॥ মুহাম্মদ জুবাইর, টেকনাফ ॥ টেকনাফের গহীন পাহাড়ে পুলিশ সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গা ডাকাতের আস্তানা থেকে অপহৃত এক যুবককে উদ্ধার করেছে। এসময় ডাকাতদলের সাথে পুলিশের অর্ধশতাধিক রাউন্ড গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ডাকাতদলের আস্তানা থেকে দু’টি এলজি, ৫ রাউন্ড কার্টুজ ও ৬ টি কিরিচ উদ্ধার করে।
১১ ফেব্রুয়ারি রবিবার সকাল ১০ টা থেকে টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাঈন উদ্দিন খাঁন ও পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ আশরাফুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের ৩ টি দল টেকনাফের নেটং পাহাড়ের গভীরে অভিযানের এক পর্যায়ে বিকাল ৩ টার দিকে অপহৃত যুবক জালাল আহমদকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এসময় স্থানীয় শত শত জনতা পুলিশকে সহায়তা করে। অপহৃত জালাল আহমদ (২২) টেকনাফ পৌরসভার নাইট্যংপাড়া এলাকার জহির আহমদের ছেলে। গত শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে রোহিঙ্গা ডাকাত আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে স্বশস্ত্র ডাকাতদল নিজ বাড়ী থেকে তাকে অপহরণ করে গহীন পাহাড়ে নিয়ে যায়।
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাঈন উদ্দিন খান জানান, দূর্গম পাহাড়ে জীবনবাজি রেখে পুলিশ অপহৃত যুবককে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। অভিযানে পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসারের ৩৯ সদস্য ৩ টি দলে বিভক্ত হয়ে এ অভিযান পরিচালনা করে। একপর্যায়ে ডাকাতদলের সাথে মুখোমুখি হলে ডাকাতদল পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষন করলে পুলিশও পাল্টা ৪৯ রাউন্ড গুলি বর্ষন করে। অভিযানে এক এসআইসহ ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। আহত পুলিশ সদস্যরা হচ্ছে টেকনাফ থানার এসআই মহির খান, কনস্টেবল রফিক ও রশিদ। তিনি আরো জানান, অভিযানটি পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় হওয়ায় ও অপহৃতকে অক্ষতাবস্থায় উদ্ধারের কৌশল গ্রহন করায় ডাকাতদলের সদস্যরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
উদ্ধার যুবক জালাল আহমদকে টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর একই দিন সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
জালাল আহমদ জানায়, রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিমের নেতৃত্বে শুক্রবার রাতে তাকে অপহরণ করে গহীন পাহাড়ে নিয়ে হাত-পা শিকলে বেঁধে আটকে রাখে। সেখানে মুক্তিপনের জন্য তার উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। এসময় তাকে পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়নি তারা। তার সাথে আরো এক যুবককে সেখানে আটকে রাখা হয়েছিল। পুলিশ ও জনতা তাকে উদ্ধারে এগিয়ে গেলে ডাকাতদল উক্ত যুবকসহ পাহাড়ের গভীরে পালিয়ে যায়।
অপহৃত যুবকের পিতা জহির আহমদ জানান, ডাকাত হাকিম মোবাইলে ছেলের মুক্তির বিনিময়ে তার কাছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দাবী করেছিল। এঘটনায় তিনি আবদুল হাকিমকে প্রধান আসামী করে গত শনিবার টেকনাফ মডেল থানায় মামলা (নং-১৫) দায়ের করেছিলেন। এদিকে পুলিশ অপহৃতের ঘটনায় রোববার সকালে পৌরসভার জালিয়া পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ডাকাত দলের সহযোগী মোঃ সেলিম (৩০), আনজুমান আরা বেগম (৩২) ও রোমানা আক্তার কাজল (২২) নামে তিনজনকে আটক করেছে।
প্রসংগত এর আগেও গত ৩১ জানুয়ারী রাতে রোহিঙ্গা ডাকাত হাকিম ও তার সশস্ত্র লোকজন বাড়িতে ঢুকে নুরুল আবছার নামে এক কিশোরকে অপহরণ করে তার আস্তানায় নিয়ে যায়। এরপর ডাকাত দল তাকে তালা ও শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। পরের দিন আস্থানা থেকে কৌশলে পালিয়ে আসে কিশোর নুরুল আবছার। তবে এ ঘটনায় কেউ বাদী হয়ে মামলা দায়েরে সাহস করেনি।
গত এক বছর আগে নুরুল আবছারের বড় ভাই তোফাইলকেও অপহরণ করে নিয়ে গুম করে এই হাকিম ডাকাত। অদ্যবধি তার কোন খোঁজ নেই। এ সংক্রান্ত একটি মামলা কক্সবাজার আদালতে দায়ের করেছে পরিবার। এ মামলা তুলে নিতে এ পরিবারের স্বজনদের উপর একের পর এক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে হাকিম ডাকাত এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফে সাধারন মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম এই রোহিঙ্গা ডাকাত আব্দুল হাকিম। এই ডাকাত মিয়ানমারের মংডু বড় ছড়া এলাকার জানে আলমের ছেলে। মাদক পাচার, অপহরণ, ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষণ এসব যেন তার কাছে ঠুনকো বিষয়।
তার বিরুদ্ধে প্রায় এক ডজনের বেশী মামলা রয়েছে। বছর খানেক আগে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সদর ইউনিয়নের সভাপতি সিরাজুল ইসলামকে বাড়ীতে ঢুকে হত্যাসহ একাধিক হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। ইতিমধ্যে বিজিবি, র্যাবসহ আইনশৃংখলা বাহিনী হাকিম ডাকাতের আস্তানায় একাধিক অভিযান চালিয়ে কয়েকজন সহযোগীকে অস্ত্রসহ আটক করে কারাগারে পাঠালেও এ দূর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিম এখনো অধরা রয়েছে।