় চিরঞ্জিত ত্রিপুরা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও বাড়ীঘরও ভাংচুর এবং লুটপাট হয়।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে খাগড়াছড়ি সদর ইউনিয়নের থলিপাড়া এলঅকায় স্থানীয় ইউপি সদস্য কালিবন্ধু ত্রিপুরা নেতৃত্বে ৩০/৪০ সন্ত্রাসী চিরঞ্জিত ত্রিপুরার বাড়ীতে হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীরা চিরঞ্জিত ত্রিপুরা ও তার পুত্র কর্ণ ত্রিপুরাকে ধরে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত ও গুলি করলে চিরঞ্জিত ত্রিপুরা ঘটনাস্থলে নিহত হয়।
আহত কর্ণ ত্রিপুরাকে সদর হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। তার দুই পায়ে গুলির আঘাতের চিহৃ রয়েছে। এ ছাড়া বাধা দিকে গিয়ে গুরতর আহত হয়েছে চিরঞ্জিত এর স্ত্রী ভবেলক্ষী ত্রিপুরা (৪৫)ও পুত্রবধূ বিজলী ত্রিপুরা (২৮) গুরুতর আহত হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ও আহতদের উদ্বার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, তিনি এখন ঘটনাস্থলে রয়েছেন।