মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরতা ধামাচাপা দিতে জাতিসংঘের ঘৃণ্য কৌশল

রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে সম্প্রতি গোটা বিশ্ব সরব হলেও এই জাতিগত নিধন ও নৃশংস হত্যাকান্ড সম্পর্কে অনেক আগেই অবগত ছিল জাতিসংঘ। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যু ধামাচাপা দিতে এক ঘৃণ্য কৌশল অবলম্বন করে তারা। খবর বিবিসির।

মিয়ানমার ও দেশটির বাইরে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মকর্তার ঊদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসির এই প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা সৃষ্টির পর জাতিসংঘ একে ‘জাতিগত নিধন’ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত সৃষ্ট সঙ্কট’ বলে অভিহিত করেছে। কিন্তু কিছুদিন আগেও দেশটিতে জাতিসংঘের শীর্ষ পর্যায়ের যে বৈঠক হতো সেখানে দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে রোহিঙ্গাদের অধিকার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়াও একপ্রকার অসম্ভব ছিল। কেউ তা তুললে তাকে অপমানের শিকার, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এবং চাকরি চলে যাওয়ার ভয় ছিল। মিয়ানমারের বাইরে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-নিপীড়নমূলক কোনো খবর যাতে না প্রকাশ হয় এবং মিয়ানমার সরকারকেও এ নিয়ে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে জাতিসংঘের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রেনেটা লক ডেসালিয়েন রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রবেশ বন্ধের ব্যবস্থা এবং রোহিঙ্গা ইস্যু প্রকাশ্যে আনতে বাধা সৃষ্টি করেছেন। এ ছাড়া যেসব কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলার চেষ্টা করেছেন তাদেরকেও তিনি বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন।

ক্যারোলিন ভ্যান্ডিনাবিলি নামের এক ত্রাণ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, আমরা যখন মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাখাইন ও রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলি তখন তারা বলেন, ‘আমাদের উচিত ওদের সবগুলোকে মেরে ফেলা, কারণ ওরা কুকুরের মতো’।‘ মানবতার প্রতি এমন অমানবিকতা দেখে আমি অত্যন্ত হতাশ হয়ে যাই,’।

বিবিসির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, জাতিসংঘ এমন অনেক প্রেস রিলিজ দিয়েছে যেখানে রোহিঙ্গাদের মূল সমস্যার কথা উল্লেখই করা হয়নি। জাতিসংঘের কোনো প্রতিনিধিকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে খোলাখুলি মুখ খুলতে দেখা যায় নি। রোহিঙ্গাদের অনেক সমস্যার কথা ফাইলবন্দি করে রাখা হতো।

জাতিসংঘের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ওই সময় যথাযথ পদক্ষেপ নিলে আজ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। কারণ এ ধরনের ঘটনা যে ঘটবে তা পাঁচ বছর আগে থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছিল।

এদিকে মিয়ানমারে জাতিসংঘের অফিস বিবিসির এই প্রতিবেদন অস্বীকার করে জানায়, আমরা এই অভিযোগের কঠোর বিরোধীতা করছি। জাতিসংঘ রাখাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

Archive Calendar
MonTueWedThuFriSatSun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031