দেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু ধারা ফিরে এসেছে : এটা যেন কেউ বানচাল করতে না পারে–সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকে সংবাদমাধ্যমের বৈরী আচরণের মুখোমুখি হওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজ) দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যে মানুষের কল্যাণে সরকারের কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে তুলে আনার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

দেশে ‘সুষ্ঠু গণতন্ত্রিক ধারা’ ফিরে এসেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দেশে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু ধারা ফিরে আসুক এবং সেটা ফিরে এসেছে। এটা যেন কেউ বানচাল করতে না পারে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে বাংলাদেশে আসার পর আজকে ৩৭ বছর পূর্ণ হল। তবে দুঃখের কথা, আমি কখনও প্রেসের কাছ থেকে খুব বেশি সহযোগিতা পাইনি। সব সময় একটা বৈরিতা নিয়েই আমাকে এগোতে হয়েছে।

“সমালোচনার মুখোমুখি হয়েই আমাকে এগোতে হয়েছে। কিন্তু এগুলি নিয়ে আমি কখনও মাথা ঘামাইনি। কারণ আমি জানি আমি কী কাজ করছি এবং ন্যায় ও সত্যের পথে থাকলে, সৎ পথে থাকলে ফলাফল পাওয়া যায়- এটা আমি বিশ্বাস করি।”

নাম উল্লেখ না করলেও ‘প্রথম আলো’ ও ‘ডেইলি স্টার’র প্রতি ঈঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দুটি পত্রিকা আমি পড়িও না, রাখিও না। আমার গণভবনে ঢোকা নিষেধ। তাদের আমার দরকার নেই।” পদ্মা সেতু নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “কত পত্রিকা আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কথা লিখেছিল। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, দুর্নীতি প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু পরে তো কোনও দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি।

“এসব মিথ্যা কথা বলা কি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা? যারা এটা বলেছিল তাদের কী করা উচিত আপনারাই বলুন।”

সরকারের নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশকে ‘ব্যাধি’ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা চলে আসছে। খুব কম গণমাধ্যমই আছে যারা সরকারের পজিটিভ বিষয়গুলো নিয়ে সংবাদ করে। নেগেটিভই বেশি।

“আমরা কারও কাছে দয়া-দাক্ষিণ্য চাই না। এটুকু দাবি করতেই পারি, আমরা যদি ভালো কাজ করি সেটা যেন ভালো করে প্রচার করা হয়। আমার স্বার্থে না, দলের স্বার্থে না, দেশের স্বার্থে এটা করবেন।”

সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য নবম ওয়েজবোর্ড গঠনে বিলম্বের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওয়েজবোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা থাকে, তারা কালক্ষেপণের চেষ্টা করে। এই বিষয়ে আমাকে আর ব্যাখ্যা দিতে হবে না “আমরাও চাই, এটা তাড়াতাড়ি হোক।”

সাংবাদিকদের মহার্ঘ্য ভাতার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি মন্ত্রীকে বলে দিয়েছি, মহার্ঘ্য ভাতার ঘোষণাটা দিয়ে দিতে পারে।”

সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকার কথা তুলে ধরে এর জন্য নীতিমালা থাকা দরকার বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমানে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই বলে অভিযোগের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক সময় আমরা দেখি অনেকেই বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নাই। টক শোতেও বলছে বা মাইকের সামনেও বলছে। কথাবার্তা বলে যাচ্ছে সমানে টেলিভিশনগুলোতে আবার বলে যাচ্ছে স্বাধীনতা নাই। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তাহলে কথাগুলা বললেন কীভাবে?”

জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার এই অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কল্যাণে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এখানে জানি না, আমাদের সাংবাদিকরা কেন অহেতুক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। সাইবার ক্রাইম আইন হলে বোধ হয়, সাংবাদিকদের হয়রানি করা হবে। কোনো সাংবাদিক যদি হয়রানি করার মতো কিছু না করে থাকে, তাকে কেন হয়রানি করা হবে?”

বিএফইউজের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের সভপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আতাউল করিম খোকন, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আমজাদ হোসেন মিন্টু, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী শাহেদ, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস সালাম, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাজেদ রহমান, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহিদ হোসেন এবং চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিদউদ্দিন শ্যামল।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31