গণভবনে দলের সভাপতি মন্ডলীর সভা : ক্ষমতায় আর কেউ থাকলে মহামারীতে ফায়দা লুটত—-প্রধানমন্ত্রী

॥ ডেস্ক রিপোর্ট ॥ ক্ষমতায় আওয়ামী লীগের সরকার না থাকলে অন্য যে কোনো শক্তি মানুষকে সহায়তা না করে শুধু ‘ফায়দা লুটার’ উপায় খুঁজতো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরাই মহামারীর মধ্যে ‘জীবনের ঝুঁকি নিয়ে’ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামীলীগ সভাপতি বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে গণভবনে দলের সভাপতি মন্ডলীর সভায় এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, “মহামারীতে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সরকার সহায়তা করেছে। আমার মনে হয় একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলে এইভাবে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেছে এবং মানুষকে সহযোগিতা করেছে। “অন্য কোনো দল হলে এটা মোটেই করতো না বরং তারা দেখতো যে কীভাবে এখান থেকে কিছু ফায়দা লুটতে পারে কিনা,এটাই। কিন্তু আমরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করেছি। এটা আমাদের নীতি, এটা আমাদের লক্ষ্য। এটা জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন। আমরা সেইভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস ছাড়াও বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে।কারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে সেবা করাই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য।
“রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা যদি অন্য দলগুলো দেখি তারা হয়ত শুধু ওই লিপ সার্ভিস..অর্থাৎ মুখে মুখে কথা বলেছে। কিন্তু প্রকৃত মানুষের কাছে গিয়ে মানুষকে সাহায্য করা সেটা কিন্তু আমরা অন্যদল বা অন্য সংস্থা.. অনেককেই আমরা দেখেছি তাদের উপস্থিতিটা ওভাবে দেখিনি। এবং ওই এনজিও-টেনজিও অনেকেই আছেন কিন্তু তাদেরকে কিন্তু আমরা ওভাবে দেখি নাই।”
শেখ হাসিনা বলেন, মহামারীর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ভাইরাস মোকাবেলায় প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে।
সভাপতিমন্ডলীর সভা নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, “দীর্ঘদিন পরে আমাদের এই সভা। করোনা ভাইরাসের পর থেকেই সারা বিশ্বব্যাপী একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং শুধু আমাদের দেশ বলে না সারা পৃথিবীজুড়ে এই অবস্থার সৃষ্টি। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যে এই করোনাকে মোকাবেলা করে আমরা কীভাবে আমাদের দেশের অর্থনীতির গতিটা অব্যাহত রাখতে পারি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের এক সময় প্রায় রপ্তানি থেমেই যাচ্ছিল। ইন্ডাস্ট্রিগুলো প্রায় বন্ধ ছিল। সীমিত আকারে আস্তে আস্তে ইন্ড্রাস্ট্রিগুলো আবার চালু করেছি। সেই সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যটা যাতে সচল থাকে আর বিশেষ করে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া, শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো এবং কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো। সেই ক্ষেত্রে আমরা প্রত্যেকের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। এই প্রণোদনা আমাদের বাজেটের প্রায় চার শতাংশ আমরা এই প্রণোদনা দেই।”
কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও সরকার ৫ লক্ষ কোটি টাকার মতো বিশাল বাজেট দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এত বড় বিশাল বাজেট। এটা দেওয়া কিন্তু কম কথা না। কিন্তু আমার কথা ছিল..জানি না করোনার জন্য কতটুকু করতে পারব না পারব কিন্তু আমার কথা ছিল আমাদের প্রস্তুতিটা থাকতে হবে সম্পূর্ণভাবে। যদি অবস্থা ভালো হয় আমরা সবটুকু অর্জন করতে পারব। যদি না পারি তারপরও তখন সেটা আমরা আবার দেখব। আমরা কিন্তু পিছিয়ে যাইনি। বাজেট আমরা ঘোষণা দিয়েছি দেশের জন্য।”
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীদের ফেরত আসতে হয়েছে জানিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা এই প্রবাসীদের ফেলে দিতে পারেন না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অনেকের ধারণা ছিল আমাদের রেমিটেন্স কমে যাবে, রেমিটেন্স কিন্তু কমেনি। কারণ আমরা বিশেষ প্রনোদনা দিয়েছি ২ শতাংশ। তার ফলে রেমিটেন্স কিন্তু আমাদের বেড়েছে। এটা অনেকে ভাবতে পারেনি যে আমাদের রেমিটেন্স এত বাড়বে। রিজার্ভ এখন আমাদের ৩৯.৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার। আমাদের রিজার্ভও কিন্তু ভালো রিজার্ভ আছে এটা আমি বলব। কাজেই সেদিক থেকে অর্থনীতি..আমরা মোটামুটি একটা ভালো অবস্থানে আছি। বাজেটের ডেফিসিট এবার আমরা ৬ শতাংশ ধরেছিলাম। এখানে আমার সিদ্ধান্ত ছিল দরকার হয় আমরা ১০ শতাংশ ধরব। কিন্তু সেটা আমাদের লাগেনি।”
দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথাও সভায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকার দেশের উন্নয়ন ও মানুষকে সুন্দর জীবন দিতে ডেল্টা প্লান প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ যেহেতু.. জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই সংগঠনই এই দেশের স্বাধীনতা এনেছে। কাজেই আমরা যখন সরকারে আছি আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশটা শুধু বর্তমানেই না আগামী দিনের নতুন প্রজন্মের জন্য কীভাবে এই দেশটা এগিয়ে যাবে, কীভাবে চলবে সেটাই আমদের..এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখবো বা নির্দেশনা দিয়ে দেব।
“হ্যা, এটা ঠিক। এখন আমরা যেটা করছি সময়ের বিবর্তনে সেটা কিন্তু সংশোধন করতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে, পরিশোধন করতে হবে। এটা করতে হবে- এটা নিয়ম। সেটা আমরা জানি। কিন্তু তারপরও একটা ফ্রেমওয়ার্ক, একটা ধারণাপত্র অথবা একটা দিক-নির্দেশনা সেটা যদি সামনে থাকে তাহলে যে কোনো কাজ খুব সহজে..যারাই আসুক ভবিষ্যতে তারাই করতে পারবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “কারণ আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। আমি তো..৭৪ বছর বয়স..কাজেই সেটাও মাথায় রাখতে হবে যে আর কত দিন। এরপরে যারা আসবে তারা যেন দিকহারা হয়ে না যায়। তারাও যেন একটা দিক নির্দেশনা থাকে। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে..নাহ..আমাদের এখানে যেতে হবে।”
সভায় শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রাম ও পঁচাত্তরের ১৫ই অগাস্ট তাকে স্বপরিবারে হত্যার কথা তুলে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
সভায় করোনা ভাইরাসে প্রাণ হারানো দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও সাহারা খাতুনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম একেএম মকছুদ আহমেদের স্বরণে নাগরিক শোকসভা :  পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি প্রবীন সাংবাদিককে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকে ভুষিত করার দাবী

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031