কে হচ্ছেন এবার পাহাড়ের সংরক্ষিত নারী নেত্রী! চিনু-শান্তনা নাকি অন্য কেউ ?

॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ তিন পার্বত্য জেলার জন্য জাতীয় সংসদে মহিলা সংরক্ষিত আসনে লড়াইয়ে নেমেছেন সর্বমোট ১৭ জন নারী। এর মধ্যে বিগত সংসদের একজন সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুও রয়েছেন। এবারও তিনি সরকারি দলের অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাঁর সাথে পাল্লা দিয়ে খাগড়াছড়ি থেকে মহিলা আওয়ামীলীগ-এর কেন্দ্রীয় দুই নির্বাহী সদস্য ছাড়াও তিন জেলার জেলা-উপজেলা এবং এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের নেত্রীও দলের মনোনয়ন কেনার শখ পূরণ করেছেন। তবে রাঙ্গামাটির রাজনীতিতে ফিরোজা বেগম চিনু’র পরেই শক্তিশালী অবস্থানে আছেন শান্তনা চাকমা।
সংসদের নির্বাচিত দলগুলো ইতোমধ্যে নারী আসনের সংসদ সদস্যদের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ায় নারী এমপি’র বিষয়টি বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলায় ‘টক অব দ্যা টাউনে’ পরিণত হয়েছে। সর্বত্র একটাই প্রশ্ন অবশেষে কে হচ্ছেন পাহাড়ের ভাগ্যবতী নারী নেত্রী? বিশেষ করে একাদশ জাতীয় সংসদে তিন পার্বত্য জেলা থেকে নারী সংসদ সদস্য মনোনয়নের বিষয়ে দলীয় হাই কমান্ডের ইতিবাচক মনোভাব জানার পর এবার আশার মাত্রাটাও একটু বেশী। জল্পনা কল্পনাও বাড়াবাড়ি রকমের। অনেকে এ আসনে মনোনয়ন পেতে একাধিক প্রার্থী আওয়ামীলীগের উচ্চ পর্যায়েও তদবির করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সারাদেশে সংরক্ষিত আসনের জন্য ৫০ ভাগের একভাগে তিন পার্বত্য জেলার সাথে কক্সবাজার জেলাও রয়েছে। এই চারটি জেলা নিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের সংরক্ষিত নারী আসন। যেহেতু দলীয় বাছাই কমিটির বদান্যতা আর দলীয় প্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর নেক নজরের উপর এই এমপিদের ভাগ্য নির্ভরশীল, তাই এই আসনে এবার কে হচ্ছেন ভাগ্যবতী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য তা নিয়ে শেষ নেই জল্পনা-কল্পনার।
তিন জেলার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সাবেক এমপি ও রাঙ্গামাটি জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফিরোজা বেগম চিনু, হত্যাকান্ডের শিকার রাঙ্গামাটি জেলার প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান অনিল তঞ্চগ্যার স্ত্রী শান্তনা চাকমা, খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ও কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগের নির্বাহী সদস্য শাহিনা আক্তার, বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান সুচিত্রা তঞ্চগ্যা এবং খাগড়াছড়ি জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী ও জেলা মহিলা সংস্থা’র চেয়ারম্যান ক্রইসাঞো চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিতা দেওয়ান, জেলা মহিলা যুবলীগের সভাপতি শিক্ষিকা রোকেয়া আক্তার, সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লেখিকা চাকমা এবং ফারজানা আক্তার রয়েছেন।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন ভাবে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের প্রায় ৬ জন নারীর নাম শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে এদের মধ্যে সাবেক এমপি ও রাঙ্গামাটি জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফিরোজা বেগম চিনু ও শান্তনা চাকমা নাম শোনা যাচ্ছে। তবে মনোনয়ন দৌড়ে অপহৃত রাঙ্গামাটি জেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র তনচংগ্যার স্ত্রী শান্তনা চাক্মা এগিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এর পর খাগড়াছড়ির শতরূপা চাকমা, বাসন্তি চাকমা, শাহিনা আক্তার বান্দরবানের সুচিত্রা তনচংগ্যার নাম উঠে এসেছে। টপ লিষ্টে থাকা এ ছয় জনের মধ্যেই কে হচ্ছেন নারী এমপি তা নিয়ে চলছে জোর প্রচারণা ও জল্পনা-কল্পনা।
সাবেক এমপি ও রাঙ্গামাটি জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, বিগত ৫বছর আমি সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের কথা তুলে ধরেছি। আওয়ামীলীগ সরকার পার্বত্যাঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত জাতিগোষ্ঠীদের কথা চিন্তা করে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছাতে সোলার প্যানেল বিতরণের মাধ্যমে দূর্গম পাহাড়ে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করেছি। মানুষের সুখ, দুঃখের সাথি হয়ে হতদরিদ্রদের জন্য কাজ করে গেছি।
তিনি আরো বলেন, আমি দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত সাথী। আজীবন রাজপথে থেকে দলের জন্য কাজ করে গেছি। সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ এবং আন্তরিকতা। দলের কাছে কখনও কিছু পাওয়ার আশা করিনি। এবারও এই পদটি আমি চাই। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, দলের হাই কমান্ডের সাথে যোগাযোগ অনুযায়ী আমি এই পদটি পাওয়ার বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী।
এ ব্যাপারে অপহৃত অনিল চন্দ্র তনচংগ্যা’র স্ত্রী শান্তনা চাক্মা বলেন, আমার চাওয়া পাওয়ার কিছুই নেই। আমার স্বামী আওয়ামীলীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। সারাজীবন দলের জন্য কাজ করেছেন এবং দলের জন্যই তিনি নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। বিষয়টি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অবগত আছেন। আর দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আগে থেকেই আমাকে এই পদের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মানুষ হিসেবে হাই কমান্ডের নেক নজর আমার প্রতিই থাকবে বলে আমি আশাবাদী। সে হিসেবে দলের মনোনয়ন আমি প্রত্যাশা করি। তিনি আরো বলেন, এম.পি মনোনীত হলে আমি দল, এলাকার পাহাড়ী বাঙ্গালীসহ দেশের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাব।
খাগড়াছড়ির শতরূপা চাকমা বলেন, দলের দুঃসময়ে আমি যেভাবে কাজ করেছি, দল সে বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করবে। সেই সাথে খাগড়াছড়ি জেলার মানুষ আমাকে চায়। এছাড়াও পাহড়ের সকল সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করাসহ নারীদের অগ্রধিকার নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আমি কাজ করবো। তিনি বলেন, আমার অতীত কর্মকান্ডই আমাকে এগিয়ে যেতে উৎসাহিত করছে। একইভাবে নিজ নিজ ত্যাগের কথা তুলে ধরে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন অন্যরাও। তিন পার্বত্য জেলার কেউ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে না থাকায় এই অঞ্চলের নারীরা নানাক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছে। যোগ্যতা থাকার পরও পাহাড়ের কোনো নারী নেত্রী আওয়ামী লীগের টিকেটে জাতীয় সংসদে যাওয়ার সুযোগ পায়নি। এ অঞ্চলের নারী সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য তারা পাহাড়ের জন্য আলাদা নারী আসন ঘোষণার দাবি জানান।
বাসন্তি চাকমা জানান, তিন পার্বত্য জেলায় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে খাগড়াছড়ি জেলার নারীরা নানা ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছে। এ অঞ্চলের নারী সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য খাগড়াছড়ি থেকে সংরক্ষিত আসনে নেতৃত্বের দাবি খাগড়াছড়িবাসীর।
খাগড়াছড়ি থেকে সংরক্ষিত আসনে এমপি পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় মহিলা লীগের সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলা মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদিক শাহিনা আক্তার জানান, আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থাশীল। তিনিই পাহাড়ে শান্তির জন্য পাহাড়ি-বাঙালি সকল সম্প্রদায়ের সহাবস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করেছেন। দলের দু:সময়ে আমি কাজ করেছি। তিনি যাকেই যোগ্য মনে করবেন, আমি তাঁর নেতৃত্বেই অনুগামী হবো। তবে কে এই সংরক্ষিত নারী আসনে এম.পি হবে তা দেখার জন্য আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31