চট্টগ্রাম ব্যুরো :: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মািজবুর রহমান হত্যাকান্ডের প্রথম প্রতিবাদকারী মৌলভী সৈয়দ আহমদের বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আলী আশরাফকে মৃত্যুও পর রাষ্ট্রীয় সম্মান “গার্ড অব অনার” প্রদান না করার পেছনে পরোক্ষভাবে ইন্ধনদাতা চট্টগ্রাম-১৬ আসনের (বাঁশখালী) সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে তার অবমাননাকর ও আপত্তিকর বক্তব্য দেন তিনি। এর প্রতিবাদে গত ৩ আগস্ট বাঁশখালীতে এবং ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্ত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন সমাবেশ চলাকালে এম.পি মোস্তাফিজুর রহমানের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়। হামলাকারীদের কঠোর শাস্তি ও বাঁশখালীর এম.পি মোস্তাফিজুর রহমানের সংসদ সদস্য পদ বাতিলসহ আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কারের দাবীতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ২৭ আগস্ট ২০২০ ইং বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা কমিটির পক্ষে স্মারকলিপি প্রদান করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদেও চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর আহমদ। এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, মহানগরীর সহকারী কমান্ডার মোঃ খোরশেদ আলম (যুদ্ধাহত), সাতকানিয়া কমান্ডার আবু তাহের এলএনজি, চন্দনাইশ কমান্ডার জাফর আলী হিরু, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ রতন কুমার নাথ, সিইউজে’র সদস্য সাংবাদিক রনজিত কুমার শীল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের উপদেষ্টা মোঃ জসীম উদ্দিন চৌধুরী, মহানগর কমিটির আহবায়ক সাহেদ মুরাদ সাকু, জেলা কমিটির আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার মশিউজ্জামান সিদ্দিকী পাভেল, যুগ্ম আহবায়ক তানজীর কাদেরী, সদস্য আরফাতুল মান্নান ঝিনুক, ফয়সাল জামিল সাকি, মোশাররফ হোসেন, শফিকুল মুনির মোঃ আরমান, শেখ সাদী, খোকন, ইশতিয়াক আহমেদ প্রমূখ।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, পাকিস্তানী শাসন শোষণের কবল থেকে এ দেশকে মুক্ত করতে ১৯৭১ সালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে এ দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে জীবন বাজি রেখে একটি স্বাধীন পতাকা ছিনিয়ে এনেছিল। যারা এ দেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল তারাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবাওে হত্যার মধ্যে দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধেও চেতনাকে ভুলুন্ঠিত কনার চেষ্টা করেছিল। ৭৫’র পরবর্তী সময়ে পরাজিত শক্তি ও বিএনপি-জামাত জোট বিভিন্নভাবে জাতির সূর্য সন্তানদের হত্যা ও নির্যাতন করেছে। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আ্গ পর্যন্ত এই জাতি অন্ধকার সময় পার করছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবারের মাঝে প্রাণের সঞ্চার হয়। এসময় থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সবচেয়ে বেশি মর্যাদা পাচ্ছেন ও মৃত্যুও পর রাষ্ট্রীয় সম্মান “গার্ড অব অনার” প্রদান করার ব্যবস্থা প্রবর্তন করে সম্মানিত করেছেন।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা হত্যাকান্ডের পর প্রথম প্রতিবাদকারী মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম শহর গেরিলা বাহিনীর উপ-প্রধান মৌলভী সৈয়দ আহমদের বড় ভাই বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ আলী আশরাফ গত ২৬ জুলাই বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করার পর প্রশাসনকে অবহিত কওে পরদিন ২৭ জুলাই সকাল ১১টায় জানাযার সময় নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত সময়ে গার্ড অব অনার প্রদান করতে পুলিশ বাহিনী উপস্থিত হলের উপজেলা প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা উপস্থিত হয়নি। ফলে রাষ্ট্রীয় সম্মান ছাড়াই মরহুম এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করতে হয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও মুক্তিযুদ্ধেও স্বপক্ষের মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। চট্টগ্রাম-১৬ আসনের (বাঁশখালী) এম.পি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী একজন সাংবাদিকের সাথে টেলিফোনে আলাপে বলেন, বাঁশখালীতে কোন মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, বাঁশখালীতে কোনো মুক্তিযোদ্ধা নাই ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরও কিছু বিরূপ মন্তব্য করেন। একজন এমপি’র এমন মন্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা হতবাক। এই এমপি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেও এবং প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সম্পর্কেও কটুক্তি করেছিলেন।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান একসময় জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। জাতীয় পার্টির গন্ধ এখনও তার শরীর থেকে যায়নি। ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারী সাঈদীর পুত্র শামীম বিন সাঈদীর অনুষ্টানে তার সম্মতিক্রমে প্রধান অতিথি হিসেবে এই এমপি’র পোস্টার-ব্যানার সাঁটানো হয়েছিল। বিক্ষোভ প্রতিবাদের মুখে সে সময় অনুষ্টানে যাওয়্ াথেকে বিরত থাকেন তিনি। ২০১৬ সালের ১ জুন অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদেও নির্বাচনে পছন্দে ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন এমপি মোস্তাফিজ। তা করতে না পেরে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল কবিরকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। ৪ জুন এমপিকে প্রধান আসামী করে থানায় মামলা রুজু করেন নির্বাচন কর্মকর্তা। ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভায় তার বিরুদ্ধে জামাত প্রীতির অভিযোগ তোলেন জেলা আইনজীবি সমিতির তৎকালীন সভাপতি ও আওয়ামী লীগের পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মুজিবুল হক। এসময় মুজিবুল হকের দিকে জুতা নিয়ে তেড়ে যান এমপি মোস্তাফিজ। বাঁশখালী জামাত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত। মানবতা বিরোধী অপরাধে দন্ডিত জামাত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ঘটনায় এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের মদদে বাঁশখালীতে নারকীয় তান্ডব চালানো হয়েছিল। জাতীয় দিবস গুলোতে জামাত নেতাদেও নিয়ে শহীদ মিনাওে পুস্পস্তবক প্রদান, জামাত ঘরানার লোককে কাজী নিয়োগসহ জামাত প্রীতির অভিযোগ সাংসদের বিরুদ্ধে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ডাঃ আলী আশরাফকে রাষ্ট্রীয় সম্মান “গার্ড অব অনার” প্রদান না করা, এমপি মোস্তাফিজুর রহমান কর্তৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদে গত ২৪ আগস্ট সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্ত্বরে সন্তান কমান্ডের মানববন্ধন সমাবেশ চলাকালে এমপি’র নেতৃত্বে বাঁশখালী থেকে ট্রাক যোগে সন্ত্রাসী বাহিনী এসে অতর্কিত হামলা চালায়। একই সাথে সমাবেশের মাইক কেড়ে নিয়ে ভাংচুর ও তান্ডব চালায় সন্ত্রাসীরা। চালায়। হামলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্ততঃ ২০ জন আহত হয়। এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার মূল নায়ক বাঁশখালীর এম.পি মোস্তাফিজুর রহমানের সংসদ সদস্য পদ বাতিলসহ আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কার ও হামলাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবী জানান বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দ।