চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতবিনিময় সভা :: মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় কোন অমুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারবেনা ঃ শাজাহান খাঁন এমপি

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খাঁন এমপি বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ গড়ার মাধ্যমে তাঁরা বীরের পরিচয় দিয়েছেন। এজন্য সকল প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নামের পূর্বে “বীর ” লিখতে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। একইসাথে তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বত্র রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস্, পিস ও পাকিস্তানী মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিতসহ তালিকা তৈরী করে অবিলম্বে মন্ত্রনালয়ে জমা দিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সকল ইউনিট নেতৃবৃন্দকে কাজ করতে হবে। এছাড়া এলাকা ভিত্তিক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাও তৈরী করে জমা দিলে তা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে। প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় কোন অমুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারবেনা। এ বিষয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী জানুষারী মাসে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন অনুষ্টানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আয়োজিত বিভাগীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি সভার আয়োজন করে।
শাজাহান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্টা করা। ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জ্বতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা নস্যাৎ করার জন্য স্বাধীনতা বিরোধীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করেছে। এ চক্র মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। অনেকের বিচার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন সহ্য করতে না পেরে বিএনপি-জামাতচক্র ২০১৫ সালে হরতাল-অবরোধের নামে দেশে অগ্নি সন্ত্রাস চালিয়েছে, গাড়ি জ্বালিয়ে ও মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে অগ্রিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির শত কোটি টাকার উপরে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। যারা পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছে তারা কখনো মুসলমান জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে পারেনা। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও জাতির পিতার স্বপ্ন্রে সোনার বাংলা বিনির্মাণে বীর মুক্তিযোদ্ধারাসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য আগামীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়ক, কার্লভাট ও সেতুর নামকরণ করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করে ২০ হাজায় উন্নীত করতে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক কল্যাণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে সরকার তাঁদের জন্য আলাদা মন্ত্রনালয় করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে আরো সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হবে। ১ ডিসেম্বরকে সরকারীভাবে মুক্তিযোদ্ধা দিবস ও ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষনা ও জয় বাংলা’কে জাতীয় ধ্বনি করার বিষয়ে মতপ্রকাশ করেন তিনি।
প্রধান বক্তা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি বলেন, ১৯৭১ সালে সেনাপতিদের প্রতিষ্টা বা কোন ধর্মীয় কারণে যুদ্ধ হয়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত অমুক্তিযোদ্ধা থাকার অত্যন্ত দুঃখজনক। জিয়াউর রহমানের আমলে মুক্তিযোদ্ধা সংসদেন সৃষ্টি। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও তার দোসরদের মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের কোন চেতনায় ছিলনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী গেজেটভূক্ত অনেক দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা সরকারের ভাতা দিয়ে চলছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যতদিন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন বীর মুক্তিযোদ্ধারা গৌরবের সাথে থাকবেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা যাওয়ার পর রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘গার্ড অব অনার’ পাওয়া এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদান। এ অর্জন ধরে রাখতে প্রত্যেক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের সন্তানদেরকে আন্তরিকভাকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর আহমদের সভাপতিত্বে জেলা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার একেএম সরোয়ার কামাল দুলুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব মোঃ ওসমান আলী ও যুগ্ম সদস্য সচিব এবিএম সুলতান আহমেদ। বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সাহাবউদ্দিন, খাগড়াছড়ি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ রইছ উদ্দিন, রাঙ্গামাটি কমান্ডের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল হক চৌধুরী সৈয়দ, সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, জেলা ইউনিটের সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের এলএমজি, সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ হোসেন, সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম, মহানগরীর থানা কমান্ডের পক্ষে আকবর শাহ থানার ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নূর উদ্দিন, জেলা সংসদের থানা কমান্ডের পক্ষে মিরসরাই কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম চিশ্তী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোঃ সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি, মহানগর কমিটির আহবায়ক সাহেদ মুরাদ সাকু, যুগ্ম আহবায়ক সাজ্জাদ হোসেন, সদস্য সচিব কাজী মুহাম্মদ রাজীশ ইমরান প্রমূখ। সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা ও থানা কমান্ডারগণ এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম একেএম মকছুদ আহমেদের স্বরণে নাগরিক শোকসভা :  পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি প্রবীন সাংবাদিককে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকে ভুষিত করার দাবী

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031