
॥ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥ খাগড়াছড়িতে শীত বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে শীতজনিত রোগ। প্রতিদিন ভিড় বাড়ছে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। চলতি এক মাসের খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৭ থেকে ৮জন শিশু মারা গেছে বলে জানা গেছে।
ঠান্ডার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি পাহাড়ী গ্রামাঞ্চলে। এতে বিপাকে পড়ছে দুর্গম এলাকার সাধারণ মানুষেরা। ঠান্ডার প্রভাবের কারণে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশীর ভাগ শিশুরা। শ্বাসকষ্ট, জ্বর, ঠান্ডা ছাড়াও শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায়। ঠান্ডায় আক্রান্ত শিশুদের বেশিরভাগের বয়স ৬ থেকে ১৮ মাস। মারা যাওয়া শিশুদের বয়স এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বলে জানান স্থানীয়রা।
এদিকে, বাড়তি রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সরা। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ঠান্ডায় আক্রান্ত রোগের উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছে ২১ শিশু।
অভিভাবকরা জানান, ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের শ্বাসকষ্ট, ঠান্ডা ও জ্বর-সর্দি হচ্ছে। বেশির ভাগই ৪-৫ দিন পর্যন্ত জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। চিকিৎসা দেওয়ার পরও বাচ্চাদের সুস্থ হতে অনেক সময় গেলে যাচ্ছে।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, শীতের কারণে নবজাতক ও শিশুরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বেশী। তবে অনেক শিশু সিভিয়ার নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আশংকাজনক ভাবে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ঠান্ডা জনিত কারণে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে কোনো শয্যা খালি নেই। প্রতিদিন নতুন করে ১০ থেকে ১২ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এছাড়া বহির্বিভাগে অনেকে সেবা নিচ্ছে।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের নার্সিং অফিসার মেমোরি চাকমা বলেন, ঠান্ডাজণিত কারণে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। অনেক অভিভাবক সচেতন না। অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাচ্চাদের হাসপাতালে নিয়ে আসে না। দেরি করে আনার কারণে অনেক বাচ্চাকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। আর শিশু ওয়ার্ডে জনবল সংকট থাকায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় বলেও জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রাজেন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, শীতে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এ সময় বাচ্চাদের ঠান্ডা থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি সুষম খাবার দিতে হবে। মা করোনা আক্রান্ত হলেও মুখে মাস্ক পরে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুদের বাড়তি যত্ন নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি আরো জানান, গত এক মাসে ৭ থেকে ৮ শিশু নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। হাসপাতালে জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। একজন চিকিৎসককে পুরো ওয়ার্ডে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি।