
॥ নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পার্বত্য অঞ্চলের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ সাপ্তাহিক বনভূমি ও দৈনিক গিরিদর্পণের সম্পাদক মরহুম এ কে এম মকছুদ আহমেদের স্বরণে নাগরিক শোকসভা পালন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকালে রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাবের আয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাইনী হলরুমে প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত অনুপ কুমার চাকমা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিব উল্লাহ মারুফ, সাবেক উপমন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ান, শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা, বিএনপি’র সভাপতি দীপেন তালুকদার দীপু, রাঙ্গামাটি জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম, রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুনীল কান্তি দে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নের বোর্ডের সমন্বিত সমাজ উন্নয়ন প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ জামে আলম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য মোঃ হাবীব আজম, রাঙ্গামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সুশীল প্রসাদ চাকমা, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শাকিল, জেলা ইসলামী ফ্রন্টের সিনিয়র সহ সভাপতি মাওলানা শফিউল আলম আল ক্বাদেরী, জেলা আহলে সুন্নাতের সভাপতি মাওলানা এম এ মুস্তফা হেজাজী, জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা এবিএম তোফায়েল আহমেদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের আইসিডিআরের সাবেক প্রকল্প পরিচালক জানে আলম, স্কাউটস কমিশনার নুরুল আবছার, রাঙ্গামাটি এফপিএবির সভাপতি শাহেদা আকতার, মরহুমের ছোট ভাই হুমায়ুন কবিরসহ জেলায় কর্মরত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্স মিডিয়ায় সাংবাদিকবৃন্দ। শোকসভায় মরহুম সাংবাদিক একেএম মকছুদ আহমেদের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেন তাঁর জীবনীগ্রন্থের লেখক ইয়াছিন রানা সোহেল।
শোকসভায় বক্তারা বলেন, সাংবাদিকতার ইতিহাসে পার্বত্য অঞ্চলের পথিকৃৎ সাংবাদিক মরহুম এ কে এম মকছুদ আহমেদের অবদান অনন্য ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি পাহাড়ের সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার আলোকবর্তিকা হয়ে সমাজের শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন। পাহাড়ের জনদূর্ভোগ লাঘবে সরকার ও জনগণের মধ্যে সর্ম্পক স্থাপনে চড়াই উৎরায় পেরিয়ে পাহাড়ের মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের একজন জলন্ত স্বাক্ষী। তাই পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার অগ্রদুত একেএম মকছুদ আহমেদ এর অবদান কোন ভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি পাহাড়ে সাংবাদিকতা শুরু করেছেন বলেই, আজকে পাহাড়ে সাংবাদিকতা বিস্তার লাভ করেছে। তাই তিনি এই পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকতার বাতিঘর। তাঁর আদর্শ নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িতে দিতে পারলে সাংবাদিকতার পেশা আরও সুদৃঢ় হবে। আর পার্বত্য অঞ্চলের এই গুণী সাংবাদিকতার জীবন্ত কিংবদন্তি এই প্রবীন সাংবাদিককে মরনোত্তর রাষ্ট্রীয় পদকে ভুষিত করার দাবী জানান বক্তারা।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের চারণ সাংবাদিক, দৈনিক গিরিদর্পণ ও সাপ্তাহিক বনভূমি সম্পাদক মরহুম এ কে এম মকছুদ আহমেদ ১৯৬৯ সালের ১৫ই নভেম্বর’ দৈনিক আজাদী’র রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয়। তারপর শুরু হয় দীর্ঘ পথচলা। ১৯৭৩ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক জনপদে। পরবর্তী বছর (১৯৭৪) সালে ‘দৈনিক পূর্বদেশ ‘পত্রিকায় রাঙ্গামাটি জেলা সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। এরপর যুক্ত হন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও এনায়। ১৯৭৬ সালে তিনি ‘জাতীয় দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় রাঙ্গামাটি জেলা সংবাদদাতা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং এখনও পর্যন্ত তার সাথে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়াও ‘নিউ নেশান’ ‘ডেইলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট’ পত্রিকায় রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশীয় সংবাদ জগতের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্রসারিত হয়েছেন। তিনি বিবিসি, দি টেলিগ্রাম, সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৮ সালে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত স্বাধীনতা উত্তর সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বপ্রথম ও একমাত্র মুখপত্র “সাপ্তাহিক বনভূমি”।
তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮১-৮৩ থেকে দৈনিক গিরিদর্পন পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করে। ‘দৈনিক গিরিদর্পন’ পত্রিকাটি পার্বত্য জেলার প্রাত্যহিক ঘটনার বিশ্লেষণ, অনুসন্ধানী, পর্যবেক্ষণ ও ধারাবাহিক উপস্থাপনার মাধ্যমে এ অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস ও ভাবনার অসংকোচ প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে এখনও স্বকীয় অস্তিত্বের প্রকাশ ঘটিয়ে চলছে। মফঃস্বল এলাকা থেকে প্রকাশিত কোন দৈনিকের নিরবিচ্ছিন্ন প্রকাশনার এত দীর্ঘ ইতিহাস বিরল।
‘সাপ্তাহিক বনভূমি ‘ও’ দৈনিক গিরিদর্পণ’ পার্বত্যঞ্চলে সংবাদপত্রের পাঠক ও সংবাদকর্মী সৃষ্টিতেও রেখেছে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। তিন পার্বত্য জেলায় বর্তমানে কর্মরত স্বনামধন্য সংবাদকর্মীদের প্রায় সকলেই প্রাথমিক পর্যায়ে এ দুটি পত্রিকার সাথে কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এদিক থেকে বলা যায় মরহুম এ কে এম মকছুদ আহমেদ পার্বত্যঞ্চলের সংবাদকর্মী গড়ার নিপুণ কারিগর। সাংবাদিকতা জীবনে ২০২১ সালে বসুন্ধরা অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্টান থেকে পেয়েছেন অসংখ্য পুরষ্কার ও সম্মাননা।
২০২৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বৃহষ্পতিবার রাতে নিজ বাস ভবনে স্ট্রোক করেন এ কে এম মকছুদ আহমেদ। রাত ৯টা ৩০ মিনিটে স্ট্রোক করার পর তাকে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন।