রাঙ্গামাটির ভয়াবহ পাহাড় ধসের মর্মান্তিক ঘটনার ৩ বছর, এখনো ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে মানুষ

॥ মিল্টন বাহাদুর, রাঙ্গামাটি ॥ রাঙ্গামাটির ভয়াবহ পাহাড় ধসের মর্মান্তিক ঘটনার ৩ বছর। ২০১৭ সালের ১৩ জুনের রাতে টানা প্রচন্ড বজ্রসহ বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে মাটি চাপায় প্রাণ হারায় নারী ও শিশুসহ ১২০ জন। এর মধ্যে মানিকছড়িতে একটি সেনা ক্যাম্পের নীচে রাস্তায় মাটি অপসারণ করতে গিয়ে পাহাড় ধসের ঘটনায় নিহত হন দুই কর্মকর্তাসহ ৫ সেনা সদস্য।
একটানা বৃষ্টিতে রাঙ্গামাটির এত লোকের প্রাণহানি আর ঘরবাড়ি, সড়ক যোগাযোগ আর বিদ্যুতের এত ক্ষতি হবে সেদিন কেউ ভাবতেও পারেনি। মুহুর্তের সব দিক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাঙ্গামাটি। আর বছর ঘুরে দিনটি আসলে রাঙ্গামাটিবাসীর মনে দেখা দেয় আতংক আর সেই ভয়াল স্মৃতি।
১৩ জুন রাত থেকেই রাঙ্গামাটি জেলায় শুরু হয় প্রচন্ড বজ্রপাতসহ ভারি বৃষ্টি। রাঙ্গামাটি শহরের ভেদভেদি, মোনতলা, রাঙ্গাপানি, শিমুলতলি, সদর উপজেলার মগবান ও সাপছড়ি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে রাঙ্গামাটিতে। এছাড়া রাঙ্গামাটি সদরে ৬৬ জন, কাউখালীতে ২৩ জন, কাপ্তাইয়ে ১৮ জন, জুড়াছড়িতে ৬ জন ও বিলাইছড়িতে ২ জন নিহত হন।
পাহাড় ধসের কারণে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাঙ্গামাটি শহরের ৩ দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। সেনা বাহিনী ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের দ্রুত প্রচেষ্টায় তিন দিনের মাথায় বিদ্যুৎ ও দশ দিনের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ পুন স্থাপিত হয়।
আর পাহাড় ধ্বসের তিন বছর পার হলেও এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ। নিরাপদ আশ্রয়ে আসা দ্বারে ঘুরে আজো পাহাড়ের পাদদেশে প্রাণের ঝুঁকিতে বসবাস করছে আশ্রয়হীন পাহাড়ের মানুষ। প্রতি বছর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় বসবাসরত মানুষদের সেখান থেকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার কথা বললে ও পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাসরত কেউই তা মানছেননা।
আর এ ব্যপারে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, এই দিনটির কথা স্মরণ করে, এ বছর রাঙ্গামাটি জেলায় প্রাণহানী এড়াতে আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সতর্কতামুলক সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলার অতিবর্ষণের কারণে সম্ভাব্য পাহাড় ধস প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলার জন্য জেলার সার্বিক প্রস্তুতি হিসেবে রাঙ্গামাটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৩৩টি ঝূকিপূর্ণ এলাকার ২৬ টি আশ্রয় কেন্দ্রের সুষ্ট ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের জন্য জেলার প্রশাসনের ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর রাঙ্গামাটিসহ ১০টি উপজেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031