রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমঝোতা স্মারক সই

॥ গিরিদর্পণ ডেস্ক ॥ সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারকে রাজি করাতে পেরেছে বাংলাদেশ। দেশটির রাজধানী নেপিডোতে দুই পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই সমঝোতা অনুযায়ী দুই মাসের মধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করবে মিয়ানমার।
তবে কবে নাগাদ এই প্রত্যাবাসন শেষ হবে, সেই বিষয়টি স্মারকে উল্লেখ নেই। মিয়ানমারে দুই পক্ষের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আলোচনার পরদিন এই সমঝোতায় পৌঁছেছে দুই পক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুর দুইটার দিকে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে দেশটির রাষ্ট্রীয় পরামর্শক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সু চির দলীয় কার্যালয়ে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পারসন্স ফ্রম রাখাইন স্টেট’ শীর্ষক এ সমঝোতা সই হয়। বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং মিয়ানমারের পক্ষে দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা কার্যালয়ের মন্ত্রী কিয়াউ তিস্ত সোয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের পাশাপাশি ১৯৯৮ সালে করা সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের বিষয়টিও বিনিময় করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। সমঝোতা স্মারক সইয়ের আগে মিয়ানমারের স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত মিয়ানমারের নেত্রী সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী।
মিয়ানমারের সঙ্গে আলাচনায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে অন্তর্ভুক্তির কথা বলেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া একটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছিল। তবে মিয়ানমার এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা ঠিক করতে রাজি হয়নি।
এর আগে, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বৃহস্পতিবার সকালে নেপিদোতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রায় ৪৫ মিনিটব্যাপী চলা এই বৈঠক ইতিবাচক হয় বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।
বিশ্বচাপের নতি স্বীকারের পর বুধবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উচ্চ পর্যায়ের দুই দিনের বৈঠক শুরু হয় মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয়। এদিন বৈঠকের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে আজ সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে। নেপিদোয় সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, আজকেও (গতকাল) ভালো আলোচনা হয়েছে। আশা করছি কাল (আজ) আমরা একটি চূড়ান্ত সমঝোতায় উপনীত হতে পারব।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর কার্যালয়ে মন্ত্রী কিয়াও তিস্ত সোয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর হোটেল লবিতে গণমাধ্যমকে এ কথা জানান মন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, বিষয়টির সুরাহা নিয়ে তিনি আশাবাদী।
উল্লেখ্য, রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী মুসলিম রোহিঙ্গাদেরকে নিজের নাগরিক বলে স্বীকার করে না মিয়ানমার। এক সময় তাদের নাগরিক অধিকার থাকলেও তা বাতিল করা হয় ১৯৮২ সালে। মিয়ানমারের দাবি, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি এবং তাদেরকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে হবে। ওই বছর থেকেই নানা সময় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী এবং নানা সময় বাংলাদেশে প্রাণ বাঁচাতে এসেছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। এদেরকে ফিরিয়ে নিতে বারবার আলোচনা হলেও মিয়ানমার সেই উদ্যোগ নেয়নি।
আগস্টের শেষ দিকে রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশি চেকপোস্টে হামলার জেরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসে রোহিঙ্গারা। আর মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দেয় বাংলাদেশ। এরপর দুই মাসে ছয় থেকে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে বলে সরকারের তথ্য বলছে।
রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশ এই বিষয়টি এবার জাতিসংঘে তুলে ধরেছে বেশ জোরালভাবে। সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তাদেরকে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সহায়তা চান।
এরপর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ ও তাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে জাতিসংঘে।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চেষ্টার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যায় ঢাকা। গত অক্টোবরে ঢাকায় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির দপ্তরের মন্ত্রী কিউ টিন্ট সোয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মধ্যে বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসকে ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। তবে ওই বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে মতদ্বৈততা রয়ে যায়। বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৯৮২ সাল থেকে যত রোহিঙ্গা এসেছে, ফেরাতে হবে তাদের সবাইকেই। তবে মিয়ানমার চাইছিল সম্প্রতি যারা এসেছে, ফিরে যাবে কেবল তারাই। তবে সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি ঢাকা। এরপরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ছিল বাংলাদেশ এবং সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটিতে গেছেন।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম একেএম মকছুদ আহমেদের স্বরণে নাগরিক শোকসভা :  পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি প্রবীন সাংবাদিককে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকে ভুষিত করার দাবী

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031