বান্দরবানের লামা উপজেলার মাতামুহুরী নদীতে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের মহোৎসব চলছে

॥লামা প্রতিনিধি॥ বান্দরবানের লামা উপজেলার মাতামুহুরী নদীতে উজানে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার বন্ধ হচ্ছেনা। প্রতিবছর শুস্ক মৌসুম এলেই সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তরা নদীতে বিষ ঢেলে মাছ শিকার শুরু করে। প্রতিদিনই নদীর কোন না কোন স্থানে চলে বিষ প্রয়োগ। এতে নদীর প্রায় ২-৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির লক্ষ-লক্ষ মাছ আধমরা অবস্থায় ভেসে উঠে। বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারের কারণে নির্বিচারে ছোট-বড় মাছগুলো মারা যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে তৈরী মাছের খাবার বিনষ্টসহ মাছের বংশ বিস্তার বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। আর হুমকির মূখে পড়ছে জীব বৈচিত্র্য। জানা যায়, মিয়ানমার সীমান্তর্তী এলাকায় উৎপত্তি হওয়া মাতামুহুরী নদী আলীকদম, লামা ও চকরিয়া উপজেলার ভু-খন্ড দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে নদীর পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে লামা, আলীকদম ও চকরিয়া কেন্দ্রীক কিছু অতি লোভী মৎস্য শিকারি নদীর বিভিন্ন অংশে বিষ প্রয়োগ করে মিটা পানির চিংড়িসহ হরেক প্রজাতির মাছ আহরণ করে থাকেন। মেল একটি পাহাড়ি লতার বিষাক্ত পদার্থ (বিষ) যা পানিতে প্রয়োগ করলে মাছ পানির গভীর থেকে উপরে উঠে আসে। ফলে যে কেউ সহজে মাছ ধরতে পারেন। দোষ্কৃতকারীরা সময় সুযোগ বুঝে বিষাক্ত লতার রস নদীর পানিতে ছিটিয়ে দেয়। পরে নদীর ভাটির অংশে বিষক্রিয়া শুরু হয়ে মাছ মরে ভেসে উঠার সাথে সাথে তারা এসব মাছ দ্রুত আহরণ করে গ্রামগঞ্জ ও হাট বাজারে বিক্রি করে। খবর পেয়ে সম্প্রতি নদীর তেলিরকুম এলাকায় সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, নদীর প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মরা, আধা মরা মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। ভেসে ওঠা মাছের বেশীর ভাগ চিংড়ি মাছের পোনা। এ সময় শত শত উৎসুক নারী পুরুষ ও শিশুরা হাতজাল, ঠেলাজাল, চালুনী, মশারী, ফিন্যা নিয়ে নদীতে মাছ ধরছেন। প্রতিদিনই নদীর কোন না কোন অংশে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনের ঘটনা ঘটছে। নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানায়, সকালে লোকজন নদীতে গোসল করতে গেলে তাঁরা মরা-আধা মরা চিংড়ি পোনা আর ছোট ছোট পুঁটি মাছের পোনা ভাসতে দেখেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নদীর ঘাটে ঘাটে নারী পুরুষেরা মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রায় সবাই এক কেজি-আধা কেজি করে মাছ পান। তারা জানান, দূর্বৃত্তদের জালে বড় মাছগুলো আটকা পড়লেও ছোট মাছগুলো নদীতে ভেসে ওঠে।নদীতে আধমরা মাছ ধরতে আসা রুহুল আমিন, মো. ইসহাক মিয়া, জসিম উদ্দিন, জুহুর আলমসহ অনেকে বলেন, কে বা কারা নদীতে বিষ দিয়েছে আমরা জানি না। নদীতে মাছ ভাসছে তাই মাছ ধরতে এসেছি। জেলে আবদুল হামিদ বলেন, প্রতি বছর শুস্ক মৌসুমে অন্তত ১৫-২০ বার দুস্কৃতীকারিরা নদীর বিভিন্ন কুমে বিষ প্রয়োগ করে। এতে করে বিভিন্ন প্রকারের মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার শফিউর রহমান মজুমদার বলেন, বিষ প্রয়োগের মরা ও আক্রান্ত মাছ খেলে মানুষ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাসেদ পারভেজ বলেন, নদীতে বিষ প্রয়োগের ঘটনা কেউ জানায়নি। তবে বিষ প্রয়োগের বিষয়ে জেলেদেরকে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। বিষ প্রয়োগের কারণে ছোট-বড় নির্বিচারে মাছ মারা যায়। এছাড়া প্রাকৃতিকভাবে তৈরী মাছের খাদ্য ও প্রজনন নষ্ট হয়ে যায়। এক কথায় বিষ দিয়ে মাছ শিকার জীব বৈচিত্র্যের জন্য দারুন হুমকি স্বরুপ। তিনি আরও জানান, উম্মুক্ত জলাশয়ে বিষ ঢেলে মাছ শিকার করা একটি দন্ডনীয় অপরাধ। এই বেআইনি কাজের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি। তার মতে, সংশি¬ষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার ও নদীর দু-কূলে বসবাসরত জনসাধারণের সহায়তা পাওয়া গেলে বিষ প্রয়োগকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব।

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই বিপ্লবের স্মরণে র‌্যালি ও দোয়া জুলাই এর গণঅভূত্থানে ছাত্র জনতার রক্তদান এবং অসংখ্যজনের পঙ্গুত্ব বরণের মধ্যদিয়ে আমরা নতুন দেশ পেলাম —–প্রফেসর ড. মোঃ আতিয়ার রহমান

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031