
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টির কারণে পার্বত্য রাঙ্গামাটির দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর পার্বত্য দুর্গম এলাকা গুলোতেও উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনে সংসদীয় পদপ্রার্থী দীপংকর তালুকদার। শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারনার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সাথে রাঙ্গামাটি প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছা ও আন্তরিকতার ফলে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট, কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস স্থাপিত হয়েছে।
রাঙ্গামাটির অধিকাংশ উপজেলায় আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে, আপনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইউএনডিপির পরিচালিত ৮১টি বিদ্যালয়কে সরকারীকরণ করা হয়েছে। তাদের ২৯৩ জন শিক্ষককে সমমর্যাদায় জাতীয় করণ এবং বেতন ভাতা পরিশোধ করেছেন।
রাঙ্গামাটি জেলায় ৫ শতাধিকের বেশী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পাকা করণ ও শিক্ষা প্রকৌশলের মাধ্যমে রাঙ্গামাটির ১০ উপজেলার প্রতিটি উপজেলায় ৪ তলা বিশিষ্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পর্যায়ক্রমে আরো স্কুল ও কলেজ ভবন নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে।
পার্বত্য রাঙ্গামাটির মানুষের আজ আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। সড়ক যোগাযোগের কারণে পার্বত্য দুর্গম এলাকা গুলো থেকে স্থানীয় কৃষকরা উৎপাদিত কৃষি পণ্য খুব সহজে বাজারজাত করতে পারছে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর ও দীর্ঘ ১৫ বছরে সরকারের টানা মেয়াদে ধারাবাহিক উন্নয়ন গুলোর মধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় সীমান্ত সড়ক আজ দৃশ্যমান। ১০৩৬ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন কাজ চলছে তার মধ্যে প্রায় ৩১৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হয়ে গেছে।
রাঙ্গামাটি জেলায় ১৫ বছরে এলজিডির মাধ্যমে ১০২৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। এছাড়া ৩৩৮ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলায় এর মধ্যে ২২৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ও পুনর্বাসন খাতে ব্যয় হয়েছে ৫৮৫ কোটি টাকা। ২৫২২ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩৬টি সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৬০টি ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। তিনটি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। ২২টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ১৯ কোটি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে তিন পার্বত্য জেলায় ১৫ বছরে ৬২৪ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবাযন করা হয়েছে। তার মধ্যে গ্রামীন সড়ক, স্কুল ভবন, কৃষি কাজের জন্য সেচ প্রকল্প স্থাপন।
রাঙ্গামাটির স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে ২৫০ শয্য হাসপাতাল উন্নয়ন কাজ চলমান, ৫টি উপজেলায় ৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করাব হয়েছে ৫টি উপজেলায় হাসপাতাল নির্মাণ কাজ চলমান। এছাড়া ১০ উপজেলায় ১৩৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
রাঙ্গামাটি জেলায় ১৫ বছরে জাতীয় আঞ্চলিক ও ফিডার সড়কে ২৩৫ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি দীর্ঘতম চুনিলাল সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে ৩ টি উপজেলাকে সড়ক সংযোাগের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ২০১৭ সালে মারাত্মক পাহাড় ধ্বসের ঘটনায় পার্বত্য রাঙ্গামাটির বিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ পুণ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে এবং ১৬৫ টি স্থানে ভাঙ্গন রোধে গার্ড ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আপনার পক্ষ থেকে ২৩২১ পরিবার ও দুর্যোগ সহনীয় ঘর প্রদানের ১২৬৬ গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান করা হয়েছে।
২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে ৩৬টি বড়ো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তার মধ্যে বড় প্রকল্প হচ্ছে ১২ তলা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ, রাঙ্গামাটি দুর্নীতি দমন কমিশন ভবন নির্মাণ, রাঙ্গামাটির ১০ টি উপজেলায় থানা ভবন ও পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণ, রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে ১১ তরা ভবনের মধ্যে ৬ তলা ভবন নির্মাণ কাজ সমাপ্তির পথে আগামী ফেব্রুয়ারীতে যা উদ্বোধন করা হবে।
রাঙ্গামাটি জেলায় সমাজ সেবা বিভাগের মাধ্যমে ৫৫ হাজার পরিবার সরাসরি সরকারের সুবিধা পাচ্ছে। তার মধ্যে বয়স্ক ভাতা ২৬ হাজার, প্রতিবন্ধী ভাতা ১৬ হাজার ও বিধবা ভাতা ১৩ হাজার। তিনটি পার্বত্য জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্পে ৫৬৫ কোটি ৬৮ লাখ বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন স্থাপন কাজ চলমান রয়েছে।
এছাড়া দূর্গম এলাকায় যেখানে বিদ্যুৎ যাবে না তেমন ২০ হাজার পরিবার বাইরে মাঝে সোর বিদ্যুৎ প্যানেল বিতরণ। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রায় ১০ হাজার নারীকে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম বিভাগের রাঙ্গামাটি জেলা, খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, বরিশাল বিভাগের বরগুনা, ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোণা এই ছয় জেলার নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন।