
॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া সেনা কর্মকর্তাদের পক্ষে তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেছেন, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই এসব সিনিয়র ও অভিজ্ঞ সামরিক কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে এসেছেন।
তারা আশা করেন, এই আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাবেন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে শুনানি শেষে তিনি একথা বলেন।
আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, কর্মকর্তারা স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন। প্রক্রিয়াগত কারণে হয়তো তাদের ‘গ্রেপ্তার’ দেখানো হয়েছে, কিন্তু তারা কখনোই গ্রেপ্তার ছিলেন না। এর আগে সেনা সদর দপ্তর জানিয়েছিল, সেনা আইন অনুযায়ী তারা ‘আর্মি এটাচমেন্টে’ (সেনা হেফাজতে) ছিলেন।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে তিনটি আবেদন পেশ করা হয়েছে। একটি জামিন আবেদন, একটি ‘কমিউনিকেশন প্রিভিলেজ’ (যোগাযোগের বিশেষ সুবিধা) এবং সাব-জেলে রাখার আবেদন। সাব-জেলে রাখার বিষয়টি জেল কর্তৃপক্ষ দেখবে বলে এই আবেদনটি আর প্রেস করতে হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনাল আবেদনগুলো শুনেছেন। এই আবেদনগুলোর ওপর পরবর্তী তারিখে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
মূল অপরাধীরা পালিয়ে গেছে এমনটি জানিয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন বলেন, যারা সত্যিকারের অপরাধী, যেমন জেনারেল কবির, জেনারেল আকবর, তারেক সিদ্দিকী – তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু আমার মক্কেলরা সুনাগরিক হিসেবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, একজন রাজসাক্ষী (সাবেক আইজিপি) বলেছেন যে- এই ঘটনাগুলো প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে, এবং কর্মকর্তাদের এতে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
তিনি বলেন, জানা গেছে, এই কর্মকর্তাদের ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ‘সাবজেল’ হিসেবে ঘোষিত একটি স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে।
ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেনের বলেন, যারা স্বেচ্ছায় আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করে, তাদের মনোবল প্রমাণ করে যে তারা কোনো অন্যায় করেননি। আমার মক্কেলরা তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সব দিক তুলে ধরে ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি হবেন এবং ন্যায়বিচার পাবেন।
উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিন মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আজ সকালে ৭টার পর ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ আদেশ দেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
যাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন-মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম ও মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম।