সোনালী ব্যাংকের নোটিশ পেয়ে কৃষকরা জানলেন ঋণের ফাঁদে আটকা : লংগদুতে দুই শতাধিক কৃষক ও দরিদ্র মানুষদের নামে ভুয়া ঋণ: প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার সোনালী ব্যাংকে দরিদ্র কৃষক ও দিনমজুরদের নামে ঋণ বিতরণ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে দুই শতাধিক দরিদ্র কৃষক ও অসহায় দিনমজুররা জানতে পারেন, তাদের নামে ভুয়া ঋণ দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এতে ভুক্তভোগীরা এর প্রতিবাদে সোনালী ব্যাংকের সামনে মানববন্ধন বিক্ষোভ মিছিল করেছে। রবিবার (১৪ জানুয়ারী) সকাল ১১টায় লংগদু উপজেলা সদরের সোনালী ব্যাংক কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে দরিদ্র কৃষক ও ভুক্তভোগী দিনমজুররা বলেন, ২০১২ ও ২০১৩ সালের দিকে স্থানীয় হেলাল, সেলিম, মিষ্টি কালামসহ কয়েকজন দালাল সরকারি অনুদান দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে উপজেলার ভাসান্যাদম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে সহজ সরল দিনমজুর ও দরিদ্র কৃষকদের কাছ থেকে এনআইডি কার্ডের (জাতীয় পরিচয়পত্র) ফটোকপি ও ছবি সংগ্রহ করে। এরপর এই হতদরিদ্র ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ব্যাংক ঋণের বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর নেয়। যা অক্ষরজ্ঞানহীন দরিদ্র কৃষক ও অসহায় দিনমজুর মানুষরা বুঝতে পারেনি। পরে কোনো কোনো দরিদ্র কৃষক ও অসহায় দিনমজুর মানুষদের এক হাজার বা ২ হাজার করে টাকা দিয়ে বিদায় করে দালালচক্র। এভাবেই সবার সঙ্গে প্রতারণা করে ঋণের ফাঁদে ফেলা হয়েছে। যা তারা এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। বিনিময়ে দরিদ্র কৃষক ও দিনমজুরদের নামে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ বরাদ্ধ নিয়ে নেয় অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও দালালচক্র।
মানববন্ধনে দরিদ্র কৃষক ও ভুক্তভোগী দিনমজুররা বলেন, ঘটনার প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর পরে এসে ঋণের বিষয়টি জানতে পারি আমরা। সম্প্রতি আমাদের নামে নোটিশ জারি করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে আমাদের নামে যে ভুয়া ঋণ হয়েছে তার বড় প্রমাণ আমাদের এনআইডি কার্ড জালিয়াতি করা হয়েছে। কার্ডে উল্লেখিত নাম, জন্ম তারিখ, পিতা ও মাতার নামের অংশ ঠিক রেখে পেছনের ঠিকানার অংশটি পরিবর্তন করে মাইনীমূখ ইউনিয়নের সোনাই এলাকার করা হয়েছে। যেটা আমাদের সঠিক ঠিকানা না। এভাবেই সবার সাথে প্রতারণা করে ঋণের ফাঁদে ফেলা হয়েছে।
লংগদু উপজেলার বগাচত্বর ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, কৃষি কাজ করে সংসার চলে তার। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংক লংগদু শাখা থেকে ৩৪ হাজার টাকা কৃষি ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়েছেন। তার দাবি তিনি ব্যাংক হতে কোনো ঋণ গ্রহণ করেননি। কে বা কারা তার নামে জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। এখন ঋণ পরিশোধের চাপে দিশেহারা তিনি। শুধু নাছির উদ্দিন নন, ঋণ পরিশোধের এমন নোটিশ পেয়েছেন উপজেলার সফিকুল ইসলাম, আইন উদ্দিনসহ আরও অনেকেই।
কৃষক আইন উদ্দিন বলেন, আমাদের এলাকার ২১৮ জনের নামে এই ভূয়া ঋণের তালিকা পেয়েছি। যারা কেউ এই ঋণ নেয় নাই। এখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নানাভাবে আমাদের ঋণ পরিশোধের চাপ দিচ্ছে। কারো একাউন্টে স্বজনরা টাকা পাঠালে সেখান থেকে ঋণের টাকা কেটে রেখে দেয়। আমরা এর একটা সুষ্ঠু সমাধান চাই এবং এই দূর্নীতির সাথে যারা জড়িত তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।
ভাসান্যাদম এলাকার বাসিন্দা স্কুলের দপ্তরীর চাকরি করা আইনাল উদ্দিন বলেন, আমাদের সাথে ঋণের জালিয়াতি করা হয়েছে। আমি ঋণ না নিয়ে কেন ঋণ পরিশোধ করবো। প্রয়োজনে জেলে যেতে রাজি; তবুও ভুয়া ঋণ আমি পরিশোধ করবো না।
এই বিষয়ে রাঙ্গামাটি লংগদু সোনালী ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক মো. কাসেম জানান, একটি সার্টিফিকেট অনলাইনে চেক করার সময় জাতীয় পরিচয় পত্রের সঙ্গে অমিল খুঁজে যাওয়া যায়। তখন থেকে আস্তে আস্তে এসব তথ্য বের হতে থাকে। তবে, এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কিছু বলা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা দালাল চক্র মিলে এই আর্থিক অনিয়ম করেছে। এই ঋণের বোঝা দরিদ্র কৃষকদের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব না। এ বিষয়ে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আমি চাই লংগদুর গরীব অসহায় মানুষগুলো নির্যাতন থেকে বাঁচুক। আশা করছি কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত করে এটার একটা সুরহা করবেন।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম একেএম মকছুদ আহমেদের স্বরণে নাগরিক শোকসভা :  পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি প্রবীন সাংবাদিককে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকে ভুষিত করার দাবী

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031